শাত-ইল-আরব
শাতিল-আরব1! শাতিল আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
শহিদের লোহু2, দিলিরের খুন ঢেলেছে যেখানে আরব-বীর।
যুঝেছে এখানে তুর্ক-সেনানী,
লুটেছে এখানে মুক্ত আজাদ বেদুইনদের চাঙ্গা-শির!
নাঙ্গা-শির –
শমশের হাতে, আঁশু-আঁখে হেথা মূর্তি দেখেছি বীর-নারীর!
শাতিল-আরব! শাতিল-আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
‘কূত-আমারা6র রক্তে ভরিয়া
দজলা7 এনেছে লোহুর দরিয়া;
উগারি সে খুন তোমাতে দজলা নাচে ভৈরব ‘মস্তানি’র।
ত্রস্তা-নীর
গর্জে রক্ত-গঙ্গা ফোরাত8, – ‘শাস্তি দিয়েছি গোস্তাখীর9!’
দজলা-ফরাত-বাহিনী শাতিল! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
বহায়ে তোমার লোহিত বন্যা
ইরাক-আজমে10 করেছ ধন্যা–
বীরপ্রসূ দেশ হল বরেণ্যা মরিয়া মরণ মর্দমির11!
মর্দ বীর
সাহারায় এরা ধুঁকে মরে তবু পরে না শিকল পদ্ধতির।
শাতিল-আরব! শাতিল-আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
দুশমন-লোহু ঈর্ষায় নীল
তব তরঙ্গে করে ঝিল-মিল
বাঁকে বাঁকে রোষে মোচড় খেয়েছে পিয়ে নীল খুন পিণ্ডারির12!
জিন্দা বীর
‘জুলফিকার13 আর ‘হায়দরি’ হাঁক হেথা আজও হজরত আলীর–
শাতিল-আরব! শাতিল-আরব!! জিন্দা রেখেছে তোমার তীর।
ললাটে তোমার ভাস্বর টিকা
বস্রা14 -গুলের বহ্নিতে লিখা;
এ যে বসোরার খুন-খারাবি গো রক্ত-গোলাব-মঞ্জরীর
খঞ্জরির!
খঞ্জরে ঝরে খর্জুর-সম হেথা লাখো দেশ-ভক্ত-শির!
শাতিল-আরব! শাতিল-আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
ইরাক-বাহিনী! এ যে গো কাহিনি,
কে জানিত কবে বঙ্গ-বাহিনী
তোমারও দুঃখে ‘জননী আমার’! বলিয়া ফেলিবে তপ্ত নীর
রক্ত-ক্ষীর–
পরাধীনা! একই ব্যথায় ব্যথিত ঢালিল দু-ফোঁটা ভক্ত-বীর!
শহিদের দেশ! বিদায়! বিদায়!! এ অভাগা আজ নোয়ায় শির।
সূত্রনির্দেশ ও টীকা
- শাতিল-আরব : আরব দেশের এক নদীর নাম।
- লোহু : রক্ত, শোণিত।
- য়ুনানি : য়ুনান দেশের অধিবাসী।
- মিসরি : মিসরের অধিবাসী।
- কেনানি : কেনানের অধিবাসী।
- কূত-আমারা : কুতল-আমারা নামক স্থান, যেখানে জেনারেল টাউনসেণ্ড বন্দী হন।
- দজলা : টাইগ্রিস নদী।
- ফোরাত : ইউফ্রেটিস নদী।
- গোস্তাখীর : বেয়াদবি, ঔদ্ধত্য।
- ইরাক-আজমে : মেসোপটেমিয়া।
- মর্দমির : পৌরুষ।
- পিণ্ডারি : মারাঠা দস্যু।
- জুলফিকার : বিশ্বনবীর বিশ্বজয়ী তরবারি।
- বস্রা : ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, গোলাপ ও খেজুরের জন্য প্রসিদ্ধ।