» » মা (বিরজাসুন্দরী দেবী)-র শ্রীচরণারবিন্দে

বর্ণাকার

মা (বিরজাসুন্দরী দেবী)-র

শ্রীচরণারবিন্দে

সর্বসহা সর্বহারা জননী আমার।

তুমি কোনদিন কারো করনি বিচার,

কারেও দাওনি দোষ। ব্যথা-বারিধির

কূলে ব’সে কাঁদ’ মৌনা কন্যা ধরণীর

একাকিনী! যেন কোন্‌ পথ-ভুলে-আসা

ভিন্‌-গাঁ’র ভীর” মেয়ে! কেবলি জিজ্ঞাসা

করিতেছে আপনারে, ‘ এ আমি কোথায়?’

দূর হ’তে তারাকারা ডাকে, আয় আয়!

তুমি যেন তাহাদের পলাতকা মেয়ে

ভুলিয়া এসেছ হেথা ছায়া-পথ বেয়ে!

বিধি ও অবিধি মিলে মেরেছে তোমায়

মা আমার-কত যেন! চোখে-মুখে, হায়

তবু যেন শুধু এক ব্যথিত জিজ্ঞাসা-

‘ কেন মানে? এরা কা’রা! কোথা হ’তে আসে

এই দুঃখ ব্যথা শোক?’ এরা তো তোমার

নহে পরিচিত মাগো, কন্যা অলকার!

তাই সব স’য়ে যাও নির্বাক নিশ্চুপ,

ধূপেরে পোড়ায় অগ্নি-জানে না তা ধূপ!

  

দূর-দূরান-র হ’তে আসে ছেলে-মেয়ে,

ভুলে যায় খেলা তা’রা তব মুখ চেয়ে!

বলে, ‘তুমি মা হবে আমার?’ ভেবে কী যে!

তুমি বুকে চেপে ধর, চক্ষু ওঠে ভিজে

জননীর কর”ণায়! মনে হয় যেন

সকলের চেনা তুমি, সকলেরে চেন!

  

তোমারি দেশের যেন ওরা ঘরছাড়া

বেড়াতে এসেছে এই ধরণীর পাড়া

প্রবাসী শিশুর দল। যাবে ওরা চ’লে

গলা ধ’রে দুটি কথা ‘মা আমার’ ব’লে!

হয়তো ভুলেছ মাগো, কোনো একদিন,

এমনই চলিতে পথে মরু-বেদুইন-

শিশু এক এসেছিল। শ্রান্ত কন্ঠে তার

বলেছিল গলা ধরে — ‘মা হবে আমার?’…

হয়ত আসিয়াছিল, যদি পড়ে মনে,

অথবা সে আসে নাই-না এলে স্মরণে!

যে-দুরন- গেছে চ’লে আসিবে না আর,

হয়ত তোমার বুকে গোরস্থান তার

জাগিতেছে আজো মৌন, অথবা সে নাই!

এমন ত কত পাই-কত সে হারাই..

সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা!

শূন্য নাহি রহে কভু মাতা ও বিধাতা।

হারা-বুকে আজ তব ফিরিয়াছে যারা-

হয়ত তাদেরি স্মৃতি এই ‘সর্বহারা’!

৩৭ হ্যারিসন রোড,

কলিকাতা,

১৬ ভাদ্র ১৩৩৩