» » বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী

বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী

[ ক ]

[বাঙালি পল্টনের একটি বওয়াটে যুবক আমার কাছে তাহার কাহিনী বলিয়াছিল নেশার ঝোঁকে : নীচে তাহাই লেখা হইল। সে বোগদাদে গিয়া মারা পড়ে–]

‘কি ভায়া! নিতান্তই ছাড়বে না? একদম এঁটেল মাটির মত লেগে থাকবে? আরে ছোঃ! তুমি যে দেখছি চিটেগুড়ের চেয়েও চামচিটেল! তুমি যদিও হচ্ছ আমার এক ক্লাসের ইয়ার, তবুও সত্যি বলতে কি, আমার সে সব কথাগুলো বলতে কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ হয়। কারণ খোদা আমায় পয়দা করবার সময় মস্ত একটা গলদ করে বসেছিলেন, কেননা চামড়াটা আমার করে দিলেন হাতির চেয়েও পুরু, আর প্রাণটা করে দিলেন কাদার চেয়েও নরম! আর কাজেই দু-চার জন মজুর লাগিয়ে আমার এই চামড়ায় মুগুর বসালেও আমি গোঁপে তা দিয়ে বলব, ‘কুচ্ পরওয়া নেই’, কিন্তু আমার এই ‘নাজোক’ জানটায় একটু আঁচড় লাগলেই ছোট্ট মেয়ের মত চেঁচিয়ে উঠবে! তোমার ‘বিরাশি দশআনা’ ওজনের কিলগুলো আমার এই স্থূল চর্মে স্রেফ আরাম দেওয়া ভিন্ন আর কোনো ফলোৎপাদন করতে পারে না, কিন্তু যখনই পাকড়ে বস, ‘ভাই, তোমার সকল কথা খুলে বলতে হবে’, তখন আমার অন্তরাত্মা ধুকধুক করে ওঠে,–পৃথিবী ঘোরার ভৌগোলিক সত্যটা তখন হাড়ে হাড়ে অনুভব করি। চক্ষেও যে সর্ষপ পুষ্প প্রস্ফুটিত হতে পারে বা জোনাক পোকা জ্বলে উঠতে পারে, তা আমার মত এই রকম শোচনীয় অবস্থায় পড়লে তুমিও অস্বীকার করবে না।