ভক্তি-পর্ব
প্রথম পরিচ্ছেদ
লৌকিক প্রথামতে নুরল এসলামের বিবাহের ক্রিয়াপর্ব সমাধা হইয়া গিয়াছে। তিনি এক্ষণে অফিসের কার্যে নিযুক্ত হইয়াছেন। স্ত্রী আপন পিত্রালয়ে। মাসাধিক পর নুরল এসলাম তাহাকে পত্র লিখিলেন, “প্রাণাধিকে! এত অল্প সময়ে ভক্তি ও সদ্ব্যবহারে নাকি তুমি ফুফু- আম্মার মন কাড়িয়া লইয়া গিয়াছ; তাই তিনি তোমাকে আনিবার নিমিত্ত উতলা হইয়াছেন। আগামী ১৭ই অগ্রহায়ণ তিনি তোমাকে আনিবার নিমিত্ত এখান হইতে লোক পাঠাইবেন। তোমার সই এখন কোথায়? দোস্ত সাহেব বি-এল পরিক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হইয়াছেন। খবরের কাগজে নাম দেখিয়া বেল্লায় ‘তার’ করিয়াছি। তুমি কেমন আছ? খোদার ফজলে আমরা সকলে ভাল আছি। আগামীতে তোমাদের সর্বাঙ্গীন কুশল সংবাদ লিখিবে।” ইতি— তারিখ, ১৩ই অগ্রহায়ণ।
তোমারই–
নুরল এসলাম
আনোয়ারা পত্র পাইয়া স্বামীকে পত্র লিখিল। ইহাই তাহার প্রেমময় জীবনের প্রথম পত্র–
“পাক্ জনাবে কোটি কোটি কদমবুসি পর আরজ,
আপনার পবিত্র হস্তের সুধালিপি পাইয়া সুখী হইলাম। আমার একমাস ‘নফল রোজা’ মানত ছিল, এখানে আসিয়া কয়েকদিন পর তাহা আরম্ভ করিয়াছিল। আজ রোজার ১১ দিন, আর তিন সপ্তাহ পর আমাকে লইয়া গেলে ভাল হয়; কারণ তথায় যাইয়া রোজা করিবার নানারূপ অসুবিধা হইতে পারে। পত্রমধ্যে যে টুক্রা কাগজগুলি পাঠাইলাম সেগুলি স্বহস্তে পোড়াইয়া ফেলিবেন। দাসীর বেয়াদবী ও ধৃষ্টতা মাফ করিবেন। আমি এখানে আসিবার এক সপ্তাহ বাদ সই বেল্লা গিয়াছে। সে-ও তথা হইতে আমাকে লিখিয়াছে, তাহার স্বামী প্রশংসার সহিত বি-এল পাস করিয়াছেন। আমি পরমানন্দে সন্দেশ চাহিয়া তাহাকে পুনরায় পত্র লিখিয়াছি। আপনার শরীর কেমন আছে? দাদী আম্মার দোওয়া জানিবেন। বাটীস্থ আর আর সকলের মঙ্গল জানিবেন। খোদার মরজি এখানে সকলে ভাল আছেন। আরজ ইতি তারিখ, ১৫ই অগ্রহায়ণ।
সেবিকা–
আনোয়ারা
নুরল এসলাম যথাসময়ে পত্র পাইলেন। খুলিবামাত্র কতকগুলি টুকরা কাগজপত্র বাহির হইয়া পড়িল। তিনি বিস্মিত হইয়া কাগজগুলি যথাযথভাবে জোড়াতালি দিয়া দেখিলেন; তাহা তাঁহার নিজহস্তে লিখিত পূর্বকথিত সেই তিন হাজার টাকার কাবিননামা। অনেকক্ষণ পর্যন্ত নুরল ইস্লাম অবাক ও স্তম্ভিত হইয়া রহিলেন। তারপর স্বাগত ভাবিলেন, “প্রিয়ে! তুমি সত্য সত্যই স্বর্গের আনোয়ারা (জ্যোতির্মালা), তোমার তুলনা মর্ত্যে সম্ভবে না।”