কল্লোল যুগ

কল্লোল যুগ

‘কল্লোল যুগ’ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রচিত কল্লোল যুগ বিষয়ে একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ। প্রথম প্রকাশ, আশ্বিন ১৩৫৭ বঙ্গাব্দ; প্রকাশক, শমিত সরকার, এম. সি. সরকার অ্যাণ্ড সন্স প্রাইভেট লি., ১৪ বঙ্কিম চাটুজ্যে ষ্ট্রীট, কলিকাতা ৭৩। মুদ্রক, সাধনকুমার গুপ্ত,Continue Reading

কল্লোল যুগ

এক

একই শ্লেটের দুপিঠে দুজনে একই জনের নাম লিখলাম। তেরো শ আটাশ সালের কথা। গিয়েছিলাম মেয়েদের ইস্কুল-হসটেলে একটি ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। দারোয়ানের কাছে গেট জিম্মা আছে, তাতে কাঙ্ক্ষিতদর্শনার নামের নিচে দর্শনাকাঙ্ক্ষীর নাম লিখে দিতে হবে।Continue Reading

কল্লোল যুগ

দুই

সাউথ সুবার্বন স্কুলে ফার্স্ট ক্লাশে উঠে প্রেমেনকে ধরি। সে-সব দিনে ষোলো বছর না পুরলে ম্যাট্রিক দেওয়া যেত না। প্রেমেনের এক বছর ঘাটতি পড়েছে। তার মানে ষোলো কলার এক কলা তখন বাকি। ধরে ফেললাম। লক্ষ্য করলামContinue Reading

কল্লোল যুগ

তিন

তেরো-শ একত্রিশ সালের পয়লা জ্যৈষ্ঠ আমি প্রেমেন আর আমাদের দু’টি সাহিত্যিক বন্ধু মিলে একটা সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠা করলাম। তার নাম হল “আভ্যুদয়িক”। আর বন্ধু দু’টির নাম শিশিরচন্দ্র বসু আর বিনয় চক্রবর্তী। যেমনটি সাধারণত হয়ে থাকে। অভিভাবকContinue Reading

কল্লোল যুগ

চার

কাঁচা মাটিতে নামের দাগ কতক্ষণ বেঁচে থাকবে? গোকুলের পকেট থেকে ভিজিটিং কার্ড বেরুল। কিন্তু তার পৃষ্ঠে ললাটে নিজেদের নাম লিখি কি দিয়ে? কলম? কারুরই কলম নেই। পেন্সিল? দাঁড়াও, বাড়ির ভিতর থেকে জোগাড় করছি একটা। পেন্সিলContinue Reading

কল্লোল যুগ

পাঁচ

কশ্চিৎ কান্তা—বিরহগুরুণা—স্বাধিকারপ্রমত্তঃ শাপেনাস্তং—গমিতমহিমা—বৰ্ষভোগ্যেন ভর্ত্তুঃ— ললিতগম্ভীর সুমধুর কণ্ঠে একটু বা টেনে-টেনে আবৃত্তি করতে-করতে যে যুবকটি “কল্লোল”-আফিসে প্রবেশ করল প্রথম দর্শনেই তাকে ভালোবেসে ফেললাম। ভালোবাসতে বাধ্য হলাম বলা উচিত। এমন হৃদয়স্পর্শী তার ব্যক্তিত্ব। মাথাভরা দীর্ঘ উসকো-খুসকো চুল,Continue Reading

কল্লোল যুগ

ছয়

‘আপনি যাবেন না?’ ‘তোমার কি মনে হয়?’ দুই চোখে কথা-ভরা হাসি নিয়ে তাকালেন দীনেশদা। উজ্জ্বল দৃষ্টির মধ্য দিয়ে এমন বন্ধুতাপূর্ণ হাসি—এ আর দেখিনি কোনোদিন। সে-হাসিতে কোমল স্নেহের স্পর্শ মাখানো। পুঁজিপাটা তাঁর কিছুই ছিল না—শুধু হৃদয়ভরাContinue Reading

কল্লোল যুগ

সাত

ঘোর বর্ষায় পথ-ঘাট ডুবে গেলেও আড্ডা জমাতে আসতে হবে তোমাকে কল্লোল: আপিসে—তা তুমি ভবানীপুরেই থাকো বা বেলেঘাটায়ই থাকে। আর সোমনাথ আসত সেই কুমোরটুলি থেকে। সোমনাথের যেটা বাড়ি তার নিচেটা চালের আড়ত, সারবাঁধা চালের বস্তায় ভর্তি।Continue Reading

কল্লোল যুগ

আট

“কল্লোল”কে নিয়ে যে প্রবল প্রাণোচ্ছাস এসেছিল তা শুধু ভাবের দেউলে নয়, ভাষারও নাটমন্দিরে। অর্থাৎ “কল্লোলে”র বিরুদ্ধতা শুধু বিষয়ের ক্ষেত্রেই ছিল না, ছিল বর্ণনার ক্ষেত্রে। ভঙ্গি ও আঙ্গিকের চেহারায়। রীতি ও পদ্ধতির প্রকৃতিতে। ভাষাকে গতি ওContinue Reading

কল্লোল যুগ

নয়

সান-ইয়াৎ-সেন আসত “কল্লোলে”। সান-ইয়াৎ-সেন মানে আমাদের সনৎ সেন। সনৎ সেনকে আমরা সান-ইয়াৎ-সেন বলতাম। ‘অৰ্ধাঙ্গিণী’ নামে একখানা উপন্যাস লিখেছিল বলে মনে পড়ছে। আধপোড় চুরুট মুখে দিয়ে প্রায়ই আসত আড্ডা দিতে, প্রসন্ন চোখে হাসত। দৃষ্টি হয়তো সাহিত্যেরContinue Reading

কল্লোল যুগ

দশ

জিজ্ঞাসা ও নৈরাশ্য, সংগ্রাম ও অপূর্ণতা এই দুই যতির মধ্যে দুলছে তখন “কল্লোলে”র ছন্দ। সে সময়কার প্রেমেনের দুটো চিঠি—প্রথমটা এই— “অচিন, আমি অধঃপাতে চলেছি। তাও যদি ভালো ভাবে যেতে পারতুম! জীবন নিয়ে কি করতে চাইContinue Reading

কল্লোল যুগ

এগার

ফুটবল খেলার মাঠে দু’জন সাহিত্যিককে আমরা আবিষ্কার করি। শিবরাম চক্রবর্তী সেন্টারের কাছে গ্যালারির প্রথম ধাপে দাঁড়াত—তাকে টেনে আনতে দেরি হত না আমাদের দশচক্রে। গোলগাল নধরকান্তি চেহারা, লম্বা চুল পিছনের দিকে ওলটানো। সমস্তটা উপস্থিতি রসে-হাস্যে সমুজ্জল।Continue Reading

কল্লোল যুগ

বার

রবীন্দ্রনাথকে প্রথম কবে দেখি? প্রথম দেখি আঠারোই ফাল্গুন, শনিবার, ১৩৩০ সাল। সেবার বি-এর বছর, ঢুকিনি তখন “কল্লোলে”। রবীন্দ্রনাথ সেনেট হলে কমলা-লেকচার্স দিচ্ছেন। ভবানীপুরের ছেলে, কলকাতার কলেজে গতিবিধি নেই, কোণঠাসা হয়ে থাকবার কথা। কিন্তু গুরুবলে ভিড়Continue Reading