আর্জেণ্টাইন, অস্ত্রিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ডেন্মার্ক, ফ্রান্স, জারমানি, গ্রেটব্রিটেন, ইটালী, মেক্সিকো, নেদারল্যাণ্ড, পেরু, রুসিয়া, শ্যাম, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যাণ্ড, ইউনাইটেডষ্টেটস প্রভৃতি বৈদেশিক গভর্ণমেণ্টের সহিত জাপানের বাণিজ্য সন্ধি আছে। জাপান হইতে যে সমস্ত দ্রব্যসম্ভার বিদেশ প্রেরিত হইয়া থাকে, তন্মধ্যে চা, চাউল, কর্পূর, কর্পূরতৈল, তামাক, মৎস্য, দিয়াশলাই বিছানা, মােম, রেশম, রেশমীবস্ত্র, পশম, তুলা, বার্নিস, তাম্র, টীন, কয়লা সর্ব্বপ্রধান। চাউল প্রধান উৎপন্ন দ্রব্য হইলেও সম্রাটের অনুমতি ব্যতীত বিদেশে প্রেরিত হইতে পারে না; এইজন্য জাপানে দুর্ভিক্ষ নাই। গত ১৯০৩ অব্দে সাড়ে চল্লিশ কোটী টাকার দ্রব্য বিদেশ প্রেরিত হইয়া ছিল। ইহার পূর্ব্ববর্ষে রপ্তানির পরিমাণ ৪০ কোটী টাকা ছিল।
সূত্র ও রেশমীবস্ত্রাদিবয়নে জাপানীরা পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠস্থান অধিকার করিয়াছে। ‘ওসাকা’ বন্দর প্রশান্ত মহাসাগরের ম্যানচেষ্টার রূপে পরিগণিত হইয়াছে। হােয়াইট দ্বীপে কয়লা, কেরাসিন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের আকর আছে। জাপানের তাম্রখনি পৃথিবীমধ্যে বিখ্যাত। এক্ষণে সমগ্র জাপান সাম্রাজ্যে ৫৭টী রৌপ্য ১৩৬টী তাম্র-রৌপ্য এবং ৭২টী মিশ্রধাতুর খনি আছে। এই সমস্ত খনি হইতে গত পূর্ব্ব বর্ষে ৯ লক্ষ মণ তাম্র ৬২ হাজার মণ স্বর্ণ, দেড় লক্ষ মণ রৌপ্য, ২৫ কোটী মণ কয়লা উত্তোলিত হইয়াছিল। গতবর্ষে জাপানে যে সুবর্ণখনি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তাহার মূল্য আনুমানিক হিসাবে ৪০০ কোটী স্থির হইয়াছে।
জাপান সভ্যতার উচ্চতর সােপানে আরােহণ করিয়াও দেশীয় বাণিজ্যের উন্নতি সম্বন্ধে অণুমাত্র উদাসীন হয় নাই। বাষ্পীয় যন্ত্রের প্রবল প্রতিযােগিতা সত্বেও জাপানের প্রতি পল্লীতেই চরকা হইতে সূত্র নির্ম্মাণ ও তাঁতসাহায্যে বস্ত্র বয়ন হইয়া থাকে। জাপানের গৃহে গৃহে হস্তজাত ছুরি, কাঁচি, মৃত্তিকানির্ম্মিত বাসন ও বংশনির্ম্মিত নানাবিধ গৃহসামগ্রী দেখিতে পাওয়া যায়। জাপানী শিল্পীরা কাগজের দ্বার, জানালা, বাঁশের বিছানা, বাক্স, ব্যাগ প্রভৃতি প্রস্তুত বিষয়ে অসামান্য নৈপুণ্য প্রদর্শন করিয়া থাকে।
জাপানবাসিরা যে কেবলমাত্র সমরশাস্ত্রে পারদর্শী হইয়াই ইউরােপীয় জাতিগণের সমকক্ষ হইয়াছে, এরূপ নহে। তাহারা কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যাদি বিষয়েও অসাধারণ উন্নতিলাভ করিয়াছে। মহাযুদ্ধে ব্যাপৃত থাকিয়াও, জাপানী কৃষকেরা গত পূর্ব্ববর্ষে ভূমি হইতে ১৪ কোটী মণ চাউল, ৬ কোটী মণ যব, ৪ কোটী মণ বিবিধ তরকারী উৎপন্ন করিয়াছে। সরকারী গণনানুসারে উক্ত বর্ষে ১৩ লক্ষ মণ নীলপত্র, ৮ লক্ষ মণ তামাক ও পৌণে সাতলক্ষ মণ চা উৎপন্ন হইয়াছে।
টোকিও নগরে কাগজের প্রকাণ্ড কারখানা আছে। তথায় মিৎসুমাতো, কোজো ও গাম্পি নামক বৃক্ষ হইতে কাগজ প্রস্তুত হইয়া থাকে। কাঠে কাগজ হয়, কাগজে গৃহ নির্ম্মিত হয়, কড়ি, বরগা প্রস্তুত হয়, রেল প্রস্তুত হয়, জলের নৌকা হয় এবং চা তৈয়ারির কেটলি প্রস্তুত হয়।
জাপানের মৎস্যের ব্যবসা অতি বিস্তৃত। এখানে ৯ লক্ষ ঘর জালিক আছে, তাহাদের জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ হইবে। ইহারা ক্ষুদ্র ও বৃহৎ জাল, বড়সি এবং বংশনির্ম্মিত যন্ত্রাদির সাহায্যে জাপান, কোরিয়া ও সাইবেরিয়ার উপকূলে বিবিধ প্রকার মৎস্য ধরিয়া থাকে। গত পাঁচ বৎসর পূর্ব্বে সমগ্র জাপানে সাড়ে চারি লক্ষ নৌকা ও এগার লক্ষ নানাশ্রেণীর জাল ছিল। সর্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ নৌকার নাম “সাউনসি”, ইহা দৈর্ঘ্যে ৫০ ফিট ও প্রস্থে ১৮ ফিট হইবে।
গম, চিনি, গজদন্ত, স্বর্ণ, লৌহ, কাচ, চামড়া, ঔষধ, পুস্তক, মানচিত্র, রং, বিবিধ প্রকার তৈল বিদেশ হইতে আমদানি হইয়া থাকে। এই সকল ঐব্যের মধ্যে চীনের গম ও কোরিয়ার সুবর্ণ সমধিক প্রসিদ্ধ। গত পূর্ব্ববর্ষে আমদানীর মূল্য ৩১ কোটী টাকা স্থির হইয়াছিল। জাপানের ডাক, রেল, টেলিগ্রাফ, কাপড়ের কল, সূতার কল, মুদ্রাযন্ত্র প্রভৃতি সমস্ত কল কারখানা দেশের মুলধনে দেশীয় লােক কর্ত্তৃক পরিচালিত হইতেছে। সামান্য সূচ হইতে আরম্ভ করিয়া বিশাল যুদ্ধ-জাহাজ পর্য্যন্ত সমস্তই জাপানে প্রস্তুত হইতেছে। এক্ষণে জাপানে বিবিধ শ্রেণীর ৭৮২৯টী কল কারখানা বিদ্যমান আছে, এই সকলের মধ্যে প্রায় ৩০০০টী বিদ্যুৎ ও বাষ্প বলে ও অবশিষ্টগুলি হস্তকৌশলে পরিচালিত হইতেছে। ইহাদের মূলধন ৬৮, ৮২, ৮৭,০০০ টাকার উপর হইবে। এক্ষণে জাপানে ৬০টী সূতার কলে ২০ লক্ষ টাকু চলিতেছে, কলের তাঁত ৯০০০ হাজার চলিতেছে। সমগ্র কল কারখানায় ৪ লক্ষ মজুরের কার্য্য হইতেছে।
বাণিজ্যের ক্রমােন্নতি সহকারে একদিকে যেমন দেশের ধনবৃদ্ধি হইতেছে, অন্যদিকে সেইরূপ জীবন-সংগ্রামের কঠোরতা বৃদ্ধি হইয়াছে। আজ কাল দৈনিক মজুরির হার অত্যধিক পরিমাণে বাড়িয়া উঠিয়াছে।
যে সমস্ত জাপানী সদাগরেরা পৃথিবীর নানাস্থানে ব্যবসা বাণিজ্য করিতেছেন, তন্মধ্যে ফুকিসামা, আমাজেসাকি, লিটসু, নিফন, গােডো, কানাকিম ও ওসাকা কোম্পানি সর্ব্বপ্রধান। ইহাঁদের প্রত্যেকের বার্ষিক আয় এক কোটী টাকার ন্যূন হইবে না।
বাণিজ্যাদির সুবিধার জন্য জাপান সাম্রাজ্যে ২৩১৭টী “জিনকো” অর্থাৎ ব্যাঙ্ক আছে। এই সকলের মধ্যে জাপান ব্যাঙ্ক সমধিক প্রসিদ্ধ। ইহার বর্ত্তমান মূলধন মুদ্রা ও নােটসহ ২৫ কোটী টাকা হইবে। এতদ্ব্যতীত ১৮০ টী সাধারণ, ৫০টী কৃষি ও ৪৬৭টী সেভিং ব্যাঙ্ক আছে।