ফুটন্ত গোলাপ
কাসেম বিন আবুবাকার
ফুটন্ত গোলাপ বাংলাদেশের কাসেম বিন আবুবাকারের লিখিত একটি রোমান্টিক উপন্যাস। লেখকের প্রথম উপন্যাস ফুটন্ত গোলাপ বইটি ১৯৮৬ প্রকাশিত হবার পরে, বইটি বাংলাদেশের প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলের মানুষের নিকট বইটি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠে, এবং বইটি তৎকালীন সময়ে বেস্ট সেলার বই হয়ে উঠে। এরপর ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি লেখক ও এই বইটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরে লেখক ও বইটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কেন্দ্রে পরিণত হয়। এমনকি বইটি কাসেম বিন আবুবাকারের লেখা কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ ও বিতর্ক তৈরি হয়। তবে কিছু পাঠক বইটি নিয়ে ব্যক্তিগত ব্লগিং ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। ২০১১ সালে বইটি ৩০ তম সংস্করণ বাজারে বের হয়েছে, এবং বইটি সর্বমোট ১.৫ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে।
কাহিনী সংক্ষেপ
এই উপন্যাসটি প্রেমের সাথে ইসলামি ভাবধারার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। উপন্যাসের শুরুতেই মূল দুই ব্যক্তিত্ব নায়ক সেলিম ও নায়িকা লাইলির দেখা হয়ে যায়। গল্পে লাইলিকে একজন ধর্মপ্রান যুবতী হিসাবে দেখানো হয়েছে, লাইলির বাবা একজন কেরানি। লাইলি নিজে ভালো ইসলামি গান জানে। লাইলিদের পরিবার গরিব, অসহায় ও দুস্থভাবে জীবনযাপন করে। অপরদিকে সেলিমের পিতা একজন ধনী পরিবারের একজন সন্তান, সেলিম নিজেও ধর্মকর্ম তেমন বেশি মানেনা। সেলিম খুব ভালো ফুটবল খেলোয়ার এবং জুডো ও কারাতে পারদর্শী। সে নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করতে পারে। তবে লাইলি ও সেলিমের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, সেটি হলো তারা দুইজনই মেধাবী শিক্ষার্থী, তারা উভয়ই নিজ নিজ ক্লাসে প্রথম স্থানের অধিকারী হয়।
উপন্যাসে লেখক গল্পের মধ্যে নানা নীতিকথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সামাজিক বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, সেটিও লেখক তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়েছেন। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়ে কুরআন ও হাদিসে কি ধরনের নির্দেশনা দেওয়া আছে, সেটিও বইতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।
বাস্তব উপজিব্য
লেখক মল্লিক ব্রাদার্সে চাকরি করার সময় এই উপন্যাসটি লিখেন। সেই সময়ে মল্লিক ব্রাদার্সে একটি শিক্ষিতা মেয়ে কাজের জন্য আসতো। মেয়েটি বাইরে কমদামী বোরকা পরলেও, ভিতরে দামি পোশাক পরিধান করে ছিলো। লেখক বিষয়টি বুঝতে পারলে, মেয়েটি জবাবে তাকে বলে, ইসলাম ধর্ম নারীদের নিরাপত্তা ও পর্দার বিধানের জন্য বাইরে বের হওয়ার সময় অনাকর্ষক পোশাক পরিধান করতে বলেছে। লেখক এই মেয়ের এই ধারণা শুনে অভিভূত হন, এবং এই উপন্যাসটি রচনা করেন। উপন্যাসটি লেখার পরে লেখক দৃঢ় বিশ্বাস নিয়েই বলেছিলেন, আমার এই উপন্যাস এক দিন না এক দিন সবাই গ্রহণ করবে।
জনপ্রিয়তা
লেখক এই বইটি ১৯৭৮ সালে লেখা শুরু করেন, এটিই লেখকের প্রথম বই হওয়ায় নানা প্রতিবন্ধকতায় বইটি ১৯৮৬ সালে ১ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশ করা হয়। বইটি প্রকাশের পর ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর বইটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করে। এরপর বই ও লেখককে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ইয়াহু নিউজ, যুক্তরাজ্যের মিডিয়া ডেইলি মেইল, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, মালয়েশিয়ার দ্য স্টার ও মালয়মেইল পত্রিকা, ফ্রান্সের দ্য ডন পত্রিকা, ফ্রান্সের ফ্রান্স টুয়েন্টি ফোর ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল পত্রিকাসহ আরো নানা আন্তর্জাতিক পত্রিকা বইটি ও লেখককে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশের মধ্যেও বইটি সম্পর্কে বহু প্রতিবেদন এবং বিশাল জনপ্রিয়তা প্রকাশ পায়। বইটি গুডরিডস বুক রিভিউ ওয়েবসাইটে ২১০ রেটার ২.৬৭ রেটিংস দিয়েছে।
সমালোচনা
বইটির তুমুল জনপ্রিয়তার পাশাপাশি অনেক সমালোচনাও রয়েছে। সমালোচকগণ বইটিকে একটি নিম্নমানের সাহিত্য বলে উল্লেখ করেছে, তারা বলেছে এই বইয়ের বাচনভঙ্গি, তুলনামূলক উদাহরণ ও বাক্য রচনায় উচ্চ সাহিত্যের ছাপ পাওয়া যায়নি। তারা উল্লেখ করেছে বইটি নিম্নমানের অর্ধ-শিক্ষিত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে রচনা করেছে। এছাড়াও কিছু ইসলামি ব্যক্তিত্বও বইটিতে ইসলামি রচনার মোড়কে অশ্লীলতা ও নগ্নতা ছড়ানোর অভিযোগ করেছে।
গ্রন্থকথা
ফুটন্ত গোলাপ ইসলামিক প্রেমের উপন্যাস; লেখকের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। প্রকাশক নূর-কাসেম পাবলিশার্স। প্রকাশকাল : প্রথম প্রকাশ – ডিসেম্বর-১৯৮৬ খৃঃ। প্রথম নূর কাসেম পাবলিশার্স সংস্করণ জানুয়ারি-১৯৯৭ খৃঃ। ত্রিশতম প্রকাশ : মার্চ-২০১১ খৃঃ। প্রচ্ছদ সমর মজুমদার। যুক্তরাজ্য পরিবেশক সঙ্গী লিমিটেড, ২২ ব্রিকলেন, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। গ্রন্থস্বত্ব লেখক। নূর-কাসেম পাবলিশার্স, ৩৮/৪, বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা-১১০০, থেকে মোঃ সায়ফুল্লাহ্ খান কর্তৃক প্রকাশিত এবং সালমানী মুদ্রণ সংস্থা, ৩০/৫, নয়াবাজার, ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
বর্ণ বিন্যাস বাধন কম্পিউটার্স ৪৭/১, বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা ১১০০।
উৎসর্গ
যাদের মারফত আল্লাহপাক আমাকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেই পুণ্যবান ও পুণ্যবতী আব্বা-আম্মার মোবারক কদমে।
- “হে ঈমানদারগণ তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ কর। এবং শয়তানের অনুসারী হয়ো না। বাস্তবিকই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” –আল-কোরআন, সূরা-বাকারা, আয়াত-২০৮, পারা-২।
- “পাঁচ ব্যক্তির সংসর্গ হইতে সর্বদা দূরে থাকিও (ক) মিথুক (খ) আহাম্মক (গ) কৃপণ (ঘ) কাপুরুষ (ঙ) ফাসেক।” –ইমাম জাফর সাদেক (রঃ)
ভূমিকা
বর্তমান সমাজের চরম অবনতি উপলব্ধি করে এই কাহিনী লেখার প্রেরণা পেয়েছি। আমার মনে হয়েছে এভাবে যদি দিন দিন আমরা প্রগতি ও নারী স্বাধীনতার নাম দিয়ে চলতে থাকি, তা হলে ইসলাম থেকে সমাজের মানুষ বহুদূরে চলে যাবে। শুধু মুখে, কেতাবে ও মুষ্টিমেয় লোকের কাছে ছাড়া অন্য কোথাও ইসলামের নাম গন্ধ থাকবে না।
বিদেশী শিক্ষাকে আমি খারাপ বলছি না। পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। কিন্তু বিদেশী শিক্ষার সংগে সংগে তাদের ভালো দিকটা বাদ দিয়ে খারাপ দিকটাই অনুকরণ করে আমরা যেন “কাকের ময়ুর হওয়ার মত মেতে উঠেছি।
অথচ আল্লাহ তায়ালা কোরআন পাকে বলিয়াছেন-”তোমরা (মুসলমানরা) উত্তম সম্প্রদায়, যে সম্প্রদায়কে প্রকাশ করা হইয়াছে মানবমণ্ডলীর জন্য। তোমরা নেক কাজের আদেশ কর এবং মন্দ কাজ হইতে নিবৃত্ত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ।” (সূরা-আল ইমরান, ১১০ নং আয়াত, পারা-৪)।
আর এখন আল্লাহপাকের কথিত সেই মুসলমানেরা কোরআন ও হাদিসের আদর্শ ত্যাগ করে দুনিয়ার মধ্যে সব থেকে নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছে। তাই তারা পৃথিবীর সকল দেশেই উৎপীড়িত ও লাঞ্ছিত।
আমরা যদি আল্লাহর ও রাসূলের (দঃ) বাণীকে অনুকরণ ও অনুস্বরণ করে চলি, তা হলে নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের রহমতে আবার আমরা আমাদের গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস তৈরি করতে পারব।
যদি এই বাস্তবধর্মী উপন্যাসটি পড়ে বর্তমান যুব সমাজ সামান্যতমও জ্ঞান লাভ করে সেইমতো চলার প্রেরণা পায়, তবে নিজেকে ধন্য মনে করব।
আমার এই প্রাণ প্রিয় উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশ পায় ১৯৮৬ইং সালে এবং প্রথম সংস্করণেই বাংলাদেশ ও ভারতের পাঠক সমাজে আশাতীতভাবে সমাদৃত হয়। এ জন্য আমি আল্লাহপাকের দরবারে শতকোটি শুকরিয়া আদায় করছি এবং সেই সংগে আমার প্রিয় পাঠকবর্গের কাছে অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ওয়াস সালাম
কাসেম বিন আবুবাকার
২০ই পৌঁষ- ১৪০৩ বাংলা
২৩শে শাবান- ১৪১৭ হিজরী
৩রা জানুয়ারী ১৯৯৭ ইং