এই উপন্যাসের সব চরিত্রই কাল্পনিক। প্রধান দুই পটভূমি–লুসিবাড়ি এবং গর্জনতলারও বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই। কাহিনিতে উল্লিখিত অন্য কয়েকটা স্থাননাম, যেমন ক্যানিং, গোসাবা, সাতজেলিয়া, মরিচঝাঁপি এবং এমিলিবাড়ি, অবশ্য লেখকের কল্পনাপ্রসূত নয়। উপন্যাসে যেমনভাবে লেখা হয়েছে, সেইভাবেই একদিন গড়ে উঠেছে এইসব জায়গা।
আমার জ্যাঠামশাই শ্রী সতীশ চন্দ্র ঘোষ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিলটনের প্রতিষ্ঠা করা গোসাবার রুরাল রিকন্সট্রাকশন ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তার অকালমৃত্যুর আগে শেষ কয়েক বছর জ্যাঠামশাই হ্যামিলটন এস্টেটের ম্যানেজারের কাজও করেছেন। বহু বছর আগে দেখা ভাটির দেশের যে স্মৃতি আমার মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছিল তার জন্য তার কাছে এবং তাঁর পুত্র সুব্রত ঘোষের কাছে আমি ঋণী।
পৃথিবীর প্রথম সারির সিটোলজিস্টদের মধ্যে অন্যতম, জেমস কুক ইউনিভার্সিটির শিক্ষিকা প্রফেসর হেলেন মার্শ, সম্পূর্ণ অচেনা এক লেখকের ই-মেলের জবাবে অকৃপণ ভাবে উজাড় করে দিয়েছেন তার জ্ঞানভাণ্ডার। তাঁর ছাত্রী, ওকালেয়া ব্রেভিরোষ্ট্রিস বিশেষজ্ঞ ইসাবেল বিসলির সঙ্গে আমার আলাপ করিয়ে দেওয়ায় অধ্যাপক মার্শের কাছে আমার কৃতজ্ঞতার অবধি নেই। ইসাবেলের সঙ্গে মেকং নদীতে এক পর্যবেক্ষণ অভিযানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার ফলে ইরাবড়ি ডলফিন এবং সিটোলজিস্টদের গতিপ্রকৃতির সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। ইসাবেলের মনোবল এবং নিষ্ঠার প্রতি আমার শ্রদ্ধাই একমাত্র তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতাকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
ভাটির দেশের নানা অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করার সময় সঙ্গ পেয়েছি অনু জেলের। অনু সেই বিরল প্রজাতির জ্ঞানসাধকদের মধ্যে একজন, যাঁদের মধ্যে সমন্বয় ঘটেছে অসীম সাহস, অসাধারণ ভাষাজ্ঞান এবং বৌদ্ধিক শক্তির। সুন্দরবন অঞ্চলের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিষয়ে তার গবেষণালব্ধ ফল অদূর ভবিষ্যতেই প্রামাণিক বলে গণ্য হবে, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। চরিত্রের ঋজুতা এবং অন্যকে নিজের জ্ঞানের অংশভাক করে নেওয়ার ঔদার্যের যে পরিচয় আমি পেয়েছি তার জন্য অনুর প্রতি আমার ঋণ এবং কৃতজ্ঞতার সীমা নেই।
এক সময় পুরনো হ্যামিলটন এস্টেটের অংশ ছিল রাঙাবেলিয়া নামের একটি দ্বীপ। সেখানে তুষার কাঞ্জিলালের সঙ্গে আলাপ করার সৌভাগ্য হয় আমার। বাঙালি পাঠকের সঙ্গে নতুন করে তুষারবাবুর পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরিচালনায় টেগোর সোসাইটি অব রুরাল ডেভেলপমেন্ট (টি এস আর ডি) আজ ভাটির দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চেহারা পালটে দিয়েছে। রাঙাবেলিয়ার টি এস আর ডি হাসপাতালে অত্যন্ত যত্ন নিয়ে চিকিৎসা করা হয় রোগীদের। এখানকার কর্মীদের নিষ্ঠাও পৃথক উল্লেখের দাবি রাখে। এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে যার কথা আমার মনে পড়ছে তিনি হলেন ডাক্তার অমিতাভ চৌধুরী। ভাটির দেশে যাতায়াতের সূত্রে যখনই ডাক্তার চৌধুরীকে দেখেছি, আদর্শবাদের মূর্ত প্রতীক বলে তাকে মনে হয়েছে আমার। উল্লেখ করা প্রয়োজন, টি এস আর ডি-র কর্মক্ষেত্র এখন আর শুধু পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই সীমিত নেই। নারী অধিকার রক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য বা কৃষি উন্নয়নের মতো নানা ক্ষেত্রে অক্লান্তভাবে কাজ করে চলেছে এই সংস্থা। সে কাজের ক্রমবর্ধমান বিস্তার এবং কার্যকারিতাই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতাদের প্রতি সবচেয়ে বড় শ্রদ্ধার্ঘ্য।
সত্তরের দশকের শেষের দিকে মরিচঝাঁপির ঘটনা কলকাতার বাংলা এবং ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। বর্তমানে একটিমাত্র ইংরেজি লেখায় সে ঘটনার ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। সেটি হল রস মল্লিকের লেখা Refugee Resettlement in Forest Reserves : West Bengal Policy Reversal and the Marichjhapi Massacre (The Journal of Asian Studies, 1999, 58:1, pp. 103-125)। নীলাঞ্জনা চ্যাটার্জির অসাধারণ গবেষণাপত্র, Midnight’s Unwanted Children: East Bengali Refugees and the Politics of Rehabilitation (Brown University) কখনও প্রকাশিত হল না, সে আমাদের দুর্ভাগ্য। মরিচঝাঁপি বিষয়ে অনু জেলেও একটি প্রবন্ধ লিখেছেন : Dwelling on Marichjhampil
রাইনের মারিয়া রিলকের দুইনো এলিজির যে কয়টি বঙ্গানুবাদ এখানে ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলির বেশিরভাগই কবি বুদ্ধদেব বসুর অনুদিত। চমৎকার এই অনুবাদগুলি উনিশশো ষাটের দশকে প্রথম প্রকাশিত হয়। বুদ্ধদেব বসুর কবিতা সংগ্রহের পঞ্চম খণ্ডে (সম্পাদনা মুকুল গুহ, ১৯৯৪, দে’জ প্রকাশনী, কলকাতা) কবিতাগুলি পাওয়া যায়।
আরও যাঁদের কাছ থেকে নানা ধরনের সাহায্য এবং আতিথেয়তা পেয়েছি তারা হলেন: লীলা এবং হরেন মণ্ডল, সান্টা ম্যাডালেনা ফাউন্ডেশন, মোহনলাল মণ্ডল, অনিল কুমার মণ্ডল, অমিতেশ মুখোপাধ্যায়, পরীক্ষিৎ বর, জেমস সিম্পসন, ক্লিন্ট সিলি, এডওয়ার্ড ইয়াজিজিয়ান, অভিজিৎ ব্যানার্জি এবং ডাক্তার গোপীনাথ বর্মন। বিশেষ ধন্যবাদের দাবি রাখেন আমার বোন, ড. চৈতালী বসু। এ ছাড়াও যাদের কাছে আমার ঋণের অন্ত নেই, তারা হলেন জ্যানেট সিলভার, সুসান ওয়াট, কার্ল ব্লেসিং, অ্যাগনেস ক্রুপ এবং কার্পফিঙ্গার এজেন্সির বার্নি কাৰ্পফিঙ্গার–যাঁদের সযত্ন প্রয়াস ছাড়া মূল ইংরেজি বইটি প্রকাশ করা সম্ভব হত না।
লিখতে গিয়ে সব সময় যাঁদের অমূল্য সহায়তা পেয়েছি তারা হলেন আমার স্ত্রী দেবী, কন্যা লীলা এবং পুত্র নয়ন। এঁদের কাছে আমার ঋণ অপরিশোধ্য।