» » জাগরণী

বর্ণাকার

জাগরণী

বকুল! জা-গো! জাগো বকুল, এই পল্লিমাঠের পথের পাশে মেঠো গানের সহজ সুরে জাগো। জাগো তারই রেশের ছোঁয়ায়! জাগো বেদন নিয়ে, পল্লিশিশুর মুক্ত-বিথার প্রাণ নিয়ে, পল্লিতরুণের তাজা খুনের তীব্র কাঁপুনি নিয়ে। জাগো – জাগো বকুল, জাগো! শরম-রাঙা পাপড়ি কটি তোমার খুলে দাও – ছড়িয়ে দাও এই নবীন আষাঢ়ের কালো মেঘের জোলো ঝাপটায়। সংকুচিতা, ভীতা, ত্রস্তা বকুল! ছোট্ট বকুল! জাগো! জাগো – পরাগ-মাখা পবিত্র তোমার ধৌত-করুণ চাউনি নিয়ে, – এই বাদর-রাগিণী-আহত বাদল-প্রাতে। তোমার পরিমলের উদাস সুরভি নিয়ে এসে আমেজ দাও রাজার যত গুল-ভরা বাগিচায়। অনাদৃতা তুমি, তাই বলে তোমার ওই এক নিশ্বাসের সুরভিটুকু নিয়ে গর্বিতার মতো এসো না। এসো তুমি আধ-মুকুলিত-যৌবনা নববধূর মতো ধীর-মন্থর চরণে – পায়ের মুখর পায়জোর সামলে! লাজ-জড়িমা-জড়িত তোমার বুক ভরে থাকে যেন পূত শালীনতার সংযম আর প্রশান্ত প্রীতির স্নিগ্ধ-শান্তি! জাগো বকুল, জাগো! তুমি যেখানে ফোটো, সেই পল্লিতেই আছে আমাদের সত্যিকার বাংলা, – বাঙালির আসল প্রাণ।

আমাদের এই শাশ্বত বাঙালির সুষুপ্ত, ঘুমে-ভরা অলস-প্রাণ জাগিয়ে তোলো তোমার জাগরণের সোনার কাঠি দিয়ে! তাদের ফুলের প্রাণে দাগ বসিয়ে দিয়ো তোমার মদির বাসের উন্মাদনার ছুরি হেনে! জাগো বকুল, জাগো! ওই রাজবাগানের ফুলবালাদের সালাম করো, আর তোমার অশ্রু-ভরা অভিনন্দন জানাও। ছোট্ট তুমি, এই পল্লি-বাটের পায়ে-চলার-পথ থেকে তাগিদে তোমার বুকভরা ভক্তি-ভালোবাসা নিবেদন করো। তোমার ওই পরাগালক্ত নিবেদিত অর্ঘ্য নিয়ে সে গুলবাহার-ভরা সুন্দরীদের বলো, – “ওগো, আমি ছোট্ট বকুল – নেহাত ছোট্ট! আমি জেগেছি! তাও সে অনেক দূরে পল্লির অচিন পথে! তোমরা আমায় ঘৃণা কোরো না! আমি আনব শুধু আমার পল্লিদুলালদের বুকের বেদন, তাদের খাপছাড়া আকুল আবদার, আর যুগ যুগ ধরে – পিষ্ট ক্লিষ্ট প্রাণের ব্যথা বিজড়িত সহজ চিন্তার স্মৃতি। এ বাছাদেরও ঘৃণা কোরো না, অবহেলা এদের প্রাণে বড্ড বাজবে! শিশু এরা – কুঁড়ি এরা, এখনও ফোটেনি। এরা তোমাদের দেশের হাওযার উড়িয়ে দেওয়া রেণুকা।

দিয়ো গো দিয়ো, তোমাদের ওই রানির স্নেহের শুধু একটু রেণু, উড়িয়ে দিয়ো দখিন বায়ে এদের পানে! আহা, অনাদৃত বিড়ম্বিত হতভাগা, এরা, ঘৃণা কোরো না এদের।’’…জাগো বকুল, জাগো! ঝোড়ো হাওয়ায় আর জোলো মেঘে তোমায় ডাক দিয়েছে। জাগো – জাগো, পল্লিবুকের বেদন নিয়ে, পল্লিশিশুর ঝরণা-হাসি নিয়ে, আর তরুণদের সবুজ বুকের অরুণ খুনের উষ্ণগতি নিয়ে! জাগো, বকুল জাগো!! জাগো যৌবনের জয়টিকা নিয়ে!!!