নোঙর

সন্ধ্যার পড়ন্ত আলোয় বড় একটা খাঁড়ির মুখে এসে পৌঁছল ফকিরের ডিঙি। আবছা আঁধারে কয়েক কিলোমিটার দূরের ডাঙা প্রায় দেখাই যায় না। খাঁড়ির মাঝ বরাবর তাকিয়ে পিয়ার নজরে এল কিছু একটা নোঙর করা রয়েছে। মনে হল যেন বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা কিছু জলের ওপর ভাসছে। দূরবিন চোখে লাগিয়ে পিয়া দেখল জিনিসটা আর কিছুই না, গোটা ছয়েক মাছ-ধরা নৌকো জড়ো হয়ে রয়েছে এক জায়গায়। নৌকোগুলো আকারে আয়তনে অবিকল ওদের ডিঙিটার মতো একটার সঙ্গে আরেকটা পাশাপাশি দড়ি দিয়ে বাঁধা। এদিকে ওদিকে আরও কতগুলো দড়িদড়া নেমে গেছে জলের ভেতর, বোধ হয় স্রোতের মুখে নৌকোগুলোকে এক জায়গায় ভাসিয়ে রাখার জন্য। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকেও দুরবিন দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পেল পিয়া নৌকোর ওপর চলে ফিরে বেড়াচ্ছে লোকজন। কয়েকজন একা একা বসে বিড়ি ফুকছে, অন্যরা কেউ চা খাচ্ছে, অনেকে আবার গোল হয়ে বসে তাস পেটাচ্ছে। দু-এক জনকে দেখা গেল কাপড় কাঁচছে, বাসন মাজছে, বা স্টিলের বালতি করে জল তুলছে নদী থেকে। ঠিক মাঝখানের একটা নৌকো থেকে ধোঁয়া উঠছে পাকিয়ে পাকিয়ে। ওটাতেই নিশ্চয়ই রান্না-বান্নার ব্যবস্থা। দৃশ্যটা খুব পরিচিত পিয়ার, কিন্তু পুরো ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত। মেকং কি ইরাবড়িতেও ও দেখেছে ঠিক এইভাবেই সন্ধে নামে নদীর ধারের গ্রামগুলোতে। অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে সেখানেও এইরকম মন্থর ধোঁয়ার কুন্ডলী পাক খেতে খেতে হারিয়ে যায় আবছা আলোয়, গাঁয়ের লোকজন পা চালিয়ে এগোতে থাকে নদীর দিকে, সারাদিনের ধুলোময়লা ধুয়ে রাতের বিশ্রামের জন্য তৈরি হয়। সময় একদিকে যেমন দ্রুত কাটতে থাকে, অন্যদিকে আবার মনে হয় কালের গতি যেন থমকে থেমে গেছে হঠাৎ। কিন্তু ঠিক সেইরকম গ্রামই এখানে ডাঙা ছেড়ে নেমে এসেছে মাঝনদীতে। কেন?

ডিঙিগুলো চোখে পড়তেই ফুর্তিতে চেঁচিয়ে উঠল টুটুল। তারপর কী সব বকবক করতে লাগল বাপের সঙ্গে। নিশ্চয়ই ওরা চিনতে পেরেছে নৌকোগুলোকে। হয়তো ওদেরই বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনরা আছে ওখানে। এত বছর ধরে নদীতে নদীতে জেলেদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে একটা জিনিস বুঝেছে পিয়া–নিজেদের এলাকার মধ্যে এই সব জেলে বা মাঝিরা প্রত্যেকে প্রত্যেককে চেনে, জানে। মোটামুটি নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় ফকিররা ওই নৌকোর দঙ্গলের লোকজনদের ভালই চেনে, আর একবার ওখানে গিয়ে পৌঁছতে পারলে আদরযত্নেরও অভাব হবে না। আজকে রাতের বিশ্রামটা ওখানেই হবে বোঝা যাচ্ছে। স্নান টান সেরে বন্ধুবান্ধবদের কাছে সারাদিনের অভিজ্ঞতা গল্প করবে ফকির, হয়তো বলবে “দেখো কাকে নিয়ে এসেছি আমাদের সঙ্গে।” হয়তো শুরু থেকেই এখানে এসে রাত কাটানোর পরিকল্পনা ছিল ফকিরের। সেইজন্যই হয়তো নৌকোটা ও এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। কে জানে!

বাঁকের মুখে ডিঙিটা ঘুরতেই আরও নিশ্চিত হয়ে গেল পিয়া। এর পরের কয়েকটা ঘণ্টা কীভাবে কাটবে ভাবতে লাগল। এইরকম অভিজ্ঞতা তো আর ওর কাছে নতুন কিছু নয়। সার্ভের কাজে বছরের পর বছর নদীতে নদীতে কাটিয়েছে ও, এই রকম জেলেদের সঙ্গে। কতবার এরকম অদ্ভুত অদ্ভুত জায়গায় গিয়ে রাতের জন্য নোঙর ফেলেছে ওদের নৌকো। এখন পর পর কী ঘটবে চোখ বুজে বলে দিতে পারে পিয়া। ওকে দেখে প্রথমে কীরকম বিস্মিত হয়ে যাবে মানুষগুলো, তারপর শুরু হবে প্রশ্নের বন্যা–সবকটার জবাব দিতে হবে ফকিরকে, তারপর অভ্যর্থনার পালা। সে অভ্যর্থনার ভাষা না বুঝলেও জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে প্রত্যুত্তর দিতে হবে পিয়াকে। পুরো ব্যাপারটা ভেবেই গায়ে জ্বর এল পিয়ার। এমন নয় যে ওদের কাছ থেকে ওর কোনও বিপদের আশঙ্কা আছে–বরং এই জেলেদের মধ্যেই ও সবচেয়ে নিরাপদ, সেটা ও জানে কিন্তু ওই ভিড়ের মধ্যে এখন কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না ওর। তার চেয়ে ফকিরের এই ডিঙিতেই ওর নিজস্ব নিস্তব্ধতার দ্বীপটুকুর মধ্যে গা এলিয়ে চুপচাপ ভাসতে ভাসতে রাতটা কাটিয়ে দেওয়া অনেক আরামের হবে। ওর খুব ইচ্ছে করছিল ফকিরকে বলে এখানে না থেমে এগিয়ে যেতে, পাড়ের কাছে কোনও নিরাপদ জায়গা দেখে রাতের জন্য নৌকো বাঁধতে।

কিন্তু সে কথা তো আর ফকিরকে বলা যায় না, ভাষার ব্যবধান না থাকলেও পিয়া ওরকম বলতে পারত না। তাই ভীষণ আশ্চর্য হয়ে গেল পিয়া যখন ও দেখল যে ফকিরের নৌকো ওর যেদিকে ইচ্ছে সেদিকেই যাচ্ছে। একটু পরেই আরও পরিষ্কার বোঝা গেল ডিঙি ঘুরিয়ে নিয়েছে ফকির ওই নৌকোর ঝুঁকের দিক থেকে, পাড়ির ছায়ায় ছায়ায় বেয়ে নিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বাইরে নিজের মনের ভাব একটুও বুঝতে দিল না পিয়া, দূরবিন হাতে অভ্যস্ত ভঙ্গিতে নজর রেখে চলল জলের দিকে, কিন্তু ওর বুকের ভেতরটা যেন লাফিয়ে উঠল বাচ্চা ছেলে অযাচিত ল্যাবেঞ্চস হাতে পেলে যেরকম খুশি হয়ে ওঠে, ঠিক সেইরকম আনন্দ হল পিয়ার।

দিনের আলো মিলিয়ে যেতে একটা খালে নৌকো ঢুকিয়ে নোঙর ফেলল ফকির। স্রোতের টানে টানে মাটি সরে গিয়ে খালটা এখানে সুরক্ষিত একটা খাঁড়ির চেহারা নিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল আজ রাতে এর থেকে বেশি দূরে আর যাওয়া সম্ভব ছিল না ওদের পক্ষে, কিন্তু ফকিরের হাবভাব দেখে মনে হল ঠিক এই জায়গায় নৌকো বাঁধতে ও চায়নি। ও যেন মনে মনে অন্য কোনও জায়গার কথা ভেবে রেখেছিল। আর সেখানে পৌঁছতে পারেনি বলে যেন নিজের ওপরেই খানিকটা রেগে গেছে।

এবার বিশ্রামের সময়। সারাদিনে বিচিত্র অভিজ্ঞতার পর যেন একটা শ্লথ শ্রান্তির ছায়া নেমে এসেছে ডিঙির ওপর। কোমরের কষি থেকে দেশলাই বের করে কালচিটে একটা লক্ষ জ্বালাল ফকির। সেই আগুনে বিড়ি ধরিয়ে পাটায় বসে টানতে লাগল ফুকফুক করে। টানতে টানতে যখন ছোট্ট হয়ে এল বিড়িটা তখন সেটা নিভিয়ে উঠে পড়ল ও। ইশারায় পিয়াকে দেখিয়ে দিল নৌকোর পেছনের দিকে ছোট্ট চৌকোনো ঘেরা জায়গাটা–কী করে সামনে একটা পর্দা টেনে সেটাকে বাথরুমের মতো ব্যবহার করা যায়। পুরো ব্যাপারটা পিয়াকে পরিষ্কার করে বোঝানোর জন্যই যেন নদী থেকে এক বালতি লোনা জল তুলে সেই জলে টুটুলকে স্নান করাতে লাগল সাবান ঘষে ঘষে। একটা ক্যানেস্তারায় খানিকটা মিষ্টি জলও রাখা আছে দেখা গেল, মাঝে মাঝে তার থেকে একটু একটু করে নিয়ে সাবানের ফেনা ধুয়ে দিতে লাগল টুটুলের গা থেকে।

সূর্য ডোবার পর নদীর জোলো হাওয়ায় বেশ টের পাওয়া যাচ্ছিল শীতের কামড়। স্নানের পর ভিজে চুপ্পড় বাচ্চাটা ঠকঠক করে কাঁপছিল ঠান্ডায়। কোথা থেকে একটা চেক কাটা কাপড় বের করে ভাল করে ওর গা মুছিয়ে জামাকাপড় পরিয়ে দিল ফকির। লাল রঙের এই গা মোছার কাপড় আরও কয়েকটা রাখা ছিল নৌকোয়। পিয়ার আবছা মনে হল এরকম কাপড়ের টুকরো আগেও যেন ও দেখেছে, কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা কিছুতেই মনে পড়ল না।

এবার টুটুলের পালা তার বাবাকে স্নান করাবার। গায়ের সমস্ত জামাকাপড় খুলে শুধু একটা ল্যাঙোট পরে পাটাতনের ওপর বসল ফকির, আর নদী থেকে ঠান্ডা জল তুলে টুটুল ঢালতে লাগল ওর মাথায়। বাপকে স্নান করানোর ফুর্তিতে ওর খিলখিল হাসি আর চিৎকারে বেশ মজা লাগছিল পিয়ার। এত রোগা ফকির যে ওর খালি গায়ে পাঁজরের সবক’টা হাড় গোনা যায়। টিনের কৌটোর ওপর থেকে লেবেলটা ছিঁড়ে নিলে তার ঢেউখেলানো গা-টা যেমন দেখায় ফকিরের হাড় বের-করা শরীরটা দেখে ঠিক সেইরকম মনে হচ্ছিল। ওর সারা গা বেয়ে সরু আঁকাবাঁকা রেখার মতো গড়িয়ে পড়ছে জল, পাঁজরের হাড়ে ধাক্কা খেতে খেতে নেমে আসছে ছোটো ছোটো ঝরনার মতো।

বাপ-বেটার স্নান শেষ হল। এবার পিয়ার পালা। নদী থেকে এক বালতি জল তুলে রাখল ফকির, একটা শাড়ি টেনে দিল সামনে পর্দার মতো। কিন্তু এইটুকু ডিঙির ওপর নড়াচড়া করাই এক সমস্যা। দু’জনকে পাশ কাটিয়ে হেঁটে যাওয়া তো অসম্ভব। ছইয়ের নীচে প্রায় বুকে হেঁটে কনুইয়ে ভর দিয়ে ওদের একদিক থেকে আরেক দিকে যেতে হচ্ছিল। ফকিরকে এক হাত দিয়ে লুঙ্গিটা চেপে ধরে থাকতে হচ্ছিল, যাতে খুলে না পড়ে। পাশ দিয়ে যাবার সময় পিয়া আর ও মুখোমুখি হয়ে গেল। চোখে চোখ পড়তে দু’জনেই হেসে ফেলল।

ডিঙির পেছন দিকে এসে পিয়া দেখল আবছা অন্ধকারে পারার মতো চিকচিক করছে জল। আকাশ ভরা ফুটফুটে জোছনায় সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাগুলো শুধু চোখে পড়ছে। নৌকোর লম্ফটা ছাড়া জলে ডাঙায় কোথাও কোনও বাতি দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কোনও শব্দও নেই নদীর ছলাৎ ছলাৎ ছাড়া। পাড় এখান থেকে এত দূরে যে এমনকী জঙ্গলের ঝিঁঝির ডাকও কানে আসছে না। চারদিকে জনমানবের চিহ্ন নেই। এর আগে একমাত্র মাঝসমুদ্রে ছাড়া আর কোথাও এরকম পরিস্থিতিতে থেকেছে বলে মনে পড়ল না পিয়ার। তবুও লম্ফর হলদে আলোয় ওর ছোট্ট বাথরুমের ভেতর তাকিয়ে ও দেখল পরিষ্কার স্নান টানের জন্য সব ব্যবস্থাই মজুত রেখেছে ফকির। সত্যি বলতে কী, এই মাঝনদীতে এইরকম ব্যবস্থা আশাই করেনি পিয়া। সদ্যতোলা নদীর লোনা জলের বালতির পাশেই একটা ক্যানেস্তারায় খানিকটা টলটলে মিঠে জল রাখা আছে, একটা তাকের ওপর এক টুকরো সাবান, আর তার পাশে একেবারে অপ্রত্যাশিত একটা জিনিস ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের প্যাকেটে খানিকটা শ্যাম্পু। ক্যানিং-এ কয়েকটা চায়ের দোকানে এরকম শ্যাম্পুর প্যাকেটের লম্বা ফিতে ঝুলতে দেখেছে পিয়া। তবুও, জিনিসটা হাতে নিয়ে ওর মনে হল এইরকম একটা জায়গায় এটা একেবারে বেখাপ্পা। ও হয়তো টান মেরে ছুঁড়ে ফেলেই দিত ওটা, কিন্তু মনে হল ফকিরদের কাছে প্যাকেটটা নিশ্চয়ই বহু মূল্যবান (কে জানে ক’টা কঁকড়ার বিনিময়ে কিনতে হয়েছে ওটা), আর শুধু ওর সম্মানেই মনে হয় এটা আজকে বের করা হয়েছে। এটা ফেলে দিলে ওদের ভালবাসার আন্তরিকতাকে অসম্মান করা হবে। এই শ্যাম্পু মাথায় দেওয়ার বিন্দুমাত্র বাসনা না থাকা সত্ত্বেও পিয়া তাই একটুখানি হাতে নিয়ে চুলে মাখল। জল ঢেলে ফেনা ধুয়ে নিল তারপর যদি জলে ভেসে যাওয়া বুদ্বুদগুলো চোখে পড়ে ফকিরের।

দু’এক মগ জল গায়ে ঢালতেই কাঁপুনি ধরল পিয়ার। এতক্ষণে মনে হল গা মোছার জন্য কোনও তোয়ালে-টোয়ালে তো সঙ্গে নেই! শীত কাটানোর জন্য পাটাতনের ওপর উবু হয়ে বসে নিজের হাঁটুদুটোকে জড়িয়ে ধরল ও। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখতে পেল গা মোছার ব্যবস্থাও করে রেখেছে ফকির। ওই লাল চেক-কাটা কাপড়ের একটা টুকরো বাখারিতে ঝোলানো রয়েছে ওর জন্য। টুকরোটা খটখটে শুকনো। তার মানে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই নিশ্চয়ই ওটা রাখা আছে ওখানে। জিনিসটা হাতে নিয়েই ওর কীরকম যেন মনে হল এটা পরেই জলে ঝাঁপ দিয়েছিল ফকির ওকে তোলার জন্য। এই কাপড়গুলো অনেক কাজে লাগে, পিয়া জানে। নাকের কাছে এনে ওর মনে হল রোদে-শুকোনো খরখরে কাপড়টায় নদীর কাদামাটির ধাতব ঘ্রাণ ভেদ করে আবছা একটু ঘামের গন্ধও যেন পাওয়া যাচ্ছে।

হঠাৎ পিয়ার মনে পড়ে গেল এরকম কাপড় ও আগে কোথায় দেখেছে। যখন ও ছোটো ছিল, আমেরিকায় ওদের এগারোতলার ফ্ল্যাটে এই জিনিস দেখেছে ও। ওর বাবার ওয়ার্ডরোবের হাতলে জড়ানো। পরে আস্তে আস্তে ও বড় হয়েছে, কাপড়টা কিন্তু রয়েই গেছে ওখানে–ধূলিমলিন, শতছিন্ন। মাঝে মাঝেই ওটা খুলে ফেলে দেওয়ার ইচ্ছে হত পিয়ার, কিন্তু বাবা কিছুতেই ফেলতে দিত না। এমনিতে সেন্টিমেন্ট-ফেন্টিমেন্টের বিশেষ বালাই ছিল না বাবার, দেশের ব্যাপারে তো নয়ই। অন্যদের মতো দেশের স্মৃতি আঁকড়ে থাকা পছন্দ করত না বাবা। বলত, “আমি বর্তমানের মাটির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে ভালবাসি”, সাদা বাংলায় ওই বর্তমানের মাটির অর্থ চাকরির উন্নতির সিঁড়ি। সেটা পিয়া পরে বুঝেছে। কিন্তু ওই কাপড়ের টুকরোটা ফেলে দেওয়ার কথা তুললেই বাবা প্রায় আর্তনাদ করে উঠত। বলত এত বছর ধরে ওটা আছে ওখানে যে নখ বা চুলের মতো ওটা প্রায় শরীরের অংশ হয়ে গেছে বাবার। “ওটার সঙ্গে আমার ভাগ্য জড়ানো রয়েছে”, ওটা ফেলে দেওয়ার কথা ভাবাই যায় না। কী যেন নাম কাপড়ের টুকরোটার? কী যেন বলত বাবা? শব্দটা জানত একসময় পিয়া। কিন্তু বহুদিনের অব্যবহারে সেটা স্মৃতি থেকে মুছে গেছে।