» » আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি

আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি

আকবর আলি খান রচিত আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি গ্রন্থটি লেখকের অর্থনৈতিক জ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা আর নিবিড় গবেষণার নির্যাস। প্রবন্ধ গুলোর বিষয়বস্তু কৌতুহল উদ্দীপক যা পাঠকে আগ্রহী করবে। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে পৌষ ১৪১৯ (জানুয়ারি ২০১৩); প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫, বাংলাদেশ; প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছেন প্রতিথযশা শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী, তাঁর সহযোগিতায় ছিলেন অশোক কর্মকার। এই গ্রন্থে রয়েছে ১০টি প্রবন্ধ; প্রতিটিতে লেখক ভিন্ন বিষয় আলোচনা করেছেন। প্রবন্ধগুলি অর্থনীতি, সুশাসন আর সমাজ সম্পর্কে আমাদের বিদ্যমান ধারণাগুলোকে প্রশ্ন করে যায় নিরন্তর। উন্মোচিত করে চিন্তার এক নতুন দিগন্ত। গভীর বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ প্রবন্ধগুলিতে যেমন লেখক নিজস্ব বিশ্লেষণ ছাড়াও বিভিন্ন পণ্ডিতদের বিশ্লেষণ গুলোকে বিন্যস্ত করেছেন নিপূণভাবে।

হতাশাগ্রস্থ বিজ্ঞান নামে অভিহিত অর্থনীতি ছিল একদিন সমাজবিজ্ঞানের দুয়োরানি। অথচ অর্থনীতিই আজকের সমাজবিজ্ঞানের সম্রাজ্ঞী। এর আওতা শুধু চাহিদা-জোগান বা রুটি-রোজগারেরর মতো আটপৌরে সমস্যায় সীমিত নয়। অর্থনৈতিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, সংগঠন ও সিদ্ধান্ত তত্ত্বে এবং সমাজতত্ত্বের সব শাখায়। জন্ম, বিবাহ, ধর্ম, এমনকি ভাষা নিয়ে গবেষণায়ও প্রয়োগ করা হচ্ছে অর্থনীতির সূত্র। দুর্ভাগ্যবশত অর্থনীতির বিকাশমান মাত্রা ও নতুন ধারাসমূহের বৈভন এখনো বাংলা ভাষায় প্রতিফলিত হয়নি। বাংলায় অর্থনীতি এখনো মান্ধাতা আমলের পাঠ্যবিষয় ও বাম-ডানির তরজায় সীমাবদ্ধ। গতানুগতিক গণ্ডির বাইরের কিছু অর্থনৈতিক তত্ত্বের সঙ্গে বাঙালি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবে এ বই।

প্রবন্ধগুলোর বিষয়বস্তু বিচিত্র ও কৌতূহলোদ্দীপক। একটি প্রবন্ধের শিরোনাম ‘ভেগোলজি ও অর্থনীতি।’ দুটি প্রবন্ধে অর্থনীতিতে অনভিপ্রেত পরিণাম ও মিত্রপক্ষের গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। দুটি প্রবন্ধের উপজীব্য বিশ্বায়ন। সুখ ও অর্থনীতির সম্পর্ক নিয়ে পর্যালোচনা দেখা যাবে একটি নিবন্ধে। তথ্য অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ‘সুকতলার অর্থনীতি ও জুতার রাজনীতি’তে। একটি প্রবন্ধে জন্মদিনের অর্থনীতি ও আরেকটি প্রবন্ধে সরকারের অপচয় নিয়ে বিশ্লেষণ রয়েছে। নির্ভেজার গবেষণামূলক এই বই লেখা হয়েছে সহজ ভাষায়, বৈঠকি মেজাজে।

বইটির অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লেখক নিজে কোন সিদ্ধান্ত দেন নি বরং নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করে গেছেন যেটা সবচেয়ে মুগ্ধ করবে পাঠককে। পরস্পর বিরোধী তত্ত্বগুলিকে বিশ্লেষণ করে গেছেন এমনভাবে যে, যে কোন একটা পড়লে মনে হয় এটাই ঠিক। এইখানেই লেখকের স্বার্থকতা। তিনি পেরেছেন, নিরপেক্ষ থাকতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভারটা পাঠককেই দিয়েছেন। একটা একটা প্রবন্ধ শেষে পাঠক উদ্দীপ্ত হয় সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে আরও জ্ঞানার্জন করতে।

আজব ও জবর আজব অর্থনীতি বইটি অর্থনীতির একাডেমিক কোনো বই নয়। বইটি গতানুগতিক গণ্ডীর বাইরের কিছু অর্থনৈতিক তত্ত্বের সঙ্গে বাঙালি পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেবে। অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা কম যেমন— সামষ্টিক অর্থনীতি, বিভিন্ন বিষয়ের উপর অর্থনীতির প্রভাব এগুলো সহজভাবে জানার জন্য বইটি মন্দ নয়।

উৎসর্গ

আমার পরম স্নেহের ছোট ভাই

জি এম জিয়াউদ্দিন খান

কবীর উদ্দিন খান

এবং

তাঁদের সহধর্মিণী

মাকসুদা খান

আনোয়ারা খান