এডুলিচারের বানান রীতি কেমন হবে? এটা একটি প্রশ্ন বটে! এই প্রশ্নের সহজ একটি সমাধান আছে বৈকি! একটি দেশে, একটি ভাষার জন্য কতগুলো বানান রীতি অনুসৃত হতে পারে?

পশ্চিম বঙ্গ সরকার ও শিক্ষা পর্যদ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত ও তাদের আকাদেমি কর্তৃক সংস্কারকৃত বানান রীতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশে বাংলা একাডেমি প্রণীত বানান রীতি মূলত পশ্চিম বঙ্গ আকাদেমি কর্তৃক সংস্কারকৃত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানান রীতির অনুসৃতি মাত্র। দুই একস্থানে সামান্য ভিন্ন থাকলেও তা বেশ গুরুত্ব দেওয়ার মত কিছু নয়।

অপর দিকে, পশ্চিম বঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের নিজস্ব বানান রীতি অনুসরণ করে এবং বাংলাদেশে প্রথম আলো তাদের নিজস্ব বানান রীতি অনুসরণ করে। একটি ভাষার জন্য চারটি বানান রীতির প্রচলন থাকার পরও আরেকটি নূতন বানান রীতি চালু করা অযৌক্তিক এবং বিভ্রান্তিকর।

কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সত্য হচ্ছে, এই চারটি বানান রীতিই যথেষ্ট পুষ্ট নয়, খোদ রীতি প্রণেতারাও পুরোপুরি তাদের প্রণীত বানান রীতি অনুসরণ করছে না। ফলে নূতন বানান রীতির প্রশ্ন থেকেই যায়, বরাবর।

বাংলা ভাষায় প্রথম বানান রীতি প্রণীত হয়েছিল ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রত্যক্ষ উৎসাহে সেই বানান রীতি প্রণয়ন ও প্রবর্তনের চেষ্টা হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই বানান রীতিতে মেনে নিয়ে স্বাক্ষরও করেছিলেন। সেই কারণে সমগ্র রবীন্দ্র সাহিত্য ও শরৎ সাহিত্য নূতন প্রবর্তিত বানান রীতিতে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল। এখনও তা অব্যাহত রয়েছে।

এডুলিচারের বানান রীতি কোন পথে?

বানান রীতি প্রবর্তিত হওয়ার পর নূতন প্রকাশিত গ্রন্থাদিতে সেই রীতি অনুসৃত হবে এটাই ছিল বাঞ্চনীয়। কিন্তু নূতন প্রবর্তিত বানান রীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা বা সেই বানান রীতিকে মেনে না নেওয়ার কারণে বহু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে লেখকদের খেয়াল-খুশি মত বানান অনুসরণ করে।

বর্তমানে পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশে সরকারি হস্তক্ষেপে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত এবং আকাদেমি ও একাডেমি কর্তৃক সংস্কারকৃত বানান রীতি অনুসরণে লেখক ও প্রকাশকেরা বাধ্য হচ্ছেন। এটি শুভ লক্ষণ। কিন্তু এই শুভ লক্ষণের ভিতর একটি অশুভ কর্মতৎপরতাও লক্ষ্যণীয়।

বানান রীতি প্রণীত হওয়ার পূর্বে বিশেষ করে বাধ্যতামূলক বানান রীতি অনুসরণ করার সরকারি সিদ্ধান্তের পূর্বে প্রকাশিত গ্রন্থাদি কোন বানান রীতিতে পুনর্মুদ্রিত হবে সেই বিষয়ে কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নেই প্রণীত বানান রীতিতে।

এডুলিচার মনে করে, নূতন বানান রীতি প্রবর্তিত হওয়ার পূর্বে প্রকাশিত গ্রন্থাদিতে নূতন প্রবর্তিত বানান রীতি অনুসরণ বাধ্যতামূলক নয় বরং আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন ও ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন/শেয়ার-আলাইক লাইসেন্সে সেই সকল বানান সংশোধন এখতিয়ার বহির্ভূত। এবং নূতন বানান রীতি প্রবর্তিত হওয়ার পর প্রকাশিত গ্রন্থাদিতেও যদি লেখক নূতন বানান রীতি অনুসরণ না করে থাকেন, সেই সকল গ্রন্থের বানান পরিবর্তন আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন ও ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন/শেয়ার-আলাইক লাইসেন্সে এখতিয়ার বহির্ভূত, যদি না এই বিষয়ে লেখকের প্রমাণযোগ্য কোন সম্মতি না থাকে। এই ক্ষেত্রে এডুলিচার বানান রীতি প্রবর্তনের পূর্বে প্রকাশিত এবং পরে প্রকাশিত হলেও লেখক কর্তৃক নূতন বানান রীতি অনুসরণ না করে প্রকাশিত লেখাগুলোকে ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন/শেয়ার-আলাইক লাইসেন্সের আওতাভুক্ত বিবেচনা করে। ফলে, এডুলিচার লেখকের জীবদ্দশায় প্রকাশিত গ্রন্থাদি বা লেখার সর্বশেষ সংস্করণে বিদ্যমান বানানকে অক্ষুণ্ণ রাখাকেই সর্বাধিক যৌক্তিক বিবেচনা করে।

অতএব, এডুলিচার কোন কারণেই প্রকাশিত গ্রন্থাদির বানানে হস্তক্ষেপ করে না। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮ এপ্রিল ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বানান রীতির প্রকাশ করেছেন ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে। সঙ্গত কারণে বঙ্কিমচন্দ্র নূতন প্রবর্তিত বানান রীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না, এবং তিনি জীবিত থাকলে এই বানান রীতি অনুসরণ করতেন কিনা তাও জানা সম্ভব নয়। তাই, এডুলিচার তার নিজস্ব নীতির অনুসরণ করে, বঙ্কিমচন্দ্রের জীবদ্দশায় প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থাদির সর্বশেষ সংস্করণের বানানকে অনুসরণ করে প্রকাশ করবে। এই রীতি অন্যান্য সকল লেখকের বিষয়েও অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ, এডুলিচার কখনও প্রকাশিত গ্রন্থের বানানকে পরিবর্তন করবে না।

এই বিষয়ে আরেকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন, যে সকল গ্রন্থাদির লেখকের জীবদ্দশায় প্রকাশিত সর্বশেষ সংস্করণ এডুলিচারের হস্তগত হয়নি, বরং পরবর্তী অন্য কোন সংস্করণ হস্তগত হয়েছে, সেই ক্ষেত্রে এডুলিচার প্রাপ্ত গ্রন্থের বানানকে অনুসরণ করবে এবং যখনই উদ্দিষ্ট গ্রন্থটি হস্তগত হবে, তাৎক্ষণিক সেই গ্রন্থানুসারে বানানকে পরিবর্তিত করে নিবে।