অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

কল্লোল যুগ

দুই

সাউথ সুবার্বন স্কুলে ফার্স্ট ক্লাশে উঠে প্রেমেনকে ধরি। সে-সব দিনে ষোলো বছর না পুরলে ম্যাট্রিক দেওয়া যেত না। প্রেমেনের এক বছর ঘাটতি পড়েছে। তার মানে ষোলো কলার এক কলা তখন বাকি।

ধরে ফেললাম। লক্ষ্য করলাম সমস্ত ক্লাশের মধ্যে সব চেয়ে উজ্জ্বল, সব চেয়ে সুন্দর, সব চেয়ে অসাধারণ ঐ একটিমাত্র ছাত্র–প্রেমেন্দ্র মিত্র। এক মাথা ঘন কোঁকড়ানো চুল, সামনের দিকটা একটু আঁচড়ে বাকিটা এক কথায় অগ্রাহ্য করে দেওয়া—সুগঠিত দাঁতে সুখস্পর্শ হাসি, আর চোখের দৃষ্টিতে দূরভেদী বুদ্ধির প্রখরতা। এক ঘর ছেলের মধ্যে ঠিক চোখে পড়ার মত। চোখের বাইরে একলা ঘরে হয়তো বা কোনো-কোনো দিন মনে পড়ার মত।

এক সেকশনে পড়েছি বটে কিন্তু কোনো দিন এক বেঞ্চিতে বসিনি। যে কথা-বলার জন্যে বেঞ্চির উপর উঠে দাঁড়াতে হয়, তেমন কোনো দিন কথা হয়নি পাশাপাশি বসে। তবু দূর থেকেই পরস্পরকে আবিষ্কার করলাম।

কিংবা, আদত কথা বলতে গেলে, আমাদের আবিষ্কার করলেন আমাদের বাংলার পণ্ডিত মশাই—নাম রণেন্দ্র গুপ্ত। ইস্কুলের ছাত্রদের মুখ-চলতি নাম রণেন পণ্ডিত।

গায়ের চাদর ডান হাতের বগলের নিচে দিয়ে চালান করে বা কাঁধের উপর ফেলে পাইচারি করে-করে পড়াতেন পণ্ডিত মশাই। অদ্ভুত তার পড়াবার ধরন, আশ্চর্য তাঁর বলবার কায়দা। থমথমে ভারী গলার মিষ্টি আওয়াজ এখনো যেন শুনতে পাচ্ছি।

নিচের দিকে সংস্কৃত পড়াতেন। পড়াতেন ছড়া তৈরি করে। একটা আমার এখনো মনে আছে। ব্যাকরণের সুত্র শেখাবার জন্যে সে ছড়া, কিন্তু সাহিত্যের আসরে তার জায়গা পাওয়া উচিত।

ব্যধ্-যজ্ এদের য-কার গেল

তার বদলে ই,

ই-কার উ-কার দীর্ঘ হল

ঋকারান্ত রি।

শাস্‌-এর হল শিষ-দেওয়া রোগ

অস্-এর হল ভূ,

স্বপ-সাহেবের সুপ এসেছে

হেব সাহেবের হু।

বহরমপুরের বাদীরা সব

বদমায়েসি ছেড়ে

চন্দ্র পরান দয়াল হরি

সবাই হল উড়ে॥

একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। বাচ্যান্তর শেখাচ্ছেন পণ্ডিত মশাই— কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য। তখন সংস্কৃত ধাতুগুলো কে কি রকম চেহারা নেবে তারই একটা সরস নির্ঘণ্ট। তার মানে ব্যধ্ আর যজ্–ধাতু য-ফলা বর্জন করে হয়ে দাঁড়াবে বিধ্যতে আর ইজ্যতে। কৃয়তে-মৃয়তে না হয়ে হবে ক্রিয়তে-ম্রিয়তে। তেমনি শিষ্যতে, ভূয়তে, সুপ্যতে, হূয়তে। বহরমপুরের বাদীরাই সব চেয়ে মজার। তারা সংখ্যায় চারজন—বচ, বপ, বদ আর বহ। কর্মবাচ্যে গেলে আর বদমায়েসি থাকবে না, সবাই উড়ে হয়ে যাবে। তার মানে, ব উ হয়ে যাবে। তার মানে উচ্যতে, উপ্যতে, উদ্যতে, উহ্যতে। তেমনি ভাববাচ্যে উক্ত, উপ্ত, উদিত, উঢ়। ছিল বক হয়ে দাঁড়াল উচ্চিংড়ে।

বাংলার রচনা-ক্লাশে তিনি অনায়াসে চিহ্নিত করলেন আমাদের দুজনকে। যা লিখে আনি তাই তিনি উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ও আরো লেখবার জন্যে প্রবল প্ররোচনা দেন। একদিন দুঃসাহসে ভর করে তার হাতে আমার কবিতার খাতা তুলে দিলাম। তখনকার দিনে মেয়েদের গান গাওয়া বরদাস্ত হলেও নৃত্য করা গর্হিত ছিল, তেমনি ছাত্রদের বেলায় গদ্যরচনা সহ্য হলেও কবিতা ছিল চরিত্রহানিকর। তা ছাড়া কবিতার বিষয়গুলিও খুব স্বর্গীয় ছিল না, যদিও একটা কবিতা “স্বর্গীয় প্রেম” নিয়ে লিখেছিলাম। কিন্তু পণ্ডিত মশায়ের কি আশ্চর্য ঔদার্য! পঙ্গু ছন্দ, অপাঙক্তেয় বিষয়, সঙ্কুচিত কল্পনা—তবু যা একটু পড়েন, তাই বলেন চমৎকার। বলেন, ‘লিখে যাও, থেমো না, নিশ্চিতরূপে অবস্থান কর। যা নিশ্চিতরূপে অবস্থান তারই নাম নিষ্ঠা। আর, শোনো—’ কাছে ডেকে নিলেন। হিতৈষী আত্মজনের মত বললেন, ‘কিন্তু পরীক্ষা কাছে, ভুলো না—’

ম্যাট্রিক পরীক্ষায় আমি আর প্ৰেমেন দুজনেই মান রেখেছিলাম পণ্ডিত মশায়ের। দুজনেই ‘ভি’ পেয়েছিলাম।

রাস্তায় এক দিন দেখা পণ্ডিত মশায়ের সঙ্গে। কাঁধ চাপড়ে বললেন, আমার মান কিন্তু আরো উঁচু। নি-পূৰ্ব্বক স্থা ধাতু অ—কতৃর্বাচ্যে। মনে থাকে যেন।’

তাঁর কথাটা মনে রেখেছি কিনা আমাদের অগোচরে তিনি লক্ষ্য করে এসেছেন বরাবর। শুনেছি পরবর্তী কালে প্রতি বৎসর নবাগত ছাত্রদের উদ্দেশ করে স্নেহ-গগদ কণ্ঠে বলেছেন—এইখানে বসত প্রেমেন আর ঐখানে অচিন্ত্য!

ম্যাট্রিক পাশ করে প্রেমেন চলে গেল কলকাতায় পড়তে, আমি ভর্তি হলাম ভবানীপুরে। সে সব দিনে ধর্মতলা পেরিয়ে উত্তরে গেলেই ভবানীপুরের লোকেরা তাকে কলকাতায় যাওয়া বলত। হয়তো ঘুরে এলাম ঝামাপুকুর বা বড়বাগান থেকে, কেউ জিগগেস করলে বলতাম কলকাতায় গিয়েছিলাম।

নন-কোঅপারেশনের বান-ডাকা দিন। আমাদের কলেজের দোতলার বারান্দা থেকে দেশবন্ধুর বাড়ির আঙিনা দেখা যায়—শুধু এক দেয়ালের ব্যবধান। মহাত্মা আছেন, মহম্মদ আলি আছেন, বিপিন পালও আছেন বোধ হয়—তরঙ্গতাড়নে কলেজ প্রায় টলোমলো। কি ধরে যে আঁকড়ে থাকলাম কে জানে, শুনলাম প্রেমেন ভেসে পড়েছে।

ডাঙা পেল প্রায় এক বছর মাটি করে। এবার ভালো ছেলের মত কলকাতায় না গিয়ে ঢুকল পাড়ার কলেজে। সকাল-বিকেলের সঙ্গীকে দুপুরেও পেলাম এবার কাছাকাছি। কিন্তু পরীক্ষার কাছাকাছি হতেই বললে, ‘কী হবে পরীক্ষা দিয়ে। ঢাকায় যাব।’

১৯২২-সালে পুরী থেকে প্রেমেন্দ্র মিত্রের চিঠি :

“দুঃখের তপস্যায় সবই অমৃত, পথেও অমৃত, শেষেও অমৃত। সফল হও ভালই, না হও ভালই। আসল কথা সফল হওয়া না-হওয়া নেই—তপস্যা আছে কিনা সেইটেই আসল কথা। সৃষ্টি তো স্থিতির খেয়ালে তৈরী নয়, গতির খেয়ালে। যা পেলুম তাও অহরহ সাধনা দিয়ে রাখতে হয়, নইলে ফেলে যেতে হয়। এখানে কেউ পায় না, পেতে থাকে—সেই পেতে-থাকার অবিরাম তপস্যা করছি কিনা তাই নিয়ে কথা। যাকে পেতে থাকি না সে নেই।…যা পাই তাও ফেলে যাই, গাছ যেই ফুল পায় অমনি ফেলে দিয়ে যায়, তেমনি আবার ফল ফেলে দিয়ে যায় পাওয়া হলেই।…যারা পায় তাদের মতো হতভাগা আর নেই। দুঃখের ভয়ে যারা কঠিন তপস্যা থেকে বিরত হয়ে সহজ পথ খোঁজে আরামের, তাদের আরামই জোটে, আনন্দ নয়।…

আমি পড়াশুনা একদিনও করিনি—পারা যায় না। আমার মত লোকের পক্ষে পড়ব বল্লেই পড়া অসম্ভব। হয়ত এবার একজামিন দেওয়া হবে না।

তোর প্রেমেন্দ্র মিত্র”

পুরী থেকে লেখা আরেকটা চিঠির টুকরো—সেই ১৯২২-এ :

“সমুদ্রে খুব নাইছি। মাঝে-মাঝে এই প্রাচীন পুরাতন বৃদ্ধ সমুদ্র আমাদের অর্বাচীনতায় চটে গিয়ে একটু আধটু ঝাঁকানি কানমলা দিয়ে দেন—নইলে বেশ নিরীহ দাদামশাইয়ের মত আনমনা!

ঝিনুক কুড়োচ্ছি। পড়াশোনা মোটেই হচ্ছে না—তা কি হয়?”

সে-সব দিনে দুজন লেখক আমাদের অভিভূত করেছিল—গল্পেউপন্যাসে মণীন্দ্রলাল বসু আর কবিতায় সুধীরকুমার চৌধুরী। কাউকে তখনো চোখে দেখিনি, এবং এদেরকে সত্যি-সত্যি চোখে দেখা যায় এও যেন প্রায় অবিশ্বাস্য ছিল। কলেজের এক ছাত্র—নাম হয়তো উষারঞ্জন রায়—আমাদের হঠাৎ একদিন বিষম চমকে দিলে। বলে কিনা, সে সুধীর চৌধুরীর বাড়িতে থাকে, আর, শুধু এক বাড়িতেই নয়, একই ঘরে, পাশাপাশি তক্তপোশে! যদি যাই তো দুপুরবেলা সেই ঘরে ঢুকে বাক্স ঘেটে সুধীর চৌধুরীর কবিতার খাতা আমরা দেখে আসতে পারি।

বিনাবাক্যব্যয়ে দুজনে রওনা হলাম দুপুরবেলা। সুধীর চৌধুরী তখন রমেশ মিত্র রোডে এক একতলা বাড়িতে থাকেন—তখন হয়তো রাস্তার নাম পাকাপাকি রমেশ মিত্র রোড হয়নি—আমরা তাঁর ঘরে ঢুকে তাঁর ডালা-খোলা বাক্স হাঁটকে কবিতার খাতা বার করলাম। ছাপার অক্ষরে যার কবিতা পড়ি স্বহস্তাক্ষরে তাঁর কবিতা দেখব তার স্বাদটা শুধু তীব্রতর নয়, মহত্তর মনে হল। হাতাহাতি করে অনেকগুলি খাতা থেকে অনেকগুলি কবিতা পড়ে ফেললাম দুজনে। একটা কবিতা ছিল “বিদ্রোহী” বলে। বোধ হয় নজরুল ইসলামের পালটা জবাব। একটা লাইন এখনও মনে আছে—“আমার বিদ্রোহ হবে প্রণামের মত।” গভীর উপলব্ধি ও নিঃশেষ আত্মনিবেদনের মধ্যেও যে বিদ্রোহ থাকতে পারে—তারই শান্ত স্বীকৃতির মত কথাটা।

কবিতার চেয়েও বেশি মুগ্ধ করল কবিতার খাতাগুলির চেহারা। ষোলপেজী ডবল ডিমাই সাইজের বইয়ের মত দেখতে। মনে আছে পরদিনই দুইজনে ঐ আকৃতির খাতা কিনে ফেললাম।

১৯২২ সালের নভেম্বর মাসে বটতলা বাড়ি, পাথরচাপতি, মধুপুর থেকে প্রেমেন আমাকে যে চিঠি লেখে তা এই :

“অচিন, তবু মনে হয় ‘আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে।’ তারা মিথ্যা বলেনি সেই সত্যের সাধকেরা, ঋষিরা। আনন্দে পৃথিবীর গায়ে প্রাণের রোমাঞ্চ হচ্ছে, আনন্দে মৃত্যু হচ্ছে, আনন্দে কান্না আনন্দে আঘাত সইছে নিখিলভুবন। নিখিলের সত্য হচ্ছে চলা, প্রাণ হচ্ছে দুরন্ত নদী—সে অস্থির, সে আপনার আনন্দের বেগে অস্থির। আনন্দভরে সে স্থির থাকতে পারে না—প্রথম প্রেমের স্বাদ পাওয়া কিশোরী। সে আঘাত যেচে খেয়ে নিজের আনন্দকে অনুভব করে। ভগবানও ওই আনন্দভরে স্থির থাকতে পারেননি, তাই সেই বিরাট আনন্দময় নিখিলভুবনে নেচে কুঁদে খেলায় মেতেছেন। সে কি দুরন্তপনা! অবাধ্য শিশুর দুরন্তপনায় তারই আভাস।

কিন্তু মানুষ যে বড্ড বড়, সে যে ধারণাতীত—সে যে সুধীর চৌধুরী যা বলতে গিয়ে বলতে না পেরে বলে ফেলে—‘ভয়ংকর’—তাই। তাই তার সব ভয়ংকর, তার আনন্দ ভয়ংকর, তার দুঃখ ভয়ংকর, তার ত্যাগ ভয়ংকর, তার অহংকার ভয়ংকর, তার স্থলন ভয়ংকর, তার সাধনা ভয়ংকর। তাই একবার বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে যাই যখন তার সাধনার দিকে তাকাই, তার আনন্দের দিকে তাকাই। আবার ভয়ে বুক দমে যায় যখন তার দুঃখের দিকে তাকাই, তার স্খলনের দিকে তাকাই। আর শেষকালে কিছু বুঝতে না পেরে বলি—ধন্য ধন্য ধন্য।

কাল এখানে চমৎকার জ্যোৎস্নারাত ছিল। সে বর্ণনা করা যায় না। মনের মধ্যে সে একটা অনুভূতি শুধু। ভগবানের বীণায় নব নব সুর বাজছে—কালকের জ্যোৎস্নারাতের সুর বাজছিল আমার প্রাণের তারে, তার সাড়া পাচ্ছিলুম। তারাগুলো আকাশে ঠিক মনে হচ্ছিল সুরের ফিনকি আর পথটা তন্দ্রা, পাতলা তন্দ্রা, আকাশটা স্বপ্ন। এক মুহূর্তে মনের ভেতর দিয়ে সুরের ঝিলিক হেনে দিয়ে গেল, বুঝলুম, ভয় মিথ্যা হতাশা মিথ্যা মৃত্যু মিথ্যা। কিন্তু আমার বিশ্বাস করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে আমার জীবন দিয়ে। বলেছিলুম প্রিয়া অচেনা, আজ দেখছি আমি যে আমার অচেনা। প্রিয়া যে আমিই। এক অচেনা দেহে, আর এক অচেনা দেহের বাইরে। স্থূল জগতে একদিন আদিপ্রাণ—protoplasm—নিজেকে দুভাগ করেছিল। সেই দুভাগই যে আমরা। আমরা কি ভিন্ন? আমি পৃথিবী, প্রিয়া আকাশ—আমরা যে এক। এই এককে আমায় চিনতে হবে আমার নিজের মাঝে আর তার মাঝে। এই চেনার সাধনা অন্তহীন তপস্যা হচ্ছে মানুষের। সেই চেনার কি আর শেষ আছে? একদিন জানতুম আমি রক্তমাংসের মানুষ, ক্ষুধাতৃষ্ণাভরা আর প্রিয়া দেহসুখের উপাদান—তারপর চিনছি আর চিনছি। আজ চিনতে চিনতে কোথায় এসে পৌঁছেছি, তবু কি আনন্দের শেষ আছে। আমার আমি কি অপরূপ, কি বিস্ময়কর! এই চেনার পথে কত রৌদ্র কত ছায়া কত ঝড় কত বৃষ্টি কত সমুদ্র কত নদী কত পর্বত কত অরণ্য কত বাধা কত বিঘ্ন কত বিপথ কত অপথ।

থামিসনি কোনোদিন থামিসনি। থামব না আমরা, কিছুতেই না। ভয় মানে থামা হতাশা মানে থামা অবিশ্বাস মানে থামা ক্ষুদ্র বিশ্বাস মানেও থামা। দেহের ডিঙা যদি তুফানে ভেঙে যায় খুঁড়িয়ে যায়, গেল তো গেল—‘হালের কাছে মাঝি আছে।’ যৌবনটা হচ্ছে রাত্রি, তখন আমার পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যায়, শুধু থাকে প্রিয়ার আকাশ—যেটুকু আলো পড়ে, কখনো তারা কখনো জ্যোৎস্নার, আমার পৃথিবীর ওপর শুধু সেইটুকু। তোর সেই জীবনের রাত্রি এসেছে, কিন্তু এসেছে ঘোর ঘনঘটা করে, নিবিড় অন্ধকার করে—তা হোক, বিচিত্র পৃথিবী। বিচিত্র জীবনের কাহিনী। শুধু মনের মধ্যে মন্ত্র হোক—‘উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান নিবোধত।’ যদি কেউ ঐশ্বর্য নিয়ে সুখী হয় হোক, ক্ষুদ্র শান্তি নিয়ে সুখী হয় হতে দাও, আমরা জানি ‘ভূমৈব সুখং নাল্পে সুখমস্তি।’ অতএব ‘ভূমৈব জিজ্ঞাসিতব্য।’ সেই ভূমার খোঁজে যেন আমরা না নিরস্ত হই। আর যৌবনকে বলি, ‘বয়সের এই মায়াজালের বাঁধনখানা তোরে হবে খণ্ডিতে।’

এর ক’দিন পরেই আরেকটা চিঠি এল প্রেমেনের সেই মধুপুর থেকে :

“হ্যাঁ, আরেকটা খবর আছে। এখানে এসে একটা কবিতার শেষ পূরণ করেছি আর চারটে নতুন কবিতা লিখেছি। তোকে দেখাতে ইচ্ছে করছে। শেষেরটার আরম্ভ হচ্ছে ‘নমো নমো নমো।’ মনের মধ্যে একটা বিরাট ভাবের উদয় হয়েছিল, কিন্তু সব ভাষা ওই গুরুগভীর ‘নমো নমো নমো’-র মধ্যে এমন একাকার হয়ে গেল যে কবিতাটা বাড়তেই পেল না। কবিতার সমস্ত কথা ওই ‘নমো নমো নামো’-র মধ্যে অস্পষ্ট হয়ে রইল। কি রকম কবিতা লিখছিস?”