ঘুটফুটে সন্ধ্যা। আকাশে অসংখ্য মেঘের ভিড়। এই বুঝি বৃষ্টি এলো। কাঠের সিঁড়িগুলো বেয়ে উপরে উঠে এসে কাসেদ দেখলো, বাসায় কেউ নেই। শুধু সালমা ড্রয়িং রুমে একখানা চৌকির ওপর লম্বা হয়ে শুয়ে কি একটা পত্রিকা পড়ছে।

কে কাসেদ ভাই, এই সন্ধ্যাবেলা কোত্থেকে?

মহাবিদ্যালয় মানে কলেজ থেকে, বাসায় কি কেউ নেই?

না, ওরা সবাই সিনেমায় গেছে।

তুমি যাওনি? যাইনি সে তো দেখতেই পাচ্ছেন। পত্রিকাটা বন্ধ করে উঠে বসে সালমা বললো, শরীরটা সেই সকাল থেকে ভালো নেই।

কেন, কী হয়েছে? ওর সামনে চৌকিতে এসে বসলো কাসেদ।

সালমা বললো, অসুখ করেছে।

কী অসুখ?

সালমা ফিক্‌ করে হেসে দিলো এবার যান, অতো কথার জবাব দিতে পারবো না। একটা কিছু পেলেই হলো, অমনি সেটা নিয়ে প্রশ্ন আর প্রশ্ন। কী বিশ্ৰী স্বভাব আপনার। কাসেদ গম্ভীর হয়ে গেলো। একটু পরে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, বিশ্ৰী স্বভাব দিয়ে তোমায় আর ব্যতিব্যস্ত করবো না, চলি এবার।

মুহুর্তে ওর পথ আগ্‌লে দাঁড়ালো সালমা। যাবেন কী করে, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে।

হোক, তাতে তোমার কী?

সালমা মুখ টিপে হাসলো একটুখানি। তারপর বললো, ইস, এত রাগ নিয়ে আপনি চলেন কী করে।

সহসা ওর খোলা চুলের গোছা ধরে একটা জোরে টান মারলো কাসেদ। রাগে ফেটে পড়ে বললো, ফাজিল মেয়ে কোথাকার। ইয়ার্কির আর জায়গা পাওনা, তাই না?

সালমার মুখখানা মান হয়ে গেলো। দেখতে না দেখতে চোখজোড়া পানিতে টলমল করে উঠলো ওর। সামনে থেকে সরে গিয়ে নিঃশব্দে আবার কোঁচের উপরে বসলো সে। পরক্ষণে ডুকরে কেঁদে উঠলো সালমা, আমি এমন কা করেছি যে, আপনি সব সময় আমার সঙ্গে অমন দুর্ব্যবহার করেন?

চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়িয়েও থমকে দাঁড়ালো কাসেদ।

সালমা কাঁদছে।

কৌচের ওপর উপুড় হয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে সে।

খোলা জানোলা দিয়ে আসা বাতাসে নয়, কান্নার আবেগে দেহটা কাঁপছে তার।

খোলা চুলগুলো পিঠময় ছড়ানো।

ধীরে ধীরে ওর পাশে এসে বসলো কাসেদ।

সালমা, সে ডাকলো ভয়ে ভয়ে।

সালমা কোনো উত্তর দিলো না।

ওর মাথার উপর আস্তে করে একখানা হাত রাখলে সে। সালমা সহসা উঠে বসলো। সালমা তীব্র দৃষ্টিতে তাকালো এক পলক ওর দিকে। তারপর তীব্ৰ বেগে ছুটে পাশের ঘরে চলে গেল সে।

কাসেদ ডাকলো, সালমা।

সালমা সজোরে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

তারপর আর কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না তার।

সেদিন অনেকক্ষণ এক ঘরে বসেছিলো কাসেদ। ভেবেছিলো হয়তো এক সময় রাগ পড়ে গেলে বাইরে আসবে সালমা।

সালমা আসেনি।

Leave a Reply