মুক্তিকাম

স্বাগত বঙ্গে মুক্তিকাম!

সুপ্ত বঙ্গে জাগুক আবার লুপ্ত স্বাধীন সপ্তগ্রাম!

শোনাও সাগর-জাগর সিন্ধু-ভৈরবী গান ভয়-হরণ,–

এ যে রে তন্দ্রা, জেগে ওঠ তোরা, জেগে ঘুম দেওয়া নয় মরণ!

সপ্ত-কোটি কু-সন্তান তোরা রাখিতে নারিলি সপ্তগ্রাম?

খাসনি মায়ের বুকের রুধির? হালাল খাইয়া হলি হারাম!

মৃত্যু-ভূতকে দেখিলি রে শুধু, দেখিলি না তোরা ভবিষ্যৎ,

অস্ত-আঁধার পার হয়ে আসে নিত্য প্রভাতে রবির রথ!

অহোরাত্রিকে দেখেছে যাহারা সন্ধ্যাকে তারা করে না ভয়,

তারা সোজা জানে রাত্রির পরে আবার প্রভাত হবে উদয়।

দিন-কানা তোরা আঁধারের প্যাঁচা, দেখেছিস শুধু মৃত্যু-রাত,

ওরে আঁখি খোল, দেখ তোরও দ্বারে এসেছে জীবন নব-প্রভাত!

মৃত্যুর ‘ভয়’ মেরেছে তোদেরে, মৃত্যু তোদেরে মারেনি, ভাই!

তোরা মরে তাই হয়েছিস ভূত, আলোকের দূত হলিনে তাই!

জীবন থাকিতে ‘মরে আছি’ বলে পড়িয়া আছিস মড়া-ঘাটে,

সিন্ধু-শকুন নেমেছে রে তাই তোদের প্রাণের রাজ-পাটে!

রক্ত মাংস খেয়েছে তোদের, কঙ্কাল শুধু আছে বাকি,

ওই হাড় নিয়ে উঠে দাঁড়া তোরা ‘আজও বেঁচে আছি’ বল ডাকি!

জীবনের সাড়া যেই পাবে, ভয়ে সিন্ধু-শকুন পালাবে দূর,

ওই হাড়ে হবে ইন্দ্র-বজ্র, দগ্ধ হবে রে বৃত্রাসুর!

এ মৃতের দেশে, অমৃত-পুত্র, আনিবে কি সেই অমৃত-ঢল –

যাতে প্রাণ পেয়ে মৃত সগরের দেশ এ বঙ্গ হবে সচল?

জ্যান্তে-মরা এ ভীরুর ভারতে চাই নাকো মৃত-সঞ্জীবন,

ক্লীবের জীবন-সুধা আনো, করো ভূতের ভবিষ্যৎ সৃজন!

হুগলি

২০ পৌষ, ১৩৩১