উৎসর্গ

বিরাট-প্রাণ, কবি দরদী–

প্রিন্সিপাল শ্রীযুক্ত সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র

শ্রীচরণারবিন্দেষু

দেখিয়াছি হিমালয়, করিনি প্রণাম,

দেবতা দেখিনি, দেখিয়াছি স্বর্গধাম।…

সেদিন প্রথম যবে দেখিনু তোমারে,

হে বিরাট মহাপ্রাণ, কেন বারেবারে

মনে হল এত দিনে দেখিনু দেবতা!

চোখ পুরে এল জল, বুক পুরে কথা।

ঠেকিল ললাটে কর আপনি বিস্ময়ে,

নব লোকে দেখা যেন নব পরিচয়ে।

কোথা যেন দেখিছিনু কবে কোন লোকে,

সে-স্মৃতি দেখিনু তব অশ্রুসিক্ত চোখে।

চলিতে চলিতে পথে দূর পথচারী

আসিলাম তব দ্বারে, বাহু আগুসারি

তুমি নিলে বক্ষে টানি, কহ নাই কথা,

না কহিতে বুঝেছিলে ভিখারির ব্যথা।

মুছায়ে পথের ধূলি অফুরান স্নেহে–

নিন্দা-গ্লানি-কলঙ্কের কাঁটা-ক্ষত দেহে

বুলাইয়ে ব্যথা-হরা স্নিগ্ধ শান্ত কর,

দেখিনু দেবতা আজও আছে ধরা ’পর!

নূতন করিয়া ভালবাসিনু মানবে,

যাহারা দিয়াছে ব্যথা তাহাদেরই স্তবে

ভুরিয়া উঠিল বুক, গাহি নব গান।

ভুলি নাই, হে উদার, তব সেই দান!

উড়ে এসেছিনু ভগ্নপক্ষ, চক্রবাক

তব শুভ্র বালুচরে, আবার নির্বাক

উড়িয়া গিয়াছে কবে, আজও তার স্মৃতি

হয়ত জাগিবে মনে শুনি মোর গীতি!

শায়ক বিঁধিয়া বুকে উড়িয়া বেড়াই

চর হতে আন-চরে, সেই গান গাই!…

ভালবেসেছিলে মোরে, মোর কণ্ঠে গান,

সে-গান তোমারই পায়ে তাই দিনু দান!