» » আশ্চর্য পুকুর

বর্ণাকার

আমাদের স্কুলে যিনি বাংলা ব্যাকরণ পড়াতেন তিনি ছিলেন চিমটি স্পেশালিস্ট। বিভিন্ন ধরনের চিমটি আবিষ্কার করে তিনি ছাত্র মহলে খুবই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। খ্যাতির কারণ চিমটি নয়, চিমটির নাম। চিমটির তিনি চমৎকার চমৎকার সব নাম দিতেন। সমাস-চিমটি, সন্ধি-চিমটি, এককথায় চিমটি, বিপরীত শব্দে চিমটি…। চিমটি অ্যাপ্লাই করার আগে স্যার ক্লাসে উচ্চ-গলায় চিমটির নাম ঘোষণা করতেন। তারপর মিটমিটি হেসে বলতেন, ‘এই নাম কি তোমাদের পছন্দ হয়েছে?’ আমরা সমস্বরে বলতাম, ‘খুবই হয়েছে স্যার। তবে খেয়াল রাখবেন যেন বেশি না লাগে।’ স্যার মাথা নাড়তেন কিন্তু খেয়াল রাখতেন না। চিমটিতে যথেষ্টই লাগত। গোটা পিরিয়ডটা জ্বালা জ্বালা করত। তবে চোখ দিয়ে জল বের হওয়ার মতো লাগত না।

ব্যাকরণ স্যার যেদিন অবসর নিলেন সেদিন একটা কাণ্ড হল। হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে স্যার ধরা গলায় বললেন, ‘ছেলেরা, তোমাদের অনেক ব্যথা দিয়েছি। আজ যদি ইচ্ছে হয় তোমরা এসে আমাকে একটা করে চিমটি কেটে যেতে পারো। আমি কিছু মনে করব না। তবে দেখবে, জীবনে ব্যাকরণ যেন ভুল না হয়।’

চিমটিতে যা হয়নি, স্যারের কথা শুনে আমাদের তাই হল। সবার চোখে জল এসে গেল।

স্কুল জীবন এরকমই হয়। এই জীবনে হাসিতেও আনন্দ, চোখের জলেও আনন্দ থাকে। অন্য কোন জীবনে এই জিনিস পাওয়া যায়?

নানা ধরনের গল্পের সঙ্গে স্কুল জীবন অনেকগুলো গল্প লিখলাম এই বইতে। শুধু আমার স্কুল জীবন নয়, তোমাদের সকলের স্কুল জীবন। লেখার পর দেখলাম, সব গল্প সত্যি হল না, অথচ কোনও গল্পই যেন মিথ্যে নয়!

তোমাদের দিনগুলো এমনই আনন্দময় হোক।

Leave a Reply