ধীবরদের গান
আমরা
নীচে পড়ে রইব না আর
শোন রে ও ভাই জেলে,
এবার উঠব রে সব ঠেলে!
ওই বিশ্ব-সভায় উঠল সবাই রে,
ওই
মুটে মজুর হেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
আজ
সবার গায়ে লাগছে ব্যথা
সবাই আজই কইছে কথা রে,
আমরা
এমনি মরা, কই নে কিছু
মড়ার লাথি খেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
আমরা
মেঘের ডাকে জেগে উঠে
পানসিতে পাল তুলি।
আমরা
ঝড়-তুফানে সাগর-দোলার
নাগরদোলায় দুলি।
ও ভাই
আকাশ মোদের ছত্র ধরে
বাতাস মোদের বাতাস করে রে।
আমরা
সলিল অনিল নীল গগনে
বেড়াই পরান মেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
হায়
ভাই রে, মোদের ঠাঁই দিল না
আপন মাটির মায়ে
তাই
জীবন মোদের ভেসে বেড়ায়
ঝড়ের মুখে নায়ে।
ও ভাই
নিত্য-নূতন হুকুম জারি
করছে তাই সব অত্যাচারী রে,
তারা
বাজের মতন ছোঁ মেরে খায়
আমরা মৎস্য পেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
আমরা
তল করেছি কতই সে ভাই
অথই নদীর জল,
ও ভাই
হাজার করেও ওই হুজুরদের
পাইনে মনের তল।
আমরা
অতল জলের তলা থেকে
রোহিত-মৃগেল আনি ছেঁকে রে,
এবার
দৈত্য-দানব ধরব রে ভাই
ডাঙাতে জাল ফেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
আমরা
পাথর-জলে ডুব-সাঁতার দিই
মরেও নাহি মরি,
আমরা
হাঙর-কুমির-তিমির সাথে
নিত্য বসত করি।
ও ভাই
জলের কুমির জয় করে কি
কুমির হল ঘরের ঢেঁকি রে,
ও ভাই
মানুষ হতে কুমির ভালো
খায় না কাছে পেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
ও ভাই
আমরা জলে জাল ফেলে রই,
হোথা ডাঙার পরে
আজ
জাল ফেলেছে জালিম যত
জমাদারের চরে।
ও ভাই
ডাঙার বাঘ ওই মানুষ-দেশে
ছেলে-মেয়ে ফেলে এসে রে,
আমরা
বুকের আগুন নিবাই রে ভাই,
নয়ন-সলিল ঢেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
ও ভাই
সপ্ত লক্ষ শির মোদের ভাই
চৌদ্দ লক্ষ বাহু,
ওরে
গ্রাস করেছে তাদের ভাই আজ
চৌদ্দজনা রাহু।
যে
চৌদ্দ লক্ষ হাত দিয়ে ভাই
সাগর মথে দাঁড় টেনে যাই রে,
সেই
দাঁড় নিয়ে আজ দাঁড়া দেখি
মায়ের সাত লাখ ছেলে।
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
ও ভাই
আমরা জলের জল-দেবতা,
বরুণ মোদের মিতা,
মোদের
মৎস্যগন্ধার ছেলে ব্যাসদেব
গাইল ভারত-গীতা।
আমরা
দাঁড়ের ঘায়ে পায়ের তলে
জলতরঙ্গ বাজাই জলে রে,
আমরা
জলের মতন জল কেটে যাই,
কাটব দানব পেলে
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
আমরা
খেপলা জাল আর ফেলব না ভাই,
একলা নদীর তীরে,
আয়
এক সাথে ভাই সাত লাখ জেলে
ধর বেড়াজাল ঘিরে।
ওই
চৌদ্দ লক্ষ দাঁড় কাঁধে ভাই
মল্লভূমির মল্ল-বীর আয়রে,
ওই
আঁশ-বটিতে মাছ কাটি ভাই,
কাটব অসুর এলে!
এবার
উঠব রে সব ঠেলে॥
কৃষ্ণনগর
২৪ ফাল্গুন, ১৩৩২