» » ইউনিফর্ম

বর্ণাকার

আমাদের স্কুলের ইউনিফর্ম নিয়ে অনেক জলঘোলা হয়েছে, অনেক গোলমাল হয়েছে। প্রথমে আমরা যে ইউনিফর্ম পরতাম, এখন আর সেটা পরি না। বদলে দেওয়া হয়েছে। এখন যেটা পরছি সেটাও আর কতদিন চলবে, কে জানে? সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের এই পবনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ইউনিফর্ম একটা সমস্যার ব্যাপার।

স্কুল চালু হওয়ার মুখে মুখে শুরু হল ইউনিফর্ম নিয়ে মিটিং। সেইসব মিটিংয়ে পবনপুরের মান্যিগণ্য ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকতেন। তবে হল কী, আমাদের পবনপুরের বড়রা তো কোন ব্যাপারেই কিছুতে একমত হন না। একজন একরকম বলেন তো আর একজন উল্টো বলবেন। ইউনিফর্ম নিয়ে মিটিংগুলোতেও সেরকম হচ্ছিল। কিছুতেই কোন ফয়সালা হচ্ছিল না। শেষপর্যন্ত স্কুল কমিটির সদস্যরা ঠিক করলেন, এবার মিটিংয়ে নিয়ে আসা হবে শিবপদ ভট্টাচার্যকে। অর্থাৎ আমাদের পবনপুরের এম এল এ-কে। তিনি একদিকে যেমন এম এল এ, অন্যদিকে তখন আবার তিনি না বললে এই স্কুলই হত না। সুতরাং তাঁর কথার যথেষ্ট দাম আছে। তিনি যা বলবেন তাই হবে শেষ কথা।

সামান্য ইউনিফর্ম নিয়ে ডাকা মিটিংয়ে সভাপতি হতে হবে শুনে প্রথমে শিবপদবাবু রাজি হননি। পরে কী যেন হল, তিনি খবর পাঠালেন, “আমি যাচ্ছি।”

এম এল এ মশাই মিটিংয়ে বেশি কিছু বলেননি। সামান্য দু’চার কথা। তিনি বললেন, “প্ৰথমে ভেবেছিলাম, এই সভায় আসব না। পরে ভুল ভাঙল। বিষয় যখন ইউনিফর্ম তখন তো আমাকে আসতেই হবে। ইউনিফর্ম মানে হল গিয়ে ইউনিটি, মানে হল গিয়ে সংহতি, সবাই মিলে মিশে থাকার শপথ। এটাই এখন সব থেকে বড় কথা। আসল কথা। মহান কথা। আর তাছাড়া পবনপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্ররা যে ইউনিফর্ম পারবে তা বাইরে থেকে কেন আসবে? ছিছি। সে হবে। আমাদের লজ্জার। তাই অনেক ভেবে আমি সিদ্ধান্তু নিয়েছি, এই স্কুলের ছাত্ররা যে ইউনিফর্ম পরবে তা তৈরি হবে মাধব সাঁতরার দোকান থেকেই। আপনারা মাধবকেই দায়িত্ব দিন।” অনেক হাততালি, আর জলভরা সন্দেশ দিয়ে সেই মিটিং শেষ হয়েছিল।

মাধব সাঁতরা এম এল এ মশাইয়ের দূর সম্পর্কের ভাগনে। পবনপুরের রেল স্টেশনের পাশে তার জামা-কাপড়ের দোকান ‘লজ্জা নিবারণ’। এক সপ্তাহের মধ্যেই স্কুলের তিনশো ছাত্রের ইউনিফর্মের অর্ডার সেখানে জমা হল। মাধববাবুই ঠিক করলেন, জামার রং হবে নীল, প্যান্ট হবে সাদা। হলও তাই।

তবে এখানেই ইউনিফর্ম নিয়ে গণ্ডগোল থেমে গেল না।

গত বর্ষাতে ছেলেদের সেই নীল জামা থেকে রং উঠতে শুরু করল। নীল রং গড়িয়ে গড়িয়ে সাদা প্যান্টের ওপর পড়তে লাগল। প্রথমে একজন দুজনের তারপর দশজন বিশজনের, শেষপর্যন্ত একশজন দেড়শজনের দল বেঁধে ছাত্ররা যখন স্কুলে আসত বা যেত তখন সে এক কিম্ভূতকিমাকার দৃশ্য। অভিভাবকরা প্ৰথমে মাধব সাঁতরার কাছে গিয়ে বলল, তারপর স্কুলের মাস্টারমশাইদের কাছে গিয়ে বলল, কিন্তু উপায় নেই। মাধব সাঁতরার ‘লজ্জা নিবারণ’ দোকান থেকেই ইউনিফর্ম তৈরি করতে হবে। এম এল এ মশাই যে সেরকমই বলে দিয়েছেন। তাই হেডমাস্টারমশাই মাধববাবুকে একদিন ডেকে পাঠিয়ে বললেন, “এ তো আর চোখে দেখা যায় না। একটা কিছু করুন।”

তারপরই মাধববাবু ইউনিফর্মের রং বদলে দিয়েছেন। নীল জামার বদলে সাদা জামা। আর সাদা প্যান্টের বদলে নীল প্যান্ট। মাধববাবু বলেন, আবার যে রং উঠবে না এমন কথা বলতে পারি না। তবে সাদা জামা থেকে রং উঠলেও সাদা জামা সাদাই থাকবে।’

Leave a Reply