» » শতাব্দীর মর্মন্তুদ অগ্নিকাণ্ড

বর্ণাকার

অতুল সুর

চোদ্দ শতকের বাঙালী

শতাব্দীর মর্মন্তুদ অগ্নিকাণ্ড

আগের অধ্যায়ে আমরা বলেছি যে কলকাতায় হোগলা দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এটা ঘটেছিল এক মর্মন্তুদ অগ্নিকাণ্ডের জেরে। কলকাতার ইতিহাসে এরকম নিদারূণ ও শোকাবহ অগ্নিকাণ্ড শহরের বুকে আগে আর কখনও ঘটেনি, পরেও নয়। ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৪২ সালের ৮ নভেম্বর রবিবারে। ৫-এ হালসীবাগান রোডে অবস্থিত ‘আনন্দ আশ্রম’ প্রাঙ্গণে কালীপূজা উপলক্ষে তিনদিনব্যাপী এক আমোদ-প্রমোদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। হোগলা দিয়ে এক প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছিল। ঘটনার দিন প্রসিদ্ধ ব্যায়ামবিদ বিষ্ণু ঘোষ তার দলবল নিয়ে ব্যায়াম-কৌশল দেখাচ্ছিল। বিষ্ণু ও ওর দলের তখন শহরে খুব জনপ্রিয়তা ছিল। সেজন্য একহাজারের ওপর মেয়ে, পুরুষ ও শিশু ওখানে জড়ো হয়েছিল। আমিও ওই দলের মধ্যে ছিলাম। দেরীতে গিয়েছিলাম বলে আমি ও আমার সঙ্গীরা গেটের কাছেই দাঁড়িয়েছিলাম। সেজন্যই সেদিন পৈতৃক প্রাণটা বেঁচে গিয়েছিল।

বেলা তখন পৌনে চারটে হবে। বিষ্ণুর দল বেশ সংশৃঙ্খলভাবেই তাদের ব্যায়াম-কৌশল দেখাচ্ছিল। সকলে মুগ্ধনয়নে দেখছিল বিষ্ণুর তেরো বছরের ছেলে কেষ্টর ব্যায়াম-কৌশল। এমন সময় মণ্ডপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণ থেকে লোক চিৎকার করে উঠল ‘আগন, আগুন’! মণ্ডপের দক্ষিণ দিকটা জ্বলে উঠল। লেলিহান অগ্নিশিখা ক্রমশ অগ্রসর হতে লাগল। আমি ও আমার সঙ্গীরা ছুটে গেট দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। তারপর দেখলাম, ভেতরের সব লোকই গেটের দিকে ছুটে আসছে। সেখানে জমাট ভিড়। পুরুষেরা অধিকাংশই পাঁচিল টপকিয়ে বেরিয়ে এল। পিছনে অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে আটক হয়ে পড়ল মেয়ে ও শিশুরা।

১১৯ জনের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল। আহতদের মধ্যে ত্রিশজনকে কার- মাইকেল (আর. জি. কর) মেডিকেল কলেজে ও নয়জনকে ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হল। তাদের মধ্যেও বারোজন কারমাইকেল কলেজে ও দু’জন মেডিকেল কলেজে মারা গেল। বিষ্ণুর ছেলে কেষ্টও ওই অগ্নিকুণ্ডের মধ্যে প্রাণ হারাল। সমস্ত শহরে বয়ে গেল শোকের স্রোত। কর্তৃপক্ষের টনক নড়ল। কর্তৃপক্ষ আইন জারি করল যে এর পর আর কেউ হোগলার মণ্ডপ তৈরি করতে পারবে না। সেই থেকেই শহরে হোগলার মণ্ডপ তৈরি করা বন্ধ হয়ে গেল।