» » জাগরণ

বর্ণাকার

জাগরণ

জেগে যারা ঘুমিয়ে আছে তাদের দ্বারে আসি

ওরে পাগল, আর কতদিন বাজাবি তোর বাঁশি!

ঘুমায় যারা মখমলের ঐ কোমল শয়ন পাতি

অনেক আগেই ভোর হয়েছে তাদের দুখের রাতি।

আরাম-সুখের নিদ্রা তাদের; তোর এ জাগার গান

ছোঁবে নাকো প্রাণ রে তাদের, যদিই বা ছোঁয় কান!

নির্ভয়ের ঐ সুখের কূলে বাঁধল যারা বাড়ি,

আবার তারা দেবে না রে ভয়ের সাগর পাড়ি।

ভিতর হতে যাদের আগল শক্ত করে আঁটা

‘দ্বার খোলো গো’ বলে তাদের দ্বারে মিথ্যা হাঁটা।

ভোল রে এ পথ ভোল,

শান্তিপুরে শুনবে কে তোর জাগর-ডঙ্কা-রোল!

ব্যথাতুরের কান্না পাছে শান্তি ভাঙে এসে

তাইতে যারা খাইয়ে ঘুমের আফিম সর্বনেশে

ঘুম পাড়িয়ে রাখছে নিতুই, সে ঘুম-পুরে আসি

নতুন করে বাজা রে তোর নতুন সুরের বাঁশি!

নেশার ঘোরে জানে না হায়, এরা কোথায় পড়ে,

গলায় তাদের চালায় ছুরি কেই বা বুকে চড়ে,

এদের কানে মন্ত্র দে রে, এদের তোরা বোঝা,

এরাই আবার করতে পারে বাঁকা কপাল সোজা।

কর্ষণে যার পাতাল হতে অনুর্বর এই ধরা

ফুল-ফসলের অর্ঘ্য নিয়ে আসে আঁচল-ভরা,

কোন সে দানব হরণ করে সে দেব-পূজার ফুল –

জানিয়ে দে তুই মন্ত্র-ঋষি, ভাঙ রে তাদের ভুল!

বর্বরদের অনুর্বর ঐ হৃদয়-মরু চষে

ফল ফলাতে পারে এরাই আবার ঘরে বসে।

বাঘ-ভালুকের বাথান তেড়ে নগর বসায় যারা

রসাতলে পশবে মানুষ-পশুর ভয়ে তারা?

তাদেরি ঐ বিতাড়িত বন্যপশু আজি

মানুষ-মুখো হয়েছে রে সভ্যসাজে সাজি।

টান মেরে ফেল মুখোশ তাদের, নখর কন্ত লয়ে

বেরিয়ে আসুক মনের পশু বনের পশু হয়ে!

তারাই দানব অত্যাচারী–যারা মানুষ মারে,

সভ্যবেশী ভণ্ড পশু মারতে ডরাস কারে?

এতদিন যে হাজার পাপের বীজ হয়েছে বোনা

আজ তা কাটার এল সময়, এই সে বাণী শোনা!

নতুন যুগের নতুন নকিব, বাজা নতুন বাঁশি,

স্বর্গ-রাণী হবে এবার মাটির মায়ের দাসী!