» » সাতহাজারের আত্মদান

বর্ণাকার

হেমেন্দ্রকুমার রায়

ঐতিহাসিক সমগ্র

সাতহাজারের আত্মদান

আজ তোমাদের কাছে অতীত ভারতের এক বিচিত্র গৌরব কাহিনি বলব। প্রায় দুই হাজার সাড়ে তিনশো বৎসর আগেকার কথা। কিন্তু রূপকথা নয়, সত্য কথা।

তোমরা সবাই জানো, প্রাচীন হিন্দু ভারতবর্ষে কেউ ইতিহাস লিখত না, তাই আমাদের অধিকাংশ কীর্তিকলাপ চিরকালের জন্যে লুপ্ত হয়ে গেছে। আজকের ঐতিহাসিকরা মাটি খুঁড়ে সেকালের নানা জিনিস ও ভাঙা স্তূপ আবিষ্কার করে এবং পাথরের লিখন ও পুরাতন মুদ্রা প্রভৃতি দেখে প্রাচীন ভারতের কিছু কিছু ইতিহাস জানতে পেরেছেন বটে, কিন্তু সে আর কতটুকু? শতাংশের একাংশও নয়। রামায়ণ ও  মহাভারতে আমরা হিন্দু ভারতবর্ষকে দেখতে পাই; কিন্তু তাদের মধ্যে আছে কতখানি ইতিহাস আর কতখানি কবিকল্পনা, সে সত্য আর কিছুতেই বোঝবার উপায় নেই।

আজ সে সত্য গল্পটি বলব, সেটিও আমরা বলতে পারতুম না—গ্রিক ঐতিহাসিকরা যদি তা লিখে না রাখতেন। প্রাচীন ভারতের সত্যিকার ইতিহাস আরম্ভ হয়েছে গ্রিক ঐতিহাসিকদেরই দৌলতে। তাঁরা না থাকলে পুরুর বীরত্ব, চন্দ্রগুপ্তের দিগবিজয়, অশোকের মাহাত্ম্য এবং বিপুল মৌর্য সাম্রাজ্যের অসাধারণতার কথা আজ আমরা এত ভালো করে জানতে পারতুম না। এজন্যে গ্রিক ঐতিহাসিকদের কাছে আমাদের চিরকৃতজ্ঞ হয়ে থাকতে হবে।

যখনকার কথা বলছি, তখন গ্রিক দিগবিজয়ী আলেকজান্ডার এসেছেন ভারত জয় করতে। তখন তিনি ভারতের যে প্রান্তে অবস্থান করছিলেন, আজ সে স্থানকে আমরা আফগানিস্তান বলে ডাকি। কিন্তু সে-সময়ে ওখানে বাস করত কেবল হিন্দুরাই। পৃথিবীতে তখন একজনও মুসলমান ছিল না, কারণ মুসলমান ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মহম্মদই জন্মেছিলেন আরও নয় শতাব্দী পরে।

ভারত সীমান্তে তখন মাসাগা নামে একটি প্রকাণ্ড নগর ও সুরক্ষিত দুর্গ ছিল। মাসাগা নামটি হচ্ছে গ্রিক। তার এদেশি নাম কী ছিল, জানা না। মাসাগার রাজা ছিলেন বীর ও স্বদেশভক্ত। আলেকজান্ডারের বিপুল সৈন্যবল দেখেও তিনি ভয় পেলেন না, অসম্ভবের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে জেনেও, ভারতের প্রবেশপথে বিদেশি ও বিধর্মী শত্রুকে বাধা দিলেন প্রচণ্ড বিক্রমে।

আলেকজান্ডারের সঙ্গে ছিল লক্ষাধিক সৈন্য। কেউ বলেন, দেড় লক্ষ; কেউ বলেন, আরও বেশি। তারা মাসাগা দুর্গকে চারিধার থেকে ঘিরে ফেলল।

দুর্গ বেষ্টন করে ছিল ইট, পাথর ও কাঠে গড়া উঁচু এক প্রাচীর।

তারই আড়ালে বসে মাসাগার সৈন্যরা দুর্গ রক্ষা করতে লাগল, দিনের পর দিন।

গ্রিকরা দিকে দিকে দুর্গের প্রাচীরের চেয়ে উঁচু সব মঞ্চ তৈরি করে কেল্লার ভিতরে রাশি রাশি অস্ত্র নিক্ষেপ করতে লাগল।

মাসাগার এক ধনুকধারী একদিন দুর্গ-প্রাচীরে বসে আলেকজান্ডারকে দেখতে পেলে। তখনই ধনুক তুলে লক্ষ্য স্থির করে সে তির ছুড়লে। তির সোজা গিয়ে আঘাত করলে আলেকজান্ডারকে। গ্রিক সৈন্যরা সভয়ে হাহাকার করে উঠল। তারপর দেখা গেল, আলেকজান্ডার আহত হয়েছেন বটে, কিন্তু মারাত্মক ভাবে নয়। তির যথাস্থানে গিয়ে বিঁধলে গ্রিকদের দিগবিজয়ের স্বপ্ন ফুরিয়ে যেত সেই দিনেই।

কিন্তু ভাগ্যদেবী ভারতবর্ষের প্রতি এমন সুপ্রসন্ন হলেন না। হঠাৎ একদিন মাসাগার রাজা শত্রুদের মঞ্চের উপর থেকে নিক্ষিপ্ত অস্ত্রে আহত হয়ে মাটির উপরে লুটিয়ে পড়লেন এবং সেই বীর-শয্যা ছেড়ে আর উঠলেন না। রাজার মৃত্যুতে মাসাগার সৈন্যরা হতাশ হয়ে খুলে দিলে দুর্গদ্বার।

মাসাগার পতন হল—গ্রিকদের সামনে খুলে গেল ভারতের সিংহদ্বার।

মাসাগার বিধবা রানি রাজকুমারের হাত ধরে আলেকজান্ডারের সামনে এসে মার্জনা প্রার্থনা করলেন।

আলেকজান্ডার তাঁকে কেবল মার্জনাই করলেন না, রানির রূপ দেখে তাঁকে বিয়েও করে ফেললেন।

রানির দেশি নাম জানি না, কিন্তু গ্রিক ইতিহাসে তাঁকে ক্লিওফিস বলে ডাকা হয়। যদিও তখনকার ভারতে বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল, তবু খুব সম্ভব আলেকজান্ডার তাঁকে জোর করেই বিবাহ করেছিলেন। অবশ্য সেকালে দুই জাতির মধ্যে এরকম বিবাহের সম্পর্কও খুব একটা নতুন ব্যাপার ছিল বলে মনে হয় না। কারণ, এরই কয়েক বৎসর পরে ভারত-সম্রাট চন্দ্রগুপ্তও বিবাহ করেছিলেন আলেকজান্ডারের সেনাপতি সেলিউকাসের মেয়েকে।

ক্লিওফিসের গর্ভে আলেকজান্ডারের যে ছেলে হয়, তারও নাম আলেকজান্ডার কিন্তু এ সব কথা এখন থাক।

গ্রিকদের বাধা দেবার জন্যে মাসাগার রাজা পঞ্চনদের দেশ বা পাঞ্জাব থেকে কয়েক হাজার হিন্দু সৈন্য নিয়ে গিয়েছিলেন। এরা ছিল যুদ্ধ-ব্যবসায়ী অর্থাৎ মাহিনা পেলে এরা যে-কোনও রাজার হয়ে লড়াই করত। সেকালে এমন পেশাদার সৈন্য পৃথিবীর সব দেশেই ছিল। পারস্য-সম্রাট দরায়ুসের সঙ্গে আলেকজান্ডারের যখন যুদ্ধ হয়, তখন পারসিদের হয়ে অস্ত্রবরণ করেছিল প্রায় তিরিশ হাজার হিন্দু সৈন্য।

কিন্তু ভারতের পঞ্চনদের তীর থেকে যেসব পেশাদার সৈন্য মাসাগার দুর্গ রক্ষা করতে গিয়েছিল, পেটের দায়কেই তারা যে বড় করে দেখেনি, গ্রিক ঐতিহাসিকদের লেখনী সেকথা স্পষ্ট ভাষায় লিখে রেখেছে।

মাসাগার পতনের পরে যুদ্ধ-ব্যবসায়ী ভারতীয় সৈন্যরা মাসাগা থেকে বেরিয়ে নয় মাইল দূরে গিয়ে একটি ছোট পাহাড়ের উপরে তাঁবু ফেললে। সংখ্যায় তারা সাত হাজার। সেকালের প্রথামতো তাদের সঙ্গে ছিল স্ত্রী-পুত্র-কন্যা প্রভৃতি। পরিবারবর্গ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার প্রথা ভারতবর্ষে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। যুদ্ধে পরাজিত পক্ষের নারীদের অবস্থা যে কী শোচনীয় হত, ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দের পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে তার জ্বলন্ত প্রমাণ পাওয়া যায়।

মাসাগার ভারতীয় সৈন্যদের দলপতির নাম কী ছিল, গ্রিক ইতিহাস তা বলেনি। আমরা তাঁকে উপগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রীকে ধীরা বলে ডাকব।

আলেকজান্ডারের কাছ থেকে দূত এসে জানালে, ‘উপগুপ্ত, আমাদের সম্রাট তোমাদের কোনও অনিষ্ট করবেন না। কিন্তু তোমাদের সাহায্য তিনি চান।’

উপগুপ্ত বিস্মিত স্বরে বললেন, ‘গ্রিক সম্রাট চান আমাদের সাহায্য! তার মানে?’

—‘সম্রাট আলেকজান্ডার উপযুক্ত বেতন দিয়ে তোমাদের গ্রহণ করতে চান।’

—‘অর্থাৎ তোমাদের সম্রাটের ইচ্ছা, আমরা ভারতবাসী হয়েও ভারতবাসীর সঙ্গে লড়াই করব?’

—‘হ্যাঁ।’

—‘অসম্ভব!’

—‘কেন? তোমরা তো পেশাদার।’

—‘হতে পারে যুদ্ধ আমাদের পেশা। সেটা হচ্ছে পেটের দায়ে। কিন্তু পেটের দায়ে হিন্দু হয়েও আমরা হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে পারব না।’

—‘পেশাদার সৈনিকদের স্বদেশ নেই। বহু গ্রিক পারসিদের মাহিনা খেয়ে গ্রিসের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেছে।’

—‘গ্রিকরা যা পারে, হিন্দু তা পারে না।’

—‘বেশ। তাহলে সম্রাটের কাছে গিয়ে তোমার কথা জানাইগে।’

পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে উপগুপ্ত দেখলেন, দূরের এক শৈল-শিখরের পিছনে সূর্য ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। নীচে নদী, বন, উপত্যকার উপরে দুলছে কুয়াশার স্বচ্ছ পরদা। এখনই চারিদিকে বিছিয়ে যাবে সন্ধ্যার কালো অঞ্চল।

কয়েকজন সৈনিক কাছে এসে দাঁড়াল। একজন জিজ্ঞাসা করলে, ‘সরদার, গ্রিক দূত কী বলতে এসেছিল?’

উপগুপ্ত বললেন, ‘গ্রিক সম্রাট আমাদের চাকরি দিতে চান।’

সৈনিকরা একসঙ্গে চিৎকার করে উঠল, ‘আমরা যবনের চাকরি করব না।’

সেই চিৎকার শুনে শিবিরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন ধীরা।

উপগুপ্ত তাঁর দিকে ফিরে হাসতে হাসতে বললেন, ‘শুনছ ধীরা! অতবড় যে গ্রিক সম্রাট, সৈনিকরা তাঁরও অধীনে চাকরি করতে চায় না!’

ধীরা জ্বলন্ত চক্ষে বললেন, ‘গ্রিক সম্রাটের চাকরি করার মানেই হচ্ছে হিন্দুস্থানের শত্রু হওয়া। স্বামী, আমিও সৈনিকদের পক্ষে।’

উপগুপ্ত তেমনই হাস্যমুখেই বললেন, ‘দেখছি তোমরা সকলেই একমত! খুব ভালো! আমিও তাই বলি। বেশ, আপাতত তোমরা খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে নাও। আজ শেষরাতেই আমরা তাঁবু তুলে দেশে ফিরে যাব।’

ধীরা বললেন, ‘তারপর নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে গ্রিক সম্রাটকে অভ্যর্থনা করব!’

সৈনিকরা উচ্চকণ্ঠে বললে, ‘জয়, হিন্দুস্থানের জয়!’

নিজের শিবিরে বসে আলেকজান্ডার হয়তো সেই জয়ধ্বনি শুনতে পেলেন।

মধ্য রাত্রি। আকাশের চাঁদ যেন কি এক আসন্ন অশুভের আশঙ্কায় পাণ্ডু মুখে তাকিয়ে আছে পৃথিবীর দিকে! পৃথিবীও যেন ভয়ে বোবা। কেবল বনের গাছে গাছে, পাতায় পাতায় শোনা যাচ্ছে বাতাসের অস্ফুট আর্তনাদ।

আচম্বিতে নিশীথিনীর স্তব্ধ বুক কেঁপে উঠল অসংখ্য কণ্ঠের বিকট হুঙ্কারে ও কাতর চিৎকারে। চারিদিকে পদশব্দ, অস্ত্রাঘাতের ধ্বনি!

ধীরা ধড়মড় করে বিছানার উপরে উঠে বসলেন। কান পেতে বাইরের সেই ভয়াবহ গোলমাল শুনলেন। তারপর তাড়াতাড়ি বাইরে ছুটে গেলেন।

মিনিট খানেক পরেই বেগে আবার তাঁবুর ভিতরে ফিরে এসে ধীরা দেখলেন, উপগুপ্ত জেগে হতভম্বের মতো বসে আছেন।

ধীরা ব্যস্ত স্বরে বললেন, ‘স্বামী, স্বামী! গ্রিকরা আমাদের গোপনে আক্রমণ করেছে। ঘুমন্ত হিন্দুদের হত্যা করছে!’

তাঁবুর বাইরে থেকে হিন্দু সৈনিকদের চিৎকার শোনা গেল—’বিশ্বাসঘাতকতা, বিশ্বাসঘাতকতা!’—’অস্ত্র ধরো, অস্ত্র ধরো!’

ততক্ষণে উপগুপ্ত তরবারি ও বর্শা নিয়ে তাঁবুর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেইখান থেকে তিনি ফিরে বললেন, ‘কিন্তু ধীরা, তুমি যে একলা থাকবে?’

ধীরা হেঁট হয়ে মেঝে থেকে একখানা তরবারি তুলে নিয়ে বললেন, ‘যাও প্রভু, যুদ্ধ করো! আমি একলা নই—এই তরবারিই আমার সঙ্গী, আমার রক্ষাকর্তা।’

উপগুপ্ত বাহিরে গিয়ে দাঁড়াতেই দুজন গ্রিক তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। হ্যাঁ, ঝাঁপিয়ে পড়ল; কিন্তু তাঁর উপরে, না মৃত্যুমুখে? কারণ পরমুহূর্তেই দেখা গেল, উপগুপ্তের বর্শা ও তরবারির রক্তাক্ত চিহ্ন বক্ষে ধারণ করে দুজন গ্রিকই মাটিতে পড়ে ছটফট করছে!

উপগুপ্ত তাকিয়ে দেখলেন, কেবল পাহাড়ের উপরে নয়—নীচে, সমতল ক্ষেত্রে যতদূর চোখ যায় ততদূর পরিপূর্ণ করে ছুটে আসছে হাজার হাজার গ্রিক সৈন্য—সে যে কত হাজার, তার সংখ্যাই হয় না! চাঁদের ও শত শত মশালের আলোতে অগণ্য বিদ্যুৎ রেখার মতো জ্বলে উঠছে তাদের অস্ত্রফলকগুলো!

একদল গ্রিক সৈন্য উপগুপ্তের দিকে এগিয়ে এল। হিন্দুরাও তখন সজাগ ও প্রস্তুত হয়ে তাদের সরদারের দুই পাশে এসে দাঁড়াল।

সেনানীর পোশাকপরা এক গ্রিক বললে, ‘উপগুপ্ত, এখনও আমাদের কথা শুনলে তোমাদের ক্ষমা করা হবে।’

উপগুপ্ত অবহেলার হাসি হেসে বললেন, ‘বিশ্বাসঘাতক দস্যুর দল! তোদের কথা শুনব? স্বদেশের শত্রু হব? কখনও নয়—কখনও নয়!’

দলে দলে হিন্দু প্রতিধ্বনি করে আকাশ কাঁপিয়ে বললে, ‘কখনও নয়—কখনও নয়!’

তারপরেই পিছন থেকে তীব্র নারীকণ্ঠে শোনা গেল—’ছুটে এসো হিন্দুনারী, ছুটে এসো! মান রাখো, প্রাণ দাও, যবন মারো।’

সকলে ফিরে বিস্ময়মুগ্ধ চোখে দেখলে,—দলে দলে হিন্দুস্থানের বীর মেয়ে কেউ তরবারি, কেউ বর্শা, কেউ অন্য অস্ত্র নিয়ে দ্রুতপদে গ্রিকদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে—তাদের পুরোভাগে ধীরার মহিমময়ী মূর্তি!

পরমুহূর্তে যেখানে যত হিন্দু সৈনিক ছিল, জাগ্রত সিংহের মতন গর্জন করে গ্রিকদের উপরে লাফিয়ে পড়ল!

উপগুপ্ত দৃপ্তকণ্ঠে বললেন, ‘আমরা যুদ্ধ-ব্যবসায়ী, যুদ্ধ করতে করতেই মরব—প্রাণ থাকতে দেশের শত্রু হব না। জয়, হিন্দুস্থানের জয়!’

তারপর যে দৃশ্যের অবতারণা হল ভাষায় তা বর্ণনা করা অসম্ভব!

এক-একজন হিন্দুর বিরুদ্ধে দশ-দশজন গ্রিক! তবু আর্তনাদ উঠল কেবল গ্রিকদেরই দলে; হিন্দুরা প্রাণ নিতে ও প্রাণ দিতে লাগল হিন্দুস্থানের জয় গাইতে গাইতে!

দেখতে দেখতে গ্রিক সৈন্য-সাগরের মধ্যে ছোট নদীর ধারার মতো ভারতের বীরপুরুষ ও বীরবালার দল কোথায় হারিয়ে গেল—কিন্তু তখনও শোনা যেতে লাগল অস্ত্রে অস্ত্রে ঝনৎকার, হিন্দু নরনারীদের অনাহত চিৎকার, ‘আমরা প্রাণ দেব, মান দেব না।’

পেটের দায়ে তারা মান বিক্রয় করলে না, হিন্দুস্থানের জন্যে প্রাণই দান করলে। এও আমাদের কথা নয়, গ্রিক ঐতিহাসিক Arrian-এর কথা।

পরদিন প্রভাতের সূর্য উঠে অবাক হয়ে দেখেছিল, ভারতবর্ষের সাতহাজার বীরপুরুষের মৃতদেহ, এবং তাদের আশেপাশে চিরনিদ্রার কোলে আশ্রয় নিয়েছিল শত শত বীরনারী। তাদের একজনও আত্মসমর্পণ করেনি।

কোন দেশের ইতিহাসে স্বদেশানুরাগের এর চেয়ে গৌরবময় কাহিনি আছে? অথচ হিন্দু-বীরত্বের এই অপূর্ব কাহিনি আজকের হিন্দু ছেলেমেয়েদের কাছে বলে না। এ গল্প শুনিয়েছেন গ্রিকরাই—

আমাদের লজ্জার কথা!