জীবন-বন্দনা

গাহি তাহাদের গান–

ধরণীর হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান।

শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে

ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে।

বন্য-শ্বাপদ-সংকুল জরা-মৃত্যু-ভীষণা ধরা

যাদের শাসনে হল সুন্দর কুসুমিতা মনোহরা।

যারা বর্বর হেথা বাঁধে ঘর পরম অকুতোভয়ে

বনের ব্যাঘ্র মরুর সিংহ বিবরের ফণী লয়ে।

এল দুর্জয় গতিবেগ সম যারা যাযাবর-শিশু

–তারাই গাহিল নব প্রেমগান ধরণী-মেরীর যিশু–

যাহাদের চলা লেগে

উল্কার মতো ঘুরিছে ধরণী শূন্যে অমিত বেগে!

খেয়াল খুশিতে কাটি অরণ্য রচিয়া অমরাবতী

যাহারা করিল ধ্বংসসাধন পুন চঞ্চলমতি,

জীবন-আবেগ রুধিতে না পারি যারা উদ্ধত-শির

লঙ্ঘিতে গেল হিমালয়, গেল শুষিতে সিন্ধু-নীর।

নবীন জগৎ সন্ধানে যারা ছুটে মেরু-অভিযানে,

পক্ষ বাঁধিয়া উড়িয়া চলেছে যাহারা ঊর্ধ্বপানে।

তবুও থামে না যৌবন-বেগ, জীবনের উল্লাসে

চলেছে চন্দ্র-মঙ্গল-গ্রহে স্বর্গে অসীমাকাশে।

যারা জীবনের পসরা বহিয়া মৃত্যুর দ্বারে দ্বারে

করিতেছে ফিরি, ভীম রণভূমে প্রাণ বাজি রেখে হারে।

আমি মরু-কবি– গাহি সেই বেদে-বেদুইনদের গান,

যুগে যুগে যারা করে অকারণ বিপ্লব-অভিযান।

জীবনের আতিশয্যে যাহারা দারুণ উগ্রসুখে

সাধ করে নিল গরল-পিয়ালা, বর্শা হানিল বুকে!

আষাঢ়ের গিরি-নিঃস্রাবসম কোনো বাধা মানিল না,

বর্বর বলি যাহাদের গালি পাড়িল ক্ষুদ্রমনা,

কূপমণ্ডূক ‘অসংযমী’র আখ্যা দিয়াছে যারে,

তারি তরে ভাই গান রচে যাই, বন্দনা করি তারে!