একটা একটা করে মিনিট যাচ্ছে আর ক্রমশ বড় হচ্ছে উড়ে আসা জঞ্জালের মাপ। শুরুতে শুধু ছোট ছোট ডালপালা আর কাঠকুটো উড়ে আসছিল হাওয়ার মুখে, তাদের জায়গায় এখন পাক খেতে খেতে ধেয়ে আসছে গোটা গোটা নারকেল গাছ আর আস্ত সব গাছের গুঁড়ি। ঝড়ের তেজ বাড়তে বাড়তে এমন একটা জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, যে এক সময় পিয়া দেখল গোটা একটা দ্বীপ যেন উড়ে যাচ্ছে মাথার ওপর দিয়ে। বস্তুটা আসলে আর কিছুই না, জঙ্গলের একগোছা গাছ, জটপাকানো শেকড়-বাকড়ে একসঙ্গে জড়ানো। হঠাৎ ফকিরের হাত শক্ত হয়ে চেপে বসল ওর কাঁধের ওপর। এক নজর তাকিয়ে পিয়া দেখল মাথার ওপর বনবন করে পাক খাচ্ছে একটা চালাঘর। চালাটাকে দেখেই চিনতে পারল পিয়া। গর্জনতলার জঙ্গলের ভেতরে যে মন্দিরের কাছে ফকির একবার ওকে নিয়ে গিয়েছিল, ওটা সেই মন্দিরটা। ওদের চোখের সামনে টুকরো টুকরো হয়ে গেল বাঁশের কাঠামোটা, মূর্তিগুলো ছিটকে উড়ে গেল হাওয়ার সঙ্গে।
ঝড়ের তাণ্ডব বাড়ার সাথে সাথে সামনের গাছ আর পেছনে ফকিরের মাঝখানে আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যেতে থাকল পিয়ার শরীর। যে ডালের ওপর ওরা বসেছিল সেটা গাছের গুঁড়ির আড়াল করা দিকটায়, হাওয়া যেদিক থেকে আসছে তার উলটোদিকে। মানে, ডালের ওপর দু’দিকে দুই পা ছড়িয়ে হাওয়ার দিকে মুখ করে বসেছিল পিয়া আর ফকির গুঁড়ির ছায়ার’ আড়ালে। এভাবে না বসলে এতক্ষণে ঝড়ের সাথে উড়ে আসা আবর্জনার ধাক্কায় থেঁতলে যেত ওরা দু’জন। যতবার একটা করে ডাল ভাঙছে অথবা উড়ন্ত কোনও কাঠকুটো এসে ধাক্কা খাচ্ছে গাছের গায়ে, সারাটা শরীর ঝনঝন করে উঠছে পিয়ার। মাঝে মাঝে একেকটা ধাক্কায় মড়মড় করে কেঁপে উঠছে গাছটা, আর কোমরে বাঁধা পাকানো শাড়িটা চামড়ার মধ্যে যেন কেটে বসে যাচ্ছে। কাপড়টা না থাকলে অনেক আগেই হাওয়ায় ওদের উড়িয়ে ফেলে দিত গাছের ডাল থেকে।
পিয়ার পেটের কাছটায় দু’হাতে ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে ফকির। মুখটা রেখেছে ওর ঘাড়ের ওপর। ঘাড়ের কাছে ফকিরের দাড়ির ঘষা টের পাচ্ছে পিয়া। খানিক বাদে পিয়ার শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ মিলে গেল ওর বুকের ছন্দের সঙ্গে, ফকিরের পেটের ওঠা-নামার চাপের সাথে সাথে উঠতে নামতে লাগল পিয়ার পিঠের নীচের দিকের গড়ানে জায়গাটা। দু’জনের গায়ের খোলা অংশ যেখানে যেখানে পরস্পরকে ছুঁয়েছে, দুটো শরীরকে সেখানে জুড়ে রেখেছে পাতলা একটা ঘামের পর্দা।
হঠাৎ যেন আরও বেড়ে গেল ঝড়ের আওয়াজ; তার ঠিক পরেই বাতাসের গোঁ গোঁ শব্দকে ছাপিয়ে কানে এল অন্য একটা গর্জন–খানিকটা জলপ্রপাতের গর্জনের মতো। আঙুলের ফাঁক দিয়ে এক ঝলক তাকিয়ে পিয়া দেখল নদীর ভাটির দিক থেকে বিশাল দেওয়ালের মতো কী যেন একটা প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসছে ওদের দিকে। ঠিক যেন শহরের একটা ব্লক হঠাৎ নড়েচড়ে উঠে চলতে শুরু করে দিয়েছে-নদীটা যেন তার পায়ের কাছে শুয়ে থাকা ফুটপাথ, আর তার মাথাটা জঙ্গলের সবচেয়ে বড় গাছগুলোকেও ছাড়িয়ে উঠে গেছে অনেক উঁচুতে। জলোচ্ছ্বাস! জলোচ্ছ্বাস আসছে সমুদ্র থেকে, ভয়ানক গর্জন করতে করতে সামনের সমস্ত কিছুকে আড়াল করে ধেয়ে আসছে ওদের দিকে। চোখের সামনে অবিশ্বাস্য ঘটনাটা দেখতে দেখতে হঠাৎ এক ঝলকে ব্যাপারটা যেই বুঝতে পারল পিয়া, সঙ্গে সঙ্গে মাথার ভেতরটা যেন খালি হয়ে হয়ে গেল। এতক্ষণ পর্যন্ত ভয় পাওয়ারই কোনও সময় পায়নি ও, কোনওরকমে প্রাণটা বাঁচিয়ে রাখার জন্যই এত ব্যস্ত ছিল যে ঝড়ের বাস্তবতাটাকে উপলব্ধি পর্যন্ত করে উঠতে পারেনি, কিন্তু এবার যেন মৃত্যু স্পষ্ট ঘোষণা করে দিল তার আগমনবার্তা, সে অমোঘ পরিণতির জন্য শুধু অপেক্ষা করে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এখন। ভয়ে অসাড় হয়ে গেল পিয়ার আঙুলগুলো। ফকির ওর হাতদুটো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে গাছের গায়ে শক্ত করে চেপে না ধরলে গুঁড়িটা ও হয়তো ধরেই থাকতে পারত না। পিয়া টের পেল ফকিরের বুকটা ফুলে উঠছে–লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিচ্ছে ফকির। দেখাদেখি পিয়াও যতটা পারে বাতাস টেনে নিল বুকের মধ্যে।
তারপর একটা বাঁধ যেন ভেঙে পড়ল ওদের মাথার ওপর। তীব্র গতিতে নেমে আসা জলের চাপে বেঁকে প্রায় দু’ভঁজ হয়ে গেল গাছের গুঁড়িটা। ফকিরের দু’হাতের বেষ্টনীতে আটকা অবস্থায় পিয়া টের পেল ওদের দু’জনকে সুদ্ধ নুয়ে পড়ছে গাছটা; বাঁকতে বাঁকতে মাটি ছুঁয়ে ফেলল গাছের মাথা ওরা দু’জনে পা ওপরে মাথা নীচে অবস্থায় কোনওরকমে লেগে রইল তার গায়ে। ভয়ংকর ঘূর্ণি তুলে প্রচণ্ড গতিতে জল বয়ে চলেছে শরীরের চারপাশ দিয়ে; এমন তার টান, মনে হচ্ছে যেন টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে ওদের। একেকবার মড়মড় করে উঠছে গাছটার শেকড়, মনে হচ্ছে উথাল পাথাল ঢেউয়ের টানে যে-কোনও সময় উপড়ে চলে যাবে মাটি থেকে।
বুকের ওপর যে চাপ পড়ছিল তার থেকে পিয়া আন্দাজ করল অন্তত মিটার তিনেক জলের নীচে রয়েছে ওরা। যে শাড়ির বাঁধনকে একটু আগে ভগবানের আশীর্বাদের মতো মনে হচ্ছিল, সেটাই এখন যেন নোঙরের মতো নদীর তলায় আটকে রেখেছে ওদের। বাঁধন থেকে আলগা হয়ে জলের ওপরে উঠে একটু দম নেওয়ার জন্যে ফকিরের বজ্রমুষ্টি থেকে হাত ছাড়িয়ে নিল পিয়া, কাপড়ের গিটটা খোলার জন্যে চেষ্টা করতে লাগল প্রাণপণে। কিন্তু ওকে সাহায্য করার বদলে টান মেরে বাঁধন থেকে ওর হাতদুটো সরিয়ে দিল ফকির। ফকিরের সমস্ত শরীরের ওজন এখন পিয়ার ওপর, পিয়া যেখানে আছে সেখানেই ওকে আটকে রাখার জন্য সর্বশক্তি দিয়ে যেন ও লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু পিয়াও হাল ছেড়ে দিতে পারছে না কিছুতেই বুকের মধ্যে হাওয়া ফুরিয়ে এলে কারও পক্ষে স্থির হয়ে থাকা সম্ভব নয়।
তারপরেই হঠাৎ, ফকিরের হাতের বাঁধনের মধ্যে হাঁকুপাকু করতে করতেই, পিয়া টের পেল আস্তে আস্তে হালকা হয়ে আসছে জলের চাপ। ঢেউয়ের চূড়াটা পেরিয়ে গেছে ওদের, গাছটাও সোজা হতে শুরু করেছে। চোখ খুলে পিয়া দেখল ওপরে আলো দেখা যাচ্ছে, আবছা হলেও বোঝা যাচ্ছে। কাছে, আরও কাছে ক্রমশ এগিয়ে আসতে লাগল আলোটা, তারপর হঠাৎ, যখন পিয়ার মনে হচ্ছে বুকটা প্রায় ফেটে যাবে এবার, এক ঝটকায় সোজা হয়ে গেল গাছটা। সঙ্গে সঙ্গে ফকির আর পিয়ার মাথা উঠে এল জলের ওপরে। ঢেউয়ের মাথাটা ওদের পেরিয়ে যাওয়ার পর হাওয়ার চাপে জল খানিকটা নেমেছে, যদিও আগের জায়গায় পৌঁছয়নি এখনও। ওদের পায়ের সামান্য নীচ দিয়ে এখন বয়ে যাচ্ছে স্রোত।
বৃষ্টির ধারা তিরের মতো নেমে আসছে আকাশ থেকে। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসে গেস্ট হাউসের দিকে ছুটতে শুরু করল কানাই। জলের ফোঁটাগুলো যেন ছিটেগুলির মতো এসে লাগছে, গলন্ত ধাতুর মতো আছড়ে পড়ছে গায়ের ওপর। একেকটা ফোঁটা যেখানে মাটিতে এসে পড়ছে, ছোট্ট গর্ত হয়ে যাচ্ছে সে জায়গাটায়।
নীলিমার জানালায় কোনও আলো দেখা যাচ্ছে না। তাতে অবশ্য খুব একটা আশ্চর্য হল । কানাই; কারণ ট্রাস্টের জেনারেটরটা চালানো হয়নি সারাদিন, আর এই ঝড়ের হাওয়ায় লণ্ঠন জ্বালানো খুব একটা সোজা কাজ নয়।
দরজায় ধাক্কা দিল কানাই–”মাসিমা! ঘরে আছ নাকি?”
মিনিটখানেক কেটে গেল, কারও সাড়া নেই।
দুম দুম করে আবার দরজায় ঘা দিল কানাই–”মাসিমা! আমি এসেছি গো, আমি কানাই।” দরজার ওপারে হাতড়ে হাতড়ে নীলিমা ছিটকিনি খোলার চেষ্টা করছে, শুনতে পেল কানাই। চেঁচিয়ে বলল, “সাবধানে, খুব সাবধানে খুলবে কিন্তু।”
খুব একটা লাভ হল না কানাইয়ের সাবধানবাণীতে। ছিটকিনি ভোলা মাত্রই হাওয়ার টানে ছিটকে খুলে গেল পাল্লাটা, দড়াম করে গিয়ে ধাক্কা মারল দেওয়ালে। একগাদা ফাইল হুড়মুড় করে পড়ে গেল তাকের ওপর থেকে, আর একরাশ কাগজপত্র পাক খেয়ে উড়তে লাগল ঘরের মধ্যে। একটু টাল খেয়ে পিছিয়ে গিয়ে মচকে যাওয়া হাতটা ঝাড়তে লাগল নীলিমা। কানাই তাড়াতাড়ি দরজাটা বন্ধ করে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে বিছানায় বসাল।
“খুব জোরে লেগেছে? ব্যথা করছে খুব?”
“তেমন কিছু না রে। ঠিক হয়ে যাবে এক্ষুনি,” কোলের ওপর হাতদুটো জড়ো করে বসল নীলিমা। “তোকে দেখে আমার কী যে শান্তি হল না রে কানাই… ভীষণ চিন্তা হচ্ছিল তোর জন্যে ।”
“কিন্তু তুমি এখনও এখানে বসে রয়েছ কেন?” কানাইয়ের গলায় উদ্বেগের সুর। “এক্ষুনি গেস্ট হাউসের দোতলায় উঠে যাওয়া উচিত তোমার।”
“কেন রে?”
“নদী একেবারে টাপুস-টুপুস ভরে রয়েছে। যে-কোনও সময়ে সব ভাসিয়ে দেবে,” কানাই বলল। “তখন তো আটকে যাবে তুমি এখানে। জল সেরকম বাড়লে তো এখানেও এসে উঠবে, তাই না?” চারপাশে তাকিয়ে ঘরের জিনিসপত্রগুলি একবার ভাল করে দেখে নিল কানাই। “তোমার সবচেয়ে জরুরি জিনিসপত্র এখানে কী কী আছে বলো দেখি, সব জড়ো করি এক জায়গায়। কিছু আমরা ওপরে নিয়ে চলে যাব, আর বাকি যা থাকবে খাটের ওপরে রেখে দেব। খাটটা উঁচুই আছে, এতদূর জল উঠবে বলে মনে হয় না।”
গোটা দুই সুটকেস টেনে বের করল নীলিমা। দুজনে মিলে হাত লাগিয়ে ফাইল-টাইল আর কাগজপত্রগুলো একটার মধ্যে ভরে ফেলল। আর অন্যটার মধ্যে নিল কয়েকটা জামাকাপড় আর কিছু চাল, ডাল, চিনি, তেল আর চা।
“এবার তোয়ালে-টোয়ালেগুলো ভাল করে গায়ে মাথায় মুড়ে নাও দেখি,”কানাই বলল। “প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়ছে। দরজা থেকে বেরিয়ে ওপাশের সিঁড়ি পর্যন্ত যেতে যেতেই পুরো ভিজে যাব আমরা।”
তৈরি-টৈরি হয়ে সুটকেস দুটো প্রথমে বের করে দিল নীলিমা, তারপর নিজে বেরিয়ে এল। আরও কালো হয়ে গেছে আকাশটা, প্রচণ্ড বৃষ্টির তোড়ে কাদা কাদা হয়ে গেছে মাটি। দরজাটা টেনে বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দিল কানাই। সুটকেস দুটো তুলে নিল দু’হাতে। এক হাতে ওর কনুইটা ধরে আস্তে আস্তে নীলিমা এগোতে লাগল সিঁড়ির দিকে।
সিঁড়িঘর পর্যন্ত পৌঁছতে পৌঁছতেই কাকভেজা হয়ে গেল দুজনে। তবে তোয়ালে জড়ানো থাকায় নীলিমার গা-মাথা পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি বৃষ্টির জল। তোয়ালেগুলো গা থেকে খুলে ভাল করে নিংড়ে নিয়ে তারপর সিঁড়িতে পা দিল নীলিমা। গেস্ট হাউসে গিয়ে ঢুকতেই মনে হল হঠাৎ করে যেন কমে গেছে ঝড়টা। জানালা-টানালাগুলো শক্ত করে বন্ধ থাকায় ঝড়ের আওয়াজ কানে আসছে, কিন্তু বাতাসের ঝাঁপটাটা আর টের পাওয়া যাচ্ছে না। শক্তপোক্ত চার দেওয়ালের আড়াল থেকে সে আওয়াজ শুনতে কিন্তু মন্দ লাগছে না খুব একটা।
সুটকেসগুলো মেঝেতে রেখে নীলিমার কাছ থেকে একটা নিংড়ানো তোয়ালে নিয়ে নিল কানাই। মাথাটা ভাল করে মুছে নিয়ে গা থেকে টেনে খুলে ফেলল কাদামাখা শার্টটা। তোয়ালেটা জড়িয়ে নিল খালি গায়ের ওপর।
নীলিমা এর মধ্যে ডাইনিং টেবিলের একটা চেয়ারে গিয়ে বসে পড়েছে। জিজ্ঞেস করল, “বাকিরা সব কোথায় গেল রে কানাই? পিয়া, ফকির ওরা সব?”
গম্ভীর হয়ে গেল কানাই। বলল, “পিয়া আর ফকিরকে আমরা খুঁজে পাইনি মাসি। ওদের ছেড়েই চলে আসতে হয়েছে আমাদের। যতক্ষণ পারা যায় আমরা অপেক্ষা করেছিলাম, কিন্তু তারপর হরেন বলল এবার রওয়ানা হতেই হবে। কালকে আবার ফিরে গিয়ে ওদের খোঁজ করব।”
“তার মানে ওরা বাইরেই রয়ে গেছে এখনও?” নীলিমা জিজ্ঞেস করল। “এই ঝড়ের মধ্যে?”
মাথা নাড়ল কানাই। “হ্যাঁ। কিছুই করা গেল না।”
“আশা করি–” কথাটা আর শেষ করল না নীলিমা। মাঝখান থেকে কানাই বলল, “আরও একটা খারাপ খবর তোমাকে দেওয়ার আছে।”
“কী খবর?”
“নোটবইটা।”
“মানে? কী হয়েছে নোটবইটার?” অজানা আশঙ্কায় নীলিমা সোজা হয়ে বসল।
টেবিলটা ঘুরে মাসির পাশে গিয়ে বসল কানাই। বলল, “আজকে সকালে পর্যন্ত ওটা সঙ্গে ছিল আমার। ভাল করে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়ে এখানে নিয়ে আসছিলাম। কিন্তু জলের মধ্যে পিছলে পড়ে গেলাম একবার, আর আমার হাত ফসকে ভেসে চলে গেল ওটা।”
হাঁ করে রইল নীলিমা। মুখ দিয়ে কথা সরল না।
“আমার যে কী খারাপ লাগছে তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না মাসি,” বলল কানাই। “যদি পারতাম কিছুতেই ওটাকে ভেসে যেতে দিতাম না, বিশ্বাস করো।”
মাথা নাড়ল নীলিমা। সংযত করে নিল নিজেকে। শান্ত গলায় বলল, “জানি। এর জন্য দোষ দিস না নিজেকে। কিন্তু নোটবইটা কি পড়া হয়ে গিয়েছিল তোর?”
“হ্যাঁ।” মাথা নাড়ল কানাই।
ওর দিকে চেয়ে রইল নীলিমা। বলল, “কী লেখা ছিল রে?”
“নানা বিষয়ে অনেকরকম কথা,” জবাব দিল কানাই। “ইতিহাস, কবিতা, জিওলজি–বিভিন্ন বিষয়। তবে প্রধানত ছিল মরিচঝাঁপির কথা। গোটা নোটবইটা একটানা দেড়দিনে লিখেছিল মেসো–গোটা একটা দিন আর একটা রাতের অর্ধেকের বেশি সময় ধরে। মনে হয় হামলা শুরু হওয়ার জাস্ট ঘণ্টা কয়েক আগে শেষ করেছিল লেখাটা।”
“হামলার কথা তার মানে কিছু ছিল না?”
“না,” বলল কানাই। “ততক্ষণে ওটা হরেনকে দিয়ে দিয়েছিল মেসো। হরেন তার পরে পরেই ফকিরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল মরিচঝাঁপি ছেড়ে। ভাগ্যিস চলে এসেছিল ওরা; নোটবইটাও বেঁচে গিয়েছিল তাই।”
“কিন্তু একটা কথা আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, জানিস? ওর স্টাডিতে ওটা এল কী করে?”
“সে আরেক অদ্ভুত গল্প,” কানাই বলল। “হরেন নাকি আমাকে পাঠাবে বলে ভাল করে প্লাস্টিকে মুড়ে যত্ন করে রেখেছিল নোটবইটা। কিন্তু একদিন হঠাৎ কী করে ওটা হারিয়ে গেল। তারপর এই কদিন আগে নাকি আবার পাওয়া গিয়েছিল। হরেন প্যাকেটটা ময়নার হাতে দিয়ে দিয়েছিল, আর ময়না নাকি চুপিচুপি গিয়ে রেখে এসেছিল স্টাডিতে।”
চুপ করে গেল নীলিমা। ভাবতে লাগল। খানিক পরে বলল, “একটা কথা আমাকে বল তো কানাই, নোটবইটা আমাকে কেন দেয়নি সে বিষয়ে কিছু লিখেছিল নির্মল?”
“সেরকম স্পষ্ট করে কিছু লেখেনি। তবে আমার মনে হয়, মেসো ভেবেছিল এ ব্যাপারে তোমার সহানুভূতি বিশেষ পাবে না,” জবাব দিল কানাই।
“সহানুভূতি?’ রেগেমেগে চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে শুরু করল নীলিমা। “কানাই, সহানুভূতি ছিল না ব্যাপারটা তা ঠিক নয়। ঘটনা হল আমার সহানুভূতির লক্ষ্যটা ছিল অনেকটা ছোট। আমি জানি, সারা পৃথিবীর সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা মোচনের ক্ষমতা আমার নেই। একটা ছোট জায়গার ছোট ছোট কিছু সমস্যার সমাধান যদি করতে পারি সেই আমার কাছে অনেক। আমার জন্য সেই ছোট জায়গাটা হল লুসিবাড়ি। আমার পক্ষে যতটা দেওয়া সম্ভব আমি এই লুসিবাড়িকে দিয়েছি, আর এতগুলি বছর পরে তার কিছু ফল তো ফলেছে কিছুটা তো সাহায্য হয়েছে মানুষের; সামান্য কয়েকটা হলেও, কিছু পরিবারের একটু ভাল তো করা গেছে। কিন্তু নির্মলের কাছে সেটা যথেষ্ট ছিল না। ওর কথা ছিল হয় পুরোটা পালটাতে হবে, নয়তো কিছুই না। শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াল নিজে–সেই ‘কিছুই না’-তেই।”
“সে তুমি যদি নোটবইটার কথা বাদ দাও তা হলে,” মাসিকে সংশোধন করে দিল কানাই। “এই একটা কাজের কাজ তো করে যেতে পেরেছিল মেলো৷”
“সেটাও তো রইল না আর,” বলল নীলিমা।
“না,” বলল কানাই। “পুরোটা রইল না। তবে বেশ খানিকটাই থেকে গেছে আমার মাথার মধ্যে। যতটা পারি সেটাকে গুছিয়ে লিখে ফেলার চেষ্টা করব আমি।”
কানাইয়ের চেয়ারের পেছনে হাত রেখে ওর চোখের দিকে তাকাল নীলিমা। আস্তে আস্তে বলল, “এই লেখাটা লেখার সময় আমার কথাগুলোও তাতে রাখবি তো কানাই?”
মানেটা বুঝে উঠতে পারল না কানাই। বলল, “বুঝতে পারলাম না ঠিক।”
“কানাই, স্বপ্ন যারা দেখে তাদের হয়ে কথা বলার জন্যে লোকের অভাব হয় না,” নীলিমা বলল। “কিন্তু যারা ধৈর্য ধরতে জানে, যারা মনকে শক্ত করে কাজ করতে পারে, যারা কোনও একটা জিনিস গড়ে তোলার চেষ্টা করে–তাদের কাজের মধ্যে কি আর কাব্য কবিতা খুঁজে পাওয়া যায়, কী বল?”
কেমন নরম হয়ে এল কানাইয়ের মনটা নীলিমার এই সরাসরি অনুরোধ শুনে। বলল, “আমি পাই মাসি। তোমার মধ্যে আমি…” ডাইনিং টেবিলটা হঠাৎ খটখট করে নড়ে উঠতে কথাটা শেষ না করেই থেমে গেল কানাই। ঝড়ের শব্দকে ছাপিয়ে দূরে কোথাও থেকে শো শো করে একটা আওয়াজ ভেসে এল সঙ্গে সঙ্গে।
জানালার কাছে গিয়ে খড়খড়ির ফাঁক দিয়ে বাইরে তাকাল কানাই। “জলোচ্ছ্বাস! নদীর খাত ধরে এইদিকেই আসছে সোজা।”
জলের একটা দেওয়াল প্রচণ্ড বেগে ধেয়ে আসছে ওদের দিকে। বাঁধের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সে দেওয়ালের পাশ বরাবর জলকণার একটা বিশাল মেঘ ছিটকে উঠছে শূন্যে। গোটা দ্বীপটা কাত হয়ে যাওয়া প্লেটের মতো আস্তে আস্তে জলে ভরে উঠছে, চোখের সামনে বিশাল ঢেউটা ক্রমশ ঘিরে ফেলেছে লুসিবাড়িকে। আতঙ্ক বিস্ফারিত চোখে কানাই আর নীলিমা দেখতে লাগল জল বাড়ছে, বেড়েই চলেছে সমানে–একটা একটা করে ডুবে যাচ্ছে নীলিমার ঘরে ওঠার সিঁড়ির ধাপগুলো। অবশেষে ঘরের দরজার ঠিক নীচে পৌঁছনোর পর বন্ধ হল জল বাড়া।
“এই জল জমি থেকে হেঁচে বের করতে তো অনেকদিন লেগে যাবে, তাইনা?” জিজ্ঞেস করল কানাই।
“তা যাবে, কিন্তু তার থেকেও জরুরি হল মানুষের প্রাণ।” ঘাড় কাত করে হসপিটালটা দেখার চেষ্টা করল নীলিমা। বানের জল দেখার জন্যে ঝড় উপেক্ষা করে লোকে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিনতলার বারান্দায়।
“সাইক্লোন শেল্টারটার জন্যে কত লোক প্রাণে বেঁচে গেল বল তো?” নীলিমা বলল। “নির্মল প্রায় জোর করে আমাদের দিয়ে বানিয়েছিল ওটা। জিওলজি আর আবহাওয়ার ব্যাপারে অদ্ভুত একটা ইন্টারেস্ট ছিল তো ওর; নির্মল না-বললে ওটা বানানোর কথা মাথায়ই আসত না আমাদের।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ,” বলল নীলিমা। “সারা জীবনে ও যা যা করেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট হল এই কাজটা আমাদের দিয়ে এই সাইক্লোন শেল্টারটা বানানো। তার প্রমাণ তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছিস এখন। কিন্তু এই কথাটা যদি নির্মলকে বলা হত, হেসেই উড়িয়ে দিত ও। বলত এ তো এমনি সমাজসেবা, বিপ্লব তো আর নয়।”
ঝড়ের কেন্দ্রটা যে মাথার ওপর এসে পড়েছে তার প্রথম সংকেত পাওয়া গেল যখন বাতাসের আওয়াজটা কমে গেল হঠাৎ করে। শব্দটা কিন্তু থেমে যায়নি একেবারে, একটু পিছিয়ে গেছে মাত্র। আর তার সঙ্গে সঙ্গে কমে গেছে হাওয়ার তেজ। একটা সময় মনে হল পুরোপুরি স্থির হয়ে গেছে বাতাস। চোখ মেলল পিয়া। যা দেখল তাতে একেবারে অভিভূত হয়ে গেল। পাক খেয়ে আকাশে উঠে যাওয়া কুয়োর মতো একটা ঘূর্ণায়মান সুড়ঙ্গের ঠিক ওপরে ঝকঝক করছে থালার মতো গোল চাঁদ। ঘুরন্ত সেই পাইপের ভেতরের দিকটা চকচক করছে চাঁদের আলো পড়ে, জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাচ্ছে উথাল পাথাল ঝড়ের স্থির কেন্দ্রবিন্দু।
চারপাশে যতদূর চোখ যায়, পুরু হয়ে বিছিয়ে আছে ঝরা পাতার গালিচা, তার নীচে নদী প্রায় চোখেই পড়ে না। জলের ঢেউ, ঘূর্ণি, স্রোত–সবকিছু ঢাকা পড়ে গেছে সেই সবুজ আস্তরণে। পুরো দ্বীপটাই প্রায় তলিয়ে গেছে জলের নীচে; কিছু গাছের সবচেয়ে উঁচু যে কয়েকটা ডালপালা জলের ওপরে জেগে আছে, তাই দেখে কোনওরকমে আন্দাজ করা যাচ্ছে দ্বীপের সীমানা। গাছগুলোকেও কেমন যেন কঙ্কালের মতো দেখাচ্ছে, বেশিরভাগেরই শাখা-প্রশাখা আর কিছু অবশিষ্ট নেই। ডালের সঙ্গে লেগে থাকা পাতা তো চোখেই পড়ে না প্রায়। বহু গাছ আধখানা হয়ে ভেঙে গেছে; মুচড়ে যাওয়া খোঁটার মতো দেখাচ্ছে তাদের।
একখানা সাদা মেঘ ভাসতে ভাসতে এসে জলের ওপর জেগে থাকা ডালপালাগুলির ওপরে নামল। মেঘটা আসলে এক ঝাক সাদা পাখি–এত ক্লান্ত, যে পিয়া আর ফকিরকে দেখে ভয় পাওয়ার শক্তিটুকু পর্যন্ত চলে গেছে ওদের। শাড়ির বাঁধনটা আলগা করে দু’হাতে গুঁড়িটার গায়ে চাপ দিয়ে হাত-পা ছাড়িয়ে নিল পিয়া। তারপর সামনে বসে-থাকা একটা পাখিকে ধরে ফেলল হাত বাড়িয়ে। থরথর করে কাঁপছিল পাখিটা, ছোট্ট বুকের ধুকপুকটুকু হাতে টের পাচ্ছিল পিয়া। বোঝা যাচ্ছে পাখিগুলো ঝড়ের চোখটার মধ্যেই থাকতে চাইছে। কত দূর থেকে উড়ে এসেছে ওরা? কল্পনাও করতে পারল না পিয়া। পাখিটাকে ছেড়ে দিয়ে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে বসল ও।
ফকির দেখা গেল এর মধ্যে ডালটার ওপর ব্যালান্স করে দাঁড়িয়ে পড়েছে, সোজা হয়ে খিল ছাড়াচ্ছে পায়ের। কেমন যেন একটু ব্যস্ত ভাব ওর চোখেমুখে, মনে হচ্ছে যেন অন্য কোনও ডালে গিয়ে ওঠা যায় নাকি চারদিকে তাকিয়ে সেটা দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেরকম ডাল কোথায়? এখন যেটার ওপর ওরা রয়েছে সেটা ছাড়া এ গাছের একটা ডালও আস্ত নেই আর।
হঠাৎ উবু হয়ে বসে পড়ল ফকির। পিয়ার হাঁটু ছুঁয়ে, প্রায় বোঝাই যায় না এরকম ছোট্ট একটা ইশারা করল। ওর আঙুল বরাবর তাকিয়ে পিয়া দেখল দ্বীপের অন্যদিকে, দূরে আরেকটা ঝোঁপড়ার কাছে, একটা বাঘ হেঁচড়ে হেঁচড়ে জল থেকে উঠে গাছে চড়ার চেষ্টা করছে। বাঘটাও মনে হল পাখিগুলোর মতোই ঝড়ের চোখটার সঙ্গে সঙ্গে চলছে, আর যখনই সুযোগ পাচ্ছে বিশ্রাম নিয়ে নিচ্ছে একটু। ফকির আর পিয়া যখন বাঘটাকে দেখল, ঠিক সেই মুহূর্তেই ও-ও নজর করল ওদের। কয়েকশো মিটার দূর থেকেও বোঝা যাচ্ছিল জানোয়ারটা কী বিশাল; গাছটা যে ওর ভারে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে না সেটাই আশ্চর্যের। একবারও চোখের পলক না ফেলে মিনিট কয়েক ওদের দিকে তাকিয়ে রইল বাঘটা–সমস্ত শরীর স্থির, শুধু লেজের ডগাটা একটু একটু নড়ছে। পিয়ার মনে হল লোমশ শরীরটার ওপর যদি হাত রাখা যেত, তা হলে বাঘটার বুকের ধকধকও নিশ্চয়ই হাতে টের পেত ও।
ঝড়টা আবার ফিরে আসছে কি? বাঘটা মনে হল সেরকমই কিছু একটা আন্দাজ করেছে। কারণ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন দিকে তাকিয়েই ও গাছ থেকে আবার নেমে পড়ল জলে। হাঁড়ির মতো মাথাটা কয়েক মিনিট জলের ওপর ভাসতে ভাসতে চলল, আর তারপরেই আস্তে আস্তে কমে এল চাঁদের আলো, সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের গর্জনে সব আওয়াজ ঢাকা পড়ে গেল আবার।
তাড়াতাড়ি ঘুরে গিয়ে ডালের দু’দিকে পা ঝুলিয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেল পিয়া। গুঁড়ির দিকে মুখ করে বসার পর দু’জনে মিলে পাকানো শাড়িটা দিয়ে আবার বেড় দিল গাছটাকে। তারপর শাড়ির দু’ মুখ এক জায়গায় এনে শক্ত করে গিট বাঁধল ফকির। কোনওরকমে গুছিয়ে বসতে না বসতেই ঝড়টা ফের এসে পড়ল ওদের ওপর। হঠাৎই আবার ছিটকে আসা ডালপালা আর কাঠকুটোয় ভরে উঠল চারদিক।
কিন্তু কিছু একটা মনে হচ্ছে পালটে গেছে। পরিবর্তনটা কী সেটা ধরতে কয়েক মিনিট সময় লাগল পিয়ার। হাওয়ার দিক বদলে গেছে। এবারে উলটো দিক থেকে আসছে ঝড়। আগেরবার যেখানে গাছের গুঁড়িটা পিয়াকে আড়াল করে রেখেছিল, এবার তার জায়গায় আড়াল বলতে শুধু ফকিরের শরীরটা। এইজন্যেই কি ফকির অন্য কোনও গাছে অন্য ডাল খুঁজছিল তখন? ও কি তা হলে বুঝতে পেরেছিল যে ঝড়ের চোখটা পেরিয়ে গেলে এই ডালের ওপর ওর শরীর দিয়েই আড়াল করতে হবে পিয়াকে? ফকিরের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ওকে টেনে নিজের সামনের দিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করল পিয়া, যাতে এবার ঝড়ের মুখ থেকে ও-ই আড়াল করতে পারে ফকিরকে। কিন্তু এতটুকু নড়ানো গেল না ওকে। ফকিরের নিজের শক্তি ছাড়াও এখন হাওয়ার চাপটাও আছে পেছন থেকে, ফলে ওর হাত থেকে পিয়া ছাড়াতেই পারল না নিজেকে। এত কাছাকাছি, প্রায় একসঙ্গে মিশে আছে ওদের শরীরদুটো যে ফকিরের গায়ে প্রত্যেকটা আঘাতের ধাক্কা নিজের শরীরে টের পাচ্ছে পিয়া–ধুপধাপ করে ফকিরের পিঠে এসে লাগা প্রতিটা চোট বুঝতে পারছে ও। ফকিরের গালের হাড়গুলোর ছোঁয়া স্পষ্ট অনুভব করা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে কেউ যেন সুপারইম্পোজ করে সেগুলো লাগিয়ে দিয়েছে পিয়ার নিজের গালের ওপর। জীবন যা দিতে পারেনি, সেটাই যেন ওদের দিয়ে গেল এই ঝড়–একসঙ্গে দু’জনকে মিলিয়ে দিয়ে এক করে দিল ওদের।