পথের দিশা
চারিদিকে এই গুণ্ডা এবং বদমায়েসির আখ্ড়া দিয়ে
রে অগ্রদূত, চ’লতে কি তুই পারবি আপন প্রাণ বাঁচিয়ে?
পারবি যেতে ভেদ ক’রে এই বক্র-পথের চক্রব্যুহ?
উঠবি কি তুই পাষাণ ফুঁড়ে বনস্পতি মহীরুহ?
আজকে প্রাণের গো-ভাগাড়ে উড়ছে শুধু চিল-শকুনি,
এর মাঝে তুই আলোকে-শিশু কোন্ অভিযান ক’রবি, শুনি?
ছুঁড়ছে পাথর, ছিটায় কাদা, কদর্যের এই হোরি-খেলায়
শুভ্র মুখে মাখিয়ে কালি ভোজপুরীদের হট্ট-মেলায়
বাঙলা দেশও মাত্ল কি রে? তপস্যা তার ভুললো অরুণ?
তাড়িখানার চীৎকারে কি নাম্ল ধুলায় ইন্দ্র বরুণ?
ব্যগ্র-পরান অগ্রপথিক,কোন্ বাণী তোর শুনাতে সাধ?
মন্ত্র কি তোর শুন্তে দেবে নিন্দাবাদীর ঢক্কা-নিনাদ?
নর-নারী আজ কন্ঠ ছেড়ে কুৎসা-গানের কোরাস্ ধ’রে
ভাবছে তা’রা সুন্দরেরই জয়ধ্বনি ক’রছে জোরে?
এর মাঝে কি খবর পেলি নব-বিপ্লব-ঘোড়সাওয়ারী
আসছে কেহ? টুট্ল তিমির, খুল্ল দুয়ার পুব-দয়ারী?
ভগবান আজ ভূত হ’ল যে প’ড়ে দশ-চক্র ফেরে,
যবন এবং কাফের মিলে হায় বেচারায় ফিরছে তেড়ে!
বাঁচাতে তায় আসছে কি রে নতুন যুগের মানুষ কেহ?
ধুলায় মলিন, রিক্তাভরণ, সিক্ত আঁখি, রক্ত দেহ?
মসজিদ আর মন্দির ঐ শয়তানদের মন্ত্রণাগার,
রে অগ্রদূত, ভাঙতে এবার আসছে কি জাঠ কালাপাহাড়?
জানিস যদি, খবর শোনা বন্ধ খাঁচার ঘেরাটোপে,
উড়ছে আজো ধর্ম-ধ্বজা টিকির গিঁঠে দাড়ির ঝোপে!
নিন্দাবাদের বৃন্দাবনে ভেবেছিলাম গাইব না গান,
থাকতে নারি দেখে শুনে সুন্দরের এই হীন অপমান।
ক্রুদ্ধ রোষে রুদ্ধ ব্যথায় ফোঁপায় প্রাণে ক্ষুদ্ধ বাণী,
মাতালদের ঐ ভাঁটিশালায় নটিনী আজ বীণাপাণি!
জাতির পারণ-সিন্ধু মথি’ স্বার্থ-লোভী পিশাচ যারা
সুধার পাত্র লক্ষ্মীলাভের ক’রতেছে ভাগ-বাঁটোয়ারা,
বিষ যখন আজ উঠল শেষে তখন কারুর পাইনে দিশা,
বিষের জ্বালায় বিশ্ব পুড়ে, স্বর্গে তাঁরা মেটান তৃষা!
শ্মাশন-শবের ছাইয়ের গাদায় আজকে রে তাই বেড়াই খুঁজে,
ভাঙন-দেব আজ ভাঙের নেশায় কোথায় আছে চক্ষু বুঁজে!
রে অগ্রদূত, তরুণ মনের গহন বনের রে সন্ধানী,
আনিস্ খবর, কোথায় আমার যুগান্তরের খড়্পপাণি!
কলিকাতা,
১৬ই চৈত্র, ১৩৩৩