বন্দরের কাল
শুরুতে জলের স্রোত ছিল উলটোদিকে, আর দাঁড় টানছিল ফকির একা, ফলে খুবই ধীরে এগোচ্ছিল নৌকো। প্রায় ঘণ্টাখানেক চলার পর জিপিএস-এ নৌকোর অবস্থান মেপে পিয়া দেখল এতটা সময়ে মাত্র তিন কিলোমিটার এসেছে ওরা। এতক্ষণে হঠাৎ ওর খেয়াল হল ফকিরের কাছে হয়তো বাড়তি এক জোড়া দাঁড় থাকতেও পারে। ইশারায় প্রশ্ন করে বুঝল সত্যিই আছে আর একজোড়া দাঁড়। তক্তার নীচে নৌকোর খোলের মধ্যে রাখা আছে। দাঁড়দুটো। খুশি হয়ে উঠল পিয়া।
দাঁড়গুলোর হালও দেখা গেল ডিঙিটারই মতো, কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে বানানো। ডালপালা ছাঁটা একজোড়া গাছের ডালের আগার দিকে বেঢপ ভাবে পেরেক দিয়ে আঁটা দুটো কাঠের টুকরো শুধু। ডিঙির কিনারায় পঁড় টানার জন্য কোনও আংটার বালাই নেই, শুধু দুটো খুঁটির ওপর ঠেকা দিয়ে বাইতে হবে। জলের মধ্যে বৈঠা নামাতেই স্রোতের টানে মোচড় খেয়ে গেল সেগুলো। আরেকটু হলেই ভেসে যাচ্ছিল পিয়ার হাত থেকে। হাতের আন্দাজটুকু আসতে খানিকটা সময় লাগল, তবে দু’জনে মিলে দাঁড় টানার ফলে নৌকোর গতি খানিকটা বাড়ল।
কিন্তু যত সময় যেতে লাগল পিয়া দেখল উত্তরোত্তর কঠিন হয়ে উঠছে কাজটা : দুই হাতের তালুতেই বেশ কয়েকটা ফোঁসকা গজিয়ে উঠেছে, মুখে আর ঘাড়ে নুনের আস্তরণ পড়ে গেছে। প্রায় সন্ধে নাগাদ–সূর্য তখন ডুবুডুবু দাঁড় তুলে ফেলল পিয়া। গন্তব্য আর কত দূর সেটা জিজ্ঞেস করার ইচ্ছেটা আর দমন করে রাখতে পারল না। “লুসিবাড়ি?”
সেই সকাল থেকে প্রায় একটানা নৌকো বেয়ে চলেছে ফকির, কিন্তু এখনও ওর চেহারায় কোনও ক্লান্তির ছাপ পড়েনি। পিয়ার প্রশ্ন শুনে মুহূর্তের জন্য থেমে ঘাড় ফিরিয়ে দূরে জলের মধ্যে ঢুকে আসা জিভের মতো একটা চড়ার দিকে ইশারা করল ও। আশেপাশের দ্বীপগুলোর মধ্যে পরিষ্কার, বন জঙ্গলহীন জায়গাটা সহজেই নজরে পড়ছিল। শেষ পর্যন্ত চোখে দেখা যাচ্ছে দ্বীপটা সেটা যথেষ্টই স্বস্তির কথা, কিন্তু বেশ বুঝতে পারছিল পিয়া, ডাঙায় পৌঁছতে আরও অনেকক্ষণ লাগবে ওদের। ঠিকই বুঝেছিল।
নৌকো পাড়ে ভেড়ার পর অবশেষে জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে যখন নেমে এল ওরা, ততক্ষণে সূর্য অস্ত গেছে। প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে চারদিক। ফকির একটা পিঠব্যাগ তুলে নিল, অন্যটা পিয়া নিজের কাঁধে ঝুলিয়ে নিল, তারপর টুটুলকে সামনে রেখে লাইন করে এগোতে লাগল আস্তে আস্তে। পিয়া শুধু ওদের দুজনের দিকে চোখ রেখে হেঁটে যাচ্ছিল, ফলে আশেপাশের দিকে খুব একটা নজর দিতে পারছিল না। চলতে চলতে হঠাৎ এক সময় থেমে গেল ফকির। বলল, “মাসিমা।” পিয়া তাকিয়ে দেখল একটা সিঁড়ির দিকে ইশারা করছে ও। একটা বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে শেষ হয়েছে সিঁড়িটা।
এই সেই জায়গা? ফকির কাঁধ থেকে ব্যাগটা নামিয়ে পিয়ার হাতে তুলে দিল। কী করা উচিত এখন? ওরা দুজনে একটু পিছিয়ে গেল। ফকিরের হাতে জালের মধ্যে কঁকড়ার পুঁটলি, আর কাপড়জামাগুলো বান্ডিল বেঁধে মাথায় তুলে নিয়েছে টুটুল। আবার হাত তুলে বন্ধ দরজাটার দিকে ইশারা করল ফকির। ওদের দাঁড়ানোর ভঙ্গিতে বুঝতে পারল পিয়া, ওকে ওখানেই রেখে এখন ফিরে চলে যাবে ওরা। হঠাৎ কেমন যেন ভয় ভয় লাগল ওর। চেঁচিয়ে বলল, “ওয়েট। হোয়্যার আর ইউ গোয়িং?”
নানা রকম অদ্ভুত সব সম্ভাবনার কথা আগে থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল পিয়ার মাথার ভেতরে, কিন্তু এরকম ভাবে ওকে একা দাঁড় করিয়ে রেখে একটা কথাও না বলে ওরা চলে যাবে, সেরকম যে কিছু হতে পারে তা কখনও ভাবেনি। এও মনে হয়নি যে ওদের চলে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা ভাবতেই এরকম একটা শীতল একাকিত্বের অনুভূতি এসে পেয়ে। বসবে ওকে।
“ওয়েট। জাস্ট আ মিনিট।”
দূরে কোথাও একটা জেনারেটর চালু হল, আর পাশের একটা জানালা দিয়ে ঝকঝকে আলো এসে পড়ল ভেতর থেকে। এই ক’দিনে প্রাকৃতিক আলো-অন্ধকারেই সয়ে গিয়েছিল চোখ, হঠাৎ এই ফ্যাটফ্যাটে উজ্জ্বল ইলেকট্রিকের আলোয় মুহূর্তের জন্য যেন ধাঁধা লেগে গেল পিয়ার। দুয়েকবার পিটপিট করে দু’হাতের মুঠি দিয়ে চোখ কচলে নিল। নজর ফিরে পেতে তাকিয়ে দেখল চলে গেছে ওরা। দু’জনেই। ফকির আর টুটুল।
মনে পড়ল এখানে নিয়ে আসার জন্য ফকিরকে কোনও পারিশ্রমিক দেওয়া হয়নি। কী করে আবার খুঁজে পাওয়া যাবে ওকে? কোথায় থাকে ফকির সে তো জানে না পিয়া। ওর পুরো নামটা পর্যন্ত জিজ্ঞেস করে রাখা হয়নি। মুখের সামনে দু’হাত নিয়ে অন্ধকারের দিকে ফিরে চিৎকার করে একবার ডাকল, “ফকির!”
“কে?” জবাবটা এল একজন মহিলার গলায়, সামনে থেকে নয়, পেছন দিক থেকে। হঠাৎ খুলে গেল বন্ধ দরজাটা। পিয়া দেখল ছোট্টখাট্ট চেহারার বয়স্কা একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন ওর সামনে। মাথার চুলগুলো খড়ের আঁটির মতো, চোখে সোনালি ফ্রেমের একটা চশমা। “কে?”
দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠল পিয়া। “কিছু মনে করবেন না, ঠিক জায়গাতে এসেছি কিনা জানি না, আসলে আমি মাসিমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছি।” মহিলা বুঝবেন কি বুঝবেন না সেসব না ভেবেই এক নিশ্বাসে হড়বড় করে ইংরেজিতে কথাগুলো বলে গেল পিয়া।
একটা অস্বস্তিকর মুহূর্ত। পিয়া টের পাচ্ছিল একজোড়া তীক্ষ্ণ সন্ধানী চোখ খুব ভাল করে জরিপ করে নিচ্ছে ওকে। নজর করল ওর নুনের দাগ-লাগা মুখ আর কাদামাখা সুতির প্যান্ট দেখতে দেখতে সোনালি ফ্রেম একবার ওপরে উঠছে, ফের নীচে নামছে। তারপর ওকে আশ্বস্ত করে বাঁশির মতো মিষ্টি সুরেলা ইংরেজিতে মহিলা বললেন, “একদম ঠিক জায়গাতেই এসেছ। কিন্তু তুমি কে বলো তো? আমি কি তোমাকে চিনি?”
“না,” পিয়া বলল, “আপনি আমাকে চিনবেন না। আমার নাম পিয়ালি রয়। আপনার ভাগ্নের সঙ্গে ট্রেনে আমার আলাপ হয়েছিল।”
“কানাই?”
“হ্যাঁ। উনিই আমাকে এখানে আসতে বলেছিলেন।”
“বেশ বেশ। ভেতরে এসো। কানাই এক্ষুনি নীচে নেমে আসবে।” একপাশে সরে গিয়ে পিয়াকে ভেতরে ঢোকার জায়গা করে দিলেন মহিলা। “কিন্তু তুমি চিনে চিনে এখানে এলে কী করে বলো তো? একা তো নিশ্চয়ই আসনি?”
“না, না। একা আমি জীবনে খুঁজে বের করতে পারতাম না।”
“তা হলে কার সঙ্গে এলে? বাইরে তো কাউকে দেখলাম না।”
“আপনি দরজা খুলতে খুলতেই চলে গেল ওরা–” কথাটা শেষ করার আগেই দড়াম করে খুলে গেল দরজাটা। কানাই ভেতরে এল। বিস্ময়ে চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “আরে, পিয়া না?”
“হ্যাঁ।”
“আসতে পারলেন তা হলে?”
“চলে এলাম।”
“গুড, কানাই একগাল হাসল। এত তাড়াতাড়ি পিয়ার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে যাবে ভাবেনি ও। মনে মনে একটু খুশি হল কানাই, শ্লাঘাও বোধ করল একটু। লক্ষণটা মনে হল ভালই। “বেশ একটা ইভেন্টফুল ট্রিপ হয়েছে মনে হচ্ছে?” ভাল করে একবার পিয়ার কাদামাখা জামাকাপড়গুলো দেখল কানাই। “তা, কী করে এলেন এখানে?”
“একটা দাঁড়-টানা নৌকোয়।”
“দাঁড়-টানা নৌকোয়?”
“হ্যাঁ। আসলে আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর একটা অ্যাক্সিডেন্টে পড়েছিলাম।” লঞ্চ থেকে জলে পড়ে যাওয়া পর্যন্ত কী কী ঘটেছিল সংক্ষেপে বলল পিয়া। “আর তারপর সেই জেলেটি আমার পেছন পেছন জলে ঝাঁপ দিয়ে পড়ল না হলে কী যে হত কে জানে। একগাদা জল খেয়ে ফেলেছিলাম আমি, কিন্তু ও ঠিক টেনেটুনে আমাকে নৌকোয় তুলে ফেলল। আমার তখন মনে হল ওই গার্ডদের লঞ্চে আবার গিয়ে ওঠাটা ঠিক নিরাপদ হবে না। ভাবলাম একটা আন্দাজে ঢিল মেরে দেখি, জেলেটিকে একবার জিজ্ঞেস করি ও মাসিমাকে চেনে কিনা। দেখলাম চেনে। তো, তখন বললাম ও যদি আমাকে লুসিবাড়িতে পৌঁছে দেয় তা হলে কিছু টাকা দেব। অনেক আগেই আমরা পৌঁছে যেতাম এখানে, কিন্তু মাঝরাস্তায় আবার কয়েকটা ঘটনা ঘটল।”
“কী ঘটল আবার?”
“প্রথমে তো দেখা হল এক দল ডলফিনের সঙ্গে। তারপর, আজ সকালে একটা কুমিরের খপ্পরে পড়েছিলাম।”
“আরে সর্বনাশ!” নীলিমা বলল, “কারও কিছু হয়নি তো??
“না। কিন্তু হতেই পারত। একটা দাঁড় দিয়ে তারপর ওটাকে মেরে তাড়াল জেলেটি। একেবারে অবিশ্বাস্য ব্যাপার,” বলল পিয়া।
“কী ভয়ংকর! কে ছিল জেলেটি? নাম বলেছে তোমাকে?” নীলিমা জিজ্ঞেস করল।
“হ্যাঁ, বলেছে। ওর নাম ফকির।”
“ফকির?” নীলিমা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল। “ফকির মণ্ডল ছিল কি?”
“পদবি তো বলেনি।”
“একটা ছোট ছেলে ছিল কি সঙ্গে?”
“হ্যাঁ, ছিল,” পিয়া বলল। “টুটুল।”
“ও-ই,” কানাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল নীলিমা, “এতক্ষণে বোঝা গেল কোথায় ছিল ও।”
“ওর খোঁজ করা হচ্ছিল নাকি?”
“হ্যাঁ, কানাই বলল, “ফকিরের বউ ময়না এখানকার হাসপাতালে কাজ করে। সে বেচারির তত চিন্তায় চিন্তায় প্রায় পাগল হবার দশা।” :
“তাই নাকি? ছি ছি, মনে হয় আমারই জন্য এতটা দেরি হয়েছে। আমিই ওদের আটকে রেখেছিলাম এতক্ষণ, তা না হলে হয়তো আরও অনেক আগেই ফিরে আসত,” বলল পিয়া।
“যাক গে,” নীলিমা বলল ঠোঁট চেপে, “ভালয় ভালয় ফিরে যখন এসেছে আর চিন্তার কোনও কারণ নেই।”
“আশা করি নেই,” পিয়া বলল। “আমার জন্য ওকে কোনও রকম ঝামেলায় পড়তে হলে খুব খারাপ লাগবে আমার। দু-দু’বার ও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে। আর ও-ই তো সোজা ওই ডলফিনের ঝকটার কাছে নিয়ে গেল আমাকে।”
“তাই নাকি? কিন্তু আপনি যে ডলফিনের খোঁজ করছেন সেটা ও বুঝল কী করে?” জিজ্ঞেস করল কানাই।
“আমি ওকে ছবি দেখালাম, একটা ফ্ল্যাশকার্ড,” বলল পিয়া। “আর কিচ্ছু বলতে হয়নি ওকে। ও সোজা আমাকে ডলফিনগুলোর কাছে নিয়ে গেল। এক হিসেবে দেখতে গেলে ওই লঞ্চ থেকে পড়ে যাওয়াটা ভালই হয়েছিল আমার পক্ষে একা একা কিছুতেই আমি ওই ডলফিনগুলোকে খুঁজে পেতাম না। একবার দেখা করতেই হবে ওর সঙ্গে। অন্তত পয়সাটা তো ওকে দিতে হবে।”
“সে নিয়ে চিন্তা কোরো না,” নীলিমা বলল। “ওরা এই কাছেই থাকে, এই ট্রাস্টের কোয়ার্টারে। সকালে কানাই নিয়ে যাবে তোমাকে।”
কানাইয়ের দিকে মুখ ফেরাল পিয়া। “খুব ভাল হয় যদি পারেন।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, কেন পারব না?” বলল কানাই। “কিন্তু সে তো কাল সকালে। এখন আপাতত আপনার থাকা-টাকার একটা ব্যবস্থা করা যাক। জামাকাপড় পালটে রেস্ট নিন আপনি।”
এর পরে কী হবে তাই নিয়ে এতক্ষণ মাথাই ঘামায়নি পিয়া। এবার এখানে এসে পৌঁছনোর প্রাথমিক উত্তেজনাটুকু থিতিয়ে যেতে হঠাৎ এই ক’দিনের ক্লান্তির সমস্ত ভার যেন চেপে বসল ওর ওপর। “থাকার ব্যবস্থা?” ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল পিয়া। “কোথায়?”
“এখানেই। মানে, দোতলায়,” বলল কানাই।
একটু অস্বস্তি লাগছিল পিয়ার। কানাই কি মনে করেছে পিয়া এখানে কানাইয়ের সঙ্গে থাকবে?
“কাছাকাছি কোনও হোটেল-টোটেল নেই?”
“হোটেল এখানে নেই,” নীলিমা বলল। “তবে ওপরে একটা গেস্ট হাউস আছে, সেখানে তিনটে খালি ঘর আছে। তুমি স্বচ্ছন্দে থাকতে পার। আর কেউ নেইও ওপরে, কানাই ছাড়া। ও যদি তোমায় বিরক্ত করে, তুমি সোজা নীচে নেমে এসে আমাকে একবার খালি খবরটা দেবে।”
হেসে ফেলল পিয়া। “না না, সে ঠিক আছে। আর নিজের দেখভাল করার উপায় আমার জানা আছে। তবে মাসিমার কাছ থেকে আমন্ত্রণটা আসায় একটু খুশি হল পিয়া: রাজি হওয়াটা যেন সহজ হয়ে গেল এর ফলে। বলল, “থ্যাঙ্ক ইউ। সত্যি, একটা রাত একটু ভাল করে বিশ্রাম নেওয়া দরকার। আমি দিন কয়েক এখানে থাকলে সত্যি কোনও অসুবিধা হবে না তো আপনাদের?”
“তোমার যত দিন ইচ্ছে থাকো,” বলল নীলিমা। “কানাই তোমাকে ঘুরে ঘুরে সব দেখিয়ে দেবে।”
“চলে আসুন,” একটা পিঠব্যাগ হাতে তুলে নিয়ে বলল কানাই। “এই দিকে।” সিঁড়ি দিয়ে কানাই দোতলায় নিয়ে গেল ওকে। রান্নাঘর আর বাথরুমটা দেখিয়ে দিয়ে তালা খুলে দিল একটা ঘরের। সুইচ টিপে টিউব লাইটটা জ্বালিয়ে কানাই দেখল ওর নিজের শোয়ার ঘরটার সঙ্গে এটার তফাত কিছু নেই। এখানেও সেই দুটো সরু সরু তক্তপোশ, প্রত্যেকটার সঙ্গে একটা করে মশারি লাগানো। দেয়ালে কোথাও কোথাও নতুন প্লাস্টার, অনেক জায়গায় গত বর্ষার সময়কার ড্যাম্পের ছোপ, ফাটল ধরেছে কিছু কিছু জায়গায়। উলটোদিকে গরাদ দেওয়া একটা জানালা। ট্রাস্টের কম্পাউন্ডের লাগোয়া ধানজমিগুলি দেখা যাচ্ছে জানালা দিয়ে।
“চলবে এতে?” একটা তক্তপোশের ওপরে পিয়ার পিঠব্যাগটা রেখে জিজ্ঞেস করল কানাই।
ঘরের ভেতরে ঢুকে চারদিকটা একবার দেখল পিয়া। এমনিতে যদিও খালি খালি, কিন্তু যথেষ্টই আরামদায়ক ঘরখানা : চাদরগুলি পরিষ্কার, এমনকী বিছানার পায়ের কাছে একটা কাঁচা তোয়ালেও ভাঁজ করে রাখা আছে। জানালার পাশে একটা টেবিল আর খাড়া-পিঠ চেয়ার। দরজাটা শক্তপোক্ত দেখে খুশি হল পিয়া। ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানোর ব্যবস্থাও আছে।
“এত কিছু সত্যি আমি আশা করিনি,” পিয়া বলল। “অনেক ধন্যবাদ।”
মাথা নাড়ল কানাই, “ধন্যবাদ জানানোর কোনও প্রয়োজন নেই। আপনি আসাতে ভালই হয়েছে। একা একা একটু একঘেয়ে লাগছিল আমার।”
কী জবাব দেওয়া উচিত এ কথার বুঝতে না পেরে নিরপেক্ষ একটা হাসি হাসল পিয়া। “ঠিক আছে, নিজের মতো করে দেখেশুনে নিন,” বলল কানাই, “আমি ওপরের তলায় আছি, আমার মেসোর পড়ার ঘরে। কিছু দরকার লাগলে বলবেন।”