স্থলবল।
১৮৮৩ অব্দে জাপানের সৈন্যসংখ্যা সর্ব্বপ্রকারে এক লক্ষের ন্যূন ছিল। গত চীন-জাপান যুদ্ধের পর হইতে সৈন্যসংখ্যা অধিক পরিমাণে বর্দ্ধিত হইয়াছে। এক্ষণে জাপানে যুদ্ধের জন্য সর্ব্বদাই ৬ লক্ষ সৈন্য প্রস্তুত থাকে। তন্মধ্যে কর্ম্মচারীর সংখ্যা ২০০০০ হাজার, পদাতিক ৫ লক্ষ এবং অশ্বারোহী ও গােলন্দাজ সৈন্যের সংখ্যা এক লক্ষ হইবে। ইঞ্জিনিয়ারিং, টেলিগ্রাফ, বেলুন, রসদ ও গুপ্তচর বিভাগের লােক সংখ্যাও এক লক্ষের অধিক হইবে। এতদ্ভিন্ন ক্ষুদ্র বৃহৎ ২৫০০ কামান আছে।
সম্রাটই জাপানের সর্ব্বপ্রধান সেনাপতি। তাঁহার আদেশ ব্যতীত কোন সৈন্যদল পরিচালিত হইতে পারে না।
সম্রাটের নিম্নেই যুদ্ধমন্ত্রীর পদ নির্দ্দিষ্ট আছে। তিনি তাঁহার অধীন কর্ম্মচারিগণের সহিত পরামর্শ করিয়া যুদ্ধবিভাগের যাবতীয় কার্য্য নির্ব্বাহ করিয়া থাকেন।
এক্ষণে সমগ্র জাপান সাম্রাজ্য তিন প্রেসিডেন্সিতে বিভক্ত। প্রতি প্রেসিডেন্সিতে চারিটী করিয়া ডিভিসন আছে। ৮টী রেজিমেণ্ট লইয়া প্রতি ডিভিসন গঠিত হইয়াছে।
সৈনিকগণের শিক্ষারজন্য জাপানে ১৪টী কলেজ ও স্কুল আছে। অশ্ববিভাগের কার্য্য পরিচালনার্থ টোকিও নগরে একটী কার্য্যালয় আছে। দেশের নানাস্থানে তাহার সাতটী শাখা আছে। অশ্বসমূহের জন্য রাজ্যমধ্যে সাড়ে চারি লক্ষ বিঘা জমি পতিত আছে। টোকিও ও ওসাকা নগরে কামান, গােলাগুলি ও অস্ত্রাদির কারখানা আছে। মেজারু, ইটাবাস ও আইওনা নগরে বারুদের গুদাম আছে।
জাপানের পদাতিক সৈন্য জর্ম্মন আদর্শে গঠিত। এই বিভাগে কোন বিদেশীয় জাতির প্রবেশাধিকার নাই।
জাতীয় বিপত্তি উপস্থিত হইলে, জাপানের সৈন্য-সংখ্যা আরও বর্দ্ধিত হইতে পারে। রাজাজ্ঞানুসারে জাপানবাসী সমর্থ পুরুষ মাত্রেই অস্ত্রধারণ করিতে বাধ্য। সমগ্র জাপান-সাম্রাজ্যে এক্ষণে উক্তরূপ যুবকের সংখ্যা ৮০ লক্ষের অধিক হইবে। তন্মধ্যে ২০ লক্ষ যুবক যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা করিয়া অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করিয়াছেন। প্রয়ােজন হইলে স্বদেশের গৌরব রক্ষার জন্য তাঁহারা এই মুহুর্ত্তেই সমরাঙ্গনে অবতীর্ণ হইতে পারেন।
জাপান গবর্ণমেণ্ট এক্ষণে সেনা-বিভাগ সম্বন্ধে যে ব্যবস্থা করিয়াছেন, তাহার ফলে তাঁহারা ভবিষ্যতে সমরক্ষেত্রে সাড়ে সাত লক্ষ সৈন্য প্রেরণ করিতে সমর্থ হইবেন। জাপানী গবর্ণমেণ্ট মাঞ্চুরিয়া ও কোরিয়ার সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করিতেছেন। যেরূপ ব্যবস্থা হইয়াছে, তাহাতে জাপানস্থিত সৈন্যের সংখ্যা শতকরা ৫০ জন হিসাবে বৃদ্ধি হইবে। জাপানের মন্ত্রিসভায় সে দিন জাপানী সমরসচিব স্পষ্টই বলিয়াছেন, জাপানী বাহিনীকে তাঁহারা এমন দুর্দ্ধর্ষ করিয়া তুলিবেন যে, কোন শক্তিই তাঁহাদিগের সহিত সহসা শক্তি পরীক্ষায় সাহসী হইবেন না। জাপানীরা অচিরেই পৃথিবীতে অজেয় শক্তিরূপে পরিণত হইবে প্রাচ্য দেশসমূহের পক্ষে ইহা সুসংবাদ, সন্দেহ নাই।
জাপান গভর্ণমেণ্টকে প্রচুর সৈন্য পরিপােষণ করিতে হইলেও বৎসরে ছয় কোটী টাকার অধিক ব্যয় করিতে হয় না। জাপানে প্রতি পদাতিক সৈন্য ও অশ্বারােহী সৈন্যের বার্ষিক বেতন যথাক্রমে ৪৫৲ ও ৬০৲ টাকা মাত্র। কর্ণেল, কাপ্তেন প্রভৃতি সেনানায়কেরা বৎসরে দেড় শত হইতে দুই শত টাকা বেতন পাইয়া থাকেন। প্রধান সেনাপতিগণের বার্ষিক বেতন ৫০০৲ হইতে ৭৫০৲ টাকার অধিক নহে। সৈন্যবিভাগীয় কুলিগণের প্রত্যেক ব্যক্তি খাদ্য ও দৈনিক ৴১০ হিসাবে মাহিনা পাইয়া থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদিগকে প্রত্যহ তিনবার করিয়া খাদ্য প্রদান করা হইয়া থাকে। প্রত্যুষে চা, বিষ্কুট, মাছভাজা ও শুষ্কান্ন; মধ্যাহ্নে ভাত, শুস্কমৎস্য ও মাংস, এবং সায়াহ্ণে চা, বার্লি, পাঁওরুটী ও পায়ষ ব্যবস্থা। চিকিৎসকের আদেশানুসারে এই ব্যবস্থা পরিবর্ত্তিত হইয়া থাকে।
নৌবল।
জাপানবাসীরা গত ত্রিশ বৎসরের মধ্যে জলযুদ্ধ বিষয়েও অসামান্য উন্নতি লাভ করিয়াছে। জাপানীরা বুঝিয়াছে, দ্বীপবাসীর পক্ষে প্রবল নৌ-বল ভিন্ন আত্মরক্ষার সুবিধা হইতে পারে না। ইংরেজ নৌ-সেনাপতি ফিট্জিরাল্ড স্পষ্টাক্ষরে বলিয়াছেন;—In some matters they appears to have improved upon the methods of their instructor.
অর্থাৎ জাপানীরা স্বীয় প্রতিভাবলে, কোন কোন বিষয়ে ইংরেজাপেক্ষাও নৌ-যুদ্ধের অধিকতর উন্নতি সাধন করিরাছে। পরপৃষ্ঠায় জাপানের বর্ত্তমান নৌ-বলের তালিকা প্রকাশ করা যাইতেছে।
যুদ্ধজাহাজ (Battle Ship)।
নাম। | যতটন। | অশ্ব-শক্তি। | বেগ। | কামান। | মন্তব্য। |
১। মিকাণা | ১৫৩৫০ | ১৬২০৩ | ১৮ মাইল | ৫০ | অগ্নি লাগিয়া নষ্ট হওয়ায় মেরামত হইয়াছে। |
২। সিকিসামা | ১৫০৮৮ | ১৪৭০০ | ১৮ ,, | ৫০ | |
৩। য়্যাসাহী | ১৫৪৪৫ | ১৫৪৪৫ | ১৮ ,, | ৫০ | |
৪। ফুজি | ১২৩২০ | ১৪০০০ | ১৮১/২ ,, | ৩৮ | |
৫। হিজেন | ১২০০০ | ১৬০০০ | ১৭ ,, | — | রুষিয়ার “রেটভিসান” |
৬। ইকি | ৯৬৭২ | ৮০০০ | ১৬ ,, | — | ,, “নিকোলাস” |
৭। একাই | — | — | — | — | নির্ম্মিত হইতেছে। |
৮। সাতজুমা | ১৯০২০ | — | — | — | পৃথিবীমধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, সম্প্রতি নির্ম্মিত হইয়াছে। |
৯। ইয়াসিমা | ৯৮৫৫ | ১৮২৮৪ | ১৮১/২ ,, | ৩৮ | রুষিয়ার “ওরেল” |
১০। আইয়োয়ামি | ১৩৬০০ | ১৬০০০ | — | — | চীন হইতে প্রাপ্ত |
১১। চীনইয়েন | ৭৭৩৫ | ৬২০০ | ১৪১/২ ,, | ১৮ | |
১২। টোগো | ১০৩৪০ | ১১২৫৫ | — | — | রুষিয়ার “পোলটাভা” |
১৩। কাটোরি | ১৫৯৪০ | ১৬০০০ | ১৮ ,, | ৫০ | |
১৪। সুও | ১২৬৭৪ | ১৪৫০০ | — | — | রুষিয়ার “পোভিডা” |
রুষিয়ার “পােভিডা” লৌহমণ্ডিত প্রথম শ্রেণীর রণতরি।
( Cruiser ) ।
নাম। | টন। | শক্তি। | মন্তব্য। | |
১। টোকিওয়া | ৯৮৫৫ | ১৮২৪৮ | ||
২। আডজুমা | ৩৪৬৫ | ১৬০০০ | ||
৩। আসো | ৭৭৩৬ | ২৭৪০০ | “রুষিয়ার বেয়ান” | |
৪। ক্যাসুগা | ৭৬২৮ | ১৩৫০০ | } | দুইখানি ইংলণ্ডে প্রস্তুত, এবং চিলি হইতে ক্রীত। |
৫। নিশিন | ৭৬২৮ | ৯৪০০ | ||
৬। ইকোমা | — | ১৩৫৭০ | সম্প্রতি নির্ম্মিত হইয়াছে। | |
৭। ইয়াকুমা | ৯০০০ | ১৫৫০০ | ||
৮। আইওয়েট | ৯৯০৬ | ১৪৭০০ |
এতদ্ভিন্ন “কুরুমা” “সুকুকু” নাম্নী দুইখানি তরণী প্রস্তুত হইতেছে।
লৌহমণ্ডিত রক্ষিত রণতরি।
১। একাগী | ২। একাসি | ৩। একি সুসীমা |
৪। চিতোজ | ৫। হাসিডেট | ৬। আজুমা |
৭। একিনো সীমা (রুষিয়া হইতে প্রাপ্ত) | ৮। নানিওয়া | ৯। টেকাসেগো |
১০। কাসাগী | ১১। মাৎসুসিমা | ১২। সুগারু (রুষিয়ার “পালাভা”) |
১৩। সুম। | ১৪। ইন সুসীমা | ১৫। টেকিচিও |
১৬। নিটাকা | ১৭। ইডজুমা | ১৮। অকোশী |
১৯। টেকিওয়া | ২০। ইয়েয়ামা | ২১। সয় (রূষিয়ার ভেরাগ |
২২। ওটেয়া |
এতদ্ব্যতীত কামানবাহক তরি ও উপকূল রক্ষক পােতের সংখ্যা ৩০ খানি হইবে।
জাপানের টর্পেডো তরি ৭৮ খানি ও টর্পেডো নাশক তরণীর সংখ্যা ৫১ খানি হইবে।
উপরােক্ত প্রভূত শক্তিশালী রণতরি ভিন্ন জাপান সাম্রাজ্যে ৫৫০০ খানি বাণিজ্যপােত আছে। তাহার মধ্যে ১৪০০ খানি কলে ও ৪০০ খানি পাইলে চলিয়া থাকে।
অধিকাংশ পােতের তলদেশ ও মর্মস্থান লৌহ বা তাম্রমণ্ডিত থাকায় যুদ্ধকার্য্যে ব্যবহৃত হইতে পারে।
১৮৬৭ অব্দে জাপানের ৯ খানি মাত্র রণতরি ছিল। ১৮৭২ খৃঃ ২০ খানি হয়। ১৮৯৩ খৃঃ এই সংখ্যা বর্দ্ধিত হইয়া ৩২ খানিতে পরিণত হয়। গত পাঁচ বৎসর পূর্ব্বে সমগ্র রণতরির সমষ্টি ৫৯ খানি ও কামান সংখ্যা ১১৫৬টী গণিত হইয়াছিল। এই পুস্তকে বর্ত্তমান বৎসরের (১৯০৬ খৃঃ) সংখ্যা প্রদত্ত হইয়াছে।
জাপানী নৌ-বিভাগে এডমিরাল, ভাইস এডমিরাল, রিয়ার এডমিরাল, কাপ্তেন, কমাণ্ডার, লেপ্টনেণ্ট, চিফগনার ও বােটস্ওয়েন উপাধিধারী কর্ম্মচারী আছেন। প্রথম তিন শ্রেণীর নৌ-সেনাপতিরা বৎসরে যথাক্রমে নয় হাজার, ছয় হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাইয়া থাকেন। পরবর্ত্তী তিন শ্রেণীর বার্ষিক বেতন যথাক্রমে ২৫৯০৲ ১৮০০৲ ও ১৫০০৲ টাকা নির্দ্দিষ্ট আছে।