বিষের বাঁশী

‘বিষের বাঁশী’ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৩৩১ বঙ্গাব্দের ১৬ই শ্রাবণ—আগষ্ট ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কবি নিজেই হুগলি থেকে ‘বিষের বাঁশী’ প্রকাশ করেন। নামপৃষ্ঠায় এর মুদ্রণসংখ্যা ২২০০ বলে উল্লিখিত ছিল এবং লেখা ছিল, “গ্রন্থকার কর্তৃক সর্ব্বস্বত্ব সংরক্ষিত”। গ্রন্থের পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৪+৬০, মূল্য এক টাকা ছয় আনা এবং “সোল এজেণ্ট ও প্রাপ্তিস্থান— ডি. এম. লাইব্রেরি, ৬১ কর্ণওয়ালিশ ষ্ট্রিট, কলিকাতা।” এই গ্রন্থে ২৭টি কবিতা রয়েছে। কাজী নজরুল ইসলামের বাজেয়াপ্ত ৫টি গ্রন্থের মধ্যে এটি অন্যতম। প্রকাশের অব্যবহিত পরে তৎকালীন ভারত সরকার ২২ অক্টোবর ১৯২৪ সালে ‘বিষের বাঁশী’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে এবং এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয় ২৭ এপ্রিল ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে।

‘বিষের বাঁশী’র দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় নূর লাইব্রেরি, ১২/১ সারেঙ্গ লেন, তালতলা, কলিকাতা থেকে ১৩৫২ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে। বাংলা একাডেমি ‘নজরুল রচনাবলী’তে আবদুল কাদির এই সংস্করণের পাঠ অনুসরণ করেছিলেন। রচনাবলীর নতুন সংস্করণে ‘বিষের বাঁশী’র প্রথম দুই সংস্করণের পাঠ মিলিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে।

প্রথম সংস্করণে উৎসর্গপত্রটি ছিল গ্রন্থের শুরুতে, দ্বিতীয় সংস্করণে তা কৈফিয়তের পরে আনা হয়। প্রথম সংস্করণের ‘জাগৃহী’ কবিতার শিরোনাম সংশোধিত হয়ে দ্বিতীয় সংস্করণে হয় ‘জাগৃহি’—বাংলা একাডেমি শেষেরটিই গ্রহণ করেছে। কৈফিয়তে মূলে ডি. এম. লাইব্রেরির ‘গোপাল-দা’ প্রসঙ্গে যে বাক্যটি ছিল, তা দ্বিতীয় সংস্করণে বর্জিত হয়েছে।

‘উৎসর্গ’ কবিতাটি মিসেস্ এম. রহমান [মুসাম্মাৎ মাসুদা খাতুন : জন্ম ১৮৮৪ খ্রি. মৃত্যু ২০শে ডিসেম্বর ১৯২৬ খ্রি.] সাহেবার উদ্দেশে রচিত। মিসেস্ এম. রহমান এদেশে নারী-অধিকার-আন্দোলনের একজন অগ্রনায়িকা ছিলেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা, সওগাত, সহচর, সাম্যবাদী, ধূমকেতু, লাঙল, অভিযান প্রভৃতি সাময়িকপত্রে বহু প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লেখেন। তাঁর ‘মা ও মেয়ে’ নাম অসমাপ্ত উপন্যাসখানি ১৩২৯ আষাঢ় হতে ধারাবাহিকভাবে মাসিক ‘সহচর’ পত্রে প্রকাশিত হয়। তাঁর ‘চানাচুর’ পুস্তকের ‘আমাদের দাবী’, ‘পর্দা বনাম প্রবঞ্চনা’, ‘নারীর বন্ধন’ প্রভৃতি প্রবন্ধগুলি তৎকালে পাঠকমহলে আলোড়নের সৃষ্টি করেছিল।

‘ফাতেমা-ই-দোয়াজদহম : আবির্ভাব’ ১৩২৭ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণে এবং ‘ফাতেহা-ই-দোয়াজদহম : তিরোভাব’ ১৩২৮ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণে ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায় বের হয়।

‘জাগৃহি’ ১৩২৯ বঙ্গাব্দের ৩০শে শ্রাবণ ১ম বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যক ‘ধূমকেতু’তে ‘জাগরণী’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

‘তুর্য-নিনাদ’ ১৩২৯ বঙ্গাব্দের বৈশাখে ১ম বর্ষের ১ম সংখ্যক মাসিক ‘বসুমতী’তে বের হয়।

‘বোধন’ ১৩২৭ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠের ‘মোসলেম ভারতে’ প্রকাশিত হয়। শিরোনামের নীচে বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল : “সূর—যেদিন সুনীল জলধি হইতে উঠিলে জননী ভারতবর্ষ।” তার পাদটীকায় লেখা ছিল : “হাফিজের ‘য়ুসোফে গুম্ গশ্‌তা বাজ্‌ আয়েদ্‌ ব-কিনান গম্ মখোর’ গজল অবলম্বনে।” কবিতাটির প্রথম (এবং পরবর্তী চারটি স্তবকের প্রত্যকটির শেষে পুনরাবৃত্ত) শ্লোকটি ছিল এরূপ—

দুঃখ কি ভাই! হারানো য়ুসোফ কিনানে আবার আসিবে ফিরে;
দলিত শুষ্ক এ মরুভু পুনঃ হয়ে গুলিস্তাঁ হাসিবে ধীরে।

‘উদ্বোধন’ গানটি ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখে ২য় বর্ষের ৬ষ্ঠ সংখ্যক ‘সওগাতে’ ছাপা হয়েছিল।

‘মরণ-বরণ’ গানটি ১৩২৮ বঙ্গাব্দের কার্তিকে ৪র্থ বর্ষের তৃতীয় সংখ্যক ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়েছিল।

‘বন্দী-বন্দনা’ গানটি ১৩২৮ বঙ্গাব্দের মাঘে ৮ম বর্ষের তৃতীয় সংখ্যক ‘নারায়ণে’ এবং ৪র্থ বর্ষের চতুর্থ সংখ্যক ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়েছিল। বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকায় রচনা-স্থান ছাপা আছে : “কান্দিরপাড়, কুমিল্লা।” ‘নারায়ণে’ শিরোনামের নীচে লেখা ছিল ‘মল্লার—তেওরা’। তাতে শেষাংশ ছিল এইরূপ—

আজি
ধ্বনিছে দিগ্বধু শঙ্গ দিকে দিকে,
 
গগনে কা’রা যেন চাঁহিয়া অনিমিখে
ভারত হোমশিখা জ্বলিল জয়টিকা
 
পরাতে ও কপালে।
সে
কারা মুক্তি-কারা যেখানে ভৈরব-রুদ্র-শিখা জ্বলে।
 
কোরাস; জয় হে বন্ধন-মৃত্যু শঙ্কাজয়ী।
 
মুক্তি-কামী জয়।
 
স্বাধীন-চিত জয়। জয় হে॥

‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য় পঞ্চম স্তবকের শেষ চরণটি ছিল এরূপ—

‘সে কারা নহে কারা যেখানে ভগবান-রুদ্র-শিখা জ্বলে॥’

‘বন্দনা-গান’ ১৩২৮ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণের ‘সাধনা’ পত্রিকায় ‘বিজয়-গান’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। রচনা-স্থান : ‘কান্দিরপাড়, কুমিল্লা।’

‘শিকল-পরার গান’ ১৩৩১ বঙ্গাব্দের জ্যৈষ্ঠের ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়। শিরোনামের নীচে বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল : ‘খাম্বাজ—দাদ্‌রা’। তাতে কবির কৃত ‘স্বরলিপি’ও ছাপা হয়েছিল।

‘চরকার গান’ ১৩৩১ বঙ্গাব্দের বৈশাখের ‘ভারতী’তে ছাপা হয়। বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল : ‘খাম্বাজ—কীর্তন—দাদ্‌রা’। সে সংখ্যাতে ‘চরকার গানে’র স্বরলিপিও ছাপা হয়েছিল। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের প্রাদেশিক সম্মেলনে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতিতে নজরুল ইসলাম ‘চরকার গান’ গেয়েছিলেন।

‘জাতের বজ্জাতি’ গানটি ‘জাত-জালিয়াত’ শিরোনামে ‘বিজলী’তে ছাপা হয়। পাদটীকায় লেখা ছিল : ‘মাদারীপুর শান্তি-সেনা চারণ-দলের জন্য লিখিত অপ্রকাশিত নাটক থেকে।’ ‘বিজলী’ হতে গানটি ১৩৩০ বঙ্গাব্দের শ্রাবণের ‘উপাসনা’য় ‘উদ্ধৃত’ হয়েছিল।১৩৩০ বঙ্গাব্দের শ্রাবণে ষষ্ঠ বর্ষের দ্বিতীয় সংখ্যক ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য়ও গানটি ‘জাত-জালিয়াত’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

‘বিজয়-গান’ ১৩২৮ শ্রাবণের ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য় প্রকাশিত হয়। রচনা-স্থান : ‘কান্দিরপাড়, কুমিল্লা’।

‘পাগল পথিক’ ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ভাদ্রের ‘মোসলেম ভারতে’ ‘গান’ শিরোনামে বের হয়েছিল। শিরোনামের নীচে বন্ধনীর মধ্যে লেখা ছিল : ‘সুর—মেঘ-ছায়ানট; তাল—দাদ্‌রা’।

‘বিদ্রোহীর বাণী’ ১৩৩১ বঙ্গাব্দের বৈশাখের ‘ভারতী’তে ‘এবার তোরা সত্য বল্’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল।

‘ঝড়’ [পশ্চিম তরঙ্গ] ১৩৩১ বঙ্গাব্দের আষাঢ়ে দ্বিতীয় বর্ষ তৃতীয় সংখ্যক ‘কল্লোলে’ প্রকাশিত হয়েছিল।