» » নারী নির্যাতনে দেশ গেল ভরে

বর্ণাকার

অতুল সুর

চোদ্দ শতকের বাঙালী

নারী নির্যাতনে দেশ গেল ভরে

আজ পশ্চিমবঙ্গ গভীরভাবে এক কুৎসিত সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আমি নারী নিগ্রহের কথা বলছি। প্রতিদিনই খবরের কাগজের পৃষ্ঠায় দু-চারটে করে নারী নিগ্রহের সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। খবরগুলো পড়লে মনে হবে যে সমস্যা ক্রমশ উৎকট থেকে উৎকটতর হচ্ছে। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীযুক্ত জ্যোতি বসু মশায় বিধানসভায় যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, তা থেকে সহজেই বুঝতে পারা যাবে যে নারী নিগ্রহ প্রতি বৎসর বেড়েই চলেছে। মাত্র নারী ধর্ষণ সম্বন্ধে তাঁর প্রদত্ত পরিসংখ্যানগুলিই প্রথম বিবেচনা করা যাক। ১৯৯৩ সালের ৩ মার্চ ও ১৯৯৪ সালের ৩০ মার্চ তারিখে তিনি বিধানসভায় যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা থেকে প্রকাশ পায় যে ১৯৮৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে ৪৯৬টি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯০ সালে দাঁড়িয়েছিল ৫০৪, ১৯৯১ সালে ৬৬৩, ১৯৯২ সালে ৬৯২ ও ১৯৯৩ সালে ৭১২। ধর্ষিতা মেয়েদের মধ্যে আট নয় বছরের মেয়েও ছিল। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে সংখ্যাঙ্কগুলো দিয়েছেন তা থেকে এ রাজ্যে এ কুৎসিত সমস্যার সার্বিক চিত্রটা পাওয়া যায় না। কেননা, প্রথম মেয়েরা বহু ক্ষেত্রেই তাদের ওপর এই লজ্জাকর অত্যাচার প্রকাশ করতে চায় না। দ্বিতীয়ত, যারা প্রকাশ করতে চায়, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় সেগুলি বহু ক্ষেত্রেই থানার খাতায় নথিভুক্ত হয় না। তৃতীয়ত, গ্রাম থেকে যেসব নিরক্ষর ও নিরীহ কুমারী মেয়ে কর্ম সংস্থানের প্রয়াসে কলকাতায় আসে এবং পরে সর্বক্ষণের ‘কাজের লোক’ হিসাবে কর্ম নিয়োগ পায়, তাদের মধ্যে অধিকাংশের সঙ্গেই, হয় নিয়োগকারী নিজে বা তার পরিবারস্থ কেউ না কেউ ‘দাদা’, ‘বাবা’ ইত্যাদি ‘সংশয়শূন্য সম্পর্ক’ পাতিয়ে অবাধে তাদের ধর্ষণ করে। তারপর তারা যখন অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে, তখন তারা লজ্জায় নিজেই আত্মঘাতী হয়, আর তা নয় তো তাদের মেরে ফেলে আত্মহত্যার রূপ দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রেও পুলিশ ‘প্রভাবের শিকার হয়ে নীরব থেকে যায়।’

৷৷ দুই ৷৷

পরিস্থিতিটা বুঝবার জন্য, গত কয়েকদিন খবরের কাগজে নারী নিগ্রহের যে সব খবর বেরিয়েছে, সেগুলো এখানে তুলে ধরছি। ৯ এপ্রিল ১৯৯৪ তারিখের কাগজে বেরিয়েছে : দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিং-এর ঘটিয়ারী শরিফ এলাকার নারায়ণপুর গ্রাম থেকে চারজনের একটি দল একটি মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার ওপর ধর্ষণ করেছে। মেয়েটির অবস্থা চরম দেখে তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ কারুকেই ধরেনি। ওই তারিখের কাগজে আবার পড়ি—বাঁকুড়ার সিমলিপাল থানার জামদহরা গ্রামে এক রমণীকে ধর্ষণ করার জন্য আদিবাসী সমাজ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ‘গিরা’ (মৃত্যুদণ্ড) ফতোয়া জারি করেছে। ১০ তারিখের কাগজে আরও পড়ি— দক্ষিণ ২৪ পরগণার জয়নগরের উত্তরপাড়া গ্রামে লক্ষ্মী সরদার নামে এক গৃহবধূকে খুন করা হয়েছে। আবার ওই দিনের কাগজে পড়ি যে দক্ষিণ ২৪ পরগণার যাদবপুর থানার বিজয়পুর গ্রামে এক নয় বছরের মেয়ের শ্লীলতাহানি করেছে ওই স্থানের আদর্শ বিদ্যাপীঠের এক শিক্ষক। ওই দিনের কাগজে আরও পড়ি যে সাহিত্য পরিষদ স্ট্রীটের নির্যাতিতা আলপনা ব্যানার্জীর উকিলকে আদালত চত্বরেই মারধর করা হয়েছে। ১২ তারিখের কাগজে পড়ি যে ডায়মণ্ডহারবার রোডে পুলিশ হানা দিয়ে দুই মধুচক্র থেকে ১৮ জোড়া নারীপুরুষকে আপত্তিকর অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে। ১৩ এপ্রিল তারিখের কাগজে পড়ি—বারাসাত থানার নবপল্লীর তারক রায় নামে এক ব্যক্তি তার স্ত্রী স্বপ্নাকে পাচার করবার চেষ্টা করেছে। ওই তারিখের কাগজেই পড়ি যে বারাসাত হাবরা থানার এক যুবক আট বছর বয়সের এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করেছে। আবার ওই তারিখের কাগজে পড়ি যে এক ‘কাজের লোক’ দিল্লী থেকে লিলুয়ায় তার বাড়িতে পালিয়ে এসেছিল। তার মনিব তাকে ধরে নিয়ে যাবার জন্য এলে ওই মেয়েটির এক আত্মীয় কর্তৃক ক্ষুরের আঘাতে নিহত হয়েছে। ১৭ তারিখের কাগজে পড়ি—স্ত্রী জলি পালের ওপর অত্যাচার করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের এক অফিসার অভিযুক্ত হয়েছে। ওই তারিখের কাগজে পড়ি যে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন স্থানে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ১৮ এপ্রিল তারিখের কাগজে পড়ি শিয়ালদা স্টেশনের ভেতর কর্তব্যরত কনস্টেবল এক গৃহবধূর স্বামীর বুকের ওপর বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছে। আবার ওই তারিখের কাগজে পড়ি—বারাসাতের নান্দনিক কোচিং সেন্টার-এ বপন কর নামে এক শিক্ষক ওই কোচিং-এর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করেছে। ২০ তারিখের কাগজে পড়ি—মেদিনীপুরের ডেবরা থানার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ১৬ বছর বয়সের এক রোগিনীকে ওই কেন্দ্রের এক কর্মী ধর্ষণ করেছে। ২৩ তারিখের কাগজে পড়ি—বর্ধমান জেলার রায়না থানার দু’জন পুলিশ কনস্টেবল এক বিবাহিতা রমণীকে ধর্ষণ করেছে। ২৬ তারিখের কাগজে পড়ি টিটাগড় থানার আলি হায়দার রোডে এক বিকলাঙ্গ কিশোরীকে বাড়িওয়ালা ধর্ষণ করেছে। ওই দিনের কাগজেই পড়ি যে শিলিগুড়িতে টাউন স্টেশন সংলগ্ন রেল কোয়াটারে প্রদীপ চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি মল্লিকা রায় নামে এক ‘কাজের লোক’কে জোর করে ধর্ষণ করায় মেয়েটি অন্তস্বত্বা হওয়ায় লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে। ওই দিনের কাগজেই পড়ি—বীরভূম জেলার নানার থানার বঙ্গছত্র গ্রামে এক বিবাহিতা মহিলাকে ৫ জন গণধর্ষণ করে। ২৮ জুন ১৯৯৪ তারিখের ‘স্টেটসম্যান’ পত্রিকার পড়ি এক পিতা নিজ ঔরসজাত কন্যাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে চলেছে। মানুষ যে পশুর চেয়েও অধম হয়েছে, এটাই তার প্রমাণ।

২৮ এপ্রিল ১৯৯৪ খবরে প্রকাশ বাঁকুড়ায় নারীধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। ১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে নারীনির্যাতন সম্পর্কে আদালতে বিচারের সংখ্যা ছিল ১৩২০। ১৯৯৩ সালে ওই সংখ্যা হয়েছিল ১৩৫১। আদালতে বধূ হত্যার মামলা থেকে দেখা যাচ্ছে পণ নিয়ে পরিবারে অসন্তোষ, স্ত্রী বর্তমান থাকতে দ্বিতীয়বার বিয়ে করা, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ডাইনী বলে প্রচার করে বিবাহিতা বহু তরুণীকে খুন করা। পরবর্তী দিনসমূহের খবরগুলো আরও ভয়াবহ ও বীভৎস। সেজন্য সেগুলো আর এখানে উদ্ধৃত করলাম না।

৷৷ তিন ৷৷

বস্তুতঃ বাঙলাদেশে নারীর আজ কোন নিরাপত্তা নেই। যে কোন সময় তারা ধান্ধাবাজ পরুষের শিকার হয়ে নিগৃহীত হতে পারে। এ সম্বন্ধে ২৩ মে ১৯৯৪ তারিখের এক সংবাদ হুবহু তুলে ধরছি—

“বনগাঁ, ২২ মে—চাকরি দেওয়ার নামে বিবাহিতা এক যুবতীকে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে গিয়ে কলকাতার নিষিদ্ধপল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছেন এক ডাক্তার, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে। ঘটনাটি ঘটেছে বনগাঁ থানার পল্লীশ্রী কলোনীতে। প্রায় দেড় মাস সোনাগাছির নিষিদ্ধপল্লীতে নরকবাস করে গত মঙ্গলবার কোন রকমে বাড়িতে পালিয়ে আসে ওই যুবতী অণিমা সরকার (১৮)। অণিমার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক ওই ডাক্তার দূর্গা সরকারকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে বনগাঁ থানার পুলিশ। ইতিমধ্যে ধূর্ত ডাক্তারকে জেল হাজতে রাখারও আদেশ দিয়েছে আদালত। এদিকে পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক দুর্গা সরকারের এ হেন কাণ্ডকারখানায় পল্লীশ্রী কলোনির বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। বনগাঁ স্টেশনের রেলবাজারের কাছে পল্লীশ্রী কলোনিতে রবিবার গেলে দেখা যায়, এলাকায় চাপা ক্ষোভ রয়েছে ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ডাক্তারের বাড়ি চাকদহের বিষ্ণুপুরে। সেখানে স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েও রয়েছে তার। অণিমা নিজেই এদিন জানায়, প্রায় মাস চারেক আগে বিয়ে হয় ওদের। স্বামী প্রদীপ সরকার লন্ড্রিতে কাজ করতেন। বিয়ের পর আর্থিক টানাটানি দেখা যায়। স্বামীও নিখোঁজ হয়ে পড়ে। পাড়ার ডাক্তার দুর্গাবাবুই লোভ দেখায়, নার্সিং হোমে চাকরি করে দেবে বলে— বাড়িতে না জানিয়ে হঠাৎই গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাক্তারের সঙ্গে কলকাতায় চাকরির আশায় বেরিয়ে পড়ে অণিমা। ডাক্তারবাবুও তাকে না জানিয়ে হাজির করে সোনাগাছি অঞ্চলের একটি বাড়িতে। বাড়ির মালকিন মালতী ওরফে মিনু রায়ের কাছে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় অণিমাকে। অণিমা জানতে পেরে প্রচুর কান্নাকাটি করে। এদিকে ডাক্তারকাকাও উধাও। শেষমেশ জোর করে পালাতে চেষ্টা করে। মিনু তাকে তখন মানিকতলার একটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তোলে। ১৭ মে কাকভোরে অণিমা পালিয়ে আসে ওই বাড়ি থেকে। স্থানীয় যুবকরা ঘটনা শুনে অণিমাকে মারুতি গাড়ি করে পৌঁছে দেয় বনগাঁর বাড়িতে। এদিকে বনগাঁ থানার পুলিশ এদিন জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবারই ধৃত ডাক্তারকে সঙ্গে নিয়ে মিনুর ডেরায় হানা দেয় তারা। যদিও মিনুসহ দলবল তখন উধাও। এদিকে স্থানীয় রেলওয়ে স্পোটিং ক্লাবের সদস্যদেরও প্রচুর অভিযোগ ওই ডাক্তারের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ অসৎ উদ্দেশ্যেই চেম্বার খুলেছেন ডাক্তার। মাদক এবং নারী ব্যবসা দুই-ই চলছে সমানে। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। (‘আজকাল’ ২৩ মে ১৯৯৪)।

আবার ২৪ জন ১৯৯৪ তারিখের কাগজ পড়ি— জলপাইগুড়ি, ২৩ জুন—ওদলাবাড়ির ১৮ বছরের তরুণী মমতা মিদ্দাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়েছিল মথুরায়। সম্প্রতি সে সেখান থেকে পালিয়ে আসে, প্রথমে কলকাতায় এবং পরে কামরূপ এক্সপ্রেসে ওদলা- বাড়িতে। ঘটনার সূত্রপাত এপ্রিলে। প্রতিবেশী কানাই বিশ্বাস ও তার বন্ধু গোপাল সরকার মমতার দাদাকে মমতার জন্য বিয়ের পাত্র খুঁজে দেওয়ার কথা বলে। দাদা রাজি হওয়ায়, তারা মমতাকে নিয়ে বিহারে রওনা দেয়। আট দিন পর ফিরে জানায় মমতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এদিকে, মমতাকে বিহারের বদলে নিয়ে যাওয়া হয় মথুরায়। পাঁচ হাজার টাকায় প্রথমে তাকে বিক্রি করা হয় বণিক সিংয়ের কাছে। বণিক সিং আবার দশ হাজার টাকায় তাকে বিক্রি করে।

মমতা ফিরে আসার পর সব ঘটনা জানতে পেরে স্থানীয় মানুষ কানাই বিশ্বাসকে ধরে পিটানি দিয়ে পুলিসের হাতে তুলে দেয়। অপর আড়কাঠিটি এখনও পলাতক।’

৷৷ চার ৷৷

নারী ধর্ষণই একমাত্র নারী নিগ্রহ নয়। নারীর শ্লীলতাহানি, বধূনিধন, পণ্য হিসাবে তাকে বিক্রি করা প্রভৃতি এর নানা রূপ আছে। সম্প্রতি সংঘটিত কলকাতার সাহিত্য পরিষদ স্ট্রীটে আলপনাদেবীকে বিবস্ত্রা করে তার ওপর তিন চার ঘণ্টা ধরে যে অমানুষিক অত্যাচার ও তারাপুরে পুলিশ কর্তৃক মেয়েদের প্রকাশ্যে বিবস্ত্রা করাও নারী নিগ্রহের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এছাড়া আছে পণের কারণে বধূনিধন। এটাও একটা গুরুতর সামাজিক সমস্যা। ১৯৯৪ সালের ৩১ মার্চ তারিখে বিধানসভায় মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে পরিসংখ্যান পরিবেশন করেছেন, তা থেকে প্রকাশ পায় যে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯২, এই পাঁচ বৎসরে পশ্চিমবঙ্গে ১৪০৪টা বধূ-নিধন ঘটেছিল এবং নিধনকারীরা প্রতিক্ষেত্রেই অব্যাহতি পেয়েছিল। কিসের জোরে তারা অব্যাহতি পেল, তার প্রকৃত কারণ, একমাত্র ভগবানই জানেন। তিনি আরও বলেছেন যে উক্ত সময়কালের মধ্যে ৮৯৪টি ‘ইভটিজিং’-ও ঘটেছিল, তবে সে সব ঘটনার পুলিশ তদন্তে কেন দেরি হচ্ছে, তা তিনি দেখবেন’।

আজ নারীনিগ্রহ সংক্রান্ত ব্যাপারে যেসব ঘটনা ঘটছে, তা অতি আদিম সমাজেও ঘটে না। আজ আমরা যে এক অতি বর্বর সমাজে বাস করছি, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মশায় বলেছেন যে কেন পুলিশি তদন্তে দেরি হচ্ছে, তা তিনি ‘দেখবেন’। সেটা তো সরকারি কর্তব্যই। তাঁর এই আশ্বাসবাণীর পিছনে নতুন কিছ নেই। কিন্তু এতদিন হয়নি কেন, সেটাই তো তাঁর জানাবার কথা।

ইতিমধ্যে সমস্যা এমনই উৎকটতর হয়ে উঠেছে যে আমাদের মা-বোনদের পথে ঘাটে বেরনো মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সভ্যজগতের কোথাও নারী আজকের মতো অসহায় ও নিরাপত্তাহীন হয়নি। অথচ যেটা বুঝতে পারছি না, সেটা হচ্ছে আজকের বুদ্ধিজীবী সমাজ এ সম্বন্ধে নীরব রয়েছেন কেন? কথায় কথায় তো তাঁরা পদযাত্রা থেকে শহর, করে ব্রিগেড গ্রাউণ্ডে বিরাট সমাবেশের সঙ্গে সভা করেন। আজ তাঁরা নীরব কেন? আজ তাঁরা মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষার জন্য কোনও রূপ আগ্রহ, উদ্যম ও উদ্দীপনা দেখাচ্ছেন না কেন? প্রতি নারীই যে মাতৃরূপিণী ও শক্তিরূপিণী এটা কি তাঁরা ভুলে গেছেন?

অপর নারী যে নিজের মা-বোনের সামিল, সেটা আজকের বাঙালী সমাজের এক শ্রেণীর লোক সম্পূর্ণ ভুলে গিয়েছে। অথচ আমাদের ছেলেবেলায় তো এটা ছিল না। মেয়েরা তখন অসূর্যম্পশ্যা ছিল বলে, সূর্যোদয়ের পূর্বেই গঙ্গাস্নান করে বাড়ি ফিরবে বলে, ভোর রাতেই একাকী বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলকাতার নির্জন রাজপথ দিয়ে পায়ে হেঁটে গঙ্গার ঘাটে যেত, এবং আবার গঙ্গাস্নান সেরে পায়ে হেঁটেই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরত। কলকাতার রাতের নির্জন রাজপথ তখন তাদের কাছে সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। আজ নারী সম্পর্কে মানুষের যে কুৎসিৎ মনোবৃত্তি ঘটেছে, তা সমাজতত্ত্ববিদগণের অনুশীলনের বিষয়বস্তু হতে পারে। শেষ খবরে জানা গেছে নারী ধর্ষণের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধি আইন সংশোধন করা হচ্ছে কঠোরতম শাস্তির জন্য।