» » দরজার ওপাশে

বর্ণাকার

হুমায়ূন আহমেদ

দরজার ওপাশে

‘দরজার ওপাশে’ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত হিমু ধারাবাহিকের দ্বিতীয় উপন্যাস। নব্বই দশকে হিমুর প্রথম উপন্যাস ময়ূরাক্ষী প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক সাফল্যের পর হিমু চরিত্র বিচ্ছিন্নভাবে হুমায়ুন আহমেদের বিভিন্ন উপন্যাসে প্রকাশিত হতে থাকে। ‘দরজার ওপাশে’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালের মে মাসে জ্ঞানকোষ প্রকাশনী, ৩৮/ক বাংলাবাজার, ঢাকা থেকে।

হিমুর বন্ধু রফিককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। চাকরি রক্ষা করতে রফিক হিমুর কাছে আসে। হিমুর এক বন্ধু জহির, তার পিতা একজন মন্ত্রী, হিমু ঠিক করে তার কাছেই যেতে হবে। এজন্য প্রথমে সে মন্ত্রীর নজর কাড়ার ব্যবস্থা করে যা থেকে বহু ঘটনা জন্ম নেয়।

এভাবেই দরজার ওপাশের কাহিনী এগিয়ে চলে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী মোবারক হোসেন, কাহিনীচক্রে যিনি মন্ত্রিত্ব হারান; তার পালিয়ে যাওয়া পুত্র জহির; হিমুর চাকরি হারানো বন্ধু রফিক ও তার স্ত্রী যুথী; পুলিশের ওসি মোহাম্মদ সিরাজুল করিম ও তার অসুস্থ স্ত্রী; এবং হিমুর ছোট মামাকে নিয়ে। এছাড়া হিমু তো আছেই, সঙ্গে আছে হিমু ধারাবাহিকের নিময়িত চরিত্র বড় ফুপা, বড় ফুপু এবং বাদল।

প্রস্তাবনা

তার ডাক নাম হিমু। ভাল নাম হিমালয়। বাবা আগ্রহ করে হিমালয় নাম রেখেছিলেন, যেন বড় হয়ে সে হিমালয়ের মত হয়—বিশাল ও বিস্তৃত, কিন্তু ধরা-ছোঁয়ার বাইরে নয়। হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়। ইচ্ছে করলে তিনি ছেলের নাম সমুদ্র রাখতে পারতেন। সমুদ্রও বিশাল এবং বিস্তৃত। সমুদ্রকে হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়। তার চেয়েও বড় কথা, সমুদ্রে আকাশের ছায়া পড়ে। কিন্তু তিনি সমুদ্র নাম না রেখে রাখলেন হিমালয়। কঠিন মৌন পর্বতমালা, যার গায়ে আকাশের ছায়া পড়ে না ঠিকই কিন্তু সে নিজেই আকাশ স্পর্শ করতে চায়। হিমুর বাবা চেয়েছিলেন হিমু একজন মহাপুরুষ হবে যে মহাপুরুষ পরম সত্য জানেন। কিন্তু হিমু কি চেয়েছিল? আমরা তার বাবার আকাঙ্ক্ষার কথা জানি, হিমুর আকাঙ্ক্ষা জানি না। সে কিসের সন্ধান করে বা আসলেই সে কোন কিছুর সন্ধান করে কি-না তা নিয়েই লেখা হল ‘দরজার ওপাশে’। যদিও আমি খুব গুরুত্বের সঙ্গে লেখাটি লিখেছি তবু বিনীত অনুরোধ করছি কেউ যেন গুরুত্বের সঙ্গে লেখাটি গ্রহণ না করেন। মিসির আলী নামে আমার একটি চরিত্র আছে। সে কাজ করে লজিক নিয়ে। তার চিন্তাভাবনা গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা যায় কিন্তু হিমু কাজ করে ‘এন্টি-লজিক’ নিয়ে। আমাদের এই জগতে ‘এন্টি-লজিকে’র স্থান নেই।

৫ই মে ১৯৯২
হুমায়ূন আহমেদ