» » » » স্নেল’স উইন্ডো

বর্ণাকার

স্নেল’স উইন্ডো

খোলা সমুদ্রের পরিষ্কার জলে যখন সূর্যের আলো পড়ে তা সমুদ্রতল থেকে একটু তেরচা ভাবে নীচে গিয়ে ঢোকে। জলের ভেতর থেকে ওপরে তাকালে সে আলো একটা উলটানো শঙ্কুর মতো চোখে এসে পড়ে। স্বচ্ছ বৃত্তের মতো সেই শঙ্কুর ভূমি ঝুলতে থাকে দর্শকের মাথার ওপরে, মনে হয় ঠিক যেন এক ভাসমান জ্যোতির্বলয়। সমুদ্রের নীচের আলোর তৈরি এই জ্যামিতিক আকারের নাম স্মেলস উইন্ডো। এই আলোর জানালা দিয়েই ডলফিনরা সমুদ্রগর্ভ থেকে বাইরের পৃথিবীকে দেখে। জলের তলায় যেদিকেই তারা যায়, ঝকঝকে রুপোলি রং-এর অনন্ত এক ঝাপসা বিস্তারের মধ্যে সেই ভাসমান আলোকবৃত্ত তাদের সঙ্গে সঙ্গে চলতে থাকে।

গঙ্গা বা ব্রহ্মপুত্রের মতো নদীতে কিন্তু এই আলোর জানালা ঢাকা থাকে ভারী পলির পর্দায়। পলির পরিমাণ এই নদীগুলিতে এতটাই বেশি যে জলের মধ্যে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার যাওয়ার পরেই সূর্যের আলো পথ হারিয়ে ফেলে। সেই ভাসমান পলির স্রোতের মধ্যে একহাত দূরেও দৃষ্টি চলে না। পথ দেখাবার মতো কোনও আলোকবৃত্তও থাকে না বলে খুব সহজেই দিক ভুল হয়ে যেতে পারে। ওপরে না নীচে, আগে না পেছনে কোন দিকে যেতে হবে সেটা বুঝে ওঠা যায় না। এই সমস্যার জন্যই মনে হয় গ্যাঞ্জেটিক ডলফিনরা সাঁতরায় কাত হয়ে–নদীর তলের সমান্তরালে। একদিকের পাখনা ঝুলে থাকে নীচের দিকে, নোঙরের মতো; সেটা দিয়ে নদীর তলার সেই অন্ধকারের রাজ্যে ওরা দিশা ঠিক রাখে।

পিয়া যদি নৌকো থেকে সমুদ্রের জলে পড়ত, তা হলে সামলে উঠতে ওকে বেশি বেগ পেতে হত না। এমনিতে ও যথেষ্ট ভাল সাঁতার জানে, স্রোতের টানের মুখেও নিজেকে ভাসিয়ে রাখার ক্ষমতা আছে। কিন্তু সুন্দরবনের নদীর ঘোলা জলের নীচে ঝাপসা আলোয় দিশাহারা হয়ে ভয় পেয়ে গেল পিয়া। দম দ্রুত ফুরিয়ে আসছে আর মনে হচ্ছে অদ্ভুত উজ্জ্বল একটা পলির স্তর আস্তে আস্তে ওকে ঢেকে নিচ্ছে, কিছুতেই বোঝা যাচ্ছে না কোন দিকে গেলে ভেসে ওঠা যাবে। মাথার ভেতরে কেমন একটা ঘ্রাণের বোধ, অথবা ঘ্রাণ ঠিক নয়, যেন একটা ধাতব স্বাদ। রক্তের স্বাদ নয়, সেটা এই অবস্থাতেও বোঝা যাচ্ছিল–কাদামাটি ঢুকে গেছে মুখে। নাকে চোখে গলার মধ্যে–সর্বত্র মাটি, একটা পলিমাটির পর্দা যেন নেমে আসছে চারদিক থেকে, ঘোলাটে সেই চাদর ধীরে ধীরে জড়িয়ে নিচ্ছে ওকে। এই শেষ তা হলে? একটা মরিয়া চেষ্টা করল পিয়া পলির চাদরটা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার–আঁচড়ে, ঘুষি মেরে, লাথি মেরে–কিন্তু পিচ্ছিল দেওয়ালের মতো সেটা বার বার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ পিঠের ওপর যেন কর্কশ কিছুর একটা ঘষা লাগল। মুহূর্তের জন্য মনে হল সেটা কোনও সরীসৃপের ছুঁচোলো নাক। আঁকুপাঁকু করে উঠল পিয়া, ঘাড় ফেরাল পেছনে, কিন্তু জলের দুর্ভেদ্য ঘোলাটে রং ছাড়া আর কিছুই নজরে এল না। বাতাসের অভাবে শক্ত হয়ে আসছে শরীর, তাও শেষ শক্তিটুকু দিয়ে প্রবল চেষ্টায় হাত ছুড়ল। এবার মনে হল তীব্র বেগে কিছু একটা এগিয়ে আসছে মুখের ওপর; পিয়া বুঝতে পারল কেউ ওকে জলের মধ্যে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে সামনের দিকে, কিন্তু বাধা দেওয়ার শক্তি ওর ফুরিয়ে গেছে। এরপর হঠাৎই যেন হালকা হয়ে গেল মাথাটা, সারা শরীরে একটা ফুরফুরে ভাব–বাতাসের ছোঁয়া। কিন্তু জলে আর কাদায় বন্ধ হয়ে আছে মুখ নাক, নিশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা আর নেই।

জলের ওপর হাতের চাপড় মেরে উঠে আসার চেষ্টা করল পিয়া, সঙ্গে সঙ্গে আবার একটা প্রচণ্ড ঝাঁপটা লাগল মুখে। কোথা থেকে একজোড়া হাত এসে ওর বুকের চারপাশে জড়িয়ে ধরল। একটা ঝাঁকি দিয়ে কেউ ওর মাথাটা হেলিয়ে দিল পেছনের দিকে। পিয়া বুঝতে পারল নিজের দু’পাটি দাঁতের মধ্যে অন্য কারও দাঁত চেপে বসে যাচ্ছে। মুখের মধ্যে থেকে মনে হল কেউ কিছু শুষে নিচ্ছে আর সঙ্গে সঙ্গে কী যেন উঠে আসছে গলা বেয়ে। শ্বাসনালিতে যেই বাতাসের স্পর্শ টের পাওয়া গেল, আরও দম নেওয়ার জন্য খাবি খেতে লাগল পিয়া। একটা হাত এখনও শক্ত করে তুলে ধরে রেখেছে ওকে জলের ওপর, বাঁদিকের কাঁধের ওপর কাটাকাটা কিছুর খোঁচা লাগছে। শ্বাস নেওয়ার জন্য হাঁসফাস করতে করতেও আবছায়া চৈতন্যে পিয়ার মনে হল ওই ডিঙি নৌকোর জেলেটাই ধরে আছে ওকে, আর ওরই দাড়ির ঘষা লাগছে কাঁধের কাছে। ওই খোঁচা খোঁচা ভাবটাতেই ওর মাথাটা যেন অনেকটা সাফ হয়ে গেল। জোর করে ভয়ে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশিগুলোকে আলগা করে দিল পিয়া, শরীরটাকে শান্ত করে রাখল, যাতে ওকে বয়ে নিয়ে সাঁতার কাটতে লোকটার অসুবিধা না হয়।

স্রোতের টানে বেশ খানিকটা দূরে ভেসে চলে এসেছিল ওরা। স্থির হয়ে না থাকলে নৌকো পর্যন্ত ওকে টেনে নিয়ে যাওয়া কঠিন হবে। জলের ওপর গড়িয়ে গিয়ে তাই চিত হল পিয়া, পিঠটা একটু বাঁকিয়ে দিল আর-একটা হাত জেলেটার হাতের মধ্যে গলিয়ে দিয়ে শরীরটাকে প্রায় ভারশূন্য করে ভেসে রইল। কিন্তু নদীর স্রোত এখানে প্রায় মাধ্যাকর্ষণের মতো তীব্র। পিয়াকে টেনে নিয়ে ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোতেও প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছিল লোকটার, মনে হচ্ছিল যেন একটা ভারী মাল ঘাড়ে ধীরে ধীরে চড়াই ভেঙে উঠতে হচ্ছে ওকে।

অবশেষে নৌকোর সামনের দিকটা পিয়ার হাতের নাগালে এল। জলের মধ্যে জেলেটা কর্কশ্রুর মতো ঘুরে গেল একপাক, নীচ থেকে চাপ দিয়ে পিয়ার শরীরটাকে ঠেলে তুলল ডিঙির ওপর। উপুড় হয়ে পড়ল পিয়া, আর সঙ্গে সঙ্গে পেট থেকে ফোয়ারার মতো জল উঠে এসে দম বন্ধ করে দিল। হঠাৎ মনে হল আবার যেন ডুবে যাচ্ছে ও, নাকমুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে জল। দু’হাত দিয়ে গলার কাছটা চেপে ধরল পিয়া, হাঁসফাস করে খামচাতে লাগল, যেন একটা ফাস আটকে আছে সেখানে, আর সেটাকে ও আলগা করার চেষ্টা করছে। আবার জেলেটা দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরল ওর কাঁধ দুটো, ওর শরীরটাকে উলটে দিয়ে একটা পা আড়াআড়ি রাখল কোমরের কাছে। আস্তে আস্তে চাপ দিতে থাকল, মুখে মুখ লাগিয়ে পিয়ার গলার ভেতর থেকে শুষে নিতে থাকল জল আর সঙ্গে সঙ্গে হাওয়া পাম্প করতে থাকল ফুসফুসে।

পিয়ার শ্বাসনালিতে বায়ু চলাচল আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসতে মুখ সরিয়ে নিল লোকটা। শুয়ে শুয়ে শুনতে পাচ্ছিল পিয়া, থুতু ফেলছে ও মুখের থেকে পিয়ার বমির স্বাদ ধুয়ে পরিষ্কার করছে।

ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক ছন্দ ফিরতে লাগল, কানে এল কথাবার্তার আওয়াজ। আস্তে আস্তে চোখ খুলল পিয়া। দেখল লঞ্চের রেলিং-এ ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফরেস্ট গার্ড আর মেজদা। আড়চোখে ওর দিকে দেখছে আর ফিসফিস করে কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। ওকে চোখ মেলতে দেখে নিজের ঘড়ির দিকে আর আকাশের দিকে ইশারা করল গার্ড। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে, সারা আকাশ লালে লাল। লোকটা কী বলতে চাইছে প্রথমে ঠিক ধরতে পারেনি পিয়া। শেষে যখন হাত নেড়ে ডাকতে লাগল, তখন ওর মাথায় ঢুকল ব্যাপারটা : সন্ধে নেমে আসছে, তাই ও চাইছে পিয়া তাড়াতাড়ি লঞ্চে উঠে আসুক, তারপর যেখানে যাওয়ার যাওয়া যাবে।

এই অবস্থার মধ্যেও গার্ডের এই তাড়া দেওয়া দেখে গা জ্বলে গেল পিয়ার। লোকটা ধরেই নিয়েছে যে এখন ওর আর গত্যন্তর নেই, ওদের কথা শুনেই ওকে চলতে হবে এবার, যা বলবে তাই মেনে নিতে হবে। প্রথম থেকেই এই লোকদুটোকে নিয়ে পিয়ার মনে একটা অস্বস্তির ভাব ছিল। এখন লঞ্চে ফিরে গেলে তো ওদের কাছে নিজের অসহায় ভাবটাই প্রকাশ করা হবে। আর এই পরিস্থিতিতে এই গার্ড আর মেজদার খপ্পরে পড়া মানে ওরা বুঝে যাবে যে পিয়া এখন ওদের হাতের মুঠোর নিরীহ শিকার। নাঃ, কোনওমতেই আর ফেরা চলবে না লঞ্চে। কিন্তু কী করবে ও তা হলে? আর কী রাস্তা খোলা আছে?

হঠাৎ বিদ্যুৎঝলকের মতো একটা শব্দ মনে এল পিয়ার। এত অপ্রত্যাশিত ভাবে মাথায় এল কথাটা যে একটু আশ্চর্যই হয়ে গেল ও। তাড়াতাড়ি উঠে বসে জপ করার মতো বিড়বিড় করে বার বার বলতে লাগল শব্দটা, যাতে হারিয়ে না যায়। মুখ ফিরিয়ে দেখল জেলেটা এখন ডিঙির সামনের দিকটায় উবু হয়ে বসে আছে। খালি গা, শুধু কোমরে একটুকরো কাপড় জড়ানো। জলে ঝাঁপ দেওয়ার সময় লুঙ্গিটা ছিঁড়ে খুলে ফেলেছিল, সেটা দিয়ে বাচ্চা ছেলেটা এখন ওর মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে। পিয়া উঠে বসতে বাচ্চাটা ফিসফিস করে কিছু বলল। ঘুরে তাকাল লোকটা। চোখাচোখি হতেই মাথার মধ্যে শব্দটা হারিয়ে যাওয়ার আগে সময় নষ্ট না করে বলে ফেলল পিয়া, লুসিবাড়ি?’ ভুরু কোঁচকাল লোকটা, যেন বলতে চায় ঠিক শুনতে পায়নি কথাটা। তাই আবার পিয়া বলল, ‘লুসিবাড়ি?’ আর একটা শব্দও জুড়ে দিল, ‘মাসিমা?’ এবার মাথা নাড়ল লোকটা। নামগুলো ওর চেনা।

বিস্ময়ে গোল গোল হয়ে গেল পিয়ার চোখ। এই লোকটা চেনে ওই মহিলাকে? সন্দেহ নিরসনের জন্য আবার বলল ও, ‘মাসিমা?’ আবার লোকটা মাথা নাড়ল, একটু হাসির আভাসও দেখা গেল ঠোঁটের কোনায়। যেন বলতে চায় ও ঠিকই বুঝতে পেরেছে কার কথা বলতে চাইছে পিয়া। কিন্তু এখনও ধাঁধা রয়ে গেছে পিয়ার মনে, ওর পুরো বক্তব্যটা কি লোকটা বুঝেছে? এবার একটা অন্য রাস্তা নিল ও। লোকটা নৌকোয় করে ওকে লুসিবাড়িতে পৌঁছে দিতে পারবে কি না সেটা বোঝাতে একবার নিজের দিকে আঙুল দিয়ে দেখাল, আর একবার দেখাল দূরে, দিগন্তের দিকে। আবার মাথা নাড়ল ও, ব্যাপারটা যে বুঝেছে সেটা জানানোর জন্যই যেন মুখেও বলল, ‘লুসিবাড়ি’।

‘হ্যাঁ।’ এতক্ষণে একটা নিশ্চিন্ত স্বস্তির শ্বাস ফেলল পিয়া। চোখ বন্ধ করল, অবসাদে শিথিল হয়ে এল পেশিগুলো।

ওদিকে লঞ্চের ওপর থেকে হাত বাড়িয়ে তুড়ি দিচ্ছিল ফরেস্ট গার্ড, যেন ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করছে ওকে। কোনওরকমে নৌকোর ছইটা ধরে উঠে দাঁড়াল পিয়া, ইশারায় লোকটাকে ওর পিঠব্যাগগুলো নামিয়ে দিতে বলল। প্রথম ব্যাগটা চুপচাপ নামিয়ে দিল লোকটা, কিন্তু দ্বিতীয়টার জন্য হাত বাড়াতেই ও বুঝল যে পিয়া আর লঞ্চে ফিরবে না। মুহূর্তে গার্ডের হাসি হাসি ভাবটা মিলিয়ে গেল, চোখ রাঙিয়ে ও জেলেটাকে চিৎকার করে ধমকাতে শুরু করল। জেলেটা কিন্তু নির্বিকার, শুধু বিড়বিড় করে কী একটা বলল। তাতে আরও খেপে গেল গার্ড, ঘুষি পাকিয়ে ভয় দেখাতে লাগল, পারলে তেড়ে আসে এরকম একটা ভাব।

ভীষণ রাগ হল পিয়ার। চেঁচিয়ে বলল, “ওকে ধমকাচ্ছেন কেন? ওর কী দোষ?” এবার অপ্রত্যাশিত একটা সমর্থন পেল পিয়া। লঞ্চের ওপর থেকে মেজদাও মনে হল আপত্তি করল, পশ্চিমের সূর্যের দিকে আঙুল দেখিয়ে গার্ডকে কিছু একটা বলল। তাতে যেন সম্বিত ফিরে পেল লোকটা, ফের মনোযোগ দিল পিয়ার দিকে। দ্বিতীয় পিঠব্যাগটা একহাতে তুলে ধরে অন্য হাতের তর্জনী আর বুড়ো আঙুলের ইশারায় বোঝাল কিছু টাকা না খসালে ওটা ও হাতছাড়া করবে না।

এতক্ষণে টাকাপয়সার কথা খেয়াল হল পিয়ার। ভাগ্যিস ওর ওয়াটারপ্রুফ টাকার ব্যাগটা বেল্টের সঙ্গে বাঁধা ছিল। ব্যাগের চেনটায় হাত দিয়ে হাঁফ ছাড়ল পিয়া। যাক বাবা, এত কাণ্ডের পরও সব ঠিকঠাকই আছে। নৌকোর ভাড়া আর গার্ডের একদিনের পারিশ্রমিক হিসেব করে কিছু টাকা গুনে বের করল ব্যাগটা থেকে। টাকাটা গার্ডের হাতে দিতে গিয়েও কী মনে করে আরও কয়েকটা নোট জুড়ে দিল সঙ্গে। যথেষ্ট হয়েছে একদিনের পক্ষে, যত তাড়াতাড়ি এই ঝঞ্জাট থেকে রেহাই পাওয়া যায় ততই মঙ্গল। লোকটা চুপচাপ হাত বাড়িয়ে টাকাগুলো নিল, তারপর ব্যাগটা ছুঁড়ে দিল নৌকোর ওপর।

এত সহজে ঝামেলা মিটে যাবে আশাই করেনি পিয়া। ও ভেবেছিল আরও খানিকটা চিৎকার চেঁচামেচি করবে লোকগুলো, হয়তো আরও টাকা চাইবে। কিন্তু যতটা সহজে পার পেয়ে গেছে ভেবেছিল পিয়া দেখা গেল তার থেকে একটু বেশিই খসাতে হয়েছে ওকে। লঞ্চের ওপর থেকে একটা দামি ওয়াকম্যান হাতে তুলে দেখাল গার্ড, এর মধ্যে এক ফাঁকে পিয়ার ব্যাগ থেকে ওটা ও হাতিয়ে নিয়েছে। চুরির আনন্দে কোমর বেঁকিয়ে আর দু’হাতে অশ্লীল ভঙ্গি করে নাচতে লাগল ডেকের ওপর।

কিন্তু এসব কিছুই আর গায়ে লাগছে না পিয়ার এখনওদের দুজনের হাত থেকে যে অবশেষে মুক্তি পাওয়া গেছে তাতেই ও খুশি। ভটভট শব্দটা আস্তে আস্তে দুরে মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ও চোখ বন্ধ করে রইল।