সপ্তদশ অধ্যায় : বাবুরের সমরখন্দ পুনবিজয়
আমার বুখারা পৌঁছানোর পর সেখানকার আমিররা আমাকে ভরপুরে স্বাগত জানালেন। তাঁরা মূল্যবান উপহার-সামগ্রী নিয়ে এলেন। বুখারা থেকে আমি সমরখন্দে ১৫১১ ঈসায়ী সনের অক্টোবরে পৌঁছালাম। সেখানেও আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হলো।
কাবুল ত্যাগের দশ মাস পরে আমি সমরখন্দে পৌঁছেছিলাম। নয় বছর পরে আমি সমরখন্দ আবারও লাভ করেছিলাম। আমি সমরখন্দের যে পথ ধরে এগিয়ে চলেছিলাম, দুই দিক থেকে নাগরিকেরা সড়ক সাজিয়ে রেখেছিল।
তারা আমাকে সাদর অভ্যর্থনা নিজ-নিজ ঢঙে করছিলেন। একজন বাদশাহ হিসেবে আমার কর্তব্য ছিল সমরখন্দের অধিবাসীদের তাদের ঐতিহ্যগত রীতি-রেওয়াজকে স্বাধীনভাবে পালন করতে দেওয়া, তবে ওই সময় আমাকে রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তির গুরুত্ব দিতে হচ্ছিল।
শাহ ইসমাঈল সমরখন্দে মুহম্মদ জান ও নজমে সানী নামক দুই ব্যক্তিকে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রক্ষক রূপে নিযুক্ত করে রেখেছিলেন। নিশ্চিত রূপে তিনি তাদের সমরখন্দে এই বিষয়ের উপর নজর রাখার জন্য রেখে গিয়েছিলেন যে, আমি সমরখন্দে পৌঁছে কোন কোন রীতি-রেওয়াজকে প্রাধান্য দিচ্ছি।
সমরখন্দে অনেক কাল ধরে উজবেকদের প্রভুত্ব ছিল, তারা হামেশাই শিয়া সম্প্রদায়ের রীতি-রেওয়াজের বিরোধিতা করত। তাদের এমন কোনো নৈকট্য শিয়াদের সঙ্গে হয়নি, যেমন নৈকট্য মির্জা ও মোগলদের সঙ্গে মিলে যায়। সমরখন্দে উজবেকদের প্রভুত্বের কারণে অধিকাংশ সমরখন্দিই উজবেকদের নিয়ম-কানুন গ্রহণ করেছিল। যদিও তাদের উজবেক নয়, সমরখন্দি বলা হতো, তবে উজবেকদের রীতি-রেওয়াজ অবলম্বনের ফলে তাদের আলাদা পরিচিতি গড়ে উঠেছিল।
সমরখন্দে প্রবেশ করার সময় সাদর অভ্যর্থনা লাভের পর আমি এই বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম যে, উজবেকদের চিন্তাধারা অবলম্বনকারী লোকেদের অভ্যর্থনা স্বীকার করব না।
এ সতর্কতা এ জন্যই আবশ্যক ছিল, কেননা, আমি শাহ ইসমাঈলের চিন্তাধারা স্বীকার করার ওয়াদা লিখিতরূপে দিয়েছিলাম। এ কথা আমার মনে রাখতে হচ্ছিল যে, মুহম্মদ জান ও নজমে সানীর দৃষ্টি আমার উপর নিবদ্ধ থাকতে পারে। তাঁরা আমার বিরুদ্ধে ইসমাঈলকে বার্তা দিতে পারেন।
উজবেকদের প্রত্যাবর্তন
শাহ ইসমাঈলের সৈন্যদের ইরানে ফিরে যাওয়ার কিছুদিন পরেই উজবেকরা পুনরায় পঙ্গপালের মতো তুর্কিস্তানে ঢুকতে লাগল। তখন পাতাঝরার মৌসুম চলছিল।
উজবেকদের উদ্দেশ্য ছিল তাসখন্দ পুনরাধিকার।
ওই সময়ে উজবেকদের মুখিয়া ছিল উবাইদ খাঁ নামক এক যুবা সরদার। সে বুখারায় প্রবেশ করতেই প্রতিজ্ঞা করল যে, সে যদি তাসখন্দ বিজয়ে সফল হয় তাহলে সে মুসলমানদের নিয়ম গ্রহণ করবে।
উবাইদ খাঁ এই প্রতিজ্ঞা ‘হজরত তুর্কিস্তান’-এর মাজারে গিয়ে সেখানে উপস্থিত লোকেদের সামনে করল। সুফি সন্ত খাজা আহমদ মসাজভী ‘হজরত তুর্কিস্তান’ নামে প্রসিদ্ধ।
হজরত খাজা আহমদ মসাজভী মধ্য এশিয়ার এমন এক সুফি সন্ত যিনি বহু দেশেই মান্য। ১১২০ ঈসায়ী সনে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর নেক যশের কীর্তি চারদিকে এইভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, ১৩৩৭ ঈসায়ী সনে তাইমুর বেগের মতো বাদশাহও তীর্থাযাত্রার রূপে হজরত তুর্কিস্তানের মাজারে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে হাজিরা দিয়েছিলেন। তিনি সেখানে একটি মসজিদও বিনির্মাণ করিয়েছিলেন যেটি ছিল নগরের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ। তীর্থ যাত্রীদের জন্য হজরত তুর্কিস্তানের মাজারের সাথে সাথে ওই মসজিদেরও গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল।
উবাইদ খাঁ কর্তৃক হজরত তুর্কিস্তানের মাজারে কৃত প্রতিজ্ঞাকে এমন লোকও শুনেছিলেন যাঁরা আমার নিকটজন ছিলেন। ওই নিকটজনদের মধ্য থেকেই একজন আমাকে উবাইদ খানের প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়েছিলেন।
কুল্লে মালিকে বাবুরের পরাজয়
এপ্রিল-মে ১৫১৩ ঈসায়ী সনে আমি উবাইদ খাঁ-র বিরুদ্ধে কুল্লে মালিকে আমার সেনা নামাই এবং আমাকে পরাজয় বরণ করতে হয়।১
ওই সময় আমি আমার তাঁবুতেই ছিলাম, তখন আমি আমার সেনার ধ্বংস ও উজবেকদের বিজয়বার্তা এল। এবার বুখারায় শরণার্থীর মতো অবস্থায় রয়ে গেলাম।
সমরখন্দ ছাড়লেন বাবুর
ওই সময় আমার পক্ষে শরণার্থী অবস্থায় সমরখন্দ ফিরে যাওয়ার সম্ভব ছিল না। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের কোনো রকম একত্রিত করলাম এবং হিসারের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলাম।
ওই সময়ে আমার সঙ্গে মাহম ও তার পুত্র হুমায়ূন ছিল। মোহরজাহী ও বারবুল ছিল। মাসুমা গুলরুখ (গুলবদন) নিজের পুত্র কামরানের সাথে ছিল। সঠিক রাস্তা আমার জানা ছিল না। কিছু স্থানীয় বাসিন্দা আমাকে পরামর্শ দেয় যে, ফারগানা হয়ে হিসার যাই।
আমি আশা নিয়ে ফারগানা যাওয়াই উত্তম বিবেচনা করলাম যে, সেখানে সৈয়দ খায়ের কাছ থেকে কোনো প্রকারের সাহায্য পাওয়া যাবে। আমার কাছে খবর আসতে থাকে যে, তাশখন্দ এখনও আহমদ কাসিম কোহবরের অধিকারে রয়েছে। আহমদ কাসিম কোহবরকে আমিই আমার পিছনে তাসখন্দের প্রতিনিধি করে রেখে এসেছিলাম। তবে আমি জানতাম যে, এ অধিকার বেশি সময় পর্যন্ত থাকবার নয়। উজবেকদের পক্ষ থেকে পুরো প্রস্তুতি সহকারে তাসখন্দ আক্রমণ করা হবে। আমার অনুপস্থিতির কারণে আমার সেনাপতি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তাসখন্দ তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে আরো একবার উজবেকদের হাতে চলে যাবে।
বাবুর হিসারে
বুখারার পর অনতিবিলম্বেই সমরখন্দ উজবেকদের অধিকারে চলে গেল। সমরখন্দ অধিকারের সময় তারা সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করল।
আমি জুলাই-আগস্টে হিসার পৌঁছে গেলাম। মির্জা খান দ্বারা প্রেরিত সামরিক সাহায্য আমি হিসারে প্রবেশ করেই পেয়ে গিয়েছিলাম। যে ফৌজি পাঠানো হয়েছিল তারা আমার জন্য তাদের শেষ রক্তবিন্দুটুকু বইয়ে দেওয়ার সাহস রাখত। বখ্ থেকে বৈরাম বেগও আমার কাছে সৈনিক পাঠালেন, কিন্তু তারা সংখ্যায় কেবল ৩০০ ছিল।
আমি একথাও শুনলাম যে, নজমে সানী একটি বড় সেনাদল নিয়ে বলখের রাস্তা ধরে আমার কাছে আসার জন্য রওনা হয়ে গেছেন।
নজমে সানীর বিষয়ে পরে আমি জানতে পারি যে, তিনি ১১,০০০ সৈন্য নিয়ে রওনা হয়েছিলেন, তবে যেইমাত্র খুরাসান সীমান্তে পৌঁছান তিনি খবর পেলেন যে, কুল্লে মালিকের কাছে আমার পরাজয় ঘটেছে, তখনই তিনি বলখ অভিমুখে রওনা দিলেন। তিনি সেখানে বৈরাম বেগের কাছে কুড়ি দিন পর্যন্ত অবস্থান করলেন।
তিনি শাহ ইসমাঈলের কাছে নিজের লোক পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাকে তাঁর পরবর্তী আদেশ বয়ে নিয়ে আসার কথা ছিল। শাহ ইসমাঈলের কাছ থেকে আসার পরই নজমে সানী কোনো পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছিলেন।২
মোগলদের আক্রমণের আশংকা
হিসারে আমি আমার শিবির নগর বসতির বাইরে ফেললাম। এর কারণ ছিল হিসারের মোগলরা আমাকে পছন্দ করত না। এরকম আগেও ছিল। তারা আমার সঙ্গে বিদ্রোহ করেছিল। আমার হিসারে অবস্থানের কথা শুনে তারা আবারও এমন পদক্ষেপ নিতে পারত।
আমি কিছু সময় কিম্-এ কাটালাম। এটা শাহ ইসমাঈলের শাসনের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখানে আমি সম্পূর্ণ রূপে নিরাপদ ছিলাম। বাবুরের এই সময়কার বিষয়ে বাবুরের সমকালীন ঐতিহাসিক হায়দার লিখেছেন, তিনি ওই সময়টি কুন্দুজে কাটান। তিনি সে সময়ে আর্থিক দুর্দশায় পড়েন। তিনি সময় কাটানোর জন্য বিনম্র ও সাদামাটা ভাবে ছিলেন। তিনি কোনো রকমে কাবুল পৌঁছানোর জন্য সামরিক সাহায্যের অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি ১৫১৪ ঈসায়ী সনের শেষে কাবুল পৌঁছাতে সমর্থ হন। তিনি সমরখন্দ পুনর্বিজয়ের চেষ্টায় নেমে পড়লেন। ওই সময় পর্যন্ত কাবুলের শাসনভার তাঁর সভাই নাসির মির্জা সামলেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, বাবুরের কাবুল পৌঁছানোর পর নাসির মির্জা পরম বিনয় ও শ্রদ্ধা-সম্মানের সঙ্গে তাঁকে ওই প্রকারের স্বাগত জানিয়েছিলেন যেমনটি কোনো প্রতিনিধি তাঁর বাদশাহর নিজের সামাজ্যে প্রবেশ করলে জানানো হয়। তিনি বাবুরকে বলেছিলেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে তিনি গজনী থেকে কাবুলে এসে সেখানকার দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করাটা তাঁর কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন।
নাসির মির্জার এই ব্যবহার বাবুরকে দয়াবান করে দিয়েছিল। তিনি তাঁর প্রতি অত্যধিক খুশি হয়েছিলেন। এই সময়ের জন্য অন্য ঐতিহাসিক লিখেছেন, গজনীতে ফেরার সময় পথিমধ্যে নাসির মির্জার আকস্মিক মৃত্যু হয়ে গেল। তাঁর মৃত্যুর সাথে-সাথেই গজনীতে ক্ষমতার জন্য দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ল। শেরিম তঘাল ক্ষমতার দাবিদারদের অন্যতম ছিলেন। তিনি মোগলদের সমর্থন পেয়েছিলেন। অন্য কিছু লোক যারা ক্ষমতাসীন হতে চাচ্ছিল, তাদের মধ্যে পাশাগড়ের বাবার নামও জুড়েছিল।
কিছু সরদার পরস্পরের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। তাঁরা বাবুরের পক্ষ থেকে গজনীর ক্ষমতার জন্য কারো নাম আসার পূর্বেই গায়ের জোরে গজনীর ক্ষমতায় নিজেই বসে যেতে চাচ্ছিলেন। ক্ষমতার দাবিদারি নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহও হয়ে গিয়েছিল।
তাঁরা বাবুরের দুর্বল অবস্থার সুযোগ নিতে চাচ্ছিলেন, অথবা তাঁরা একথা জানতেন না যে, বাবুর কাবুলে পৌঁছে গিয়েছেন।
দোস্ত বেগ হিসেব মতো অন্য দাবিদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বসেছিলেন।
ওই সময় কাশিম বেগের পুত্র কম্বর আলী, কুন্দুজ থেকে একটি বড় ফৌজ নিয়ে গজনী পৌঁছালেন। (কাশিম বেগের সঙ্গে বাবুরের অতি নিকট রক্তের সম্পর্ক ছিল) তিনি বাবুরের প্রতিনিধি রূপে বিদ্রোহীদের সতর্ক করলেন। তাদের মন-মস্তিষ্ক ঠিক করতে শক্তি প্রদর্শনকারীদের ধরে এনে এনে মৃত্যুর ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হলো। অনতিবিলম্বেই কাশিম বেগ শক্তি প্রদর্শনকারীদের দমন করে ফেললেন। মৃত্যুর কবল থেকে মুক্তি পাওয়া দাবিদাররা প্রাণভয়ে পালিয়ে গেল। শেরিম তঘাল কাশগড়ের দিকে পালিয়ে গেল। কাশগড়ের শাসন সৈয়দ খান নামক ব্যক্তির হাতে ছিল। তিনি তাঁকে আশ্রয় দিতে আপত্তি করলেন। শেরিম তঘাল কাশিম বেগের হাতে নিহত হওয়ার চেয়ে বাবুরের পায়ে পড়ে মৃত্যুবরণকে অধিক শ্রেয় বলে মনে করলেন।
তিনি অত্যন্ত মারাত্মক অবস্থায় কোনো রকমে বাবুরের নিকট পর্যন্ত পৌঁছালেন, বাবুরও তাঁর দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিলেন। অবশ্য, তাঁর পুরনো সেবার কথা মনে করে তাঁকে জীবনদান করা হলো। তাঁর চিকিৎসারও ব্যবস্থা করা হলো। তবে কিছুদিন পর তিনি মৃত্যুবরণ করলেন।
এই পর্যন্ত সময়-কালের মধ্যে বাবুর তাঁর অধিকাংশ সময় কাবুল এবং তার আশপাশের নগরগুলোতে মোগলদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে কাটিয়ে দিলেন। এই পর্যন্তকার সময় কালের মধ্যে বাবুরের দ্বিতীয় পুত্রের জন্ম হলো। তাঁর নাম রাখা হলো মুহম্মদ। পরে তিনি আসকারি নামে পরিচিত হন। আসকারির মা ছিলেন গুলরুখ বেগম। এক তাঁবুতে তাঁর জন্ম হয়েছিল।
বাবুরের এই সময় কালের বিষয়ে খাবন্দ আমির নামক ঐতিহাসিক আলোকপাত করেছেন।
খাবন্দ আমির কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বদিউজ্জামান বাইকুরার নিকটতম ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন মির্জা বংশীয়। তিনি কিছুকাল শাহ ইসমাঈলের বখ্-এ অনুগ্রহভাজন হয়ে থেকেছিলেন। কাবুল পৌঁছানোর পর বাবুর খাবন্দ আমিরকে কাবুলের ডেকে নিয়েছিলেন।
এই সময়টা বাবুরের কিছুটা স্বস্তিতে কাটছিল। ওই সময়ে মির্জাদের ঐক্যজোট বাবুরের পক্ষে এসে গিয়েছিল। মধ্যে এশিয়ার সকল প্রধান মির্জা সরদার মুহম্মদ খাজার নেতৃত্বে কাবুলে এসে বাবুরের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। বাবুরের প্রতি তাঁরা তাঁদের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন। বাবুর এই সময়কালে ঘুর ও ফিরোজ কোহে যাত্রা করেন।
বাবুর মির্জাদের সম্বন্ধকে আরো নিকটতর করে নেওয়ার জন্য নিজের এক কন্যাকে এক মির্জা যুবকের সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন। জামাতা হয়ে যাওয়া মির্জা যুবকের বয়স ছিল ২১ বছর, যেখানে বাবুরের কন্যা বয়স ছিল কেবল ৯ বছর। যুবক বলখের অধিবাসী ছিল।
এই সময়ে বাবুর কান্দাহারও যান। কান্দাহারে শান্তি ছিল। সেখানকার রাজনৈতিক বাতাবরণ সম্পূর্ণরূপে বাবুরের পক্ষে ছিল।
খাবন্দ আমিরের ভাষায়-’বহুমূল্য মণিমাণিক্য দিয়ে বাবুরকে স্বাগত জানানো হলো।
এই দিনগুলোতে বাবুর অনেক মির্জাকে কান্দাহারে উচ্চপদ দিয়ে সম্মানিত করেন। এই পদগুলো ইতোপূর্বে ইরানি ও উজবেকিদের অধীনে ছিল এবং ওই সময়ে শূন্য পড়ে ছিল।
এই সময়ে বাবুর কাবুলের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত এলাকাগুলোকে পূর্ণরূপে নিজের অধিকারে নিয়ে নেন। এই অভিযানে বাবা-কারা উপত্যকাসমূহ বাবুরের অধিকারে চলে আসে।
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- উজবেক সরদায় উবাইদ খাঁ-র বিরুদ্ধে সেনা নামানো এবং পরাজয় বরণের বিস্তারিত বিবরণ বাবুর দেননি। খান্দ আমীয় নামক ঐতিহাসিক উবাইদ খাঁয়ের সঙ্গে বাবুরের পরাজয়ের বিবরণ দিতে গিয়ে লিখেছেন, উবাইদ খাঁ’-র কাছে ৩,০০০ সৈনিক ছিল এবং বাবুর ৪০,০০০ সেনা নিয়ে রণাঙ্গণে নেমেছিলেন।
মুহম্মদ মজিদ তুরখান নামক ওই সময়ের অন্যতম ঐতিহাসিক বাবুরের সাথে ৫০০ সৈনিকের কথা লিখে উবাইদের ৩,০০০ লোকের কথা লিখেছেন। বাবুরের পরাজয়ের কারণের উপর আলোকপাত করতে গিয়ে মুহম্মদ মজিদ তুরখান দলিল দিয়েছেন যে, বাবুরের কম সংখ্যক সৈন্য নিয়ে ময়দানে নামার পিছনে, উজবেকদের শক্তিকে কম করে দেখার ভ্রান্তি ছিল। দুশমনের মোকাবিলায় আসায় সময় বাবুর ভেবেছিলেন হাতে-গোনা কিছু সংখ্যক উজবেক বিদ্রোহী, বুখারায় এসে ঢুকে থাকবে। তিনি ওই ৫০০ সৈনিকের শক্তি দিয়ে তাদের তাড়িয়ে বিদেয় করবেন। —অনুবাদক - ঐতিহাসিকেরা নজমে সানীর দ্বারা সামরিক সাহায্য না পৌঁছানোর পিছনে এই তথ্য প্ৰস্তুত করেছেন যে, তাঁর সঙ্গে যে সৈনিকেরা ছিলেন তারা ভালোমতো যুদ্ধ করতে জানতেন না। তাদের মধ্যে সাহসের অভাব ছিল। তাদের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক এমন সৈনিকও ছিল যাদের অবসরের বয়স এসে গিয়েছিল। তাদের দ্বারা শুধুমাত্র নগর রক্ষার কাজটাই চলতে পারত, রণক্ষেত্রে রণকৌশল দেখানোর ক্ষমতা তাদের মধ্যে আর অবশিষ্ট ছিল না।
নজমে সানী শাহ ইসমাঈলের কাছে এই মর্মে বার্তা পাঠিয়ে প্রতীক্ষায় ছিলেন যে, ইরান থেকে সুদক্ষ বাহিনী এসে যাক, তখনই তিনি বাবুরের সাহায্যের জন্য অগ্রসর হবেন। —অনুবাদক