☼ অতুলচন্দ্র গুপ্ত ☼
রচনাসংগ্রহ
অতুলচন্দ্র গুপ্ত স্বনামধন্য মনীষী। শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন—নানা ক্ষেত্রেই তাঁর পারদর্শিতা। পেশায় আইনজ্ঞ হলেও চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক হিসেবে বিগত শতাব্দীতে তিনি বিশেষ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ‘শিক্ষা ও সভ্যতা’ গ্রন্থের অধিকাংশ প্রবন্ধই প্রকাশিত হয়েছিল সেকালের প্রথিতযশা ‘সবুজপত্র’-এ। তাঁর বহুল-আলোচিত ‘কাব্যজিজ্ঞাসা’র প্রবন্ধগুলিও ‘সবুজপত্র’-এ প্রকাশিত। বাংলা ও আসামের নদীতে বেড়াবার সময় স্টিমার থেকে যেসব চিঠি লিখেছিলেন তিনি, তারই সংশোধিত রূপ ‘নদীপথে’ গ্রন্থ। এরকমই অসামান্য আরও তিনটি গ্রন্থ ‘জমির মালিক’, ‘সমাজ ও বিবাহ’, ‘ইতিহাসের মুক্তি’। আনন্দ থেকে প্রকাশিত হল অতুলচন্দ্র গুপ্তের ‘রচনাসংগ্রহ’, যেখানে উপরোক্ত মূল্যবান গ্রন্থসমূহের রচনাগুলি ছাড়াও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে সংগৃহীত সাহিত্য-সমাজ-রাজনীতি-রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী বিষয়ক তাঁর একগুচ্ছ প্রবন্ধ। ঋজু অথচ সরস, গভীর অথচ, সহজবোধ্য প্রতিটি রচনাই মননশীল সৃজনের দুর্লভ দৃষ্টান্ত।
ভূমিকা
যাঁর লেখায় এই বই সমৃদ্ধ, তাঁর সম্বন্ধে লেখা সহজ নয়। সহজাত সফল বহুমুখী প্রতিভার বর্ণনা কেবল ওই ক্ষমতার অধিকারীই করতে পারেন। অতুলচন্দ্র গুপ্ত পেশায় ছিলেন আইনজ্ঞ, কিন্তু শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর সফল এবং অসাধারণ দক্ষতা ছিল। ইচ্ছে করলেই জীবিকা পরিবর্তন করতে পারতেন। অল্পবয়সে কিছুদিন রংপুরে ন্যাশনাল স্কুলে পড়িয়েছিলেন, পরে ল কলেজে। আমাকে একবার বলেছিলেন পড়ানোর কাজ নেওয়াই উচিত ছিল, আইন অত আনন্দের নয়।
সপরিবারে দেশভ্রমণের শখ ছিল। আমাকে স্কুলের বইপত্র নিয়ে যেতে হত— প্রায়শই ইংরেজি কবিতা পড়াতেন। এখনও মনে আছে পুরীর সমুদ্রসৈকতের সামনে হোটেলের চওড়া বারান্দায় আমাকে পড়াচ্ছেন। ছোটদের মনঃসংযোগের ক্ষমতা থাকে, কিন্তু বেশিক্ষণ থাকে না। রীতি অনুসারে ঘণ্টাখানেক পরে ছুটি পেলাম। একপাক ঘুরে এসে দেখি পাশের ঘরের ভদ্রলোক যিনি বারান্দায় একটু দূরে বসেছিলেন, আনন্দবিভাসিত মুখে পাশের চেয়ারে বসে আছেন। কথাবার্তা যা কানে এল তাতে বুঝলাম তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। কবিতা পড়ানোর ধরন শুনে আমার অন্তর্ধানের পর কথা বলতে উঠে এসেছেন। এই দৃশ্য আমি বহুবার দেখেছি।
কবিতা পড়ানো মানে যে কাব্যজিজ্ঞাসা তা নয়। রসের সন্ধানপথ অতি সহজে দিতে পারতেন। পুজোর ছুটিতে মধুপুরে বাড়ির পিছনের বারান্দায় সন্ধ্যার পর কাঠের টেবিলে মোমবাতি জ্বেলে আমাকে পড়াচ্ছেন। পাঠ্যবই থেকে Abou Ben Adhem। আরম্ভ করার আগে বলেছিলাম এই কবিতায় বিশেষ ছন্দ নেই, পড়তে ভাল লাগে না। শুনে হেসেছিলেন। আধঘণ্টা পড়িয়ে বলেছিলেন এইবার বুঝতে পারছিস তো কবিতাটা ভাল, আর ভাল কবিতার ধরন কী। চোদ্দো বছরের বালকের পক্ষে সেদিন স্বীকার করতে অসুবিধা হয়নি, কবিতাটা পাল্টে গেছে।
অসাধারণ মনঃসংযোগের ক্ষমতা ছিল। যা পড়তেন, সঙ্গে থাকত। আরেকবার পুজোর ছুটিতে জামসেদপুর গিয়েছি। সকালে চা খাওয়ার পর বারান্দায় বসে লিখতেন। সেই লেখা অধরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বক্তৃতার জন্য— পরে প্রকাশিত ‘ইতিহাসের মুক্তি’র প্রথম দুই প্রবন্ধ। এইখানেই আছে। প্রথম খসড়া শীতের রৌদ্রে বারান্দায় বসে সামনের দলমা পাহাড়ের দিকে না চেয়ে ভাঁজ করা ফুলস্কেপ কাগজে কোনও বইপত্রের সাহায্য ছাড়া লেখা।
যখন থেকে তাঁর কথা আমি মনে করতে পারি, তখন তাঁর বয়স প্রায় ষাট পেরিয়েছে। কোনও সফল আইনব্যবসায়ীর পক্ষে এত বিভিন্ন বিষয় চর্চার সময় পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর। কিছু সময়ের উপরে তাঁর অসাধারণ কর্তৃত্ব ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা পর্যন্ত বারান্দায় বসে আলোচনায় যোগ দিতেন। ঠিক সাড়ে ছ’টা বাজলেই কাজের ঘরে গিয়ে বসতেন। মনকে অবলীলাক্রমে এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে স্থানান্তরিত করতে অসুবিধা হত না। একমাত্র ব্যতিক্রম শুক্রবার সন্ধ্যায়। তখন তাঁর বন্ধু মিষ্টভাষী সৌম্যদর্শন কুশীপ্রসন্ন চট্টোপাধ্যায় আসতেন। সন্ধ্যার প্রাক্কালে রাসবিহারী অ্যাভিনিউর নীচের বারান্দায় দুইজনের আলাপ চলত। রাসবিহারী অ্যাভিনিউর সেই সময়ের বর্ণনা বুদ্ধদেব বসু করেছেন।
স্মৃতিশক্তি এবং মনঃসংযোগের অনেক গল্প আমি কলকাতা হাইকোর্টের অন্যান্য আইনজ্ঞদের কাছে শুনেছি। আমি শুধু জানি বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যের কী তাঁর স্মরণে থাকত না, বলা দুঃসাধ্য। ‘নদীপথে’র দ্বিতীয় সংস্করণ বেরোচ্ছে। আমি অর্বাচীন স্কুল-বালকের মতো বলেছিলাম ‘গতায়াত’ লিখেছ কেন? ওটা কি প্রকৃত বাংলা— ‘যাতায়াত’ লিখলেই তো পারতে। তৎক্ষণাৎ ভারতচন্দ্র থেকে উদ্ধৃতি— ভারতচন্দ্র খাঁটি বাঙালি কবি। প্রমাণ করার উপায় নেই, কিন্তু এখন আমার দৃঢ় ধারণা রবীন্দ্রনাথের প্রায় সব কবিতাই তাঁর মনে কোথাও-না-কোথাও স্তরে স্তরে সাজানো থাকত। ইচ্ছে করলেই অল্প প্রচলিত কবিতা স্মরণ করতে পারতেন।
অতি সহজভাবে অন্তঃসলিলা পরিহাসের সঙ্গে গম্ভীর বিষয়ের অসাধারণ আলোচনা করতে পারতেন। প্রায় সব বিষয়ের লোকের সঙ্গেই। আমার জন্ম সবুজ পত্রের দলের বহু পরে, কিন্তু তাঁর বন্ধুদের কাউকে কাউকে দেখেছি। সত্যেন্দ্রনাথ বসু আসতেন, পিছনের বসবার ঘরে পাঞ্জাবি খুলে ফেলে সোফার উপরে পা মুড়ে বসে আলোচনায় যোগ দিতেন। আইনস্টাইনের মৃত্যুর পর তাঁকে বলা হল আইনস্টাইনের সম্বন্ধে কিছু বলতে। বাড়ির উঠোনে গোল করে বেতের চেয়ার পাতা হল। সত্যেন্দ্রনাথ বসু ঘণ্টাখানেক স্মৃতিচারণা করলেন। খুব সহজ করে বলেছিলেন সন্দেহ নেই, কিন্তু মনে হতে লাগল তিনি তাঁর বন্ধুর উদ্দেশেই বলছেন। আমরা কেবল চেয়ার অধিকার করে বসে আছি, ওই স্তরের সভ্য আলোচনায় অংশগ্রহণ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সাহিত্যিক আলোচনা যে কী পর্যায়ে পৌঁছত গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যের লেখায় তার বর্ণনা রয়েছে। শ্বেতশুভ্র সন্দেশ এবং বৃহৎ আকারের রসের মিষ্টান্ন সেই আলোচনার মধ্যে নিয়মিত দেখা দিত।
আমাকে তাঁর কলেজ জীবনের কাহিনি বলতেন। হ্যারিসন রোড এবং আমহার্স্ট স্ট্রিটের মোড়ে একটি মেসবাড়িতে থেকে প্রেসিডেন্সিতে পড়াশোনা করেছিলেন। যে মেসে অনেকেই ব্যবহারে না হোন, পরিচয়ে ছাত্র ছিলেন। বলতেন ঘরে প্রচণ্ড হই-চই-র মধ্যে বসে পড়াশোনা করতে হত, মনঃসংযোগের ক্ষমতা ওইখান থেকেই। বলা বাহুল্য যে সে মেসের সকলেরই পরীক্ষায় ফল শুভ হত না, তবে প্রতিকারের চেষ্টা হত। ডাক্তারি ছাত্ররা খাওয়ার উন্নতি বিধান করতেন। একবার সরস্বতী পূজার প্রয়োজন বোধ করা হল। যে পুরোহিতকে ধরে আনা হল, তিনি বিদ্যাস্থানে ভয়ে বচ বলে প্রস্থান করলেন, পরীক্ষার ফল একইরকম রয়ে গেল। এই গল্প বলে অত্যন্ত আনন্দ পেতেন।
অবশ্য তাঁর সময়ের প্রেসিডেন্সি কলেজের কাহিনিও শুনেছি। একদিন সকালে কলেজে দেখেন তাঁর উপরের ক্লাসের হিন্দু হস্টেল নিবাসী একজন সিঁড়ি ভেঙে উঠছেন, পিছনে হস্টেলের চাকর খাবারের থালা হাতে। কী অবস্থা দাঁড়িয়েছে প্রিন্সিপাল সাহেবকে দেখাতে যাচ্ছেন। সাহেব একটা মাছভাজা খেয়ে ফেললেন, বললেন Not bad, properly roasted। তারপর বিজ্ঞানের জনৈক অধ্যাপককে ডেকে অনুসন্ধানের ভার দিলেন। অনুসন্ধানের ফলে খাওয়ার উন্নতি হল, কিন্তু যাঁকে ভার দেওয়া হয়েছিল তিনি উৎসাহিত হয়ে গবেষণায় রত হলেন। প্রকাশ্য জনসভায় বাঙালির খাদ্য বিষয়ে বক্তৃতা হল— যার নাম দেওয়া হয়েছিল: A plea for a rational diet। সেটা ছাপা হল A plea for a national diet। বক্তা বললেন এইটেই ঠিক নামকরণ হয়েছে। বাঙালিছাত্রের ডালের বাটিতে চুমুক দেওয়া উচিত, এই ধরনের স্লোগান তৈরি হল। সেই সময়ের কলেজজীবনের কিছু আভাস তাঁর রবীন্দ্রনাথের উপরে বিভিন্ন লেখায় ছড়িয়ে আছে।
প্রেসিডেন্সি কলেজের রীতি অনুসারে কৃতী ছাত্র ছিলেন। দর্শনে প্রথম স্থান অধিকার করতেন। ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে পরীক্ষার মিটিং-প্রত্যাগত অধ্যাপকের মুখে নিজের নাম শুনেছিলেন। প্রায় অর্ধশতাব্দী পরে এই কাহিনি যখন আমাকে বলতেন মুখে আনন্দের আভাস দেখা দিত।
প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন, সেটা অনেকেই করেন, কিন্তু অপরের প্রয়োজনে অর্থব্যয়ের তাঁর দৃষ্টান্ত আমি দেখিনি। স্থানীয় লাইব্রেরি, রাজনৈতিক পত্রিকা, থিয়েটারের ক্লাব, দুঃস্থ মানুষ, খ্যাতি ও খ্যাতিবিহীন সাহিত্যিক সকলের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল। এঁদের মধ্যে কারুর কারুর জীবনযাত্রার বর্ণনা তাঁর কাছে এসে হাজির হত। পরের মাস থেকে পাঠানো অর্থ তাঁদের স্ত্রীদের হাতে সোজাসুজি পৌঁছাত।
বাঙালি হিন্দুর জীবনে মধ্যে মধ্যে ধর্মানুষ্ঠান পালন করতে হয়। সেটি করতেন, বলতেন এটি সমাজসংস্কৃতির অঙ্গ। কিন্তু বাড়াবাড়ি দেখলে অসন্তুষ্ট হতেন। তোমরা যদি মনে কর ভগবান ঘুষ নেন তা হলে করতে পার, এইকথা তাঁকে বলতে শুনেছি। আমার শৈশবে আমাকে বলেছিলেন রামায়ণ-মহাভারত বানানো গল্প। শুনে চমৎকৃত হয়েছিলাম।
শেষ জীবনে একজন মানুষের পক্ষে যা পাওয়া উচিত তার চেয়ে অনেক বেশি শোক তাঁকে গ্রহণ করতে হয়েছিল। যে সম্মানের সঙ্গে তিনি তা বহন করতেন সে বর্ণনার ক্ষমতা আমার নেই। রবীন্দ্রনাথ তাঁর অবলম্বন, তাঁর অন্যকিছুর প্রয়োজন হয় না, এইকথা একবার বলেছিলেন।
আইন, সাহিত্য, রাজনীতি সবই করেছেন, কিন্তু কখনও অন্যায়ের সঙ্গে সন্ধি করেননি। সত্যের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল; প্রয়োজনে অপ্রিয় সত্য অক্লেশে বলতেন, মধ্যে মধ্যে তার উপরে মিষ্টভাষের প্রলেপ পড়ত। এই সংকলনে তার বহু প্রমাণ পাবেন। প্রমথ চৌধুরীর লেখার ঋজু অথচ বিধ্বংসী বিদ্রূপ অত্যন্ত পছন্দ করতেন। সে অস্ত্র যে তাঁরও ছিল, এই সংকলনে তারও উদাহরণ আছে।
পৃথিবী, পরিবেশ, বিজ্ঞান তাঁর ঔৎসুক্যের তালিকা থেকে কিছুই বাদ পড়েনি। কাজের টেবিলের দেরাজে বড় বাঁধানো পৃথিবীর মানচিত্রের বই ছিল। প্রচুর ব্যবহার হতে দেখেছি। বাংলার নদনদী, পশুপাখি, গাছ, ফুল চিনতেন এবং চেনাতেন। গভীররাত্রে ঘুমন্ত স্কুল-বালককে জাগিয়ে আকাশের নক্ষত্রমণ্ডল চেনার উৎসাহ সঞ্চার করে দিতেন।
তাঁর কিছু সৃষ্টির কথা কালক্রমে বিস্মৃত হয়ে এসেছে! নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। আমি স্কুলে ভরতি হয়েছিলাম তৎকালীন বাংলা পাঠ্যবই কিশলয় সংকলিত হবার বছরে। পাঠ্য বইয়ে আমার চেনা শিশুসাহিত্যের প্রবেশ দেখে অবাক হয়েছিলাম। তার পূর্বের বাংলা বই এবং তৎকালীন যে-সব ইংরেজি বই আমাদের পড়তে হত, তাতে ছাত্রমহলে সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ সহজে জাগে না, বিপরীত ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। এখন বহির্বিশ্বে বাস করি। সেখানে ইংরেজি ক্লাসে ছোটদের বই পড়ানো হয়। শিশুদের উপর স্নেহের আতিশয্যে বড়দের সাহিত্যের জলমেশানো টুকরো চাপিয়ে তাদের ভারাক্রান্ত করার দিন অতীত। আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে কিশলয় সংকলনে তাঁর হাত ছিল। এখন যে পাঠ্য বই পড়ানো হয়, তার ফল অধুনারচিত সাহিত্য দেখলেই বোঝা যায়। তাঁর সময়ের রবীন্দ্রপুরস্কারের মর্যাদা এখনকার চেয়ে বেশি ছিল। তৎকালীন অখ্যাত সাহিত্যিকও সে পুরস্কার সাহিত্যগৌরবে পেতেন।
ভবিষ্যৎকে অনুমান করার তাঁর অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। একটি উদাহরণ দিই। আজকাল দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বিষণ্ণ। এই সংকলনে গান্ধীজির উপরে লেখা প্রবন্ধ দুটি তাঁদের পড়তে অনুরোধ করি। আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে লেখা।
রেনেসাঁস কথাটা আমরা ব্যবহার করে থাকি। রেনেসাঁসের যাঁরা অংশীদার নানাবিষয়ে তাঁদের যোগাযোগ থাকে। বিদেশি এবং স্বদেশি উভয়ধারার একটি অপূর্ব সৃষ্টিসমৃদ্ধ সমন্বয় তাঁরা ঘটাতে পারেন। এই একজনকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে দেখেছি যিনি প্ৰকৃত রেনেসাঁস পুরুষ ছিলেন। জ্ঞানের পরিধি ছিল অপরিসীম, কিন্তু সফল বহির্বিকাশ হত অত্যন্ত সংযমীভাবে। যা লিখতেন, যা বলতেন তা ছিল ঋজু অথচ সরস, গভীর অথচ সহজবোধ্য। এ লেখা যদি তিনি লিখতেন তা হলে লেখার দৈর্ঘ্য হত অর্ধেক, এবং অতুলচন্দ্র গুপ্তের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যেত। তা যখন সম্ভব নয়, তখন তাঁর নিজের লেখার মধ্যেই তাঁকে খুঁজতে হবে।
কাব্য জিজ্ঞাসা, জমির মালিক এবং ইতিহাসের মুক্তি বইগুলি বিশ্বভারতী প্রকাশন বিভাগের অনুমতিক্রমে এই সংকলনে গৃহীত। এজন্য বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের নিকট আমি কৃতজ্ঞ। প্রয়াত শোভন বসু গ্রন্থটির সংকলনের প্রাথমিক পর্বে নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন।
অভিজিৎ গুপ্ত