☼ অতুল সুর ☼
চোদ্দ শতকের বাঙালী
চোদ্দ শতকের বাঙালী – অতুল সুর। প্রথম প্রকাশ–শ্রাবণ, ১৪০১; জুলাই, ১৯৯৪। “চোদ্দ শতকের বাঙালী” গ্রন্থের ভূমিকায় অতুল সুর লিখেছেন–“বইখানা সদ্যপ্রয়াত বঙ্গীয় চোদ্দ শতকের ধারাবাহিক ইতিহাস নয়। ওই শতকের কতকগুলো গুরুত্বপূরণ ঘটনা সম্বন্ধে লিখিত প্রবন্ধের সমাহার মাত্র।”
প্রথম প্রকাশ
শ্রাবণ, ১৪০১
জুলাই, ১৯৯৪
প্রকাশিকা
সুপ্রিয়া পাল
উজ্জ্বল সাহিত্য মন্দির,
সি-৩, কলেজ স্ট্রীট মার্কেট, কলিকাতা-৭০০০০৭
পরিবেশক
উজ্জ্বল বুক স্টোরস্
১৯ শ্যামাচরণ দে স্ট্রীট, কলিকাতা-৭৩
প্রতিষ্ঠাতা
শরৎচন্দ্র পাল ও কিরীটি কুমার পাল
গ্রন্থস্বত্ব
ড. অতুল সুর। সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
মুদ্রাকর
অনিলকুমার ঘোষ
নিউ ঘোষ প্রেস
৪/১ই, বিডন রো, কলিকাতা-৬
ISBN—81-7334-039-0
ভূমিকা
বইখানা সদ্যপ্রয়াত বঙ্গীয় চোদ্দ শতকের ধারাবাহিক ইতিহাস নয়। ওই শতকের কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্বন্ধে লিখিত প্রবন্ধের সমাহার মাত্র। কিন্তু প্রবন্ধগুলো পড়লে পাঠক ওই শতাব্দীর একটা সার্বিক চিত্র পাবেন। সে সার্বিক চিত্র, পাঠক অধিক পাবেন বইখানার মুখপাতের প্রবন্ধ— ‘শতক শিরহরণ’-এ। সেখানে গত ১০০ বছরের ইতিহাসের একটা কাকচক্ষু নিরীক্ষণ করা হয়েছে। ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে চোদ্দ শতকের সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে ভারতের স্বাধীনতা লাভ ও ইংরেজের মহাপ্রস্থান। কি ভাবে সেটা ঘটল, তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় প্রবন্ধে। আরও, শতাব্দী চিহ্নিত হয়ে আছে এক বাঙালী প্রত্নতত্ত্ববিদের বৈপ্লবিক আবিষ্কারে,—যা যুগ যুগ যাবৎ প্রচলিত ধারণাকে নস্যাৎ করে দিয়ে প্রমাণিত করল হিন্দু সভ্যতার প্রাচীন ও তার শিকড় কোথায়। এটা আলোচিত হয়েছে বইখানার তৃতীয় প্রবন্ধে।
বিগত শতাব্দী সম্পূর্ণভাবে ওলট-পালট করে দিয়েছে আমাদের সমাজজীবন ও জীবনচর্যার ধারাকে। ওলট-পালটটা এমন ধরনের হয়েছে যে শতাব্দীর গোড়ার দিকের মানুষগুলোকে শতাব্দীর শেষের দিকের মানুষ থেকে চেনা যায় না। সমাজ জীবনে বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন ঘটেছে কৌলীন্য ও বহু বিবাহের অবসানে, বিবাহের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণে, বিয়ে বাড়ির রীতিনীতির পরিবর্তনে। সেজনা এসব বিষয় সম্বন্ধে স্বতন্ত্র প্রবন্ধ গ্রথিত হয়েছে।
এ শতাব্দীতে বাঙালী হিন্দু ও মুসলমান তাদের আগেকার যুগের সম্প্রীতি হারিয়েছে যার প্রতিক্রিয়ায় ঘটেছিল নোয়াখালী ও কলকাতার মর্মন্তুদ দাঙ্গা, যার জেরে স্বাধীনতার শর্ত হিসাবে বঙ্গদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। কিন্তু মন্দির-মসজিদ সমস্যা আজ পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে। বঙ্গদেশ দ্বিখণ্ডিত হবার পর পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ নানা উৎকট সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু ভগবান ও আল্লার কৃপায় সুপরিকল্পিত যোজনাসমূহের দ্বারা সেগুলির সমাধান হয়েছে। এ সমস্ত বিষয় এ বইয়ের স্বতন্ত্র প্রবন্ধসমূহে আলোচিত হয়েছে।
শতাব্দীর প্রথম অর্ধাংশ ছিল বাঙালী জীবনের সুখময় যুগ। সস্তাগণ্ডার বাজারে দরিদ্রতা সত্ত্বেও বাঙালী হেসে খেলে তার নশ্বর জীবন কাটাতো। শেষের অর্ধাংশে সে জর্জরিত হয়ে গিয়েছে মূল্যস্ফীতি, অবাঙালীর অবাধ আগমনে ও নানারূপ ক্লেশময় ঘটনায়। বাঙালী জীবন আজ সবচেয়ে বেশি অভিশপ্ত হয়েছে বধূ নির্যাতন ও নারীনিগ্রহে। সেজন্য এসব বিষয়েও প্রবন্ধ যোগ করা হয়েছে। এই নৈরাশ্যের মধ্যেও বাঙালী আজও পাচ্ছে ‘অসকার’ ও ‘বিশ্বসুন্দরী’ খেতাব। তবে রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্র-নজরুলের যুগের আর পুনরাবির্ভাব ঘটেনি। সেজন্য কামনা করি যে বাঙালী সংকল্প করুক চরিত্রবান হয়ে তার লুপ্ত গৌরব ফিরিয়ে আনার।