» » ভারতের দ্বিতীয় প্রভাতে

বর্ণাকার

হেমেন্দ্রকুমার রায়

ভারতের দ্বিতীয় প্রভাতে

প্রথম পরিচ্ছেদ

আঁধার আঁধার! অসীম আঁধার!

আঁখি হয়ে যায় অন্ধ!

জাগো শিশু-রবি, আনো আলো-সোনা

আনো প্রভাতের ছন্দ!

হ্যাঁ, ভারতের দ্বিতীয় প্রভাতের কথা বলব। প্রাগৈতিহাসিক কালে আর্যাবর্তে বিচরণ করতেন রঘু, কুরু, পাণ্ডব, যদু ও ইক্ষ্বাকু প্রভৃতি বংশের মহা মহা বীররা। তাঁদের কেউ কেউ অবতার রূপে আজও পূজিত হন। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকদের জগতে ভারতে প্রথম প্রভাত এনেছিলেন উত্তর-পশ্চিম ভারতবিজয়ী আলেকজান্ডার এবং গ্রিকবিজয়ী সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত।

রাম-রাবণ ও কুরু-পাণ্ডবের যুদ্ধকাহিনির মধ্যে অল্পবিস্তর ঐতিহাসিক সত্য থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু সে সম্বন্ধে তর্ক না তুলে আপাতত এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, পুরাণ-বিখ্যাত সেই সব যুদ্ধের পরেও ভারতে এসেছিল দীর্ঘকালব্যাপী এক তমিস্রযুগ। তারই মধ্যে কেবল সত্যের সন্ধান দেয় নিষ্কম্প দীপশিখার মতো বুদ্ধদেবের বিস্ময়কর অপূর্ব মূর্তি। আজ ইতিহাস বলতে আমরা যা বুঝি, তখনও তার অস্তিত্ব ছিল না বটে, কিন্তু কি এদেশি, কি বিদেশি কোনও ঐতিহাসিকেরই এমন সাহস হয়নি যে বুদ্ধদেবকে অস্বীকার করে উড়িয়ে দেন। সেই খ্রিস্টপূর্ব যুগে মৌর্য চন্দ্রগুপ্তের আবির্ভাব না হওয়া পর্যন্ত ভারতের ইতিহাস বলতে বুঝি, বুদ্ধদেবের জীবনচরিত।

বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ এবং শিলালিপি প্রভৃতির দৌলতে বুদ্ধদেবের আবির্ভাবের পরবর্তী যুগের ভারতের কতকগুলি প্রামাণিক ছবি আমরা পেয়েছি। যদিও সে যুগের বৌদ্ধ চিত্রশালা সম্পূর্ণ নয়, তবু আলো-আঁধারের ভিতর থেকে ভারতের যে মূর্তিখানি আমরা দেখতে পাই, বিচিত্র তা—মোহনীয়!

তারপরই সেই ছায়ামায়াময় প্রাচীন আর্যাবর্তে সমুজ্জ্বল মশাল হাতে নিয়ে প্রবেশ করলেন দিগবিজয়ী আলেকজান্ডার। যে শ্রেণির কাহিনিকে আজ আমরা ইতিহাস বলে গ্রাহ্য করি, তার জন্ম হয়েছিল সর্বপ্রথমে সেকালকার গ্রিক দেশেই। কাজেই আলেকজান্ডারের ভারত অভিযান স্থানলাভ করল গ্রিক ইতিহাসেও এবং আলেকজান্ডারের পরেও প্রাচীন ভারতের সঙ্গে গ্রিসের আদান-প্রদানের সম্পর্ক বিলুপ্ত হয়নি। তাই সে যুগের ভারতবর্ষের অনেক কথাই আমরা জানতে পেরেছি গ্রিক লেখকদের প্রসাদে। সেলিউকস প্রেরিত গ্রিক দূত মেগাস্থিনিস লিপিবদ্ধ করে না রাখলে আমরা মৌর্য চন্দ্রগুপ্তের যুগে মগধ সাম্রাজ্য তথা ভারতবর্ষের রাজপ্রাসাদ, রাজসভা, রাজধানী, সমাজনীতি, শাসননীতি, আচার-ব্যবহার প্রভৃতির অনেক কথাই জানতে পারতুম না। এজন্যে গ্রিসের কাছে ভারতবর্ষ হয়ে থাকবে চিরকৃতজ্ঞ।

প্রাকৃতিক জগতে যেমন কখনও মেঘ কখনও রোদের খেলা, কখনও আলো কখনও ছায়ার মেলা, প্রত্যেক দেশের সভ্যতার ইতিহাসেও তেমনই পরিবর্তনের লীলা দেখা যায়। মৌর্য চন্দ্রগুপ্ত মগধের বা ভারতের সিংহাসনে আরোহণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ কি আরও দুই-এক বছর আগে। তার কিছু কম দেড় শতাব্দী পরে মৌর্য সাম্রাজ্য বিলুপ্ত হয়। তারপর ভারতবর্ষের ইতিহাসে দেখি সুঙ্গ, কান্ব ও অন্ধ্র প্রভৃতি বংশের কমবেশি প্রভুত্ব। ইতিমধ্যে গ্রিকরাও বারকয়েক ভারতের মাটিতে আসন পাতবার চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি।

কেবল গ্রিকরা নয়, মধ্য এশিয়ার ভবঘুরে মোগলজাতি তখন থেকেই ভারতবর্ষে হানা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। মোগল বলতে তখন মুসলমান বোঝাত না (নিজ মঙ্গোলিয়ায় আজও বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মোগলরা আছে) এবং মোগল বলতে আসলে কী বোঝায় সে সম্বন্ধেও সকলের খুব পরিষ্কার ধারণা নেই। যুগে যুগে নানা জাতি মোগলদের নানা নামে ডেকেছে। এদের বাহন ছিল ঘোড়া, খাদ্য ছিল মাংস, পানীয় ছিল দুগ্ধ। গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোদোতাস এদের ডেকেছেন ‘সিথিয়ান’ বলে, পরবর্তী যুগের রোমানরা এদের ‘হুন’ নামে ডাকতেন, প্রাচীন ভারতে এদের নাম ছিল ‘শক’, এবং চিনারা এদের নাম দিয়েছিল Hiungnu। আসলে মোগল, শক, হুন, তাতার ও তুর্কিরা একরকম এক জাতেরই লোক, কারণ তাদের সকলেরই উৎপত্তি মধ্য এশিয়ায় বা মঙ্গোলিয়ায়। এই আশ্চর্য জাতি ধরতে গেলে এক সময়ে প্রাচীন পৃথিবীর অধিকাংশ সভ্য দেশকেই দখল করেছিল এবং ভারতবর্ষ তাদের অধিকারে এসেছিল দুইবার। প্রথমবারে তাদের বংশ কুষাণ বংশ বলে পরিচিত হয়। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বিখ্যাত সম্রাট কনিষ্ক এই বংশেরই ছেলে। দ্বিতীয়বারে তারা মোগল রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করে।

মোগল বা শকরা ভারতে এসে ভারতীয় সভ্যতার প্রভাবে নিজেদের সমস্ত বিশেষত্ব—এমনকী ধর্ম পর্যন্ত হারিয়ে একেবারে এদেশের মানুষ হয়ে পড়েছিল। কনিষ্ক ছিলেন বৌদ্ধ, তবু তাঁর নামে বিদেশি গন্ধ পাওয়া যায়। কিন্তু কুষাণ বংশের শেষ সম্রাট বাসুদেবের নামই কেবল ভারতীয় নয়, ধর্মেও তিনি ছিলেন শৈব মতাবলম্বী হিন্দু। কারণ তাঁর নামাঙ্কিত প্রায় প্রত্যেক মুদ্রায় দেখা যায় শিব এবং শিবের ষাঁড়ের প্রতিমূর্তি।

আনুমানিক ২২০ খ্রিস্টাব্দে বাসুদেবের মৃত্যু হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে হয় কুষাণ সাম্রাজ্যের পতন। যদিও তারপরেও কিছুকাল পর্যন্ত ভারতের এখানে-ওখানে কুষাণদের খণ্ড খণ্ড রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল, কিন্তু কুষাণদের কেউ আর সম্রাট নামে পরিচিত হতে পারেননি।

মোগল বা শকদের রাজত্বের সময়েই ভারতবর্ষের ইতিহাসের উপরে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে গোধূলির ম্লান আলো। প্রাচীনতর হলেও মৌর্য যুগের ভারতবর্ষ যেন স্পষ্ট রূপে ও রেখায় আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠেছে। শক ভারতবর্ষে তেমনভাবে নজর চলে না—সেটা ছিল যেন আলো-মাখানো ছায়ার যুগ, তার খানিকটা স্পষ্ট আর খানিকটা অস্পষ্ট।

কিন্তু কুষাণ সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতে এল সত্যিকার তমিস্রযুগ। যেন এক অমাবস্যার মহানিশা এসে সমগ্র আর্যাবর্তকে তার বিপুল আঁধার আঁচলে ঢেকে দিলে। অবশ্য, এ সময়কার হিন্দুস্থানে কোনও সাম্রাজ্য ও সম্রাট না থাকলেও ছোট ছোট রাজ্যের খুদে খুদে রাজার যে অভাব ছিল না, এ বিষয়ে কোনওই সন্দেহ নেই। নানা পুরাণে এ সময়কার যেসব বর্ণনা পাওয়া যায়, তাও ভাসা ভাসা, রহস্যময়। ওই খুদে রাজাদের কারুর ভিতরে এমন শক্তি ও প্রতিভা ছিল না যে সমগ্র ভারতের উপরে বিপুল একচ্ছত্র তুলে ধরেন। এক-এক দেশের সিংহাসন পেয়ে এবং বড়জোর প্রতিবেশি ছোট ছোট রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ বা ঝগড়া করেই তাঁরা তুষ্ট ছিলেন। এই গভীর অন্ধকার জগতে মাঝে মাঝে যেন, বিদ্যুৎ-চমকের মধ্যে দেখা যায় আভিরাস, যবন, শক, বল্হীক ও গর্দব্বিলাস প্রভৃতি অদ্ভুত বা বিদেশি বংশকে!

বৃহৎ ভারতের আত্মা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল। অনুমানে বোঝা যায়, তখন ক্রমেই বৌদ্ধধর্মের অধঃপতন হচ্ছিল এবং হিন্দুধর্মের হচ্ছিল ক্রমোন্নতি। কিন্তু তখনকার দেশাচার, কলা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির কথা, রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক ইতিহাস জানবার কোনও উপায়ই এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। চন্দ্রগুপ্তের রাজধানী পাটলিপুত্র মৌর্য বংশ লোপ পাওয়ার পরেও এবং সেই অন্ধকার যুগেও যে একটি প্রসিদ্ধ নগর বলে গণ্য হত, এ কথা জানা যায়। কিন্তু পাটলিপুত্রের রাজার নাম পাওয়া যায় না। পাঞ্জাবে ও কাবুলে ছিলেন শকবংশীয় কোনও কোনও রাজা। এ কথাও জানা গিয়েছে যে, কাবুলের ভারতীয় শক রাজারা ছিলেন বিলক্ষণ ক্ষমতাবান (৩৬০ খ্রিস্টাব্দেও কাবুলের শক রাজার দ্বারা প্রেরিত ভারতীয় যুদ্ধহস্তী ও সৈন্যের সাহায্যে পারস্যের অধিপতি দ্বিতীয় সাপর প্রাচ্য রোম-সৈন্যদের পরাজিত করেন)।

প্রায় এক শতাব্দী এই অন্ধকার রহস্যের মধ্য দিয়ে অতীত হয়ে যায়। এই হারানো ভারতকে আর অতীতের গর্ভ থেকে উদ্ধার করা যাবে না, বহুযুগের ওপার থেকে ভেসে আসে কেবল অন্ধকারের আর্তনাদ!

ইউরোপের অবস্থাও তখন ভালো নয়। গ্রিস তখন গৌরবহীন এবং পশ্চিম রোম সাম্রাজ্য হয়েছে বর্বর, অন্ধকার যুগের মধ্যে প্রবেশ করতে উদ্যত। চতুর্থ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কনস্তানতাইন দি গ্রেটের মৃত্যুর পর ইউরোপীয় রোম-সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল নামে মাত্র।

কিন্তু ইউরোপীয় সভ্যতা যখন মৃত্যুন্মুখ,  মহাভারতে জাগল তখন নবজীবনের কলধ্বনি।

প্রায় শতাব্দীকাল পরে ঐতিহাসিক ভারতে এল আবার দ্বিতীয় প্রভাত! আমরা আজ সেই নবপ্রভাতের জয়গান গাইবার জন্যেই আয়োজন করছি।

দীর্ঘরাত্রি শেষে প্রাতঃসন্ধ্যা এসে অন্ধকারের যবনিকা যখন সরিয়ে দিলে, তখন দেখলুম পাটলিপুত্রের সিংহাসনে বিরাজ করছেন যে রাজা, ইতিহাসে তিনি গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রগুপ্ত নামে বিখ্যাত (আনুমানিক ৩১৮ খ্রিস্টাব্দে) তাঁর বাপের নাম ঘটোৎকচ এবং ঠাকুরদাদা ছিলেন শুধু গুপ্ত নামেই পরিচিত।

গুপ্তবংশের উৎপত্তি নিয়ে গোলমাল আছে। কেউ বলেন, তাঁরা ছিলেন নীচ জাতের লোক। কেউ বলেন, তাঁরা ছিলেন অহিন্দু।

লিচ্ছবি জাতি বুদ্ধদেবের সময়েই বিখ্যাত হয়েছিল। বৌদ্ধগ্রন্থে প্রসিদ্ধ বৈশালী নগরে ছিল লিচ্ছবিদের রাজ্য। লিচ্ছবিরা আর্য না হলেও সম্ভ্রান্ত ছিল অত্যন্ত এবং তাদের শক্তিও ছিল যথেষ্ট।

এই বংশের রাজকন্যা কুমারদেবীকে বিয়ে করে প্রথম চন্দ্রগুপ্তের মানমর্যাদা এত বেড়ে গেল যে, তুচ্ছ ‘রাজা’ উপাধি আর তাঁর ভালো লাগল না। তিনি গ্রহণ করলেন ‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি এবং স্বাধীন নরপতির মতো নিজের ও রানি কুমারদেবীর নামাঙ্কিত মুদ্রারও প্রচলন করলেন।

সঙ্গে সঙ্গে চলল রাজ্য বাড়াবার চেষ্টা। এ চেষ্টাও বিফল হল না। দেখতে দেখতে মাত্র কয়েক বৎসরের মধ্যেই তিরহুত ও অযোধ্যা প্রভৃতি দেশ হস্তগত করে প্রথম চন্দ্রগুপ্ত প্রমাণ করলেন যে সত্যসত্যই তিনি মহারাজাধিরাজ উপাধি লাভের যোগ্য। ওদিকে তাঁর রাজ্যসীমা গঙ্গা-যমুনার সঙ্গমস্থল (আজ যেখানে এলাহাবাদের অবস্থান) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। রাজ্যাভিষেকের পরে নিজের নামে তিনি এক নতুন অব্দও চালালেন—তা গুপ্তাব্দ বলে পরিচিত।

প্রথম চন্দ্রগুপ্ত বেশিদিন রাজ্যসুখ ভোগ করতে পারেননি। কিন্তু ছোট্ট একটি খণ্ড রাজ্যের মালিক হয়েও তিনি যখন মাত্র দশ-পনেরো বছরের ভিতরেই নিজের রাজ্যকে প্রায় সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন, তখন তাঁর যে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, অসাধারণ বীরত্ব ও যথেষ্ট যুদ্ধকৌশলের অভাব ছিল না, এ সত্য বোঝা যায় সহজেই। ম্যাসিদনের অধিপতি ফিলিপ তাঁর সমধিক বিখ্যাত পুত্র আলেকজান্ডারের জন্যে এমন দৃঢ় ভিত্তির উপরে সিংহাসন প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছিলেন যে বিশেষজ্ঞদের মতে ফিলিপের মতো রাজনীতিজ্ঞ ও যুদ্ধকৌশলী পিতা না পেলে আলেকজান্ডার বিশ্বজয়ী হতে পারতেন কিনা সন্দেহ! গুপ্তবংশীয় চন্দ্রগুপ্তও আর এক অতি বিখ্যাত পুত্রের পিতা। অতি অল্পদিনে খণ্ড-বিখণ্ড ভারতবর্ষে তিনি এমন এক অখণ্ড ও বিপুল রাজ্য স্থাপন করে গেলেন যে অদূর ভবিষ্যতেই আকারে ও বলবিক্রমে তা প্রায় সুপ্রসিদ্ধ মৌর্য সাম্রাজ্যের সমান হয়ে উঠেছিল এবং তার স্থায়িত্ব হয়েছিল কিছু কম দুইশত বৎসর! ব্যাপকভাবে ধরলে বলতে হয়, ভারতবর্ষের উপরে গুপ্তযুগের অস্তিত্ব ছিল তিনশত পঞ্চাশ বৎসর!

বলেছি, গুপ্তবংশীয় প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আবির্ভাব নিশান্তকালে প্রাতঃসন্ধ্যায়। কিন্তু ভারতের দ্বিতীয় প্রভাতের গৌরবময় অপূর্ব সূর্যোদয় তখনও হয়নি। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত তরুণ সূর্যের জন্যে অরুণ আসর সাজিয়ে রাখলেন। তারপরই হল গৌরবময় সূর্যোদয়। আর্যাবর্ত তারপরে আর কখনও দেখেনি তেমন আশ্চর্য সূর্যকে। তারই বিচিত্র কিরণে সৃষ্ট হয়েছিল ভারতের যেসব নিজস্বতা বা বিশেষত্ব, আজও বিশ্বসভায় তাই নিয়ে আমরা গর্ব করে থাকি। ভারতের অমর কালিদাস গুপ্তযুগেরই মানুষ। কেবল কি কালিদাসের কাব্য? ‘মৃচ্ছকটিক’, ‘মুদ্রারাক্ষস’ প্রভৃতি অতুলনীয় সাহিত্যরত্নের সৃষ্টি গুপ্তযুগেই। প্রাচীনতম পুরাণ ‘বায়ুপুরাণ’ এবং ‘মনুসংহিতা’ও তাই। গণিতজ্ঞ ও জ্যোতিষজ্ঞ হিসাবে গুপ্তযুগের বরাহমিহির ও আর্যভট্টের নাম বিশ্ববিখ্যাত। স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলায় গুপ্তযুগের প্রতিভাকে প্রমাণিত করবার জন্য আজও বিদ্যমান আছে অজন্তা, ইলোরা, সাঁচী, সারনাথ, ভরহুত, অমরাবতী ও শিগিরি প্রভৃতি। দিল্লির বিস্ময়কর লৌহস্তম্ভের জন্ম গুপ্তযুগেই। সংগীতকলাও হয়ে উঠেছিল সর্বাঙ্গসম্পূর্ণ। কত আর নাম করব?

এতক্ষণ গেল ইতিহাসের কথা। পরের পরিচ্ছেদেই আমাদের গল্প শুরু হবে এবং দেখা দেবেন আমাদের কাহিনির নায়ক।