এক প্রতিভাবান বিজ্ঞানী কবির চৌধুরী কাপ্তাই শহরের কাছে একটা পাহাড়ের ভেতর আলট্রা সোনিকস (অতিশব্দ) এবং অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি নিয়ে গোপন গবেষণা করছিলেন। কাপ্তাই বাঁধ তৈরির ফলে বিশাল লেকের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে পাহাড়টা। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পাকিস্তানের কোন শত্রু দেশের (ভারত) সরবরাহ করা শক্তিশালী ডিনামাইট ফাটিয়ে উড়িয়ে দেবেন বাঁধটা। আর সেটা ঠেকানোর দায়িত্ব পড়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট মাসুদ রানার উপর।

প্রথম সংস্করণের ভূমিকা

প্রথমেই বলে রাখি, এই বই বড়দের জন্যে লেখা।

বাংলা সাহিত্যে রহস্যোপন্যাস বলতে বোঝায় কেবল ছোট ছেলে মেয়েদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কেনা এক ধরনের উদ্ভট গল্পের বই, যা হাতে দেখলে বাবা, কাকা, ভাইয়া এবং মাস্টার মশাই প্রবল তর্জন গর্জন করে কেড়ে নিয়ে নিজেরাই পড়তে লেগে যান, গোপনে।

কেন পড়েন?

কারণ এর মধ্যে এমন এক বিশেষ রস আছে যা প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা সুসাহিত্য বলি তার মধ্যে সাধারণত পাওয়া যায় না। তাই ছোটদের বই থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে, আংশিক হলেও, আনন্দ লাভ করেন বড়রা।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিশেষ করে ছোটদের জন্যে লেখা বলে এসব বইয়ে ছেলেমানুষির এতই ছড়াছড়ি থাকে যে আমরা বড়রা এই বই পড়ি, এবং এ থেকে আনন্দ পাই তা স্বীকার করতে লজ্জা বোধ করি।

তাই ছেলেমিটাকে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে গিয়ে বড়দের উপভোগ্য রোমাঞ্চকর রহস্যোপন্যাস রচনা করবার চেষ্টা করলাম।

এ চিন্তা মাথায় ঢুকিয়েছেন বন্ধুবর মাহবুবুল আমীন (আবু)। তারই উৎসাহে এবং সর্বপ্রকার সহযোগিতায়, বলতে গেলে এক রকম বাধ্য হয়েই, লিখতে হলো ধ্বংস-পাহাড়। তাই এর নিন্দার সবটুকু গ্লানি অম্লান বদনে মাথা পেতে নিতে তিনি বাধ্য।

প্রশংসার কথা কিছু বললাম না। যদি কিছু জোটেই, ভাবছি একা নিজেই চুপচাপ হজম করে ফেলব কিনা।

কাজী আনোয়ার হোসেন
মে, ১৯৬৬