» » ‘আজব’ ও ‘জবর-আজব’ অর্থনীতি

বর্ণাকার
🕮

‘আজব’ ও ‘জবর-আজব’ অর্থনীতি

সত্তরের দশকে বাংলাদেশে মাত্র তিনজন অধ্যাপক ছিলেন যাঁরা প্রত্যেকে দুটি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এঁরা সম্মানসূচক ডিগ্রিধারী ছিলেন না; এঁদের তিনজনই কষ্ট করে অভিসন্দর্ভ রচনা করে ডিগ্রি লাভ করেন। এঁদের মধ্যে মিলের চেয়ে বৈসাদৃশ্য ছিল অনেক বেশি। এঁরা ভিন্ন ভিন্ন বিষয় পড়াতেন। এঁদের আচার-আচরণেও তেমন মিল ছিল না। এঁদের বাড়ি ছিল তিনটি ভিন্ন জেলায়। তবু এঁদের তিনজনের একই পরিণতি ঘটে। এঁরা তিনজনই দুর্নীতির দায়ে জেল খাটেন (তিনজনই দাবি করেছেন যে এঁরা নির্দোষ)। এরপর বাংলাদেশে ‘ডাবল পিএইচডির’ (হয়তো দুর্নীতি দমন কমিশনের ভয়ে) আর খবর পাওয়া যায়নি। সংখ্যাতত্ত্বের সূত্র অনুসারে বাংলাদেশে দুটি পিএইচডি ডিগ্রি নিলে দুর্নীতির দায়ে জেল খাটার শতভাগ সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লিখিত তিনজন অধ্যাপকই পরলোকগমন করেছেন। যদি ইতোমধ্যে কেউ ডাবল পিএইচডি অর্জনের চেষ্টা করেন, তবে তার জেলে যাওয়ার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

১. সহগমন (Corelation) বনাম কার্যকরণ (Causation)

এখানে সংখ্যা ঠিকই আছে তবে তত্ত্ব নেই। ডাবল পিএইচডিরা দল বেঁধে জেলে গেলেই পিএইচডি ডিগ্রির জন্য এঁরা দুর্নীতি করেছেন, এ সূত্র প্রমাণিত হয় না। এমনও হতে পারে যে এ তিনজন অধ্যাপকই গরিব ঘরের সন্তান। কাজেই উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়ে অর্থের লোভ সামলাতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে দোষটা দুটি পিএইচডির নয়। মূল সমস্যা হলো, তাঁদের সামাজিক পরিবেশ। আবার এমনও হতে পারে, যারা ডাবল পিএইচডি করেন, তাঁরা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী। তাঁরা নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করেন না। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসে। এখানেও কারণ হলো উচ্চাভিলাষ, দুটি পিএইচডি নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত ডাবল পিএইচডির সঙ্গে দুর্নীতির কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা না করা যাবে, ততক্ষণ এ ধরনের সম্পর্ক কাকতালীয় বলেই বিবেচিত হবে।

আরেকটি উদাহরণ বিবেচনা করুন। জাপানিরা খুব কম চর্বিযুক্ত খাবার খায়। এদের মধ্যে হৃদ্‌রোগীর সংখ্যা অতি নগণ্য। ইংরেজ ও মার্কিনরা গবগব করে চর্বি গেলে। এদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি। বেশি চর্বি খেলে হার্টের ব্যামো হয়, এই অনুমানটি উপরিউক্ত তথ্য সমর্থন করে। কিন্তু সংখ্যাতত্ত্ববিদেরা বলছেন, ফরাসিরাও অনেক চর্বি খায়। অথচ মার্কিন বা ইংরেজদের চেয়ে এদের হৃদ্‌রোগ অনেক কম হয়। সংখ্যার ভিত্তিতে তাই হৃদ্‌রোগ আর স্নেহজাতীয় পদার্থের কোনো সুস্পষ্ট সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

একই সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে, জাপানিরা লাল মদ কম খায়। তাদের হৃদ্‌রোগের হার কম। আবার ইতালিয়ানরা প্রচুর লাল মদ খায়, অথচ এদের মধ্যে ইংরেজ বা মার্কিনদের তুলনায় হৃদ্‌রোগের হার কম। ইংরেজ আর মার্কিনরা প্রচুর লাল মদ পান করে এবং তাদের হৃদরোগে ভোগার হার সর্বোচ্চ। তাই লাল মদের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের কোনো সুস্পষ্ট সম্পর্কও প্রতিষ্ঠা করা গেল না।

তবে এই সমীক্ষা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যারা জাপানি, ফরাসি বা ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলে তাদের তুলনায় ইংরেজি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের মধ্যে হৃদ্‌রোগের হার অনেক বেশি। তাহলে কি ধরে নেব যে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারের জন্যই ইংল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হৃদয়ঘটিত ব্যামো অনেক বেশি। যত যুক্তিই দেখান না কেন, ডাক্তারদের কাছে এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য করতে হলে প্রথমে ইংরেজি ভাষার সঙ্গে হৃদ্‌রোগের কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের ব্যাখ্যা কল্কে পাবে না।

তবু সবকিছুর সহজ ব্যাখ্যা সব সময় সম্ভব হয় না। এই উদাহরণটি বিবেচনা করুন। অর্থনীতিতে যখন মন্দা দেখা দেয়, তখন পরিবারের সদস্যরা চাকরি হারায়। পরিবারের আয় কমে যায়। তাই বাড়ির কর্তা ও গিন্নিকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করতে হয়। মন্দার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাই দেখা যায় দামি গাড়ি, ব্যয়বহুল পোশাক বা দামি সেন্টের চাহিদা কমে যায়। অথচ মন্দা দেখা দিলেই লিপস্টিকের চাহিদা বেড়ে যায়। গত শতকের তৃতীয় দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে যখন মহামন্দা দেখা দেয়, তখন লিপস্টিক বিক্রি পঁচিশ শতাংশ বেড়ে যায়। পরবর্তীকালেও যখন মন্দা দেখা দেয়, তখনি লিপস্টিকের চাহিদা বেড়ে যায়। অনেকে বলছেন লিপস্টিকের বিক্রি-বৃদ্ধিকে মন্দার একটি পূর্বাভাস হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আবার অনেকে বলছেন এ সহগমনের কোনো তাৎপর্য নেই (The Economist, January 24th 2009)।

ওপরের উদাহরণগুলি থেকে দেখা যাচ্ছে যে শুধু সংখ্যার ভিত্তিতে সত্য জানা যাবে–এ অনুমানের কোনো ভিত্তি নেই। সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে মহা বিরক্ত হয়ে অনেকে বলছেন : Lies, Damn lies and Statistics (মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা ও সংখ্যাতত্ত্ব)। এঁদের মতে, সংখ্যাতত্ত্ব ডাহা মিথ্যার চেয়েও বিপজ্জনক।

২. গোয়েন্দাগিরিতে সংখ্যাতত্ত্ব

সংখ্যাতত্ত্বের দুর্বলতা সত্ত্বেও অনেক অর্থনীতিবিদেরই সংখ্যাতত্ত্বে আস্থায় কখনো চিড় ধরেনি। অতিসম্প্রতি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক স্টিভেন ডি লেভিট (Steven D. Levitt) প্রখ্যাত সাংবাদিক স্টিফেন জে ডুবনারের (Stephen J. Dubner) সহযোগিতা নিয়ে Freakonomics ও Super freakonomics দুটি বই লিখেছেন। একজন অর্থনীতিবিদ আর সাংবাদিকের জুটি বাধার কারণ হলো অর্থনীতিবিদের যত বক্তব্য আছে তত জোরালো ভাষা নেই। আর সাংবাদিকের কলমের জোর থাকলেও অর্থনীতি ও সংখ্যাতত্ত্বের মতো খটোমটো বিষয়ে তাঁর বক্তব্য সীমিত। সংখ্যাতত্ত্বের সাফাই গাইতে গিয়ে লেভিট ও ডুবনার (২০০৯, ১৬) লিখেছেন, ‘Some people may argue that statistics can be made to say anything, to defend indefensible causes or tell pet lies. But the economic approach aims for the opposite: to address a given topic with neither fear nor favor, letting numbers speak the truth’. (কিছু লোক যুক্তি দেখান যে সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে যা ইচ্ছে করা যায়, অগ্রহণীয় বক্তব্য সমর্থন করা যায় এবং পছন্দমতো মিথ্যে বলা যায়। কিন্তু অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণের লক্ষ্য হলো এর বিপরীত, ভয়ে বা কাউকে অনুরাগ দেখানোর জন্য নয়, সোজাসুজি সংখ্যার ভিত্তিতে সত্যকে তুলে ধরা)।

ফ্ৰিকনোমিকস ও সুপার ফ্ৰিকনোমিকস বই দুটির তাত্ত্বিক লেভিট মনে করেন, উপযুক্ত উপাত্ত পাওয়া গেলে সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে যেকোনো সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব। এমনকি প্রতারক, ঠকবাজ ও অপরাধীদের খুঁজে বের করা সম্ভব। দুটি ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে গোয়েন্দাগিরিতে তারা সংখ্যাতত্ত্বের জ্ঞান প্রয়োগ করেছেন : (১) শিকাগো স্কুল বোর্ডের পরীক্ষায় নকলে সহায়তাকারী শিক্ষকদের শনাক্তকরণ, (২) জাপানে ঐতিহ্যবাহী সুমা কুস্তিতে পাতানো প্রতিযোগিতা উদঘাটন।

নকলে সহায়তাকারী শিক্ষকদের শনাক্তকরণ

১৯৯৬ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে স্কুলের ছাত্রদের মূল্যায়ন তাদের শিক্ষকেরা নিজেরাই করতেন। অভিভাবক ও স্কুল বোর্ডকে খুশি করার জন্য তারা তাদের ছাত্রদের বেশি নম্বর দিতেন, এতে ছাত্রদের স্কুলে কী রকম পড়ানো হচ্ছে তা বিচার করা সম্ভব ছিল না। স্কুল বোর্ড তাই ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষাবর্ষের শেষে ছাত্রদের একটি বাইরের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে। এ পরীক্ষা চালু করার পর শিক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যেসব শিক্ষকের ছাত্ররা অস্বাভাবিক উচ্চ হারে পরীক্ষায় ফেল করবে তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। শিকাগোতে এমন অনেক শিক্ষক ছিলেন, যাঁদের ছাত্রদের মান ছিল অত্যন্ত নিচু। এ ধরনের শিক্ষকেরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে খারাপ ছাত্রদের খাতা পরীক্ষা করার জন্য কম্পিউটারে জমা দেওয়ার আগে তাড়াতাড়ি করে তাদের ভুল উত্তর মুছে সঠিক উত্তর লিখে দিতেন। শিক্ষকদের এহেন কীর্তিকলাপের গুজব শুনে ২০০২ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক লেভিট গবেষণার জন্য ৩০ হাজার ছাত্রের পরীক্ষার খাতা সংগ্রহ করেন। কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা যায়, যেসব শিক্ষক ছাত্রদের খাতা জাল করেন তারা একই শ্রেণীর অনেকগুলি খাতায় পর পর বেশ কয়েকটি প্রশ্নের একই উত্তর দেন। এর ভিত্তিতে কোন কোন শ্রেণীতে নকল হয়েছে তা শনাক্ত করা সম্ভব। এ খবর শুনে শিকাগো শিক্ষা বোর্ড লেভিটকে নকলবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রমাণ উপস্থাপন করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু কোন ক্লাসে নকল হয়েছে তা অনুমান করা গেলেও প্রমাণ করা সোজা নয়। কারণ এ ধরনের নকলের কোনো সাক্ষ্য নেই। একটি উপায় হলো বোর্ডের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সন্দেহভাজন শ্ৰেণীগুলির আবার পরীক্ষা নেওয়া। নকল হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট শ্ৰেণীগুলোর দ্বিতীয় পরীক্ষার ফলাফল প্রথম পরীক্ষার (যেখানে নকলের জন্য নম্বর বেড়েছে) চেয়ে লক্ষণীয়ভাবে খারাপ হবে। তবে নকল ধরার পরীক্ষা বলে প্রকাশ্যে এ পরীক্ষা নিতে গেলে শিক্ষকেরা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারেন। পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য না জানিয়ে পরীক্ষা নিলে শিক্ষকেরা যুক্তি দেখাবেন, ছাত্ররা দ্বিতীয় পরীক্ষাটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি–এই কারণে ফল খারাপ হয়েছে। তাই যেসব শ্রেণীতে নকল হয়নি সে ধরনের কিছু ক্লাসেও একই পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে প্রথম পরীক্ষায় যেসব ক্লাসে নকল হয়নি সেসব ক্লাসের ছাত্ররা গড়ে প্রথম পরীক্ষার অনুরূপ বা বেশি নম্বর পেয়েছে। অথচ যেসব ক্লাসে নকল হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়, সেসব ক্লাসের ছাত্ররা প্রথম পরীক্ষার চেয়ে দ্বিতীয় পরীক্ষায় অনেক কম নম্বর পেয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, এসব ক্লাসে নকল হয়। এর ভিত্তিতে ১২ জন শিক্ষককে জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এবং বেশ কয়েকজন শিক্ষককে সতর্ক করা হয়।

ঐতিহ্যবাহী সুমো কুন্তিতে পাতানো প্রতিযোগিতা

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে সুমো কুস্তি জাপানিদের একটি প্রিয় ক্রীড়া। এই কুস্তি জাপানিদের শিন্টো ধর্মের আচার হিসেবে স্বীকৃত। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুমো কুস্তিগিরেরা লাখ লাখ ডলার কামাই করেন। উচ্চ আয়ের সম্ভাবনা থাকায় এ ক্রীড়ার প্রতি অনেকেই আকৃষ্ট হন। কিন্তু এই উচ্চ আয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মাত্র ৬৬ জন কুস্তিগিরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। প্রথম ৪০ জন কুস্তিগির প্রত্যেকে বছরে কমপক্ষে ১ লাখ ৭০ হাজার ডলার কামাই করেন। অথচ ৬৭তম স্থান। অধিকারী কুস্তিগিরের বার্ষিক আয় মাত্র ১৫ হাজার ডলার। প্রথম ৬৬টি জন। কুস্তিগিরের মধ্যে থাকতে হলে প্রতি দুই মাস অন্তর ১৫টি কুস্তি লড়তে হয়। এর মধ্যে কমপক্ষে আটটি কুস্তিতে জিততে হয়। প্রথম ১৪টি কুস্তির মধ্যে যারা আটটি বা তার বেশি কুস্তিতে জয় লাভ করেন, ১৫তম কুস্তিতে হারলেও তাঁদের কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু কিছু কিছু কুস্তিগির প্রথম ১৪টি কুস্তির সাতটিতে জয় লাভ করেন। সর্বশেষ অর্থাৎ ১৫ নম্বর কুস্তিতে হেরে গেলে তাঁরা তাঁদের সর্বোচ্চ মর্যাদা হারান। এই ধরনের খেলাতে যারা সাতটি খেলায় জিতেছেন তারা ইতিমধ্যে আটটি খেলায় বিজয়ীদের উৎকোচ দিয়ে কুস্তি জেতা নিশ্চিত করেন। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে আটটি কুস্তিতে বিজয়ীর কোনো লোকসান হয় না। অথচ সাতটি খেলায় বিজয়ীদের বড় ধরনের লাভ হয়। ১৯৯০-এর প্রথম দিকে ডেভিড বেঞ্জামিন নামে একজন লেখক এই ধরনের পাতানো কুস্তির আশঙ্কা প্রকাশ করেন। কিন্তু জাপানিরা তখন তার এ বক্তব্য আমলে নেয়নি। ১৯৯৬ সালে দুজন সুমো কুস্তিগির পাতানো খেলা ও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করেন। অল্প কদিনের মধ্যে রহস্যজনক পরিস্থিতিতে এঁরা দুজনেই মারা যান।

২০০২ সালে লেভিট ও তাঁর সহকর্মী মার্ক ডুগান সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে সাতটি কুস্তিতে জয় লাভ করে যেসব কুস্তিগির ১৫ নম্বর কুস্তিতে অংশ নেন, তাঁরা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে জয় লাভ করেন। অথচ সংখ্যাতাত্ত্বিক সম্ভাবনা অনুসারে এঁদের ৪৮.৭ শতাংশ বিজয়ী হতে পারেন। এতে প্রমাণিত হয় যে সুমো কুস্তিতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়ে থাকে। কিন্তু জাপানি কর্তৃপক্ষ সরাসরি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। এ ধরনের অভিযোগ ছাপানোর জন্য জাপানি আদালত ২০০৭ সালে একটি জাপানি কাগজকে জরিমানা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্য চাপা দিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ২০১১ সালে জাপানি শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে কুস্তিগিরদের সেলফোনের খুদে বার্তা বিশ্লেষণ করে পাতানো কুস্তির অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০১১ সালে মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত কুস্তির ফলাফল বাতিল ঘোষিত হয়। (Economist, February 12, 2011, 36) অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত সংখ্যাতত্ত্বের কাছে প্রতারক কুস্তিগিরদের হার মানতে হলো।