» » সে কোন বনের হরিণ

বর্ণাকার

সে কোন বনের হরিণ

কাসেম বিন আবুবাকার

সে কোন বনের হরিণ, ঔপন্যাসিক কাসেম বিন আবুবাকার; প্রকাশক বিশ্বসাহিত্য ভবন, ৩৮/৪ বাংলাবাজার ঢাকা ১১০০।

  1. “সৎ দ্বারা অসৎ দূর কর”, এই আয়াত সম্বন্ধে (হযরত মুহাম্মদ (দঃ)) বলিয়াছেন, “ক্রোধে ধৈর্য এবং অসদ্ব্যবহারের সময় ক্ষমা কর। যখন তাহারা ইহা অবলম্বন করে, আল্লাহ তাহাদিগকে রক্ষা করিবেন এবং তাহাদের শত্রুগণকে হেয় করিবেন, যেন তাহারা পরম সুহৃদ হয়।” –বর্ণনায় : হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বুখারী
  2. “হে নফস, কথা বলাটা রূপার মতো হলেও চুপ থাকাটা স্বর্ণের ন্যায়।”–হযরত আলি (রাঃ)
  3. নীরবতা মঙ্গল না করতে পারে, কিন্তু ক্ষতি করে না।——জর্জ রিচার্ড

এক

আপু তোর ফোন।

রূপা রাত দশটায় খেয়ে এসে পড়ছিল। ছোট বোন সায়মার কথা শুনে ঘড়ির দিকে তাকাল, কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে দশটা।

তাই দেখে সায়মা বলল, ছেলেটা রোজ রোজ তোকে ডিস্টার্ব করে, তুই কিছু বলিস নি কেন?

রূপা তার কথার জওয়াব না দিয়ে বলল, বলে দে আমি ঘুমিয়ে পড়েছি।

সায়মা অবাককণ্ঠে বলল, আমাকে মিথ্যে বলতে বলছ? তুমিই তো বলেছ কোনো কারণেই মিথ্যে বলা হারাম।

একটা পড়া তৈরি করছিলাম, তাই বেখেয়ালে বলে ফেলেছি। তারপর ড্রইংরুমে এসে রিসিভার তুলে বিরক্তকণ্ঠে বলল, কেন প্রতিদিন ঠিক এই সময়ে। ফোন করেন? কতদিন আপনাকে বলেছি, এ সময়ে পড়াশোনা করি।

অন্য সময়ে আপনাকে নিরিবিলি পাওয়া যায় না। তাই এই সময়ে করি। রূপা রাগের সঙ্গে বলল, কিন্তু এখন তো সবাই জেগে। তা ছাড়া ফোনটা তো আমার ঘরে নেই। ছোট বোন প্রতিদিন ফোন ধরে আমাকে ডেকে দেয়। আচ্ছা, কে আপনি?

আমি একজন মানুষ।

আমার তো মনে হয় অমানুষ।

তা হতে পারি। তবে অমানুষ হলেও খুব খারাপ অমানুষ নই।

আমার ধারণা, আপনি খুব খারাপ অমানুষই। নচেৎ প্রত্যেকদিন একজন ছাত্রীর পড়ার ডিস্টার্ব করতেন না।

আপনার কথা কতটা সত্য জানি না। তবে কী জানেন, আমাকে অনেক রাত পর্যন্ত পড়তে হয়। খেয়ে এসে এই সময়ে কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারি না। আপনার সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপ করার পর পড়ায় মন বসে। তাই একটু ডিস্টার্ব করি।

কিন্তু আপনার ফোন আসার পর আমি যে পড়ায় মন বসাতেপারি না। প্লীজ, আর কোনো দিন এ সময়ে ফোন করবেন না।

তা হলে বলুন, কখন ফোন করলে আপনার ডিস্টার্ব হবে না?

কোনো সময়েই ফোন না করলে খুশী হব।

কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা না বললে যে আমার পড়াশোনা একটুও হবে না। সারারাত একটু ঘুমও হবে না। পরীক্ষায় নির্ঘাৎ ডাব্বা মারব।

আপনি আমাকে চেনেন না, জানেন না। আমিও আপনাকে চিনি না, জানি না, তবু এরকম কথা বলছেন কেন?

আপনি আমাকে না চিনলেও, না জানলেও আমি আপনার সব কিছু জানি। কী জানেন বলুন তো?

আপনার ভালো নাম যাবিন তাসনিম। ডাক নাম রূপা। বাবা রোকন উদ্দিন সাহেব একজন মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী। বর্তমানে মন্ত্রী। দেশের বাড়ি নীলফামারী জেলার পলাশবাড়ি। ঢাকায় দু’টা বাড়ি, দু’টা গাড়ি। একটা আপনার বাবার। অন্যটা আপনাদের দু’বোনের। গাড়ি নিয়ে দু’বোন মাঝে মধ্যে ঝগড়া করেন। আপনি ইডেনে বাংলায় অনার্স করছেন। ছোট বোন সায়মা ঐ কলেজেই ইন্টারে পড়ছেন। আপনারা দু’বোনই সুন্দরী। তবে আপনি একটু বেশি।

সবকিছু মিলে যাচ্ছে দেখে রূপা খুব অবাক হয়ে ভাবল, ছেলেটা আমাদের সবকিছু জানে। কে হতে পারে চিন্তা করে না পেয়ে অধৈর্য গলায় বলল, হয়েছে হয়েছে, আর বলতে হবে না। এবার আপনার পরিচয়টা বলুন।

বলা যাবে না।

কেন?

সময় হলে বলব।

আপনি শুধু অমানুষ নন, কাপুরুষও। এই কথা বলে রূপা রিসিভার ক্র্যাডেলে রেখে ফিরে এসে পড়তে বসল। কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারল না। বই বন্ধ করে চিন্তা করতে লাগল, ছেলেটা কে হতে পারে? আমার পেছনেই বা লেগেছে কেন? ব্যাপারটা আব্বাকে জানালে কেমন হয়? আবার চিন্তা করল, ছেলেটার গলার আওয়াজ বেশ মিষ্টি। দেখতে কেমন কে জানে? অনেকের গলার আওয়াজ মিষ্টি হলেও দেখতে রোগা পেঁচকা, বেঁটে, চোখ ছোট ছোট, গায়ের রং মিশমিশে কালো। আবার কোনো গরিবের দেখতে শুনতে ভালো ছেলে নিজেকে বড়লোকের ছেলের পরিচয় দিয়ে ধন-সম্পত্তির লোভে বড়লোকের মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে করতে চায়। এই ছেলেটা সেরকম নয়তো? তা না হলে পরিচয় দিতে চায় না কেন? এদিকে তলে তলে আমাদের সব খবর জেনে নিয়েছে। আজ তিন মাস ধরে ছেলেটা পিছনে লেগেছে। যদি সত্যিই তার কোনো বদ মতলব থাকে, তা হলে আব্বাকে। বলে বাছাধনকে জেলের ভাত না খাইয়েছি তো আমার নাম রূপা নয়।

রূপা ও সায়মা রিডিংরুমে দুটো আলাদা টেবিলে পড়ে। দু’বোন একই বেডরুমে আলাদা খাটে ঘুমায়। সেখানেও পড়ার জন্য দু’টো চেয়ার টেবিল আছে। রাত দশটায় খাওয়ার পর দু’জনে বেডরুমে পড়ে। পড়তে পড়তে ঘুম পেলে সায়মা প্রায় প্রতিদিন চোখে মুখে পানি দিয়ে বারান্দায় কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে। তাই ড্রইংরুমে ফোন বাজলে সে-ই ধরে।

সায়মা এতক্ষণ একটা নোট করছিল। নোটটা শেষ করে রূপার দিকে তাকিয়ে বলল, আপু, এই বন্ধ করে চুপচাপ কী ভাবছিস?

রূপা জানে কথা বললেই সায়মা ঐ ছেলেটাকে নিয়ে নানান কমেন্ট করবে। উপদেশ দিতেও ছাড়বে না। তাই তার কথার উত্তর না দিয়ে হাই তুলে বলল, আজ আর পড়তে ভালো লাগছে না, ঘুমাব বলে খাটে শুয়ে পড়ল।

সায়মা কিছু বলল না, শুধু তার ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে উঠল। বাথরুমের কাজ সেরে এসে শোয়ার সময় বলল, আপু তুই কী ঘুমিয়ে পড়েছিস?

ঘুমাই নি, তবে ঘুম পাচ্ছে। তুই আর কোনো কথা বলবি না, চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়।

আচ্ছা আপু, ছেলেটা তোকে প্রতিদিন ফোন করে কেন বলবি?

রূপা রেগে উঠে বলল, তোকে কথা বলতে নিষেধ করলাম, তবু কথা বলছিস? বললাম না, আমার ঘুম পাচ্ছে?

প্লীজ আপু, আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিয়ে দে, আর একটাও কথা বলব না।

সায়মা, তুই কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছিস। আর যদি একটা কথা বলিস, রিডিংরুমে গিয়ে ঘুমাব।

সায়মা খুব ভীতু। একা ঘুমাতে ভয় পায়। রূপা যেদিন কোনো কারণে খুব রেগে যায়, সেদিন রিডিংরুমে ঘুমাতে চলে যায়। সায়মা তখন অন্যায় স্বীকার করে অনেক কাকুতি মিনতি করে তাকে এই রুমে নিয়ে আসে। তাই এখন তার কথা শুনে আর কিছু না বলে ঘুমিয়ে পড়ল।

রূপা কিন্তু অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারল না। চিন্তা করতে লাগল, কিভাবে ছেলেটার পরিচয় পাওয়া যেতে পারে? হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি আসার পর ঘুমিয়ে পড়ল।

পরের দিন সকালে রূপা আব্বুকে বলল, আমাদের বেডরুমে একটা প্যারালাল ফোনের ব্যবস্থা করে দাও। পড়ার সময় ফোন এলে ড্রইংরুমে গিয়ে ফোন ধরতে খুব বিরক্ত লাগে। অনেক সময় ওখানে বাইরের লোকজন থাকে। অসুবিধে হয়।

রোকন উদ্দিন সাহেবের কোনো পুত্র সন্তান নেই। শুধু দু’টো মেয়ে। বড় মেয়ে রূপা মায়ের সবকিছু পেয়েছে। পুত্র সন্তান না থাকায় রোকন উদ্দিন সাহেব দুই মেয়েকেই ভীষণ ভালবাসেন। তবে রূপাকে একটু বেশি। তার কথা শুনে বললেন, প্যারালাল নয়, কয়েকদিনের মধ্যে আর একটা ফোন তোদের জন্য নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেব।

রূপা বলল, কয়েকদিন পরে যা করার করো, আজ প্যারালাল ফোনের ব্যবস্থা করে দাও।

রোকন উদ্দিন সাহেব মৃদু হেসে বললেন, ঠিক আছে, অফিসে গিয়ে একজন লোক পাঠিয়ে দেব। সে ব্যবস্থা করে দেবে।

আজ সন্ধ্যের পর থেকে খুব ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। রাত নটার পর বৃষ্টি একটু কমলেও দমকা দমকা ঝড় বইছে। দশটার সময় খেয়ে এসে রূপা সায়মাকে বলল, ঝড়-বৃষ্টির কারণে আজ হয়তো ছেলেটা ফোন করবে না। তবু যদি করে, তুই ফোন ধরবি। তারপর কি বলবে বুঝিয়ে বলল।

সায়মা বলল, আজ আবার মিথ্যে বলতে বলছ?

হ্যাঁ বলছি। বাজে ঝামেলা থেকে বাঁচার জন্য মিথ্যে বললে দোষ হয় না।

কিন্তু উনি তো আমার গলা চেনেন।

চিনুক, তবু যা বলতে বললাম বলবি।

ঠিক সাড়ে দশটায় ফোন বেজে উঠতে রূপা সায়মাকে রিসিভ করতে বলল।

সায়মা রিসিভার তুলে সালাম দিয়ে বলল, রূপা বলছি।

অপর প্রান্ত থেকে অজানা ছেলেটা সালামের উত্তর দিয়ে বলল, আপনি রূপা নন, সায়মা।

কী করে বুঝলেন? আমি তো রূপাই বলছি।

শুধু শুধু মিথ্যে বলে নিজেকে ছোট করছেন কেন?

আপনি যখন বিশ্বাসই করছেন না তখন ফোন রেখে দিচ্ছি।

প্লীজ রাখবেন না, দয়া করে আপনার আপুকে দিন।

আপনি তো বিশ্বাসই করছেন না, আমি রূপা। রেখে দেব না তো কী করব?

তা হলে বলুন, “আল্লাহর কসম আমি রূপা বলছি।”

সায়মা জানে আল্লাহর নামে মিথ্যে কসম খাওয়া কবীরা গুণাহ। তাই কিছু বলতে না পেরে চুপ করে রইল।

কী হল? আল্লাহর কসম খেয়ে বললেন না যে?

সায়মা মাউথপীসে হাত চাপা দিয়ে রূপার দিকে তাকিয়ে কসম খাওয়ার কথা বলে বলল, এখন কী করব?

রূপা তার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বলল, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন?

ছেলেটা আহতস্বরে বলল, ছোট বোনকে দিয়ে এভাবে ফোন রিসিভ করতে বলা আপনার উচিত হয় নি। এটা আমার আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার কাছে সায়মা কত ছোট হয়ে গেল বলুন তো?

উচিত অনুচিতের কথা পরে, আমার একটা অনুরোধ রাখবেন কী না বলুন?

একটা কেন, হাজারটা অনুরোধ রাখব। তবে ফোন করার ব্যাপারটা ছাড়া। তারপর বলল, বেডরুমে ফোন নিয়ে খুব ভালো করেছেন। পড়ার সময় আর ডিস্টার্ব করব না। কাল থেকে সাড়ে বারটার সময় যখন ঘুমাতে যাবেন তখন করব।

রূপা খুব অবাক হয়ে বলল, এ রুমে ফোন নিয়েছি আপনি জানলেন কিভাবে?

আল্লাহর ইচ্ছায় আমি অনেক কিছু জানতে পারি। শু

ধু আমাদের অনেক কিছু জানতে পারেন, না অন্যদেরও জানতে পারেন?

অন্যদের কোনো কিছু জানার ইচ্ছা কখন হয় নি। তাই সেকথা বলতে পারলাম না। তারপর বলল, কী যেন অনুরোধ করবেন বললেন?

তা আর করব না। তবে একটা প্রশ্ন করব, সঠিক উত্তর দেবেন তো?

উত্তর জানা থাকলে সঠিকই দেব। কারণ কোনো মুমীন মুসলমান মিথ্যে বলতে পারে না।

আপনি আমার পেছনে লেগেছেন কেন?

উত্তরটা আপনি জানেন, তবু জিজ্ঞেস করছেন কেন?

সিওর হওয়ার জন্য।

যা জেনেছেন সেটাই সত্যি।

আমি কি জেনেছি, তা আপনি বুঝলেন কী করে? কারো মনের কথা তো আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারে না। এটা কুরআন পাকের কথা।

আপনি ঠিক কথা বলেছেন। তবে আল্লাহ যাদেরকে পছন্দ করেন তাদেরকে মানুষের মনের খবর জানার জ্ঞান দান করেন।

তারা তো আল্লাহর খাস বান্দা। আপনিও কী নিজেকে তাই ভাবেন?

কখনই না। তাদের পায়ের ধূলোর সমান যোগ্যতাও আমার নেই।

তা হলে ঐ কথা বললেন কেন?

আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমি হিকমতের দ্বারা শুধু আপনাদের সবকিছু জেনে নিই।

বুঝলাম না।

পরে এক সময় বুঝিয়ে দেব। অবশ্য আপনিও চেষ্টা করলে হিকমতের দ্বারা আমার সবকিছু জানতে পারেন।

হিকমত টিকমত বুঝিও না, আর জানিও না। আমার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। কিনা বলুন?

বললাম তো, উত্তর জানা থাকলে নিশ্চয় দেব।

আপনার নাম বলুন।

আব্দুস সাত্তার।

বাবার নাম?

বলা যাবে না।

ঠিকানা?

তাও বলা যাবে না।

কেন?

বললাম বলা যাবে না, তবু জিজ্ঞেস করছেন কেন?

আপনি কী করেন?

দু’তিন মাস পরে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স দেব।

আপনার বাবা কী করেন?

একটা বেসরকারী কলেজে অধ্যাপনা করেন।

আপনি যখন ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স করছেন তখন ধর্ম সম্পর্কে নিশ্চয় অনেক জ্ঞান রাখেন?

তাতো কিছু রাখি।

তা হলে প্রতি রাতে একজন গায়ের মহররম মেয়েকে ফোন করা যে ইসলামের পরিপন্থী, তা তো জানার কথা। তবু করেন কেন?

আপনাকে প্রায় দু’বছর আগে থেকে ভালবাসি এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিয়ে। করব। জীবন সাথী পছন্দ করা ইসলামের পরিপন্থী নয়।

এই আইন শুধু ছেলেদের বেলায়, না মেয়েদের বেলায়ও।

উভয়েরই।

আমি তো আপনাকে দেখি নি, চিনি নি, আপনাকে যদি আমার পছন্দ না হয়?

ছেলেরা যেসব কারণে মেয়েদের পছন্দ করে, সে সব আপনার মধ্যে আছে। তাই আমি যেমন আপনাকে পছন্দ করেছি, তেমনি মেয়েরা যেসব কারণে ছেলেদের পছন্দ করে, সেসব আমার মধ্যে আছে। তাই আমি হান্ড্রেডপার্সেন্ট সিওর, আমাকে দেখলে আপনি অপছন্দ করবেন না।

আপনার কথা সত্য হলেও সবক্ষেত্রে নয়। যেমন অনেক সুন্দরী মেয়ে অসুন্দর ছেলেকে পছন্দ করে। আবার অনেক সুন্দর ছেলে অসুন্দর মেয়েকে পছন্দ করে।

আপনার কথা অস্বীকার করব না। আমি বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছি। আর আপনি যা বললেন, তা ব্যতিক্রম।

আপনি আমাকে দেখে শুনে ও আমাদের সবকিছু জেনে পছন্দ করেছেন এবং বিয়ে করার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন বললেন। আমারও কী উচিত নয়, আপনাকে দেখে।

ও আপনাদের সবকিছু জেনে পছন্দ করা?

অফকোর্স।

তা হলে বলুন, কবে-কখন ও কোথায় আপনার সঙ্গে আলাপ করব।

কাল বলব, আজ অনেক রাত হয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ন, নচেৎ ফজরের নামায কাযা হয়ে যাবে। তারপর রূপা কিছু বলার আগেই সালাম দিয়ে লাইন কেটে দিল।

রূপা সালামের উত্তর দিয়ে রিসিভার রেখে দিল।

সায়মা এতক্ষণ নিজের খাটে বসেছিল। ছেলেটার কথা শুনতে না পেলেও আপুর কথায় বুঝতে পারল, সে আপুকে ভালবাসে ও বিয়ে করতে চায়। তাই রিসিভার রেখে দেওয়ার পর জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা পরিচয় বলেছে?

শুধু নাম বলেছে আব্দুস সাত্তার। বাবার নাম ও বাসার ঠিকানা বলে নি।

তুই দেখা করার কথা বলতে কী বলল?

কাল বলবে বলেছে?

আর কী করেন জিজ্ঞেস করতে?

ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স দেবে।

নাম ছাড়া অন্য কিছুই যখন বলে নি, মনে হয় ছেলেটা ফ্রড। একা একা তার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া তোর ঠিক হবে না।

তোকে অত পাকামী করতে হবে না। নে এবার শুয়ে পড় বলে রূপা বাথরুম থেকে এসে শুয়ে পড়ল।