১১৭১ সালের জুন মাস। সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী নিজ কক্ষে উপবিষ্ট। অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে খলীফা আল-আজেদের দূত। সালাম দিয়ে বলে, ‘খলীফা আপনাকে স্মরণ করেছেন।’ বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে সুলতান সালাহুদ্দীনের চেহারায়। ভ্রূ কুঞ্চিত করে দূতকে বললেন— ‘খলীফাকে আমার সালাম দিয়ে বলবে, জরুরী কোন কাজ থাকলে যেন তিনি আমাকে ডেকে পাঠান; অন্যথায় নয়। এ মুহূর্তে আমার এতটুকু অবসর নেই। তাঁকে আরও বলবে, আমার সামনে যে কাজ পড়ে আছে, তা হুজুরের দরবারে হাজেরী দেওয়া অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।’
দূত ফিরে যায়। মাথা নুইয়ে কক্ষে পায়চারী করতে শুরু করেন সুলতান সালাহুদ্দীন।
ফাতেমী খেলাফতের যুগ। আল-আজেদ মিসরে এ খেলাফতের খলীফা। সে যুগের খলীফারা হতেন রাজা। জুমার খুতবায় আল্লাহ ও রাসূলের নামের পরে খলীফার নামও উচ্চারণ করতে হত। বিলাসিতা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ ছিল না। নুরুদ্দীন জঙ্গী আর সুলতান সালাহুদ্দীন যদি না থাকতেন, কিংবা তারাও যদি অপরাপর আমীর-উজীরদের ন্যায় আয়েশী ও ঈমান-বিক্রেতা হতেন, তাহলে সে যুগের খলীফারা ইসলামী সাম্রাজ্যকে বিক্রি করে খেয়েই ফেলেছিলেন।
আল-আজেদও তেমনি এক খলীফা। মিসরের গভর্নর হয়ে আগমন করার পর তিনি সুলতান সালাহুদ্দীনকে প্রথম প্রথম বেশ কবার দরবারে ডেকে নিয়েছিলেন। সুলতান সালাহুদ্দীন বুঝে ফেলেছিলেন, খলীফা তাঁকে অযথা বারবার তলব করার উদ্দেশ্য, তাকে এ কথা বুঝানো যে, মিসরের সম্রাট, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী সালাহুদ্দীন নয়—তিনি।
খলীফা সুলতান সালাহুদ্দীনকে বেশ শ্রদ্ধা করতেন। তাকে ডেকে নিয়ে নিজের কাছে বসাতেন। কিন্তু ভাবগতিক ছিল রাজকীয়। কথা বলার ভঙ্গি ছিল তার শাসক-সুলভ। সুলতান সালাহুদ্দীনকে তিনি যতবার ডেকে পাঠিয়েছিলেন, ডেকে পাঠিয়েছিলেন সম্পূর্ণ অকারণে এবং অনর্থক খোশগল্প করে কোন কাজ ছাড়াই বিদায় দিয়েছেন। এ কারণে রোম উপসাগরে ক্রসেডারদের পরাজিত করে এবং সুদানী সৈন্যদের বিদ্রোহ দমন করে সুলতান সালাহুদ্দীন খলীফাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন।
খলীফার মহলের জাঁকজমক আগুন ধরিয়ে রেখেছিল সুলতানের বুকে। সোনার তৈরি পাত্রে পানাহার করেন তিনি। মদের পিপা-পেয়ালা তাঁর হীরা-খচিত। সুন্দরী মেয়েদের দ্বারা পরিপূর্ণ তাঁর হেরেম। আরবী, মিসরী, মারাকেশী, সুদানী ও তুর্কী ছাড়াও ইহুদী-খৃষ্টান মেয়েও আছে তাঁর রঙমহলে। এ সেই জাতির খলীফা, যে জাতির দায়িত্ব ছিল বিশ্বময় আল্লাহর বাণী প্রচার করা, যে জাতি বিশ্ব কুফরী শক্তির ভয়াবহ সামরিক প্রতিরোধের মুখোমুখি।
খলীফার আরও কয়েকটি বিষয় শূলের ন্যায় বিদ্ধ করছিল সুলতানকে। প্রথমত খলীফার ব্যক্তিগত রক্ষী বাহিনীর সদস্যরা ছিল সুদানী, হাবশী ও কাবায়েলী। তাদের আনুগত্য ছিল সংশয়পূর্ণ। দ্বিতীয়ত বিদ্রোহী ও ক্ষমতাচ্যুত সুদানী ফৌজের কমাণ্ডার ও নায়েব সালার ছিল দরবারে খেলাফতের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি— খলীফার ডান হাত।
সালাহুদ্দীন আইউবীর পরামর্শে আলী বিন সুফিয়ান চাকর-চাকরানী ও অন্যান্য দায়িত্বশীলদের বেশে খলীফার মহলে গুপ্তচর ঢুকিয়ে দেন। হেরেমের দুটি মেয়েকেও হাত করে তাদের উপর গুপ্তচরবৃত্তির দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাদের রিপোর্ট মোতাবেক খলীফা ছিলেন সুদানী কমাণ্ডারদের দ্বারা প্রভাবিত। খলীফা ষাট-পয়ষট্টি বছর বয়সের বৃদ্ধ। তবুও সুন্দরী মেয়েদের নাচ-গান ছাড়া রাত কাটে না তার। তার এই চারিত্রিক দুর্বলতা সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর প্রতিপক্ষের মোক্ষম সুযোগ। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তারা।
○ ○ ○
১১৭১ সালের ফেব্রুয়ারী কি মার্চ মাস। খলীফা আল-আজেদের হেরেমে আগমন ঘটে নতুন একটি মেয়ের। অস্বাভাবিক সুন্দরী এক তরুণী। আরবী পোশাক পরিহিত জনাচারেক লোক এসে উপহার হিসেবে মেয়েটিকে খলীফার হাতে তুলে দিয়ে যায়। দিয়ে যায় আরও মূল্যবান বেশ কিছু উপঢৌকনও।
মেয়েটির নাম উম্মে আরারাহ। রূপের ফাঁদে ফেলে অল্প ক’দিনেই খলীফাকে বশ করে ফেলে নবাগতা এই মেয়েটি। মহলের মেয়ে গুপ্তচর মারফত ঘটনা সম্পর্কে অবগত হন আলী বিন সুফিয়ান।
কসরে খেলাফতের এই কাণ্ড-কীর্তি সবই সুলতান সালাহুদ্দীনের জানা। কিন্তু খলীফার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার শক্তি তাঁর এখনও হয়নি। পূর্বেকার গভর্নর ও আমীরগণ চলতেন খলীফার সামনে মাথা নত করে। তাদের সেই চাটুকারিতার ফলে মিসর আজ বিদ্রোহের অগ্নিগর্ভ। তাদের আমলে খেলাফত ছিল বটে, তবে ইসলামের পতাকা ছিল অবনমিত। সেনাবাহিনী ছিল ইসলামী সাম্রাজ্যের। কিন্তু সুদানী সেনাপতি রাজ্য শাসনের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন নিজের হাতে। তার সম্পর্ক ছিল খৃষ্টানদের সঙ্গে। তারই সক্রিয় সহযোগিতায় কায়রো ও ইস্কান্দারিয়ায় খৃষ্টানরা বসতি স্থাপন করতে শুরু করেছিল। এই বসতি স্থাপনকারীদের মধ্যে ছিল অসংখ্য গুপ্তচর।
সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবী সুদানী সৈন্যদের দমন করেছিলেন ঠিক; কিন্তু বেশ ক’জন সেনাপতি রয়ে গেছে এখনও। যে কোন সময় তারা বিপদ হয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কসরে খেলাফতে তাদের বেশ প্রভাব।
খেলাফতের বিলাসপূর্ণ এই গদির উপর এখনই হাত দিতে চাইছেন না সুলতান। কারণ, কিছু লোক এখনও খেলাফতের ব্যাপারে আবেগপ্রবণ। কতিপয় তো খলীফার সক্রিয় সহযোগী। তন্মধ্যে চাটুকারদের সংখ্যাই অধিক। এই চাটুকারদের মধ্যে উচ্চপদস্থ এমন কর্মকর্তাও আছেন, যাদের স্বপ্ন ছিল মিসরের গভর্ণর হওয়া। কিন্তু সেই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত এখন সুলতান সালাহুদ্দীন।
খৃষ্টান গুপ্তচর ও বিশ্বাসঘাতকদের দ্বারা পরিপূর্ণ দেশ। গাদ্দারদের বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিলে খৃষ্টানদের পাল্টা আক্রমণের আশঙ্কা প্রবল। তাই সুলতান সালাহুদ্দীন খেলাফতের মদদপুষ্ট শাসকবর্গকে এখনই শত্রুতে পরিণত করতে চাইছেন না।
কিন্তু ১১৭১ সালের জুনে, একদিন খলীফা তাকে ডেকে পাঠালে তিনি যেতে পারবেন না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন। সুলতান কক্ষে পায়চারী করছেন। দারোয়ানকে ডেকে বললেন— ‘আলী বিন সুফিয়ান, বাহাহুদ্দীন শাদ্দাদ, ঈসা এলাহকারী ফকীহ ও আন-নাসেরকে এক্ষুনি আমার কাছে আসতে বল।’
○ ○ ○
এই ব্যক্তিগণ সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর খাস উপদেষ্টা ও বিশ্বস্ত। সুলতান সালাহুদ্দীন তাদের উদ্দেশে বললেন— ‘এইমাত্র খলীফার দূত আমাকে নিতে এসে গেল। আমি যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছি। খেলাফতের ব্যাপারে আমি কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চাই। এর প্রথম ধাপে আমি জুমার খুতবা থেকে খলীফার নাম তুলে দিতে চাই। এ ব্যাপারে আপনারা আমাকে পরামর্শ দিন।’
‘এ পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এখনও আসেনি। খলীফাকে মানুষ এখনও পয়গম্বর মনে করে, এতে জনমত আমাদের বিপক্ষে চলে যাবে।’ বললেন বাহাহুদ্দীন শাদ্দাদ।
‘এখনও মানুষ তাকে পয়গম্বর মনে করে। ক’দিন পর খোদা ভাবতে শুরু করবে। খুতবায় আল্লাহ-রাসূলের নামের পাশে তার নাম উচ্চারণ করে আমরাই তো তাকে পয়গম্বর ও খোদার আসনে বসিয়েছি। কি ঈসা ফকীহ! আপনার পরামর্শ বলুন।’ বললেন সালাহুদ্দীন।
‘আপনার মতের সঙ্গে আমিও একমত। কোন মুসলমান জুমার খুতবায় আলাহ-রাসূলের পাশাপাশি অন্য কোন মানুষের নাম সহ্য করতে পারে না। তাও আবার এমন মানুষ, যিনি মদ-নারীসহ সব রকম পাপে নিমজ্জিত। শত শত বছর ধরে খলীফাকে পয়গম্বরের মর্যাদা দিয়ে আনা হচ্ছে বলে চিরদিন তা বহাল রাখতে হবে এমন কোন কথা নেই। কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে আমি এমনই বুঝি। তবে রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা আমি বলতে পারব না।’ বললেন ঈসা এলাহকারী ফকীহ।
‘প্রতিক্রিয়া হবে অত্যন্ত তীব্র। আর হবে আমাদের বিপক্ষে। তথাপি আমার পরামর্শ, হয়ত এই কুপ্রথার অবসান ঘটাতে হবে কিংবা খলীফাকে খাঁটি মুসলমান বানিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত করতে হবে। তবে আমার দৃষ্টিতে দ্বিতীয়টি সম্ভব হবে না।’ বললেন বাহাহুদ্দীন শাদ্দাদ।
আলী বিন সুফিয়ান বললেন— ‘জনমত সম্পর্কে আমার চেয়ে আর কে ভাল জানবে? জনগণ খলীফা আল-আজেদ নামের সঙ্গে নয়— সালাহুদ্দীন আইউবী নামের সাথে পরিচিত। আমার গোয়েন্দা বিভাগের নির্ভরযোগ্য রিপোর্টে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, আপনার দু বছরের শাসনামলে জনগণ এখন বহু সমস্যার সমাধান পেয়েছে, যার কল্পনাও তারা কখনও করেনি। দেশে উন্নত কোন হাসপাতাল ছিল না। চিকিৎসার অভাবে সাধারণ রোগেও মানুষ মারা যেত। এখন উন্নতমানের সরকারী হাসপাতাল আছে। স্থানে স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। আগে চুরি-ডাকতি, হাইজ্যাক-ছিনতাইয়ের কারণে ব্যবসায়ীর নিরাপদে ব্যবসা করতে পারত না। এখন তারও অবসান ঘটেছে। অপরাধ প্রবণতা আগের তুলনায় এখন অনেক কম। মানুষ এখনদের সমস্যার সমাধানের জন্য সরাসরি আপনার শরণাপন্ন হতে পারছে। জানাতে পারছে তাদের আর্জি-ফরিয়াদ। আপনার গভর্নর হয়ে মিসর আগমনের আগে মানুষ সরকারী কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনীর নামে সন্ত্রস্ত থাকত সব সময়। আপনি তাদেরকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন। মানুষ এখন নিজেদেরকে দেশ ও জাতির অংশ ভাবতে শিখেছে। খেলাফত থেকে তারা অবিচার আর নির্দয়তা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। আপনি তাদেরকে সুবিচার উপহার দিয়েছেন, দিয়েছেন নাগরিক অধিকার। আমি প্রত্যয়ের সঙ্গে বলতে পারি,— জাতি খেলাফতের নয়— ইমারাতের সিদ্ধান্তই মেনে নেবে।’
সুলতান সালাহুদ্দীন বললেন— ‘জাতিকে আমি সুবিচার দিতে পেরেছি কি পারিনি, তাদের অধিকার তাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারলাম কি পারলাম না, আমি বলতে চাই না। আমি শুধু এটুকু জানি যে দেশের ঈমানদার জনসাধারণের ঘাড়ে কোন বাজে প্রথা চাপিয়ে রাখা যায় না। শিরক-কুফরী থেকে আমি জাতিকে মুক্তি দিতে চাই। দ্বীন-ধর্মের অঙ্গ বলে পরিচিত এসব কুপ্রথাকে আমি ছিন্নভিন্ন করে অতীতের আঁস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে চাই। এ প্রথা যদি বহাল থেকে যায়, তাহলে বিচিত্র কি যে, কাল-পরশু আমিও নিজের নাম খুতবায় শামিল করে নেব। বাতি থেকে বাতি জ্বলে। শিরকের এই বাতি আমি নিভিয়ে ফেলতে চাচ্ছি। কসরে খেলাফত পাপের আড্ডায় পরিণত হয়েছে। সুদানী বাহিনী যে রাতে মিসর আক্রমণ করেছিল, সে রাতেও খলীফা মদ পান করে হেরেমের মেঝে বুঁদ হয়ে পড়ে ছিল। আমার কৌশল যদি ব্যর্থ হত, তাহলে সেদিনই মিসরের বুক থেকে ইসলামের পতাকা হারিয়ে যেত। সে রাতে আল্লাহর সৈনিকরা যখন ইসলাম ও দেশের জন্য শহীদ হচ্ছিল, খলীফা তখন মদ খেয়ে পড়েছিল মাতাল হয়ে।
‘সুদানীদের হামলা প্রতিহত করে আমি যখন তাঁকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে গেলাম, তিনি তখন মাতাল ষাঁড়ের ন্যায় ঢুলু ঢুলু কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘শাবাশ! শুনে আমি বেশ খুশী হলাম। বিশেষ দূত মারফত আমি তোমার পিতার কাছে এর মোকারকবাদ ও পুরস্কার প্রেরণ করছি।’ তখন আমি তাকে বলেছিলাম— ‘খলীফাতুল মুসলিমীন। আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র। এ কর্তব্য আমি পালন করেছি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে— পিতার মনোরঞ্জনের জন্য নয়।’
খলীফা বললেন— ‘সালাহুদ্দীন! বয়সে তুমি এখনও নবীন; কিন্তু কাজ করে দেখালে বিজ্ঞ প্রবীণের মত!’
খলীফা আমার সঙ্গে এমনভাবে কথা বলেছিলেন, যেন আমি তার গোলাম। তা ছাড়া এই ধর্মহারা লোকটি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য এক শ্বেত হস্তিতে পরিণত হয়ে বসেছে।
পকেট থেকে একখানা পত্র বের করে সুলতান সবাইকে দেখালেন এবং বললেন, ছয়-সাত দিন হল নুরুদ্দীন জঙ্গী আমাকে এ পত্রখানা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন—
‘খেলাফত তিনভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দুই অধীন খলীফার উপর বাগদাদের কেন্দ্রীয় খেলাফতের প্রভাব শেষ হয়ে গেছে। আপনি লক্ষ্য রাখবেন, পাছে মিসরের খলীফা স্বাধীন শাসক হয়ে না বসেন। প্রয়োজনে তিনি সুদানী ও ক্রুসেডারদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতেও কুণ্ঠিত হবেন না। আমি ভাবছি, খেলাফত থাকবে শুধু বাগদাদে। খলীফা থাকবেন স্রেফ একজন। ‘অধীন খলীফা’ প্রথা বিলুপ্ত করা হবে। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতে রেখেছে। মিসরের খলীফার রাজত্বকে যদি আপনি তার মহলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন, তাহলে আমি আপনাকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দিয়ে যাব। সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, মিসরের আভ্যন্তরীণ অবস্থাও অনুকূল নয়। মিসরে আরও একটি বিদ্রোহ ঘটতে যাচ্ছে। আপনি সুদানীদের উপর কড়া নজর রাখুন।
পত্রটি পাঠ করে সুলতান সালাহুদ্দীন বললেন, আমাদের খেলাফত যে সাদা হাতী, তাতে সন্দেহ কি? আপনারা দেখছেন না, খলীফা আল-আজেদ যখন পরিভ্রমণে বের হন, তখন অর্ধেক সৈন্যকে তার নিরাপত্তার নামে চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়? খলীফার চলার পথে গালিচা বিছিয়ে দেওয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা হয়। যুবতী মেয়েদেরকে খলীফার গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটাতে বাধ্য করা হয়।
ইসলামী সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা, সম্প্রসারণ এবং জাতির উন্নয়নে যে অর্থ ব্যয় হতে পারত, সে অর্থ ব্যয় করছেন তিনি নিতান্ত বিনোদনমূলক পরিভ্রমণে। আমাদের আর সময় নষ্ট করা যাবে না। মিসরী জনগণ, এদেশের খৃষ্টসমাজ এবং অপরাপর সংখ্যালঘুদের কাছে আমাদের প্রমাণ দিতে হবে, ইসলাম রাজ-রাজড়াদের ধর্ম নয়। ইসলাম আরব মরুভূমির রাখাল-কিষাণ ও উষ্ট্ৰচালকদের সাচ্চা ধর্ম। ইসলাম মানবজাতিকে মানবতার মর্যাদাদানকারী অনুপম জীবন-ব্যবস্থা।’
বাহাহুদ্দীন শাদ্দাদ বললেন— ‘খলীফার বিরুদ্ধে এ্যাকশন নিতে গেলে আপনার নামে এই অপবাদ রটানো হতে পারে যে, খলীফাকে অপসারিত করে আপনি তার মসনদ দখল করতে চাচ্ছেন। সত্যের বিরোধিতা চিরদিন হয়েছে এবং হতে থাকবে।’
সুলতান সালাহুদ্দীন বললেন— ‘আজ মিথ্যা ও বাতিলের শিকড় এত শক্ত হওয়ার কারণ, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধাচারণের ভয়ে মানুষ সত্য বলা ছেড়ে দিয়েছে। সত্যের বাণী আজ নিভৃতে কাঁদে।’
‘আমাদের শাসকরা জনসাধারণকে অনাহারে রেখে, তাদের উপর জবরদস্তি শাসন চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে গোলামীর শৃংখলে বেঁধে রেখেছেন, যে শৃংখল ভেঙ্গে মানবতার মুক্তি নিশ্চিত করেছিলেন আমাদের রাসূল (সাঃ)। আমাদের রাজা-বাদশাহগণ এতই অধঃপাতে নেমে গেছেন যে, নিজেদের ভোগ-বিলাসের স্বার্থে তারা খৃষ্টানদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতছেন, তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন। আর এ সুযোগে খৃষ্টানরা ধীরে ধীরে ইসলামী সাম্রাজ্যকে হাত করে চলেছে। শুনুন শাদ্দাদ! আপনি বলেছেন, জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে, তাই না? সাহস নিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠুন। এসব বিরোধিতাকে ভয় করলে আমাদের চলবে না।’
সুলতান সালাহুদ্দীনের নায়েব সালার আন-নাসের বললেন, ‘বিরুদ্ধাচারণকে আমরা ভয় করি না, শ্রদ্ধেয় আমীর! আপনি আমাদেরকে রণাঙ্গনে দেখেছেন। শত্রুর বেষ্টনীতে অবরুদ্ধ হয়েও আমরা নির্ভীকচিত্তে লড়াই করেছি। ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়েও জীবনপণ লড়েছি। সংখ্যায় যখন আমরা নিতান্ত নগণ্য ছিলাম, শত্রু বাহিনীর সয়লাব প্রতিরোধ তখনও করেছি। কিন্তু এ মুহূর্তে আমি আপনাকে আপনারই বলা একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আপনি একবার বলেছিলেন, যে আক্রমণ বাইরে থেকে আসে, আমরা তা প্রতিরোধ করতে পারি। কিন্তু আক্রমণ যখন হয় ভেতর থেকে আর আক্রমণকারীরা হয় নিজেদেরই লোক, তখন আমরা থমকে যাই, কিংকর্তব্যবিমূঢ় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকি, হায়! একি হল আল্লাহ? মোহতারাম আমীরে মেসের! দেশের শাসনকর্তাই যখন দেশের শত্রু হয়ে যাবে, আপনার তরবারী তখন কোষের ভিতরেই ছটফট করতে থাকবে।’
সুলতান সালাহুদ্দীন বললেন— ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, নাসের! তরবারী আমার খাপের মধ্যেই তড়পাচ্ছে! স্বদেশের শাসকদের বিরুদ্ধে বেরুতে চাইছে না আমার শাণিত অসি। দেশের শাসকবর্গ জনগণের মর্যাদার প্রতীক। শাসকমণ্ডলীকে আমি বরাবরই শ্রদ্ধার চোখে দেখি কিন্তু ভেবে দেখুন, তারা সেই মর্যাদা রক্ষা করছে কতটুকু? শুধু খলীফা আল-আজেদে্র কথাই বলছি না। আলী বিন সুফিয়ানকে জিজ্ঞেস করুন। তার গোয়েন্দা বিভাগ মসুল, হাল্ব, দামেশ্ক ও মক্কা-মদীনা থেকে যে রিপোর্ট নিয়ে এসেছে, তা হল বিলাসপ্রিয়তার কারণে যে যেখানকার গভর্নর বা শাসক; সেই সেখানকার সার্বভৌম ক্ষমতাধর হয়ে বসেছে। সালতানাতে ইসলামিয়া খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে। খেলাফত এতই দুর্বল যে শাসক-গভর্নর এখন ব্যক্তিগত রাজনীতি চর্চার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমি জানি, জাতির এই বিক্ষিপ্ত শক্তিগুলোকে যদি আমরা একত্রিত করতে যাই, তাহলে তা আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে। আমাদের সামনে সমস্যার পাহাড় এসে দাঁড়াবে। কিন্তু নির্ভয়ে আমি কাজ করতে চাই। আশা করি আপনারাও সাহসিকতার সঙ্গে আমাকে সহযোগিতা দিয়ে যাবেন। সালতানাতে ইসলামিয়ার এই ধস আমাদের ঠেকাতেই হবে। আপনারা যে যা পরামর্শ দিয়েছেন, আমি তার মূল্যায়ন করব। তবে এখন থেকে আমি খলীফার ডাকে তখনই সাড়া দেব, যখন জরুরী কোন কাজ থাকবে। কি কাজে ডেকে পাঠালেন, খলীফাকে আগেই আমাকে তা অবহিত করতে হবে। অন্যথায় তার ডাকে একটি মুহূর্তও আমি নষ্ট করতে চাই না। আর আপাতত আমি জুমার খুতবা থেকে খলীফা্র নাম তুলে দিচ্ছি।’
উপস্থিত সকলে সুলতান সালাহুদ্দীনের এ সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তার বাস্তবায়নে পূর্ণ সহযোগিতা ও সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করার প্রতিশ্রুতি দেন।
○ ○ ○
খলীফা আল-আজেদ তার খাস কামরায় উপবিষ্ট। দূত ফিরে এসে জানায়, সুলতান সালাহুদ্দীন বলেছেন, কোন জরুরী কাজ থাকলে তিনি আসতে পারবেন। অন্যথায় তিনি বেজায় ব্যস্ত।
শুনে খলীফা অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন। দূতকে বললেন, ‘রজবকে আসতে বল।’
রজব খলীফার নিরাপত্তা বাহিনীর কমাণ্ডার। নায়েব সালারের সমান তার মর্যাদা। এক সময় ছিল মিসরের সেনাবাহিনীর অফিসার। খলীফার বডিগার্ডের কমাণ্ডারের দায়িত্বপ্রাপ্তির পর সে কসরে খেলাফত ও খলীফার নিরাপত্তা বাহিনীতে দেখে দেখে সুদানী হাবশীদের নিয়োগ দান করে। রজব সালাহুদ্দীন বিরোধী এবং খলীফার চাটুকারদের অন্যতম।
খলীফার খাস কামরায় উম্মে আরারাও উপস্থিত। দূতের রিপোর্ট শুনে সে বলে ওঠল, ‘সালাহুদ্দীন আইউবী আপনার একজন নওকর বৈ নয়। অথচ আপনি তাকে মাথায় তুলে রেখেছেন। লোকটাকে আপনি বরখাস্ত করছেন না কেন?’
‘কারণ, তার ফল ভাল হবে না। সেনাবাহিনীর কমাণ্ড তার হাতে। ইচ্ছে করলে এ বাহিনীকে সে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে।’ কম্পিত কণ্ঠে বললেন খলীফা।
ইত্যবসরে এসে উপস্থিত হয় রজব। মাথা ঝুঁকিয়ে খলীফাকে সালাম করে। রাগে কাঁপছেন খলীফা। ক্রুদ্ধ ও কম্পিত কণ্ঠে বললেন, ‘আমি পূর্ব থেকেই জানতাম, কমবখত একটা অহঙ্কারী ও অবাধ্য লোক। সালাহুদ্দীন আইউবীর কথা বলছি …….। দূত মারফত লোকটাকে আমি ডেকে পাঠিয়েছিলাম। সে এই বলে আমার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করল যে, কোন জরুরী কাজ থাকলে আসব; অন্যথায় আপনার আহ্বান আমার নিকট অর্থহীন। কারণ, আমার সামনে জরুরী কাজ পড়ে আছে।’
রাগের মাথায় বলতে বলতে হেঁচকি উঠে যায় খলীফার। তারপর প্রবল বেগে কাশি। দু হাতে বুক চেপে ধরেন তিনি। চেহারার রঙ যেন হলুদ হয়ে গেছে তাঁর। এমনি অবস্থায় তিনি ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন বদমাশটা এতটুকুও বুঝল না যে, আমি একে তো বৃদ্ধ, তার উপর হৃদরোগের রুগী; অপ্রীতিকর সংবাদ আমাকে ক্ষতি করতে পারে। আমি এখানে শরীর-স্বাস্থ্যের চিন্তায় অস্থির আর ও কিনা দেখাচ্ছে তার কাজের গরজ!’
‘তাকে আপনি কেন ডেকেছিলেন? আমাকে আদেশ করুন।’ বলল রজব।
‘ডেকেছিলাম তাকে একথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য যে, তার মাথার উপর একজন শাসকও আছেন। তুমিই তো বোধ হয় আমাকে বলেছিলে, সালাহুদ্দীন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হতে যাচ্ছে। আমি বার বার তাকে এখানে ডেকে আনতে চাই, তাকে আদেশ করতে চাই, যেন সে আমার অনুগত থাকে। ডেকে পাঠাতে হলে জরুরী কোন কাজ থাকতে হবে, এমন তো কথা নেই!’ বুকের উপর হাত রেখে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন খলীফা।
উম্মে আরারাহ খলীফার ঠোঁটের সঙ্গে মদের পেয়ালা ধরে বলল— আপনাকে শতবার বলেছি, মাথায় রাগ তুলবেন না। কতবার বলেছি, গোস্বা আপনার জন্য ক্ষতিকর!’
মদের পেয়ালা শূন্য হয়ে গেলে মেয়েটি একটি সোনার কৌটা থেকে এক চিমটি তামাকচূর্ণ নিয়ে খলীফার মুখে দেয় এবং পানি পান করিয়ে দেয়। খলীফা মেয়েটির বিক্ষিপ্ত রেশমী চুলে আঙ্গুল বুলিয়ে বিলি কাটতে কাটতে বললেন— ‘তুমি না হলে, আমার উপায় কি হত, বল তো? সকলের দৃষ্টি এখন আমার সম্পদ ও মর্যাদার প্রতি। আমার ব্যক্তিসত্ত্বার উপর কারও এক বিন্দু নজর নেই। আমার একজন স্ত্রীর পর্যন্ত আমার প্রতি এতটুকু আন্তরিকতা নেই। এ মুহূর্তে তুমি আমার একমাত্র ভরসা। তুমি না হলে আমার উপায় ছিল না। খলীফা উম্মে আরারাহকে টেনে কাছে এনে গা ঘেঁষে বসিয়ে তার সরু কটি বাহুবন্ধনে জড়িয়ে ধরেন।
‘খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনি বড় কোমল-হৃদয় ও মহৎ মানুষ। সে কারণেই সালাহুদ্দীন আইউবী এমন গোস্তাখী করতে পারল। আপনি ভুলে গেছেন, সালাহুদ্দীন আরব বংশোদ্ভুত লোক নয়, আপনার বংশের লোক নয়। সে কুর্দী। আমি ভেবে অবাক হই, এত বড় স্পর্ধা তাকে কে দিল! তার গুণ তো শুধু এটুকুই যে, লোকটা একজন দক্ষ সৈনিক; রণাঙ্গনের শাহ্সাওয়ার। লড়তেও জানে, লড়াতেও জানে। কিন্তু এই গুণ এত গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, মিসরের গভর্নরী তার হাতে তুলে দিতে হবে! সুদানের এত বিশাল, এত সুদক্ষ বাহিনীটিকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিল, যেভাবে শিশুরা তাদের হাতের খেলনা ভেঙ্গে নষ্ট করে দেয়। মহামান্য খলীফা! আপনি একটু চিন্তা করুন, এখানে যখন সুদানী সেনারা ছিল, নাজি এবং ঈদরৌসের ন্যায় সালারগণ ছিল, তখন মানুষ আপনার কুকুরের সামনেও মাথা নত করত। সুদানী বাহিনীর সালার আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় আপনার দ্বারে সারাক্ষণ করজোড়ে দাঁড়িয়ে থাকত। আর এখন? এখন ডেকে পাঠালে একজন অধীন পর্যন্ত আপনার আহ্বান মুখের উপর প্রত্যাখ্যান করে।’ বলল রজব।
‘রজব! সব দোষ তোমার।’ হঠাৎ গর্জে উঠে বললেন খলীফা।
অকস্মাৎ পাংশু হয়ে যায় রজবের মুখ। ভয়ার্ত বিস্ফারিত নয়নে তাকিয়ে থাকে খলীফার প্রতি। খলীফার বন্ধন ছাড়িয়ে চকিতে সরে পড়ে উম্মে আরারাহ। খলীফা পুনরায় তাকে কাছে টেনে পূর্বাপেক্ষা অধিক শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চিবুক টিপে সস্নেহে বলেন— ‘কী, ভয় পেয়েছ বুঝি? আমি রজবকে বলতে চাচ্ছি, আজ দু বছর পর সে আমার কানে দিচ্ছে, আমার পুরনো বাহিনী ও তার সালার ভাল ছিল; সালাহুদ্দীনের তৈরি বাহিনী খেলাফতের পক্ষে কল্যাণকর নয়! কেন রজব! একথা কি তুমি আগেও জানতে? জানলে বললে না কেন? আজ যখন মিসরের গভর্নর তার খুঁটি শক্ত করে ফেলেছে, এখন কিনা তুমি আমাকে বলছ, সে খেলাফতের অবাধ্য!’
‘বিষয়টা আমি পূর্ব থকেই জানতাম। কিন্তু হুজুরের তিরস্কারের ভয়ে কখনও বলিনি। সুলতান সালাহুদ্দীনকে নির্বাচন করেছে বাগদাদের খেলাফত। আমি ভেবেছিলাম, কাজটা আপনার পরামর্শেই হয়ে থাকবে। খেলাফতের মনোনয়নের বিরুদ্ধে মুখ খোলার দুঃসাহস আমি দেখাতে পারি না। আজ আমীরে মেসেরের গোস্তাখী আর আপনার মনোকষ্ট আমাকে মুখ খুলতে বাধ্য করেছে। এর আগেও একাধিকবার আমি সালাহুদ্দীন আইউবীকে হুজুরের সঙ্গে গোস্তাখী করতে দেখেছি। বিপদ সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করা আমি আমার কর্তব্য মনে করি।’ বলল রজব।
খলীফার বাহুবন্ধনে আবদ্ধ উম্মে আরারাহ খলীফার হাতের আঙ্গুলে আঙ্গুল ঢুকিয়ে শিশুর ন্যায় খেলছে। এবার দু হাতে খলীফার চিবুক স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করে— ‘মনটা এবার ঠিক হয়েছে?’
খলীফা তার চিবুক টেনে দিয়ে পুলকভরা কণ্ঠে বললেন— ‘ঔষধ-পথ্যে ততটা কাজ হয় না, যতটুকু কাজ হয় তোমার ভালবাসায়। আল্লাহ তোমাকে যে রূপ দিয়েছেন, তাই আমার সব রোগের মহৌষধ। খলীফা উম্মে আরারার মাথা নিজের বুকের উপর রেখে রজবকে বললেন— কিয়ামতের দিন যখন আমাকে জান্নাতে প্রেরণ করা হবে, তখন আমি আল্লাহকে বলব, আমি হুর চাই না— আমার উম্মে আরারাকে এনে দাও।’
‘উম্মে আরারাহ শুধু রূপসীই নয়— বড় বিচক্ষণও বটে। হুজুরের হেরেম ষড়যন্ত্রের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। উম্মে আরারাহ এসে সব কুচক্রীর মুখে ঠুলি পরিয়েছে। এখন আপনার কসরে খেলাফতে আপনার স্বার্থ বিরোধী কোন আচরণ করার সাধ্য কারও নেই।’ বলল রজব।
উম্মে আরারার প্রেম-পরশে নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন খলীফা। নিশ্চল মূর্তির মত উদাস বসে আছেন তিনি। রজবের এইসব কথার একটি শব্দও যেন কানে গেল না তার। তাঁর চৈতন্য ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করে উম্মে আরারাহ। বলে— ‘রজব সালাহুদ্দীন আইউবীর প্রসঙ্গে কথা বলছিল। আপনি মনোযোগ সহকারে তার বক্তব্য শুনুন এবং সালাহুদ্দীনকে বাগে আনার চেষ্টা করুন।’
সম্বিৎ ফিরে পান খলীফা। বলেন— ‘এ্যা, কি যেন বলছিলে রজব।’
‘বলছিলাম, আমি এ কারণে এতদিন মুখ বন্ধ রেখেছি যে, আমীরে মেসেরের বিরুদ্ধে কথা বললে আপনি তা মেনে নেবেন না। আর যা হোক, সালাহুদ্দীন আইউবী একজন দক্ষ সেনানায়ক তো বটে!’ বলল রজব।
‘সালাহুদ্দীন আইউবীর এই একটি গুণই আমার নিকট পছন্দনীয় যে, যুদ্ধের ময়দানে সে ইসলামের পতাকাকে পদানত হতে দেয় না। তার মত সেনানায়কদেরই আমার বড় প্রয়োজন, যারা রণাঙ্গনে খেলাফতে ইসলামিয়ার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখে।’ বললেন খলীফা।
‘গোস্তাখী মাফ করবেন খলীফাতুল মুসলিমীন! সালাহুদ্দীন আইউবী খেলাফতে ইসলামিয়ার মর্যাদার জন্য লড়াই করে না, লড়াই করে নিজের মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে। আপনি ফৌজের সালার থেকে নিয়ে একজন সাধারণ সিপাহীকে জিজ্ঞেস করে দেখুন; সালাহুদ্দীন আইউবী তাদের এই দীক্ষা প্রদান করেছে যে, লড়াই করে এমন একটি ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করবে, যার কোন সীমা-পরিসীমা থাকবে না। এতে পরিষ্কার বুঝা যায়, সে এমন একটি সাম্রাজ্যের স্বপ্ন দেখছে, যার সম্রাট হবে সে নিজে। তার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন নুরুদ্দীন জুঙ্গী। সালাহুদ্দীনের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য তিনি দু হাজার অশ্বারোহী এবং সমসংখ্যক পদাতিক বাহিনী প্রেরণ করেছেন। আপনিই বলুন, তিনি কি এ সৈন্য মিসরের খলীফার অনুমতি নিয়ে প্রেরণ করেছেন? খেলাফতের কোন দূত কি আপনার নিকট পরামর্শ নিতে এসেছিল যে, মিসরে অতিরিক্ত সৈন্যের প্রয়োজন আছে কি-না? যা কিছু হয়েছে, খেলাফতকে উপেক্ষা করেই হয়েছে।’ বলল রজব।
‘তুমি ঠিকই বলছ রজব! এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আর ওদিক থেকে আসা বাহিনীটিকে তত ফেরতও পাঠান হয়নি!’ বললেন খলীফা।
‘ফেরত এ জন্যে দেওয়া হয়নি যে, তাদের পাঠানোই হয়েছিল মিসরে সালাহুদ্দীনের হাতকে শক্ত করার জন্য। মিসরের পুরাতন বাহিনীকে কিষাণ আর ভিখারীতে পরিণত করার জন্য নুরুদ্দীন জঙ্গী এ বাহিনী প্রেরণ করেছেন। নাজি, ঈদরৌস, ককেশ, আবদে ইয়ায্দান, আবু আজর এবং এদের ন্যায় আরও আটজন সালার এখন কোথায়? হুজুর হয়ত কখনও ভেবে দেখেননি, এদের প্রত্যেককে সালাহুদ্দীন আইউবী গুপ্তভাবে খুন করিয়েছে। তাদের একটি মাত্র অপরাধ ছিল, তারা ছিলেন রণনায়ক হিসেবে সালাহুদ্দীন অপেক্ষা যোগ্য। সালাহুদ্দীন প্রচার করেছেন, গাদ্দারী ও বিদ্রোহের অপরাধে খলীফা তাদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।’ বলল রজব।
‘মিথ্যে— নির্জলা মিথ্যে। সালাহুদ্দীন আমাকে বলেছিল ঠিক যে, এরা বিশ্বাসঘাতক। আমি তাকে বলেছিলাম, সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন কর, আদালতে মোকদ্দমা দায়ের কর।’ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললেন খলীফা।
‘আর মোকদ্দমা না চালিয়ে তিনি নিজেই সেই রায় প্রদান করেন, খেলাফতের মোহর ছাড়া যার কোন কার্যকারিতা নেই। ঐ হতভাগা সালারদের অপরাধ ছিল, তারা খৃষ্টান সম্রাটদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল খৃষ্টানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা। বললে হয়ত আপনি বিশ্বাস করবেন না; কিন্তু বাস্তব সত্য হল, খৃষ্টানরা আমাদেরকে শত্রু মনে করে না। নুরুদ্দীন জঙ্গী আর শেরকোহর আক্রমণ-আশঙ্কায়ই কেবল তারা আমাদের বিরুদ্ধে সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে আছে। এখন শেরকোহ নেই ঠিক, কিন্তু তার স্থান দখল করেছে সালাহুদ্দীন আইউবী। এ লোকটি মূলত শেরকোহরই হাতে গড়া। শেরকোহ তার সারাটা জীবন খৃষ্টানদের সঙ্গে লড়াই করে, ইসলামের দুশমন সৃষ্টি এবং দুশমনের সংখ্যাই শুধু বৃদ্ধি করেছে। সালাহুদ্দীনের স্থলে অন্য কেউ যদি মিসরের গভর্নর হত, তাহলে খৃষ্টান সম্রাটগণ আজ আপনার দরবারে বন্ধুরূপে আগমন করতেন। হত্যা-লুণ্ঠন হত না, আমাদেরকে এতগুলো প্রবীণ ও সুদক্ষ সেনানায়ক হারাতে হত না।’ বলল রজব।
‘কিন্তু রজব! খৃষ্টানরা যে রোম উপসাগর থেকে আক্রমণ করল?’ বললেন খলীফা।
‘এর জন্যেও সালাহুদ্দীনই দায়ী। তিনিই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন, যা প্রতিহত করার জন্যে খৃষ্টানরা আক্রমণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সমস্যা যেহেতু তারই সৃষ্টি, তাই আক্রমণ যে হবে, তা পূর্ব থেকেই তার জানা ছিল। সেজন্য তিনি আগাম প্রতিরোধ ব্যবস্থাও করে রেখেছিলেন। অন্যথায় তিনি কি করে জানলেন যে, রোম উপসাগর থেকে খৃষ্টানরা আক্রমণ করবে? তিনি তো অন্তর্যামী নন! এটি ছিল তার সাজান নাটক, যে খেলায় এতীম হল হাজার হাজার শিশু, বিধবা হল অসংখ্য নারী। আর তার এ কাজে আমার উপস্থিতিতে আপনি তাকে বাহবা দিয়েছিলেন। তারপর তিনি সুদানী ফৌজকে— যারা ছিল আপনার একান্ত অনুগত— সামরিক মহড়ার নাম করে রাতের বেলা বাইরে নিয়ে যান এবং অন্ধকারে তাদের উপর তার নতুন বাহিনীকে লেলিয়ে দেন। পরে প্রচার করেন যে, নাজির ফৌজ বিদ্রোহ করেছিল; তাই তাদের এই পরিণতি বরণ করতে হয়। আপনি এত সরল-সহজ মানুষ যে, সালাহুদ্দীনের এই চাল আর প্রতারণা বুঝে উঠতে পারলেন না!’ বলল রজব।
উম্মে আরারাহ খলীফার বুকে মাথা রেখে এমন কিছু অশ্লীল আচরণ করে যে, খলীফার তীব্র মদের নেশা জেগে ওঠে। খলীফা এখন মেয়েটির হাতের খেলনা। রজবের কোন কথাই যেন শুনতে পাচ্ছেন না তিনি। রূপসী কন্যা উম্মে আরারাকে নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে খলীফার সব ভাবনা।
এই ফাঁকে সালাহুদ্দীন আইউবীর প্রতি নিতান্ত অমূলক আরেকটি আঘাত হানে রজব। বলে— ‘সালাহুদ্দীন আরও একটি প্রতারণামূলক আচরণ শুরু করেছেন। সুন্দরী যুবতী মেয়েদের ধরে এনে তিনি তাদের উপভোগ করেন। কয়েকদিন আমোদ-ফুর্তি করে এই বলে তাদের খুন করান যে, এরা খৃষ্টানদের গুপ্তচর। দেশবাসীর মনে খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করার জন্য তিনি সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে প্রোপাগাণ্ডা ছড়িয়ে রেখেছেন, খৃষ্টানরা গুপ্তচরবৃত্তির জন্য তাদের মেয়েদেরকে মিসর প্রেরণ করেছে। খৃষ্টানরা কুলটা নারীদের লেলিয়ে দিয়ে এই জাতির চরিত্র নষ্ট করছে। আমি তো এদেশেরই নাগরিক। দেশে কী ঘটছে সবই আমার জানা। দেশের পতিতালয়গুলোতে যারা বেশ্যাবৃত্তি করছে, তারা মিসর ও সুদানী নারী। দু চারজন খৃষ্টান থাকলেও তারা গুপ্তচর নয়, এটা তাদের পেশা।’
‘হেরেমের তিন-চারটি মেয়েও আমাকে জানিয়েছে, সালাহুদ্দীন আইউবী ডেকে নিয়ে তাদের সম্ভ্রমহানি করেছে।’ বলল উম্মে আরারাহ।
শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন খলীফা। বললেন— ‘আমার হেরেমের মেয়ে? তুমি এতদিন আমাকে বলেনি কেন?
‘বলিনি তার কারণ, এই অসুস্থ অবস্থায় আপনি সে দুঃসংবাদ সহ্য করতে পারতেন না। এখন আমার অলক্ষ্যে কথাটা মুখ থেকে ফস্কে বেরিয়ে গেল। হেরেমে আমি এমন ব্যবস্থা করে রেখেছি যে, এখন আর কোন মেয়ে কারও আহ্বানে মনে চাইলেই বাইরে যেতে পারবে না।’ জবাব দেয় উম্মে আরারাহ।
‘এক্ষুনি ডেকে এনে ওকে আমি বেত্রাঘাত করব। আমি এর প্রতিশোধ নেব!’ বললেন খলীফা।
‘প্রতিশোধ নিতে হবে অন্যভাবে। বর্তমানে দেশের জনসাধারণ সালাহুদ্দীনের পক্ষে। এভাবে সরাসরি প্রতিশোধ নিতে গেলে মানুষ আপনার বিরুদ্ধে ক্ষেপে ওঠবে।’ বলল রজব।
‘তবে কি আমাকে এই অপমান চোখ বুজে সহ্য করতে হবে?’ বললেন খলীফা।
‘না। আপনার অনুমতি ও সহযোগিতা পেলে আমি সালাহুদ্দীন আইউবীকে এমনভাবে গায়েব করে ফেলতে পারি, যেভাবে গুম করেছিলেন তিনি আমাদের প্রবীণ সালারদের।’ বলল রজব।
‘এ কাজ তুমি কিভাবে করবে?’ জিজ্ঞেস করেন খলীফা।
‘এ কাজ আমি হাশীশীদের দ্বারা করাব। তবে তারা বিপুল অর্থ দাবি করছে।’ বলল রজব।
‘টাকা যত প্রয়োজন আমি দেব। তুমি আয়োজন সম্পন্ন কর।’ বললেন খলীফা।
○ ○ ○
দুদিন পর জুমার নামায। ঈসা এলাহকারী কায়রোর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীবকে বলে দিয়েছেন, যেন তিনি জুমার খুতবায় খলীফার নাম উল্লেখ না করেন।
তুরস্কের অধিবাসী এ খতীবের নাম ইতিহাসে উল্লেখিত হয়নি। সাধারণ্যে তিনি “আমীরুল ওলামা” উপাধীতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি নিজেও বেশ কবার খুতবা থেকে এ বিদআত তুলে দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এক বর্ণনায় এমনও পাওয়া যায় যে, সালাহুদ্দীন আইউবী এ খতীবেরই পরামর্শে খুতবা থেকে খলীফার নাম তুলে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছিলেন। তবে সুলতান সালাহুদ্দীন আইউবীর কথোপকথনের যে সব দলীল-দস্তাবেজ পাওয়া যায়, তাতে প্রমাণিত হয়, এ সাহসী পদক্ষেপের কৃতিত্বের দাবিদার তিনিই।
শুক্রবার দিন। খতীব আমীরুল ওলামা খুতবা পাঠ করলেন; কিন্তু খলীফার নাম উল্লেখ করলেন না। মসজিদের মধ্যম সারিতে উপবিষ্ট সুলতান সালাহুদ্দীন। খানিক দূরে অপর এক সারিতে বসা আছেন আলী বিন সুফিয়ান। জনগণের প্রতিক্রিয়া আন্দাজ করার জন্য জনতার মাঝে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসেছেন সুলতান সালাহুদ্দীনের অপরাপর উপদেষ্টামণ্ডলী ও বিশ্বস্ত কর্মকর্তাবৃন্দ। আলী বিন সুফিয়ানের বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা সদস্যও মসজিদে উপস্থিত। খুতবা থেকে খলীফার নাম মুছে ফেলা একটি শক্ত পদক্ষেপই নয়, খেলাফতের আইনে গুরুতর অপরাধও বটে। সুলতান সালাহুদ্দীনের নির্দেশে সে অপরাধই সংঘটিত হল আজ। খলীফা আল-আজেদ ব্যতীত খেলাফতের বহু কর্মকর্তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করলেন সে অপরাধ কম।
নামায শেষ হল। মুসল্লীরা যার যার মত চলে গেল। উঠে দাঁড়ালেন সুলতান সালাহুদ্দীন। ধীরপায়ে এগিয়ে গেলেন খতীবের কাছে। সালাম মোসাফাহার পর বললেন— ‘আল্লাহ আপনার সহায় হোন মহামান্য ইমাম!’
খতীব আমীরুল ওলামা বললেন— ‘এ নির্দেশ জারি করে আপনি জান্নাতে নিজের ঠিকানা করে নিলেন।’
মসজিদ থেকে বেরুতে উদ্যত হন সালাহুদ্দীন। কয়েক পা অগ্রসর হয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যান। আবার খতীবের নিকট গিয়ে বললেন— ‘খলীফার পক্ষ থেকে যদি আপনার ডাক আসে, তাহলে সরাসরি তার কাছে না গিয়ে আপনি আমার কাছে চলে আসবেন। আমি আপনাকে খলীফার নিকট নিয়ে যাব।’
‘মোহতারাম আমীরে মেসের! যদি গোস্তাখী মনে না করেন, আমি বলব মিথ্যা ও শেরেকের বিরুদ্ধে কাজ করা ও সত্য বলা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে সে অপরাধের শাস্তি আমি একাই ভোগ করব। এর জন্য আমি আপনাকে কষ্ট দিতে যাব না। খলীফা যদি আমাকে তলব করেন, আমি একাই গিয়ে তার কাঠগড়ায় হাজির হব। মূলত আপনার নির্দেশে নয়— আল্লাহর হুকুমে আমি খুতবা থেকে খলীফার নাম বাদ দিয়েছি। আল্লাহ আমার সহায় হোন।’ বললেন খতীব।
○ ○ ○