যে-কোনও একটা ছুতো পেলেই আবার মরিচঝাঁপি যাওয়ার জন্য মনে মনে তৈরিই। ছিলাম আমি, কিন্তু হরেন যে সুযোগ করে দিল তার চেয়ে ভাল অজুহাত আর কিছু হতে পারত না। ইতোমধ্যে ওর ছেলের ভর্তির ব্যবস্থাও করে দিয়েছি, ফলে স্কুলের আশেপাশে প্রায়ই দেখা হয়ে যেত আমার ওর সঙ্গে।
একদিন হরেন বলল, “সার, মরিচঝাঁপি থেকে খবর আছে। ওরা একদিন একটা ফিস্টির ব্যবস্থা করেছে ওখানে, কুসুম বার বার করে আপনাকে যেতে বলে দিয়েছে।”
আশ্চর্য হয়ে গেলাম আমি। “ফিস্টি? কীসের ফিস্টি?”
“কলকাতা থেকে অনেক সব লোককে ওরা নেমন্তন্ন করেছে–কবি, লেখক, খবরের কাগজের লোকজন সব আসবে। ওদেরকে ওরা দ্বীপটার কথা বলবে, কী কী করেছে ওখানে সব দেখাবে।”
এতক্ষণে পরিষ্কার হল পুরো ব্যাপারটা : ওই উদ্বাস্তু নেতাদের বিচারবুদ্ধি দেখে নতুন করে আবার মুগ্ধ হলাম আমি। দেখা যাচ্ছে, ওরা বুঝতে পেরেছে যে এখানে টিকে থাকতে গেলে নিজেদের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে হবে। আর এ হল তারই প্রথম পদক্ষেপ। যেতে তো আমাকে হবেই। হরেন বলল ভোর থাকতেই বেরিয়ে পড়তে হবে। বললাম, আমি তৈরি হয়ে থাকব।
বাড়ি ফিরলাম যখন, নীলিমা এক পলক আমার মুখের দিকে তাকিয়েই বলল, “কী ব্যাপার? এরকম দেখাচ্ছে কেন তোমাকে আজকে?”
কেন এর আগে মরিচঝাঁপি নিয়ে নীলিমার সঙ্গে কোনও কথা বলিনি আমি? বোধ হয় মনে মনে আমি জানতাম নীলিমা কিছুতেই আমার এই উৎসাহের শরিক হবে না; হয়তো আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে ওদের নিয়ে আমার এই উত্তেজনাকে লুসিবাড়িতে ওর এতদিনের কাজের প্রতি এক ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বলে মনে করবে। যাই হোক না কেন, আমার এই ভয় অচিরেই সত্যি বলে প্রমাণিত হল। এই উদ্বাস্তুদের মরিচঝাঁপিতে এসে ওঠার ঘটনাটার মধ্যে যে নাটকীয়তা আছে, আমার পক্ষে যতটা সম্ভব তা বর্ণনা করলাম; কীসের টানে মধ্য ভারতের নির্বাসন থেকে এই ভাটির দেশে এসে উপস্থিত হয়েছে ওরা সেটা ব্যাখ্যা করলাম; ওদের সব পরিকল্পনা, নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন, নতুন বাসভূমি গড়ে তোলার জন্য অটল সংকল্প–সব বুঝিয়ে বললাম ওকে।
আমাকে অবাক করে দিয়ে নীলিমা বলল মরিচঝাঁপিতে উদ্বাস্তুদের আসার কথা ও জানে : এ খবর ও পেয়েছে কলকাতায়, বিভিন্ন আমলা আর নেতাদের কাছ থেকে। ও বলল সরকারি লোকেদের চোখে ওই উদ্বাস্তুরা স্রেফ বেআইনি দখলদার; ওদের ওখানে থাকতে দেবে না সরকার; গণ্ডগোল একটা হবেই।
আমাকে বলল, “নির্মল, আমি চাই না যে তুমি ওখানে যাও। ওই রিফিউজিদের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই, কিন্তু তুমি এসব ঝুটঝামেলার মধ্যে যাও সেটা আমি চাই না।”
সেই মুহূর্তেই খুব দুঃখের সঙ্গে আমি বুঝতে পারলাম, এখন থেকে আমাকে গোপনেই যোগাযোগ রাখতে হবে মরিচঝাঁপির সঙ্গে। আমার ইচ্ছে ছিল পরের দিনের ফিস্টের কথাটা ওকে বলব, কিন্তু এরপর সে কথা আর তুললাম না। নীলিমাকে যদ্র চিনি, ও ঠিক কোনও না কোনও উপায়ে আমার যাওয়াটা আটকে দেবে।
তা সত্ত্বেও ও চাপাচাপি না করলে মিথ্যে বলার কোনও বাসনা আমার ছিল না। আমাকে ঝোলা গোছাতে দেখে জিজ্ঞেস করল আমি কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করছি কিনা।
“হ্যাঁ, কাল সকালেই বেরোতে হবে আমাকে।” বানিয়ে বানিয়ে বললাম মোল্লাখালিতে একটা স্কুলে নিমন্ত্রণ আছে।
স্পষ্ট বুঝতে পারলাম আমার কথা বিশ্বাস করল না নীলিমা। খুব ভাল করে আমাকে একবার দেখে নিয়ে বলল, “তাই? তো, কার সঙ্গে যাবে শুনি?”
“হরেনের সঙ্গে,” বললাম আমি।
“তাই নাকি? হরেনের সঙ্গে?” ওর গলার বাঁকা সুরটা শুনেই ভয় হল আমার । মনে হল শেষ পর্যন্ত বোধহয় ফাস হয়ে যাবে আমার গোপন কথাটা।
এই ভাবেই আমাদের দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম হল সেদিন।
কিন্তু ফিস্টটাতে আমি গেলাম। আমার সারা জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিনগুলির অন্যতম হয়ে থাকবে সেই দিনটা। আমি যদি কলকাতাতেই থেকে যেতাম তা হলে আমার জীবন কী রকম হত সেটা যেন সেদিন, অবসরের ঠিক আগের মুহূর্তে, এক ঝলক দেখতে পেলাম আমি। শহর থেকে অতিথি যারা এসেছিলেন সে রকম সব মানুষদের সঙ্গেই তো ওঠাবসা হত আমার : সাংবাদিক, আলোকচিত্রী, বিখ্যাত লেখক; তাদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দত্ত। এমনকী আমার চেনাশোনা লোকও ছিল কয়েকজন, ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় যোগাযোগ ছিল ওদের সঙ্গে। একজন ছিল আমার এক সময়কার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং কমরেড–আমরা তখন খোকন বলে ডাকতাম তাকে। দূর থেকে ওকে সেদিন দেখলাম আমি। কী সুন্দর চেহারা হয়েছে ওর : কুচকুচে কালো চুল, মুখ থেকে যেন জ্যোতি ফুটে বেরোচ্ছে। যদি সাহিত্যচর্চা ছেড়ে না দিতাম, আমিও কি তা হলে আজকে এরকম জায়গায় পৌঁছতাম?
সারা জীবনের না করা কাজগুলোর জন্য সেদিন যেমন অনুতাপ হল সেরকম আমার আগে আর কখনও হয়নি।
উদ্বাস্তু নেতারা যখন অতিথিদের নিয়ে দ্বীপটা ঘুরে দেখাতে বেরোল, একটু দূর থেকে আমিও চললাম ওদের পেছন পেছন। কত কিছু যে দেখানোর আছে এমনকী আমি আগেরবার যখন এসেছিলাম তারপর থেকে এই ক’দিনে আরও কত কী করেছে ওরা। অনেক কাজ করে ফেলেছে এর মধ্যে। নুনের ভাটি তৈরি হয়েছে, টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, আল দিয়ে জল আটকে মাছ চাষের ব্যবস্থা হয়েছে, একটা রুটি কারখানা চালু হয়েছে, নৌকোর মিস্ত্রিদের কাজের জায়গা তৈরি হয়েছে, মাটির জিনিস গড়ার জায়গা করা হয়েছে, কামারশালা খুলেছে, আরও কত কী। কিছু লোক নৌকো তৈরি করছে, কয়েকজন বসে জাল বুনছে, কাঁকড়া ধরার দোন বানাচ্ছে; ছোট ছোট বাজার মতো বসেছে কয়েকটা জায়গায়, সেখানে জিনিসপত্র কেনাবেচা হচ্ছে। এই সব কিছু হয়েছে মাত্র এই কয়েক মাসে! এ এক আশ্চর্য দৃশ্য–যেন এই কাদামাটির ওপর হঠাৎ করে একটা নতুন সভ্যতা গজিয়ে উঠেছে।
তারপরে ফিস্ট। সাবেকি ধরনে সুন্দর করে গুছিয়ে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মাটিতে কলাপাতা পেতে গাছের ছায়ায় আসন দেওয়া হয়েছে অতিথিদের। যারা পরিবেশন করছিল তাদের মধ্যে কুসুমকে দেখতে পেলাম আমি। ও আমাকে। দেখাল কী বিশাল বিশাল সব ডেকচি আনা হয়েছে রান্নার জন্য। কত রকমের যে মাছ রাঁধা হয়েছে বড় বড় চিংড়ি, গলদা বাগদা দু’রকমেরই, তা ছাড়াও ট্যাংরা, ইলিশ, পার্শে, পুঁটি, ভেটকি, রুই আর চিতল।
একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম আমি। অধিকাংশ লোকেরই এখানে দু’বেলা ভাত জোটে না, সে তো আমি ভাল করেই জানি। বুঝতে পারলাম না কী করে এই বিশাল ব্যবস্থা করল এরা।
কোথা থেকে এল এত সব? জিজ্ঞেস করলাম কুসুমকে।
যে যতটুকু পেরেছে দিয়েছে, ও বলল। বিশেষ কিছু তো কিনতে হয়নি–শুধু চালটা। বাকি সব তো নদী থেকেই এসেছে। কালকে পর্যন্ত আমরা সবাই জাল নিয়ে, ছিপ নিয়ে মাছ ধরেছি। বাচ্চারাও পর্যন্ত। পার্শে মাছগুলো দেখিয়ে খানিকটা গর্বের সঙ্গে বলল, “আজকে সকালে ছ’টা এই মাছ ধরেছে ফকির।”
আমি বিস্ময়বিমুগ্ধ। শহুরে মানুষদের হৃদয় জয় করার জন্য টাটকা মাছের চেয়ে ভাল আর কি হতে পারে? অতিথিদের ঠিক বুঝেছে তো এরা!
কুসুম আমাকে বার বার বলল বসে পড়তে, কিন্তু আমি ঠিক পারলাম না। এই অতিথিদের সঙ্গে এক পঙক্তিতে আমি কী করে বসব? “না রে কুসুম,” বললাম। আমি। “যাদের খাইয়ে কাজ হবে তাদের খাওয়া। এত দামি খাবার আমাকে খাইয়ে কেন নষ্ট করবি খামখা?” একটা গাছের ছায়ায় বসে বসে দেখতে লাগলাম আমি। মাঝে মাঝে কুসুম কি ফকির এসে কলাপাতায় মুড়ে অল্প কিছু কিছু খাবার দিয়ে যেতে লাগল আমাকে।
একটু পরেই বোঝা গেল যে ওষুধে কাজ দিয়েছে : অতিথিরা একেবারে মুগ্ধ। উদ্বাস্তুদের কাজকর্মের গুণগান করে অনেক সব বক্তৃতা দেওয়া হল। সবাই এক বাক্যে স্বীকার করল যে মরিচঝাঁপিতে যা ঘটছে তার গুরুত্ব শুধু এই দ্বীপটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আজকে মরিচঝাঁপিতে যে বীজ বোনা হয়েছে, কে বলতে পারে তার থেকেই একদিন দলিতদের জন্য নতুন রাষ্ট্র না হলেও, অন্তত দেশের সমস্ত নিপীড়িত মানুষের জন্য নিশ্চিন্ত কোনও এক আশ্রয়স্থল গড়ে উঠবে না?
বেলা যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, তখন আস্তে আস্তে খোকনের কাছে গিয়ে ওর চোখের সামনে দাঁড়ালাম আমি। ও এক পলক দেখল আমাকে, কিন্তু চিনতে পারল না। অন্যদের সঙ্গে যেমন কথা বলছিল, বলতেই থাকল। খানিক পরে গিয়ে ওর কনুইয়ে আলতো করে টোকা দিলাম একটা। বললাম, “এই যে, খোকন!”
অচেনা একজন লোকের কাছ থেকে এরকম অতি পরিচিতের মতো সম্বোধন শুনে ও বিরক্ত হল একটু। বলল, “কে মশাই আপনি?”
যখন বললাম আমি কে, ওর মুখটা হাঁ হয়ে ঝুলে গেল, আর সেই হা-এর ভেতরে জিভটা জালে পড়া মাছের মতো লটপট করতে লাগল। “তুই?” অবশেষে বাক্স্ফুর্তি হল ওর। “তুই?”
“হ্যাঁ, আমি।”
“এত বছর কোনও খবর নেই তোর, আমরা তো সবাই ভেবেছিলাম–”
“কী? মরে গেছি? দেখতেই পাচ্ছিস দিব্যি জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছি তোর সামনে।”
মনে হল ও প্রায় বলে ফেলতে যাচ্ছিল, “মরলেই ভাল হত,” কিন্তু বলল না শেষ পর্যন্ত।
“কিন্তু এত বছর ধরে কী করছিলি তুই? কোথায় ছিলি?”
মনে হল আমার গোটা অস্তিত্বটার জন্যই যেন কৈফিয়ত চাওয়া হচ্ছে, যেন লুসিবাড়িতে এতগুলো বছর কী করে কাটিয়েছি তার হিসেব দিতে বলা হচ্ছে আমাকে।
কিন্তু ভদ্রতা রেখেই জবাবটা দিতে হল : “ইস্কুল মাস্টারি করছিলাম। এই কাছেই একটা জায়গায়।”
“আর লেখালিখি?”
কাঁধ ঝাঁকালাম আমি। কী আর বলব? “ভালই করেছি ছেড়ে দিয়ে,” বললাম অবশেষে।
“তোরা যা লিখছিস তার কাছে দাঁড়াতে পারত না আমার ওই সব লেখা।”
হায় লেখককুল! সামান্য তোষামোদেই কেমন গলে জল হয়ে যায়। আমার কাঁধে হাত দিয়ে ওখান থেকে একটু সরে এল ও। তারপর খানিকটা প্রশ্রয় দেওয়ার ভঙ্গিতে গলাটা একটু নামিয়ে–যেন বড়ভাই কথা বলছে ছোটভাইয়ের সঙ্গে, সেইভাবে–জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা নির্মল, এইসব রিফিউজিদের সঙ্গে তোর কী করে যোগাযোগ হল?”
বললাম, “আসলে এদের দু’-এক জনকে আমি চিনি। আর, রিটায়ার করারও সময় এসে গেছে, ভাবছিলাম এইখানে এসে এবার একটু আধটু মাস্টারি করব।”
“এইখানে?” খোকনের গলায় একটু দ্বিধার সুর। “কিন্তু সমস্যা হল, ওদের তো বোধহয় থাকতে দেওয়া হবে না এ জায়গায়।”
“ওরা তো আছেই এখানে,” আমি বললাম। “এখন কি আর সরানো সম্ভব নাকি ওদের? রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে তো তা হলে।”
হাসল খোকন। “ভুলে গেছ বন্ধু, সে সময়ে কী বলতাম আমরা?”
“কী বলতাম?”
“ডিম না ভেঙে ওমলেট বানানো যায় না।”
বাঁকা হাসি হাসল খোকন। এরকম হাসি একমাত্র তারাই হাসতে পারে যারা এক সময়ে আদর্শের কথা বলেছে কিন্তু কখনও সেই আদর্শে বিশ্বাস করেনি, আর ভেবেছে অন্য সকলেও তাদেরই মতো বিশ্বাসহীন আদর্শের কথা প্রচার করে চলেছে। একবার ভাবলাম যা তা বলে দিই মুখের ওপর, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই কেউ যেন প্রচণ্ড একটা ধাক্কা দিয়ে আমাকে মনে করিয়ে দিল যে অতখানি গর্বিত হওয়ার অধিকার আমার নেই। নীলিমা যেমন বিশাল কাজ করেছে এই কয় বছরে। কিন্তু আমি কী করেছি? সারা জীবনে কী কাজটা করেছি আমি? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুই মনে এল না।
বিকেল হয়ে গেছে। হরেন আর কুসুম বেরিয়েছে দেখতে যদি কিছু মাছ পাওয়া যায়। ফকির বসে আছে একটা কাঁকড়া ধরার সুতো নিয়ে। ভাটির দেশে এই সুতোগুলোকে বলে দোন। সুতোটা নিয়ে ওর খেলা করা দেখতে দেখতে আমার বুকের ভেতরটা যেন উথলে উঠল। কত কী বলার আছে, কত কথা ঘুরপাক খাচ্ছে আমার মাথার মধ্যে, সেগুলি কি সব না বলাই রয়ে যাবে? ওঃ, কতগুলো বছর অকারণে নষ্ট হয়েছে, জীবনের কতটা সময় অকারণে জলাঞ্জলি দিয়েছি। রিলকের কথা মনে পড়ল আমার, বছরের পর বছর কেটে গেছে একটা শব্দও লিখতে পারেননি, তারপর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সমুদ্রের তীরে এক দুর্গে বসে লিখে ফেললেন দুইনো এলিজির কতগুলো কবিতা। নিস্তব্ধতাও আসলে প্রস্তুতির একটা অঙ্গ। একেকটা মিনিট কাটছে, আর আমার মনে হচ্ছে ভাটির দেশের প্রতিটি খুঁটিনাটি যেন চোখ-ধাঁধানো উজ্জ্বলতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে আমার সামনে। মনে হল ফকিরকে বলি, “জানিস কি তুই, প্রতিটা দোনে হাজারটা করে টোপ থাকে? তিন হাত ছাড়া ছাড়া বাঁধা হয় একেকটা টোপ? প্রত্যেকটা দোন তাই তিন হাজার হাত লম্বা?”
কবি যে পথ দেখিয়ে দিয়েছেন তা ছাড়া আর কীভাবে এই জগৎটার যশোকীর্তন করি বলো? সেই পথে চলতে গেলে আমাদের কুমোর আর মজুরের কথা বলতে হবে, বলতে হবে
‘বরং এমন-কিছু তুলে ধরো,
যা সহজ, আর বংশপরম্পর স্বচ্ছন্দে নূতন রূপ নিতে-নিতে
এখন যা আমাদেরই অংশ হয়ে আমাদের হাতে, চোখে প্রাণবন্ত।’