» » আমি গাই তারি গান

বর্ণাকার

আমি গাই তারি গান

আমি গাই তারি গান–

দৃপ্ত-দম্ভে যে-যৌবন আজ ধরি অসি খরশান

হইল বাহির অসম্ভবের অভিযানে দিকে দিকে।

লক্ষ যুগের প্রাচীন মমির পিরামিডে গেল লিখে

তাদের ভাঙার ইতিহাস-লেখা। যাহাদের নিশ্বাসে

জীর্ণ পুথির শুষ্ক পত্র উড়ে গেল এক পাশে।

যারা ভেঙে চলে অপদেবতার মন্দির আস্তানা,

বকধার্মিক-নীতিবৃদ্ধের সনাতন তাড়িখানা।

যাহাদের প্রাণ-স্রোতে ভেসে গেল পুরাতন জঞ্জাল,

সংস্কারের জগদল-শিলা, শাস্ত্রের কঙ্কাল।

মিথ্যা মোহের পূজা-মণ্ডপে যাহারা অকুতোভয়ে

এল নির্মম–মোহ-মুদ্‌গর ভাঙনের গদা লয়ে।

বিধি-নিষেধের চীনের প্রাচীরে অসীম দুঃসাহসে

দু-হাতে চালাল হাতুড়ি শাবল। গোরস্থানেরে চষে

ছুঁড়ে ফেলে যত শব-কঙ্কাল বসাল ফুলের মেলা,

যাহাদের ভিড়ে মুখর আজিকে জীবনের বালু-বেলা।

–গাহি তাহাদেরি গান

বিশ্বের সাথে জীবনের পথে যারা আজি আগুয়ান!…

–সেদিন নিশীথ-বেলা

দুস্তর পারাবারে যে যাত্রী একাকী ভাসাল ভেলা,

প্রভাতে সে আর ফিরিল না কুলে। সেই দুরন্ত লাগি

আঁখি মুছি আর রচি গান আমি আজিও নিশীথে জাগি।

আজও বিনিদ্র গাহি গান আমি চেয়ে তারই পথ-পানে।

ফিরিল না প্রাতে যে-জন সে-রাতে উড়িল আকাশ-যানে

নব জগতের দূরসন্ধানী অসীমের পথচারী,

যার ভয়ে জাগে সদাসতর্ক মৃত্যু-দুয়ারে দ্বারী!

সাগরগর্ভে, নিঃসীম নভে, দিগ্‌দিগন্ত জুড়ে

জীবনোদ্‌বেগে তাড়া করে ফেরে নিতি যারা মৃত্যুরে,

মানিক আহরি আনে যারা খুঁড়ি পাতাল-যক্ষপুরী,

নাগিনীর বিষ-জ্বালা সয়ে করে ফণা হতে মণি চুরি।

হানিয়া বজ্রপাণির বজ্র উদ্ধত শিরে ধরি

যাহারা চপলা মেঘ-কন্যারে করিয়াছে কিঙ্করী।

পবন যাদের ব্যজনী দুলায় হইয়া আজ্ঞাবাহী,–

এসেছি তাদের জানাতে প্রণাম, তাহাদের গান গাহি।

গুঞ্জরি ফেরে ক্রন্দন মোর তাদের নিখিল ব্যেপে–

ফাঁসির রজ্জু ক্লান্ত আজিকে যাহাদের টুঁটি চেপে!

যাহাদের কারাবাসে

অতীত রাতের বন্দিনি উষা ঘুম টুটি ওই হাসে!