» » ‘আজব’ ও ‘জবর-আজব’ অর্থনীতি

৫. আজব তথ্য

অজস্র আজব তথ্যে ঠাসা এ দুটি বই। কোনো কোনো তথ্য বই দুটির বক্তব্য প্রতিপাদনের জন্য প্রয়োজন ছিল। আবার কোনো কোনো তথ্য আনন্দ বা জ্ঞানদানের জন্য পরিবেশন করা হয়েছে। কয়েকটি উদাহরণ নিচে তুলে ধরা হলো :

নিউ ইয়র্ক শহরে ঘোড়ার নাদার বিভীষিকা

বিশ শতকের শুরুতে নিউ ইয়র্ক শহরে ২ লাখ ঘোড়া ছিল। ঘোড়া ও ঘোড়াবাহিত শকটই ছিল শহরে যাতায়াতের প্রধান বাহন। নিউ ইয়র্ক শহরে প্রতি ১৭ জন লোকের জন্য একটি ঘোড়া ছিল। ১৯০০ সালে ঘোড়ার গাড়ির দুর্ঘটনায় নিউ ইয়র্কে ২০০ ব্যক্তি নিহত হয়, পক্ষান্তরে ২০০৭ সালে মোটরগাড়ির দুর্ঘটনায় মারা যায় ২৭৪ জন, যদিও এ সময়ে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। তবে ঘোড়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্ঘটনা নয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ঘোড়ার নাদা পরিষ্কার করা। নিউ ইয়র্ক শহরে তখন দৈনিক জমত ৫০ হাজার মেট্রিক টন ঘোড়ার মল। এভাবে বছরে জমা হতো ১ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টন নাদা। নিউ ইয়র্ক শহরের বিভিন্ন খালি জমিতে গড়ে উঠত নাদার স্তূপ। কোথাও কোথাও এ স্তূপ ৬০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতো। রাস্তার দুধারেও জমানো হতো ঘোড়ার মল। বৃষ্টি হলে ঘোড়ার নাদা গলে রাস্তাঘাট সয়লাব হয়ে যেত। নাদার গন্ধে সারা শহরে এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতো। আজ থেকে ১০০ বছর আগে নিউ ইয়র্ক শহরে তাই নগর উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ঘোড়ার নাদা। ১৮৯৮ সালে নিউ ইয়র্কে প্রথম আন্তর্জাতিক নগর উন্নয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আশা করা হয়েছিল, ১০ দিনব্যাপী এ সম্মেলনে নগর উন্নয়নের জন্য ঘোড়ার নাদার একটি সন্তোষজনক সমাধান পাওয়া যাবে। তিন দিনের মধ্যে বিশেষজ্ঞরা একমত হন যে এ সমস্যার কোনো সমাধান নেই এবং তারা বাড়ি ফিরে গেলেন। ১৮৯৮ সালে বিশেষজ্ঞরা যে সমস্যার কোনো সমাধান জানতেন না, সে সমস্যা মোটরচালিত যান আবিষ্কারের ফলে তিন দশকের মধ্যে সম্পূর্ণ দূর হয়ে গেল। এ ঘটনা এ কথাই প্রমাণ করে যে কারিগরি পরিবর্তনের সম্ভাবনা অসীম।

নামে কী আসে যায়

আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, নামের সঙ্গে মানুষের প্রকৃত অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। ধরুন, নিউ ইয়র্ক শহরে রবার্ট লেনের পরিবারের কথা। কয়েকটি পুত্রসন্তানের জন্মের পর ১৯৫৮ সালে জন্ম নিল আরেকটি ছেলে। খুশি হয়ে বাপ ছেলের নাম দিলেন Winner Lane (বিজয়ী লেন)। এর কিছু দিন পর আরেকটি ছেলে হলো। বাপ এ ছেলের নাম রাখলেন Loser Lane (পরাজিত লেন)। নাম থেকে সবাই আশা করেছিল যে বিজয়ী লেন কেউকেটা হবে আর পরাজিত লেন থাকবে হতাশের আর নিষ্ফলের দলে। বাস্তব জীবনে দেখা গেল বিজয়ী লেন হলো অশিক্ষিত দাগি আসামি। আর পরাজিত লেন হলো উচ্চশিক্ষিত ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা। সবাই আদর করে লুজারকে বলত লু। তাঁর পরাজিত (লুজার) নাম হারিয়ে গেল।

আরেকটি ঘটনা বিবেচনা করুন। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে অলবনি শহরে পতিতাবৃত্তির দায়ে ছেনালি (Temptress) নামে ১৫ বছরের এক কিশোরীকে আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক রেগে বললেন, মেয়ের নাম ছেনালি রাখাতেই সে পতিতা হয়েছে। প্রকৃত দোষী তার মা, যিনি এ ধরনের নাম রেখেছেন। মাকে ডাকা হলো। মা বললেন, তাঁর মেয়ের নাম রাখা হয় একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের চরিত্র Tempest-এর নাম অনুসারে। Tempest নামের বানান না জানাতে স্কুলে তার নাম হয়ে যায় Temptress বা ছেনালি। নেহাত বানান ভুলে মেয়েটি পতিতা হয়ে গেল! এ মতের সমালোচকেরা অবশ্য বলবেন, নামের সঙ্গে পতিতাবৃত্তির কোনো সম্পর্ক নেই। এ মেয়ের নাম ছেনালি না রেখে সতী-সাবিত্রী রাখলেও সে পতিতা হতে পারত।

লেভিট ও ডুবনার জনপ্রিয় নামগুলোর সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য : শিশুদের নামের পরোক্ষ প্রভাব তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর পড়তে পারে। শিক্ষিত ও বিত্তবান পিতামাতাদের পছন্দের নামের তুলনায় অসচ্ছল ও অশিক্ষিত পরিবারের সন্তানদের নাম ভিন্ন হয়। অশিক্ষিত ও অসচ্ছল পরিবারের সন্তানেরা পরবর্তী জীবনে সাফল্য অর্জন করতে পারে না। যেমন ধরুন, মার্কিন সচ্ছল শ্বেতাঙ্গ পরিবারে পুরুষ বাচ্চাদের জনপ্রিয় নাম হচ্ছে : বেঞ্জামিন, স্যামুয়েল, জোনাথন, আলেকজান্ডার এবং অ্যান্ড্র। গরিব ঘরের শ্বেতাঙ্গ পুরুষ শিশুদের পছন্দের নাম হলো : কডি, ব্র্যান্ডন, এন্টোনি, জাস্টিন, রবার্ট। তাই বেঞ্জামিন নামের একটি লোক কডি নামের ব্যক্তির চেয়ে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর তা নামের অর্থের জন্য নয়; পিতা-মাতার আর্থিক ও সামাজিক অবস্থানের ভিন্নতার জন্য।

গাড়ি চুরি রোধে বেতারতরঙ্গ প্রেরণ যন্ত্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৩.৬ কোটি গাড়ি, ১১ কোটি ট্রাক ও ১০ লাখ বাস রয়েছে। কাজেই গাড়ি বিক্রেতাদের মতো গাড়ি চোরদেরও সেখানে রমরমা ব্যবসা রয়েছে। বছরে প্রায় ১২ লাখ গাড়ি চুরি হয়। অথচ ২০০৮ সালে বাংলাদেশে গাড়ি, ট্যাক্সি ও জিপ মিলিয়ে মোট মোটরচালিত বাহন ছিল প্রায় ২ লাখ ৫৯ হাজার। কাজেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চোরাই গাড়ির ব্যবসা বাংলাদেশের মোট গাড়ি ব্যবসার প্রায় পাঁচ গুণ। গাড়ি চুরি রোধে প্রধানত দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতো। কেউ কেউ গাড়িতে বেশ বড় ধরনের তালা লাগাত। এসব তালা ভাঙতে হাতুড়ি ব্যবহার করতে হয়। উপরন্তু এ ধরনের তালা ভাঙতে গেলে স্টিয়ারিং হুইল ক্ষতিগ্রস্ত হতো, যার ফলে চোরাই গাড়ির দাম কমে যেত। দ্বিতীয়ত, কোনো কোনো গাড়িতে বিপদসংকেতের ঘণ্টা বা অ্যালার্ম লাগানো হতো। এই ঘণ্টা নিষ্ক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত চোরদের ধরা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে এসব ব্যবস্থা সত্ত্বেও গাড়ি চুরি তেমন কমেনি। এর কারণ হলো, চোরাই গাড়ি কেনে গাড়ির ওয়ার্কশপ বা কারখানাগুলো। তালা বা অ্যালার্মের জন্য চোরের ঝুঁকি বেড়ে গেলেও তাতে ক্রেতা ওয়ার্কশপগুলোর কোনো অসুবিধা হয়নি। সম্প্রতি লোজেক (Lojack) নামে তাসের প্যাকেটের সমান রেডিও ট্রান্সমিটার (তরঙ্গ প্রেরণকারী) বাজারজাত করা হয়েছে। এই ট্রান্সমিটারটি অতি সহজে গাড়ির ভেতর লুকিয়ে রাখা যায়। লোজেকের তথ্যসহ পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে বেতার সংযোগের মাধ্যমে ট্রান্সমিটারটি চালু করে গাড়িটির সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে পারে ও গাড়িটি উদ্ধার করতে পারে। এর প্রথম লাভ হলো গাড়িটির যন্ত্রপাতি সরিয়ে গাড়িটির ক্ষতি করার আগেই গাড়িটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয় লাভ হয় সমাজের। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চোরাই গাড়ি ওয়ার্কশপে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই অতি সহজেই চোরাই গাড়ির ক্রেতা-ওয়ার্কশপ ধরা সম্ভব হয়। যেহেতু লোজেক যন্ত্রটি ছোট এবং কোন গাড়িতে লোজেক লাগানো আছে তা জানা সহজ নয়, সেহেতু চোরাই ওয়ার্কশপগুলি সতর্ক হয়ে যায় এবং ধরা পড়ার আশঙ্কা কম তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চোরাই গাড়ি রাখতে অস্বীকার করে। একটি সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, কোনো শহরে ১ শতাংশ গাড়িতে লোজেক লাগালে গাড়ি চুরি প্রায় ২০ শতাংশ কমে যায়। এই অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে, শুধু চোরদের পেছনে দৌড়িয়ে লাভ হবে না। বরং যারা চোরদের আশ্রয় দেয় তাদের ধরতে পারলে চুরি অনেক কমে যাবে। অবশ্য কোনো কোনো মোবাইল ফোন কোম্পানি বাংলাদেশে অনুরূপ যন্ত্র চালু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত এতে বড় ধরনের সাফল্যের খবর পাওয়া যায়নি। যন্ত্র এক হলেও বাংলাদেশের চোর ও পুলিশ হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সহকর্মীদের তুলনায় অধিকতর সেয়ানা।

ইতিহাসের সর্বাধিক শিশু অপহরণের ঘটনা

১৯৮৭ সালের ১৫ এপ্রিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজস্ব বিভাগের হিসাব থেকে ৭০ লাখ শিশু হারিয়ে যায়। মানুষের ইতিহাসে এর আগে কখনো এত শিশু হারিয়ে যাওয়ার নজির নেই। প্রচলিত নিয়মে শিশুদের জন্য কর রেয়াত দেওয়া হয়। যেকোনো করদাতা তাঁর করের বিবরণীতে শুধু শিশুর নাম লিখে করসুবিধা দাবি করতে পারতেন। রাজস্ব বিভাগের সন্দেহ হয় যে এ সুবিধার অপব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন নিয়ম করা হলো যে আয়কর বিবরণীতে প্রতিটি শিশুর সামাজিক নিরাপত্তা নিবন্ধনের তথ্য দিতে হবে। এ নিয়ম ১৯৮৭ সাল থেকে কার্যকর করা হয়। নতুন নিয়মের ফলে যারা নির্ভরশীল সন্তানদের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছিলেন তারা ভুতুড়ে সব নাম বাদ দিয়ে দেন। দেখা গেল যে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ক্ষেত্রে শিশুদের কথা বলে কর রেয়াতের দাবি ছিল ভুয়া। এ তথ্য থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, ফাঁকি ধরার ও শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকলে ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সবাই সরকারকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে।

সান্তা ক্লজের সঙ্গে মার্কিন পতিতাদের মিল

আপাতদৃষ্টিতে পতিতা ও সান্তা ক্লজের মধ্যে কোনো মিল নেই। সান্তা ক্লজ পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী। শিশুরা বিশ্বাস করে যে বড়দিনের রাত্রে যখন তারা ঘুমিয়ে থাকে তখন সান্তা চিমনি দিয়ে ঢুকে তাদের জন্য উপহারসামগ্রী রেখে যায়। যদিও সান্তা ক্লজের এ কাহিনি মিথ্যা, তবু এ আজগুবি কাহিনি নির্দোষ শিশুদের নির্মল আনন্দ প্রদান করে। প্রতিতুলনায় পতিতারা সমাজে অবক্ষয়ের সৃষ্টি করে। নৈতিক দিক থেকে পতিতা ও সান্তা ক্লজের অবস্থান বিপ্রতীপ মেরুতে। তবু লেভিট ও ডুবনার মনে করেন যে অর্থনৈতিক দিক থেকে সান্তা ক্লজ ও অনেক পতিতা অভিন্ন। উভয়েই খণ্ডকালীন শ্রমিক। বড়দিনের সময় সান্তা ক্লজ সাজা একটি অস্থায়ী খণ্ডকালীন চাকরি। উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিলে সান্তা ক্লজের কাজ করার জন্য লোকের অভাব হয় না। তেমনি, বছরের কোনো সময় পতিতার চাহিদা বেড়ে গেলে পতিতার অভাব হয় না। এ প্রসঙ্গে লেভিট ও তার সহকর্মীদের শিকাগো শহরে ওয়াশিংটন পার্ক এলাকায় পতিতাদের সম্পর্কে সমীক্ষার তথ্যগুলি স্মরণ করা যেতে পারে। ওই এলাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস ৪ জুলাইয়ের সময় পতিতাদের চাহিদা বেড়ে যায়। এর কারণ হলো, প্রথাগতভাবে মার্কিনরা ৪ জুলাইয়ের সময় দূর-দূরান্ত থেকে পরিবারের পুনর্মিলনীর জন্য ছুটে আসে। এভাবে শিকাগো শহরে বাইরে থেকে অনেক লোক আসে। তাই পতিতার চাহিদা বহুগুণ বেড়ে যায়। তবু জোগানের কোনো ঘাটতি দেখা যায় না। অবশ্যই শিকাগো শহরের স্থায়ী পতিতারা এ সময় অনেক বাড়তি ব্যবসা করে। তবে শুধু স্থায়ী পতিতারা অতিরিক্ত সময় কাজ করে এ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় না। কাজেই বড়দিনের সান্তা ক্লজদের মতো অতিরিক্ত শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। দেখা যাচ্ছে যে পতিতাবৃত্তিতে খণ্ডকালীন কর্মীর অভাব হয় না। লেভিট ও তাঁর সহকর্মীদের সমীক্ষা থেকে দেখা যায়, যেসব গৃহবধূ সারা বছর সতী-সাধ্বীর জীবন যাপন করে থাকেন তাদের কেউ কেউ স্বাধীনতা দিবসের ছুটিকালে খণ্ডকালীন পতিতার কাজ করে দুপয়সা কামিয়ে নেন। চাহিদা কমে গেলে আবার তারা নিয়মিত জীবনে ফিরে যায়, যেমনি বড়দিনের শেষে সান্তা ক্লজের পোশাকধারী দোকানকর্মীরাও তাদের নিয়মিত জীবনে ফিরে যায়।

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হাসে কৃত্রিম আগ্নেয়গিরি

লেভিট ও ডুবনার মনে করেন, সব জটিল সমস্যার অতি সহজ সমাধান আছে। তাঁরা তাঁদের এই আশাবাদ বিজ্ঞানের জটিল সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করতে চান। তাঁদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিঃসন্দেহে একটি বড় সমস্যা। কিন্তু এর সমাধান তত জটিল নয়। তাঁরা মনে করেন যে জলবায়ুর ওপর আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের প্রভাব বিশ্লেষণ করলেই এ ক্ষেত্রে কী করণীয় তা সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব। ১৯৯১ সালে ফিলিপিনসে মাউন্ট পিনাটুবো (Mount Pinatubo) নামক আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটে। এ ধরনের বিস্ফোরণের ফলে যে সালফার ডাই-অক্সাইড মহাশূন্যের দিকে উৎক্ষিপ্ত হয়, তার সবটুকুই পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে না। তার একটি অংশ জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মহাশূন্যে একটি আস্তরণ সৃষ্টি করে, যা সূর্যকিরণ প্রতিহত করে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে উত্তাপ কিছুদিনের জন্য কমে যায়। মাউন্ট পিনাটুবো বিস্ফোরণের পর এক বছর পৃথিবীর তাপমাত্রা এক ডিগ্রি ফারেনহাইট কম ছিল। তাই, যদি নিয়মিতভাবে মহাশূন্যে সালফার ডাই-অক্সাইড নিক্ষেপ করা যায়, তবে বিশ্বের তাপমাত্রা কমানো সম্ভব। সমস্যা হলো, মহাশূন্যে সালফার ডাই অক্সাইড কীভাবে নিয়মিত ছোঁড়া হবে? এ সম্পর্কেও লেভিট ও ডুবনারের সুপারিশ রয়েছে। তারা বলেছেন, যদি পৃথিবীর ওপরে ১৮ মাইল দীর্ঘ একটি হোসপাইপ শূন্যে ভাসমান বেলুন দিয়ে উড়িয়ে রাখা যায়, তবে এ পাইপের মাধ্যমে শূন্যে সালফার ডাই-অক্সাইড পাঠানো সম্ভব। অর্থাৎ সালফার ডাই অক্সাইড নিক্ষেপের জন্য প্রয়োজনীয় হোসপাইপ বসানো গেলেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে। এতে মোট খরচ হবে ২৫০ মিলিয়ন ডলার।

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে লেভিট ও ডুবনারের এই সুপারিশ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন যে কারিগরি দিক থেকে তাঁদের বক্তব্য আগাগোড়া ভুলে ভরা (এলিজাবেথ কলবার্ট, ২০০৯)। শূন্যে ভাসমান ১৮ মাইল দীর্ঘ হোসপাইপের সুপারিশ বাঙালি পাঠকদের রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কারের কাহিনি মনে করিয়ে দেয় :

সকলে মিলি যুক্তি করি শেষে

কিনিল ঝটা সাড়ে-সতেরো লক্ষ,

ঝাঁটের চোটে পথের ধুলা এসে

ভরিয়া দিল রাজার মুখবক্ষ।

ধুলায় কেহ মেলিতে নারে চোখ,

ধুলার মেঘে পড়িল ঢাকা সূর্য,

ধুলার বেগে কাশিয়া মরে লোক,

ধুলার মাঝে নগর হল ঊহ্য।

কহিল রাজা, ‘করিতে ধুলা দূর

জগৎ হল ধুলায় ভরপুর!’

লেভিট আর ডুবনারের প্রস্তাবিত ১৮ মাইল লম্বা হোসপাইপ দিয়ে দুনিয়া ভরে দিলে সাড়ে-সতেরো লক্ষ ঝাঁটার মতো লঙ্কাকাণ্ডই ঘটবে। লেভিট আর ডুবনারের সব আজব তথ্য বাস্তব না হলেও তাঁদের বক্তব্য খুবই কৌতুকপ্রদ। তাদের আজগুবি তথ্যগুলির মধ্যে একটি বিশেষত্ব লক্ষণীয়। এঁরা আশাবাদী। তারা মনে করেন যে সব সমস্যারই অতি সহজ সমাধান রয়েছে। সহজ সমাধান খুঁজতে গিয়ে এঁদের বক্তব্য অনেক সময় আজব হয়ে গেছে।