» » আয় রে আবার আমার চির-তিক্ত প্রাণ!

বর্ণাকার

আয় রে আবার আমার চির-তিক্ত প্রাণ!

আয় রে আবার আমার চির-তিক্ত প্রাণ!

গাইবি আবার কণ্ঠছেঁড়া বিষ-অভিশাপ-সিক্ত গান।

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

আয় রে আমার বাঁধন-ভাঙার তীব্র সুখ

জড়িয়ে হাতে কালকেউটে গোখরো নাগের

পীত চাবুক!

হাতের সুখে জ্বালিয়ে দে তোর সুখের বাসা ফুল-বাগান!

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

বুঝিসনি কি কাঁদায় তোরে তোরই প্রাণের সন্ন্যাসী!

তোর অভিমান হল শেষে তোরই গলার নীল ফাঁসি!

(তোর) হাসির বাঁশি আনলে বুকে যক্ষ্মা-রুগির রক্ত-বান,

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

ফানুস-ফাঁপা মানুষ দেখে, হায় অবোধ

ছুটে এলি ছায়ার আশায়,

মাথায় তেমনি জ্বলছে রোদ।

ফাঁকির ফানুস ছাই হল তোর,

খুঁজিস এখন রোদ-শ্মশান!

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

তুই যে আগুন, জল-ধারা চাস কার কাছে?

বাষ্প হয়ে যায় উড়ে জল সাগর-শোষা তোর আঁচে।

ফুলের মালার হুলের জ্বালায় জ্বলবি কত অগ্নি-ম্লান!

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

অগ্নি-ফণী! বিষ-রসানো জিহ্বা দিয়ে দিস চুমা,

পাহাড়-ভাঙা জাপটানি তোর – ভাবিস সোহাগ-সুখ-ছোঁওয়া!

মৃত্যুও যে সইতে নারে তোর সোহাগের মৃত্যু টান!

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

সুখের লালস শেষ করে দে, স্বার্থপর!

কাল-শ্মশানের প্রেত-আলেয়া! তুই কোথা বল

বাঁধবি ঘর?

ঘর-পোড়ানো ত্রাস-হানা তুই সর্বনাশের লাল-নিশান!

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

তোর তরে নয় শীতল ছায়া,

পান্থ-তরুর প্রেম-আসার,

তুই যে ঘরের শান্তি-শত্রু,

রুদ্র শিবের চণ্ড মার।

প্রেম-স্নেহ তোর হারাম যে রে

কসাই-কঠিন তুই পাষাণ!

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

সাপ ধরে তুই চাপবি বুকে

সইবে না তোর ফুলের ঘা,

মারতে তোকে বাজ পাবে লাজ

চুমুর সোহাগ সইবে না!

ডাক-নামে ডাক তোর তরে নয়,

আহ্বান তোর ভীম কামান।

আয় রে চির-তিক্ত প্রাণ!

  

ফণীমনসার কাঁটার পুরে

আয় ফিরে তুই কালফণী,

বিষের বাঁশি বাজিয়ে ডাকে নাগমাতা –

‘আয় নীলমণি!’

ক্ষুদ্র প্রেমের শূদ্রামি ছাড়,

ধর খ্যাপা তোর অগ্নি-বাণ!

আয় রে আবার আমার চির-তিক্ত প্রাণ!