» » ফাতেহা-ই-দোয়াজ্-দহম্ : আবির্ভাব

ফাতেহা-ই-দোয়াজ্-দহম্
[আবির্ভাব]

 
  নাই   তা—জ
 
  তাই   লা—জ?
ওরে
মুসলিম, খর্জুর-শিষে তোরা সাজ!
করে
তসলিম হর কুর্নিশে শোর আওয়াজ
শোন
কোন মুজ্‌দা সে উচ্চারে হেরা আজ
 
      ধরা-মাঝ!

উরজ-য়্যামেন নজ্‌দ হেজাজ তাহামা ইরাক শাম
মেশের ওমান তিহারান স্মরি কাহার বিরাট নাম।

 
পড়ে   ‘সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্‌লাম।
 
    চলে     আঞ্জাম
 
    দোলে  তাঞ্জাম
খোলে
হুর-পরি মরি ফিরদৌসের হাম্মাম!
টলে
কাঁখের কলসে কওসর ভর, হাতে আব-জমজম জাম।
শোন
দামাম কামান তামাম সামান নির্ঘোষি কার নাম
পড়ে
‘সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্লাম।’
 
 মস্  তান!
 
 ব্যস  থাম্!
দেখ
মশ্‌গুল আজি শিস্তান-বোস্তান,
তেগ
গর্দানে ধরি দারোয়ান রোস্তাম।
বাজে
কাহারবা বাজা, গুলজার গুলশান
 
      গুলফাম!
দক্ষিণে দোলে আরবি দরিয়া খুশিতে সে বাগে-বাগ,
 
পশ্চিমে নীলা ‘লোহিতে’র খুন-জোশিতে রে লাগে আগ,
মরু
সাহারা গোবিতে সব্‌জার জাগে দাগ!
 
      নূরে    কুর্শির
  
      পুরে    ‘তূর’-শির,
দূরে
ঘূর্ণির তালে সুর বুনে হুরি ফুর্তির,
ঝুরে
সুর্খির ঘন লালি উষ্ণীষে ইরানি দূরানি তুর্কির!
আজ
বেদুইন তার ছেড়ে দিয়ে ঘোড়া ছুড়ে ফেলে বল্লম
পড়ে
‘সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাললাম।’
  
      ‘সাবে    ঈন’
  
      তাবে    ঈন
হয়ে
চিল্লায় জোর ‘ওই ওই নাবে দীন !
ভয়ে
ভূমি চুমে ‘লাত্ মানাত’ -এর ওয়ারেশিন ।
রোয়ে
ওয্‌যা-হোবল ইবলিস খারেজিন , –
  
      কাঁপে    জীন্ !
  
জেদ্দার পূবে মক্কা মদিনা চৌদিকে পর্বত,
  
তারই মাঝে ‘কাবা’ আল্লার ঘর দুলে আজ হর ওক্‌ত্‌,
ঘন
উথলে অদূরে ‘জম-জম’ শরবৎ!
  
      পানি    কওসর,
  
      মণি    জওহর
আনি
‘জিবরাইল’ আজ হরদম দানে গওহর,
টানি
মালিক-উল-মৌত জিঞ্জির – বাঁধে মৃত্যুর দ্বার লৌহর।
হানি
বরষা সহসা ‘মিকাইল’ করে ঊষর আরবে ভিঙা,
বাজে
নব সৃষ্টির উল্লাসে ঘন ‘ইসরাফিল’ -এর শিঙা!

  
      জন্   জাল
  
      কঙ্   কাল
ভেদি,
ঘন জাল মেকি গণ্ডির পঞ্জার
ছেদি,
মরুভূতে একী শক্তির সঞ্চার!
বেদি
পঞ্জরে রণে সত্যের ডঙ্কার
  
              ওংকার!
  
শঙ্কারে করি লঙ্কার পার কার ধনু-টংকার
  
হুংকারে ওরে সাচ্চা-সরোদে শাশ্বত ঝংকার?
ভূমা-
নন্দে রে সব টুটেছে অহংকার!
  
      মর-  মর্মরে
  
      নর-  ধর্ম রে
বড়ো
কর্মরে দিল ইমানের জোর বর্ম রে,
ভর্
দিল্ জান্ – পেয়ে শান্তি নিখিল ফিরদৌসের হর্ম্য রে!
রণে
তাই তো বিশ্ব-বয়তুল্লাতে মন্ত্র ও জয়নাদ –
‘ওয়ে
মার্‌হাবা ওয়ে মার্‌হাবা এয়্ সর্‌ওয়ারে কায়েনাত !’
  
      শর- ওয়ান
  
      দর্- ওয়ান
আজি
বান্দা যে ফেরউন শাদ্দাদ নমরুদ মারোয়ান;
তাজি
বোর্‌রাক্ হাঁকে আশমানে পর্‌ওয়ান, –
ও যে
বিশ্বের চির সাচ্‌চারই বোর্‌হান –
  
              ‘কোর-আন’!
  
‘কোন্ জাদুমণি এলি ওরে’ – বলি রোয়ে মাতা আমিনায়
  
খোদার হবিবে বুকে চাপি, আহা, বেঁচে আজ স্বামী নাই!
দূরে
আব্‌দুল্লার রুহ্ কাঁদে, “ওরে আমিনারে গমি নাই –
দেখো
সতী তব কোলে কোন্ চাঁদ, সব ভর-পুর ‘কমি’ নাই।’
  
      ‘এয়্  ফর্ জন্দ’ –
  
       হায়   হর্‌দম্
ধায়
দাদা মোত্‌লেব কাঁদি, – গায়ে ধুলা কর্দম!
‘ভাই।
কোথা তুই?’ বলি বাচ্চারে কোলে কাঁদিছে হাম্‌জা দুর্দম!
ওই
দিক্‌হারা দিক্‌পার হতে জোর-শোর আসে, ভাসে ‘কালাম’ –
‘এয়
‘শাম্‌সোজ্জোহা বদরোদ্দোজা কামারোজ্জমাঁ’ সালাম!’

  

কুঞ্জিকা

তাজ—মুকুট। তসলিম—সালাম, প্রণাম। শোর্-আওয়াজ—বিরাট বিপুল ধ্বনি। মুজ্‌দা—খোশ খবর, সুসংবাদ। হেরা—আরবের হেরা নামক পর্বত। এই গিরি-গুহায় হজরত মোহাম্মদ (সা) সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন। উরজ্, য়্যামেন, নজ্‌দ, হেজাজ, তাহামা—আরবের পাঁচটি প্রদেশের নাম। ইরাক—মেসোপটেমিয়া প্রদেশ। শাম—সিরিয়া প্রদেশ। মেসের—মিশর দেশ। ওমান—আরবের এক ছোট রাজ্য। সাল্লাল্লাহু আলায়হি সাল্‌লাম—আরবী ভাষায় উচ্চারিত ‘দরূদ’ বা শান্তিবাণী। মুসলমান মাত্রেই হজরতের নামের শেষে এই ‘দরূদ’ পাঠ করা একান্ত কর্তব্য। ইহার অর্থ— ‘তাঁহার উপর খোদার শান্তি ও করুণাধারা বর্ষিত হউক।’

আন্‌জাম—আয়োজন। তান্‌জাম—সওয়ারি। ফিরদৌস—স্বর্গ। হাম্মাম—স্নানাগার। কওসর—অমৃত। ভর—ভরা, পূর্ণ। হুর-পরী—অপ্সরী-কিন্নরী। আব্-জম্‌জম্—মক্কার ‘জমজম’ নামক কূপের পবিত্র পানি। জাম—পেয়ালা। দামাম—দামামা। তামাম—সমস্ত। সামান—সাজ-সরঞ্জাম।

মস্‌তান—মস্তানা, পাগলা। ব্যস্ থাম—ব্যস, থামো! শিস্তান-বোস্তান—শিস্তানের ফুলবাগিচা। তেগ—তলোয়ার। গর্দানে—স্কন্ধে। রোস্তাম—পারস্যের জগদ্‌বিখ্যাত দিগ্‌বিজয়ী বীর। কাহার্‌বা—তালের নাম। গুল্‌জার—মাৎ। গুল্‌শান—পুষ্প-বাটিকা। গুল্‌ফাম—গোলাবি রঙ্গিন। আরবী দরিয়া—আরব সাগর। খুশিতে বাগে বাগ্—আহ্লাদে আটখানা। নীলা—নীলবর্ণ জলবিশিষ্ট। লোহিতে—লোহিত সমুদ্রের। খুন-জোশিতে—রক্ত-উত্তেজনায়। আগ—আগুন। সাহারা, গোবি—দুই বিশাল মরুভূমির নাম। সব্‌জার—হরিতের। নূরে—জ্যোতিতে। লালী—অরুণিমা। ইরানি—পারস্যের অদিবাসী। দুরানি—কাবুলি। তুর্কি—তুরস্কের অধিবাসী।

‘সাবেঈন’—আরবের মূর্তিপূজকগণ। ‘তাবেঈন’—আজ্ঞাবহ। চিল্লায়—চিৎকার করে। ‘দীন’—সত্যধর্ম। ‘লাত্ মানাত’—আরবের মূর্তিপূজকগণের ঠাকুরের নাম। ওয়ারেশিন—উত্তরাধিকারীগণ, (এখানে) ঐ মূর্তিসমূহের দলবল।

‘ওয্‌যা হোবল’—আরব মূর্তি-পূজারীদের দুই প্রধান প্রতিমা। ইব্‌লিস—শয়তান। খারেজিন—এক বদমায়েশ সম্প্রদায়। জিন—দৈত্য; genii. জেদ্দা—জেদ্দা বন্দর। মদিনা—শহর (‘মদিনা’ নামক শহর নয়)। ‘কাবা’—মক্কার বিশ্ববিখ্যাত মস্‌জিদ। হর্ ওক্ত—সর্বদা। হর্‌দম্— সদাসর্বদা। গওহর—মতি। মালিক-উল-মৌত—ফেরেশতার (স্বর্গীয় দূত) নাম; জীবের জীবন-সংহার এই যমরাজের হাতে। জিঞ্জির—শৃঙ্খল। ‘মিকাইল’—ফেরেশতা। ভিঙ্গা—সরসা। ইস্‌রাফিল—প্রলয়-বিষাণ-মুখে এক ফেরেশতা। জঞ্‌জাল—জঞ্জাল। কঙ্‌কাল—কঙ্কাল। সরোদ—এক তারের যন্ত্রের নাম।