» » মহাভারতের শেষ মহাবীর

বর্ণাকার

হেমেন্দ্রকুমার রায়

মহাভারতের শেষ মহাবীর

‘মহাভারতের শেষ মহাবীর’ হেমেন্দ্রকুমার রায় রচিত ঐতিহাসিক কাহিনী; এটি এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি প্রকাশিত হেমেন্দ্রকুমার রচনাবলীর ষষ্ঠ খণ্ডের প্রথম উপন্যাস, এবং শোভন রায় সংকলিত ‘ঐতিহাসিক সমগ্রে’র তৃতীয় উপন্যাস।

কিন্তু কে এই মহাভারতের শেষ মহাবীর?

মহাকাব্য মহাভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কুরুক্ষেত্র। এ নাম শুনলে আজও প্রত্যেক হিন্দুর ধমনিতে চঞ্চল হয়ে ওঠে রক্তস্রোত। এ কেবল কুরু-পাণ্ডবের আত্মঘাতী যুদ্ধক্ষেত্র নয়, এখানেই প্রথমে পার্থসারথিরূপে ভগবানের অবতার শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র মুখে আত্মপ্রকাশ করেছিল গীতার মহাবাণী। এখানে একদিকে যেমন ভীমার্জুন, কর্ণ, ভীষ্ম ও দ্রোণ প্রভৃতি মহা মহা যোদ্ধারা অপূর্ব বীরত্ব দেখিয়ে অর্জন করেছিলেন অমরত্ব, আর একদিকে তেমনি নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল আর্য-ভারতের সমস্ত ক্ষাত্র-বীর্য। এই শতস্মৃতি-বিজড়িত ভূমির উপরে গিয়ে দাঁড়ালে আজও হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করা যায় শত মৃত পুত্রের শোকে কাতর গান্ধার-কন্যা গান্ধারীর করুণ ক্রন্দন, নিষ্ঠুর সপ্তরথীর দ্বারা আক্রান্ত বালক অভিমন্যুর নিষ্ফল সিংহনাদ, দুঃশাসনের রক্তপান করে তৃতীয় পাণ্ডবের উন্মত্ত তাণ্ডব, রক্তবন্যায় ভাসতে ভাসতে অষ্টাদশ অক্ষৌহিণীর ঊনচল্লিশ লক্ষ ছত্রিশ হাজার ছয় শত সৈন্যের চরম মৃত্যুযন্ত্রণা! এই বিরাট নরমেধযজ্ঞের ফল কী? পাণ্ডবদের মৃত্যুর পরে আর্যাবর্তে এমন কোনও ক্ষত্রিয় রইল না, বিদেশি যবনদের বাধা দেবার জন্যে সবল হস্তে যে অস্ত্রধারণ করতে পারে। তাই তারই কিছুকাল পরে উত্তর ভারতের নাট্যশালার মধ্যে প্রবেশ করতে দেখি ইরানি এবং গ্রিক দিগ্‌বিজয়ীদের। ষষ্ঠ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে কুরুক্ষেত্র বা স্থানেশ্বরের সিংহাসনে উপবিষ্ট ছিলেন প্রভাকরবর্ধন। তখন গুপ্তসাম্রাজ্যের পতন হয়েছিল বটে, কিন্তু গুপ্তবংশীয় ক্ষুদ্রতর রাজারা তখনও ভারতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত বলে গণ্য হতেন। প্রভাকরবর্ধনের রানি ছিলেন যশোমতী। তিনি গুপ্তবংশজাতা এবং সেইজন্যে তার স্বামী নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করতেন। তাদের দুই পুত্র। জ্যেষ্ঠ রাজ্যবর্ধন এবং কনিষ্ঠ হর্ষবর্ধন। রাজশ্রী নামে তাদের এক কন্যার নাম ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। তিনি ছিলেন কান্যকুজের অধিপতি গ্রহবর্মার সহধর্মিণী।

কিন্তু এই বইটিতে যে মহাবীরের কাহিনি বলা হয়ছে, তিনি কে? তিনি কি পৌরাণিক ইতিহাস-পূর্ব যুগের মানুষ? হ্যাঁ। কেবল প্রাচীন ইতিহাসে, ভ্ৰমণ-কাহিনিতে, কাব্যে ও নাট্য-সাহিত্যেই তাঁর নাম অমর হয়ে নেই, তাকে সত্যিকার রক্ত-মাংসের মহাবীর বলে স্বীকার করেছেন আধুনিক ঐতিহাসিকরাও। সপ্তম শতাব্দীর আর্যাবর্ত গৌরবোজ্জ্বল হয়ে আছে একমাত্র তারই নামের মহিমায়। তিনি হচ্ছেন ভারতের শেষ হিন্দু-সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মহারাজাধিরাজ শ্রীহর্ষ। ইতিহাস তাকে হর্ষবর্ধন বলে জানে।