ভাটির দেশ
স্টেশনে পা দিয়েই মেয়েটাকে দেখতে পেল কানাই। ছোট করে ছাটা চুল, ঢিলে ট্রাউজার্স আর ঢোলা সাদা জামা পরা–যে কেউ দেখলেই হঠাৎ আঠারো-উনিশ বছরের ছেলে বলে ভুল করবে। কিন্তু কানাইয়ের হল জহুরির চোখ। স্টেশনের ওই চা-ওয়ালাContinue Reading
আমন্ত্রণ
শহুরে এলাকা ছাড়িয়ে মিনিট বিশেক চলার পর ট্রেনটা একটা স্টেশনে এসে থামতেই কপালজোরে জানালার পাশের সিটটা পেয়ে গেল পিয়া। এতক্ষণ ও ঘুপচিমতো একটা কোনার দিকে ভিড়ে ঠাসা বেঞ্চির ওপর কোনওরকমে আলগাভাবে বসেছিল। সামনে পড়েছিল গন্ধমাদনেরContinue Reading
ক্যানিং
প্ল্যাটফর্মের ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া পিয়ার পিঠের দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে রইল কানাই। বিয়ে-টিয়ে এখনও করেনি যদিও, কিন্তু নিজেকে ও বলে “রেয়ারলি সিঙ্গল”–কদাচিৎ সঙ্গিনীহীন। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু মহিলা ওর জীবনে এসেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্পর্কগুলোContinue Reading
লঞ্চে
ক্যানিং বাজারের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাড়িটার সামনে এসে থমকে গেল পিয়া। কাজের সূত্রে ওকে বনেজঙ্গলে নদীনালায় ঘুরতেই হয়, তাই বহু বছরের অভিজ্ঞতায় ফরেস্ট বা ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টগুলোর সম্পর্কে একটা তিতিবিরক্ত ভাব জন্মে গেছেContinue Reading
লুসিবাড়ি
কানাই আর নীলিমাকে নিয়ে ট্রাস্টের লঞ্চ যখন লুসিবাড়ির ঘাটে গিয়ে ভিড়ল, নদীতে তখন ভাটার টান। জল এত নীচে যে দ্বীপের ধার বরাবর টানা বাঁধটাকে পাহাড়ের মতো উঁচু মনে হচ্ছিল। বাঁধের ওপারের কিছুই দেখা যাচ্ছিল নাContinue Reading
পতন
সন্ধে প্রায় ঘনিয়ে এসেছে, এমন সময় দূরে একটা নৌকো নজরে এল পিয়ার। শুরুতে একেবারে বিন্দুর মতো দেখা যাচ্ছিল নৌকোটাকে–দিগন্তের কাছে অনেকগুলি নদীর মোহনায় যেন স্থির একটা কালো দাগ। খানিক বাদে দাগটা একটু বড় হতে বোঝাContinue Reading
স্যার ড্যানিয়েল
“ভাটির দেশের সঙ্গে মরুভূমির অনেক মিল আছে”, বলেছিল নির্মল। “যেমন ধরো, মরুভূমির মতো এখানেও মরীচিকা দেখা যায় যা নেই তাও দেখতে পায় মানুষ। স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটনও দেখেছিলেন। ভাটির দেশের কাঁকড়ায় ভরা নদীতীর দেখে স্কটল্যান্ড থেকেContinue Reading
স্নেল’স উইন্ডো
খোলা সমুদ্রের পরিষ্কার জলে যখন সূর্যের আলো পড়ে তা সমুদ্রতল থেকে একটু তেরচা ভাবে নীচে গিয়ে ঢোকে। জলের ভেতর থেকে ওপরে তাকালে সে আলো একটা উলটানো শঙ্কুর মতো চোখে এসে পড়ে। স্বচ্ছ বৃত্তের মতো সেইContinue Reading
ট্রাস্ট
লুসিবাড়ি দ্বীপটা এমনিতে ছোট হলেও বেশ কয়েক হাজার লোক বাস করে এখানে। অধিবাসীদের মধ্যে অনেকেই সেই ১৯২০ সালে আসা আদি বাসিন্দাদের পৌত্র-প্রপৌত্র। কিন্তু তা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ঢেউয়ের মতো এসেছে মানুষ। একদল এসেছে ১৯৪৭-এর দেশভাগেরContinue Reading
ফকির
লঞ্চের শব্দটা দূরে মিলিয়ে যেতে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পিয়া। বিপদ কেটে যাওয়ার পর এতক্ষণে ধীরে ধীরে শিথিল হয়ে এল পেশিগুলো, মারাত্মক ধকলটা যেন শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে টের পাওয়া গেল। হঠাৎ হাত-পাগুলি কঁপতে শুরু করল, থুতনিটাContinue Reading
চিঠি
গেস্ট হাউসটা দোতলায়। পুরো দোতলাটা জুড়েই। সরু একটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। সব মিলিয়ে চারটে ঘর, হুবহু এক ভাবে সাজানো–দুটো সিঙ্গল খাট, একটা ডেস্ক আর-একটা চেয়ার। ঘরগুলোর সামনে দিয়ে টানা একটা জায়গা। তার খানিকটা বারান্দা,Continue Reading
ডিঙিতে
ফকিরের নৌকোটা লম্বায় প্রায় মিটার পাঁচেক হলেও খুব একটা চওড়া নয়। এমনকী ঠিক মাঝখানটাতেও দু’জনের বেশি লোকের পাশাপাশি বসার জায়গা নেই। ডিঙিটাকে পিয়ার মনে হল ঠিক যেন একটা বস্তিবাড়ির ভাসমান সংস্করণ–ছেঁচা বাঁশ, টুকরো-টাকরা কাঠ আরContinue Reading
নির্মল আর নীলিমার কথা
নির্মল আর নীলিমা বোস প্রথমবার লুসিবাড়িতে আসে একটা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। সেটা ১৯৫০ সাল, তখন একবছরও হয়নি ওদের বিয়ে হয়েছে। নির্মলের আদি বাড়ি ঢাকায়। কলকাতায় ও এসেছিল পড়াশোনা করতে। তারপর স্বাধীনতা, দাঙ্গা, দেশভাগ–পরিবারের সঙ্গে সবContinue Reading
নোঙর
সন্ধ্যার পড়ন্ত আলোয় বড় একটা খাঁড়ির মুখে এসে পৌঁছল ফকিরের ডিঙি। আবছা আঁধারে কয়েক কিলোমিটার দূরের ডাঙা প্রায় দেখাই যায় না। খাঁড়ির মাঝ বরাবর তাকিয়ে পিয়ার নজরে এল কিছু একটা নোঙর করা রয়েছে। মনে হলContinue Reading
কুসুম
গেস্ট হাউসটার ছাদে দাঁড়ালে একটানা অনেকটা অবধি চোখে পড়ে। বেশ খানিকটা দূরে হ্যামিলটন হাই স্কুল, তারও পরে নির্মলদের আগেকার বাড়ির জায়গাটা পর্যন্ত এখান থেকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল কানাই। সে বাড়িটার জায়গায় এখন একটা হস্টেল উঠেছেContinue Reading
কথা
স্নানের পর জামাকাপড় পালটে ছইয়ের তলা দিয়ে গুঁড়ি মেরে নৌকোর সামনের দিকটায় গেল পিয়া। সেই চেক-চেক কাপড়ের টুকরোটা তখনও ঝুলছে হাতে। কিছুতেই মনে আসছে না কাপড়টার নাম। ফকিরকে একবার জিগ্যেস করল, কিন্তু ওর ইশারার প্রশ্নContinue Reading
বনবিবির মহিমা
কুসুমের বাড়ি ছিল কাছেই একটা দ্বীপে। সাতজেলিয়ায়। ওর বাবা মারা গিয়েছিল জঙ্গলে কাঠ কাটতে গিয়ে। ঘটনাটা ঘটেছিল বনবিভাগের নিষিদ্ধ এলাকায়, আর ওর বাবার কোনও পারমিটও ছিল না। তাই কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি কুসুমের মা। সংসার প্রায়Continue Reading
স্পন্দন
পূর্ণিমা আসতে এখনও ক’দিন বাকি। চাঁদের তিন ভাগ মাত্র দেখা যাচ্ছে। তাও এত উজ্জ্বল জ্যোৎস্না এসে পড়েছে জলের ওপর, মনে হচ্ছে নদীর ভেতর থেকে যেন আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা পড়েছে রাতের দিকটায়, কিন্তুContinue Reading
মরিচঝাঁপি
সবে ভোর হয়েছে। জানালায় পর্দা নেই, তাই নরম রোদে ধুয়ে যাচ্ছে ঘরটা। সাতসকালেই ঘুম ভেঙে গেল কানাইয়ের। মুখহাত ধুয়ে জামাকাপড় পালটে একটু বাদে নীচে নেমে এল ও। টোকা দিল নীলিমার দরজায়। “কে?” কেমন যেন কাঁপাContinue Reading