» » অন্ধ স্বদেশ-দেবতা

অন্ধ স্বদেশ-দেবতা

ফাঁসির রশ্মি ধরি

আসিছে অন্ধ স্বদেশ-দেবতা, পলে পলে অনুসরি

মৃত্যু-গহন-যাত্রীদলের লাল পদাঙ্ক-রেখা।

যুগযুগান্ত-নির্জিত-ভালে নীল কলঙ্ক-লেখা!

নীরন্ধ্র মেঘে অন্ধ আকাশ, অন্ধ তিমির রাতি,

কুহেলি-অন্ধ দিগন্তিকার হস্তে নিভেছে বাতি,−

চলে পথহারা অন্ধ দেবতা ধীরে ধীরে এরি মাঝে,

সেই পথে ফেলে চরণ–যে পথে কঙ্কাল পায়ে বাজে!

নির্যাতনের যে যষ্টি দিয়া শত্রু আঘাত হানে

সেই যষ্টিরে দোসর করিয়া অলক্ষ্য পথ-পানে

চলেছে দেবতা–অন্ধ দেবতা–পায়ে পায়ে পলে পলে,

যত ঘিরে আসে পথ-সংকট চলে তত নববলে।

ঢলে পড়ে পথ পরে,

নবীন মৃত্যু-যাত্রী আসিয়া তুলে ধরে বুকে করে!

অন্ধ কারার বন্ধ দুয়ারে যথায় বন্দী জাগে,

যথায় বধ্য-মঞ্চ নিত্য রাঙিছে রক্ত-রাগে,

যথায় পিষ্ট হতেছে আত্মা নিষ্ঠুর মুঠি-তলে,

যথায় অন্ধ গুহায় ফণীর মাথায় মানিক জ্বলে,

যথায় বন্য শ্বাপদের সাথে নখর দন্ত লয়ে

জাগে বিনিদ্র বন্য-তরুণ ক্ষুধার তাড়না সয়ে,

যথা প্রাণ দেয় বলির নারীরা যূপকাষ্ঠের ফাঁদে,−

সেই পথে চলে অন্ধ দেবতা, পথ চলে আর কাঁদে,−

‘ওরে ওঠ ত্বরা করি

তোদের রক্তে-রাঙা উষা আসে, পোহাইছে বিভাবরী!’

তিমির রাত্রি, ছুটেছে যাত্রী নিরুদ্দেশের ডাকে,

জানে না কাথায় কোন পথে কোন ঊর্ধ্বে দেবতা হাঁকে।

শুনিয়াছে ডাক এই শুধু জানে! অপনার অনুরাগে

মাতিয়া উঠেছে অলস চরণ, সম্মুখে পথ জাগে!

জাগে পথ, জাগে ঊর্ধ্বে দেবতা, এই দেখিয়াছে শুধু,

কে দেখে সে পথে চোরা বালুচর, পর্বত, মরু ধুধু!

ছুটেছে পথিক, সাথে চলে পথ, অমানিশি চলে সাথে,

পথে পড়ে ঢলে, মৃত্যুর ছলে ধরে দেবতার হাতে।

চলিতেছে পাশাপাশি–

মৃত্যু, তরুণ, অন্ধ দেবতা, নবীন উষার হাসি!