ব্যথার দান

‘ব্যথার দান’ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত গল্পগ্রন্থ; এটি নজরুলের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। ‘ব্যথার দান’ ১৯২২ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মুতাবিক ১৩২৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক : এম. আফজাল-উল-হক, মোসলেম পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্কোয়ার, কলিকাতা। পৃষ্ঠা ১৪৮; মূল্য দেড় টাকা। বেঙ্গল লাইব্রেরির তালিকায় প্রকাশ কাল ১লা মার্চ ১৯২২ বলে উল্লেখিত হয়েছে। এই গ্রন্থে মোট ৬টি গল্প রয়েছে। এই গ্রন্থের গল্পগুলোর ভাষা আবেগাশ্রয়ী, বক্তব্য নরনারীর প্রেমকেন্দ্রিক।

‘ব্যথার দান’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৬ বঙ্গাব্দের মাঘ সংখ্যা ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য়। ‘ব্যথার দান’ গল্পটি প্রসঙ্গে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের নিম্নলিখিত বক্তব্য উল্লেখযোগ্য;—

পুস্তকে ছাপানোর সময়ে ‘ব্যথার দান’ গল্পটিকে নজরুল শুধু যে ছোট করেছে তা নয়, তার চরিত্রের নামও বদলে দিয়েছে। পুস্তকে যে-চরিত্রটির নাম দারা, ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় তারই নাম নূরন্নবী। এই চরিত্রটির নাম প্রথমে নূরন্নবী কেন নজরুল করেছিল, তারপরে নূরন্নবীর জায়গায় দারাই বা সে কেন করল, তার কারণ আমি জানিনে। সাহিত্য পত্রিকায় নূরন্নবীকে তার মা সংক্ষেপে নূরু নামে ডাকছেন। পরে ‘বাঁধনহারা’তেও নূরু নাম পাওয়া যায়। পরে দেখেছি এই নূরু নামের জন্যে তার কিছু দুর্বলতা আছে। সে চিঠিপত্রে কোনো কোনো সময়ে নিজের নূরু নাম স্বাক্ষর করেছে। শ্রীযুক্তা গিরিবালা দেবী ও বিরজাসুন্দরী দেবী তাকে নূরু ডাকতেন। শিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলে নজরুলের পার্‌সী শিক্ষকের নাম ছিল হাজিফ নূরন্নবী। প্রথম গল্প লেখার সময়ে এই নামটিই কি তার মনে পড়েছিল? কে জানে? আবার দারা নামটিও তার প্রিয়। আমার নাতির (মেয়ের ছেলের) নাম সে রেখেছে দারা। এও হতে পারে যে নূরন্নবী নামটি বেলুচিস্তানে খাপ খায় না, কিন্তু দারা নামটি সে-দেশের পক্ষে দিব্যি মানান-সই।…

[ব্যথার দান গল্পে] সয়ফুল-মুল্‌ক ও দারা দু’জনেই যোগ দিল লালফৌজে। অথচ ‘ব্যথার দান’ পুস্তকে আছে যে তারা মুক্তিসেবক সৈন্যদের দলে যোগ দিয়েছিল। এখানে আমার কিছু বলার আছে। নজরুল ইসলাম যখন ‘ব্যথার দান’ গল্পটি আমাদের নিকট পাঠিয়েছিল তখন তাতে এই দু’জনের লালফৌজে যোগ দেওয়ার কথাই অর্থাৎ আমি ওপরে যে উদ্ধৃতি দিয়েছি ঠিক সেইরকমই ছিল। আমি তা থেকে ‘লালফৌজ’ কেটে দিয়ে তার জায়গায় ‘মুক্তিসেবক সৈন্যদের দল’ বসিয়ে দিয়েছিলেম। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ ভারতে ‘লালফৌজ’ কথা উচ্চারণ করাও দোষের ছিল। সেই ‘লালফৌজে’ ব্রিটিশ ভারতের লোকেরা যে যোগ দেবে, তা যদি গল্পের হয়, তা পুলিশের পক্ষে হজম করা মোটেই সহজ হতো না। … আমার পরিবর্তনে সে [নজরুল ইসলাম] খুব খুশি হয়ে আমায় ধন্যবাদ জানিয়ে পত্র লিখেছিল। তারপরে, সে যখন কলকাতায় ছুটিতে এসেছিল তখনও শ্রীশৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সম্মুখে আবারও সে আমার ‘লালফৌজ’ কথার পরিবর্তনের জন্যে ধন্যবাদ দিয়েছিল।

— কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা, দ্বিতীয় বাংলাদেশ সংস্করণ, ঢাকা ১৯৭৬, পৃষ্ঠা ১৫৯—৬৪।

‘হেনা’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৬ বঙ্গাব্দের কার্তিক সংখ্যা ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য়।

‘অতৃপ্ত কামনা’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যা ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’য়।

‘বাদল-বরিষণে’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৭ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যা ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকায়।

‘ঘুমের ঘোরে’ গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩২৬ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘নূর’ পত্রিকায়।

‘রাজবন্দীর চিঠি’ গল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যাদি জানা যায়নি। জানা গেলে পরবর্তীতে আপডেট করা হবে।

উৎসর্গ

মানসী আমার!

মাথার কাঁটা নিয়েছিলুম বলে

ক্ষমা করনি,

তাই বুকের কাঁটা দিয়ে

প্রায়শ্চিত্ত করলুম।