» » অবতারের মহিমা

বর্ণাকার

অবতারের মহিমা

উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

সে দিন পূর্ণিমা। সন্ধ্যাবেলাই চায়ের পেয়ালা কোলে করে’ পণ্ডিত হৃশীকেশের সঙ্গে মুখোমুখি হ’য়ে বসে’ রকম-বেরকমের খোসগল্প করা যাচ্চে, এমন সময় ঘর্ম্মাক্ত কলেবরে হাঁপাতে হাঁপাতে গোপাল দা’ এসে উপস্থিত।

গোপাল দা’কে তোমার মনে আছে ত? দাদার যা’ বয়স তাকে ঠিক যৌবন বলা চলে না, কিন্তু এখনও তেমনি নধর গোল গাল চুকচুকে চেহারা; আর দুপয়সা রোজগারের সঙ্গে সঙ্গে ধৰ্ম্ম-কর্ম্মেও মতিগতি হয়েছে। বার, ব্রত, উপবাস, হাঁচি, টিক্‌টিকি প্রভৃতি অষ্টসাত্ত্বিক লক্ষণের অনেকগুলিই দেখা দিয়েছে, টাকের পিছনে একটি ছোটখাট টিকিও গজিয়েছে। দাদা ফিরছেন এই পূজোর পর সস্ত্রীক গয়া দর্শন করে।

ঘরে ঢুকেই একখানা ঠ্যাং-ভাঙ্গা চেয়ারের উপর বস্‌তে গিয়ে দাদা প্রায় ডিগবাজী খাব-খাব হয়েছেন এমন সময় পণ্ডিত হৃশীকেশ চায়ের পেয়ালায় গোঁফজোড়া জুব্‌ড়ে চোখদুটি উঁচু করে’ খুব সহানুভূতিসূচক স্বরে বলিলেন— “দেখো, দাদা, ভাঙ্গা চেয়ারখানায় যেন বোসো না”। দাদার চোখের কোণে সাত্বিক প্রকৃতির ঈষৎ বিকৃতির লক্ষণ দেখা দিল; কিন্তু দাদা সেটুকু সাম্‌লে নিয়ে আমার দিকে চেয়ে বল্‌লেন— “এবার গয়ায় গিয়ে দেখে এলাম বুদ্ধদেবের দাঁত। সহজে কি মোহাস্ত দেখাতে চায়! অনেক কাকুতি-মিনতি করে’ তবে দর্শন পেয়েছি। অবতার পুরুষের অঙ্গ কি না—এই এত বড়! আর কি মহিমা, ভায়া! এমন হাজার হাজার লোক সেখানে পূজো মানস করে আধিব্যাধি থেকে যুক্ত হচ্চে।”

পণ্ডিত হৃদীকেশ ততক্ষণ নিজের পেয়ালাটি নিঃশেষ করে’ দাদার জন্য এক পেয়ালা ঢেলে ভুল করে’ নিজের মুখের দিকে তুল্‌তে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ বুদ্ধদেবের দাঁতের মহিমা শুনে সেটি আবার নামিয়ে রেখে বললেন— “তা, আর হবে না! আমাদের বিট্‌লেরাম বাবাজী ত ভক্তিতত্ত্ব-কৃজ্ঝটিকায় লিখেই গেছেন—“হরির চেয়ে হরি নামের বেশী মাহাত্ম্য—তা’ বুদ্ধদেবের চেয়ে তাঁর দাতের মহিমা যে বেশী হবে’ এতো জানা কথা।”

বুদ্ধদেবের সম্বন্ধে এ রকম বক্রোক্তি শুনে গোপাল দা’ একটু ক্রুদ্ধ হবার চেষ্টা কর্‌ছিলেন। কিন্তু তাঁর অন্তরাত্মায় যে ক্রোধের উদ্রেক হয়েছিল তা তাঁর অস্থি, মজ্জা, মেদ, বসা, চৰ্ম্ম, ফুঁড়ে বহিরঙ্গে প্রকাশ হবার পূর্ব্বেই পণ্ডিতজী ফের বক্তৃতা সুরু করে’ দিলেন—“শাস্ত্রে যে বলে অবতার পুরুষেরা আত্মভোলা, গোপালদা’র কথা শুনে সে-সম্বন্ধে আজ আমার সব সন্দেহ দূর হ’য়ে গেল। আহা! দেখ একবার তামাসা! বুদ্ধদেব নিজেই সংসারের আধিব্যাধির দাওয়াই খুঁজ্‌তে খুঁজ্‌তে হয়রাণ হয়েছিলেন। তাঁর নিজের দাঁতের যে এত গুণ তা’ যদি জানতেন ত একটা কেন, বত্রিশটাই উপড়ে ফেলে গোপালদা’কে বখ্‌সিস দিয়ে যেতেন। বৌদিদিকে আর তা’হলে ঢোলকের মত মাদুলি ব’য়ে বেড়াতে হোতো না।”

বক্তৃতার ঝাপ্‌টা লেগে চা’টা মাঝ থেকে ঠাণ্ডা হয়ে যায় দেখে আমিই সেটার সদ্ব্যবহার করে’ নিজেকে একটু গরম করে’ নিলুম। কেননা দেখলুম যে, এই শনিবারের বারবেলায় পণ্ডিতজীর জিহ্বাখানি বেশ একটু বিষিয়েছে, কাউকে-না-কাউকে না ছুব্‌লে তিনি ছাড়বেন না।”

রাগে গোপালদা’র শ্যামবর্ণ মুখখানি একেবারে অন্ধকার বর্ণ হয়ে দাঁড়াল। তক্তাপোষে একটা বিরাট চাপড় মেরে তিনি বল্‌লেন—“কি সৰ্ব্বনেশে কথা! আমি দেখে এলাম বুদ্ধদেবের দাঁত, আর তুমি না বল্লেই হবে! অবতার পুরুষদের তুমি ঠাওরেছে কি? তাদের মহিমা যুগযুগান্তর ধরে’ থাকে!”

পণ্ডিত হৃশীকেশ বক্তৃতার পর গলাটা একটু ভিজিয়ে নেবার জন্যে এতক্ষণ আর এক পেয়ালা চা ঢাল্‌ছিলেন। এক চুমুক খেয়ে জিহ্বাটা বেশ একটু শানিয়ে নিয়ে বললেন—“সে কথা আর বল্‌তে! মহিমার জ্বালায় হাড় ভাজা-ভাজা হয়ে উঠেছে। এলেন ত্রেতাযুগে অবতার রামচন্দ্র, আর ছেড়ে দিয়ে গেলেন দেশের মধ্যে এক পাল হনুমান! গেরস্তর বাগানে কলাটা, মুলোটা বার্ত্তাকুটা কিছুই আর থাকবার জো নেই! তারপর দ্বাপরে এলেন শ্রীমান কৃষ্ণচন্দ্র, ঢলাঢলি রক্তারক্তি যা করে’ গেলেন, তার ছাপ এখনও দেশ থেকে মোছেনি। কলিতে নাকি এসেছিলেন শ্রীগৌরাঙ্গ—আর ছেড়ে দিয়ে গেছেন দেশে ঝাঁকে ঝাঁকে নেড়ানেড়ী। বলা নেই, কওয়া নেই, একেবারে বাড়ীর ভিতরে এসে—‘জয় রাধে কৃষ্ট, দাও মা দুটি ভিক্ষে’, দিতেই হবে’;– আর এদিকে চালের দর ১২৲ টাকা। আজকাল আবার গাঁয়ে গাঁয়ে অবতার গণ্ডায় গণ্ডায় জন্মে দেশময় ত্যাগধর্ম্মের মহিমা ঘোষণা কর্‌তে লেগে গেছেন। পুরাণো অবতারদের তবু দুটো ফুল বিল্বপত্র দিয়েই তুষ্ট করা যায়; কিন্তু এই হালফ্যাসনের অবতারদের বচনের ঠেলা সাম্‌লাতে পোড়া দেশের যে কত দিন লাগবে তা’ ভগবানই জানেন।”

পণ্ডিত হৃশীকেশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাকি চা টুকু শেষ করে’ দিলেন। গোপাল দা’ কি-একটা বলতে যাচ্ছিলেন; কিন্তু তাঁর ভাবটা স্ফুট ভাষায় ব্যক্ত হবার পূর্ব্বেই মা সরস্বতী পণ্ডিতজীর জিহ্বায় ভর করে’ বোসলেন। তিনি উর্দ্ধবাহু হয়ে শূন্যে একটা টুকি মেরে বল্লেন—“চুলোয় যাক্‌ ত্যাগের কথা ঘরে সম্পত্তির মধ্যে ত একটা বুড়ী ব্রাহ্মণী আর-একটা সিংভাঙ্গা গোরু; তাও আবার দু’ বছর থেকে দুধ দেয় না। সেগুলো না হয় কামিনী-কাঞ্চনের দোহাই দিয়ে ত্যাগই কল্লুম। আর এই দুর্ভিক্ষের দিনে অবতার পুরুষদের হুকুম মত কোনো দিন বা উপবাস; কোনো দিন বা পান্তাভাত ভক্ষণ, তা’ও না-হয় চল্‌তে পারে। কিন্তু অবতারেরা যদি পাজি-পুঁথি দেখে একটা ভাল দিন স্থির করে’ হুকুম করেন যে আজ পাঁচ্‌টা দশ মিনিট থেকে সাতটা বাইশ মিনিট পৰ্য্যন্ত সবাই দিলে কাঁদ; কাল ন’টা সতের মিনিট থেকে সাড়ে দশটা পৰ্য্যন্ত সবাই মিলে গড়ের মাঠে গিয়ে ডিগবাজী খাও, তা’হলে যে পৈতৃক প্রাণটা নিতান্তই অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ৷ এ সব দাঁত-পূজো, খড়ম-পুজো, কাঁথা-পূজোরই উল্টো পিঠ।”

কথাগুলোর মধ্যে রাজনীতির একটু বোট্‌কা গন্ধের আভাষ পেয়ে তাড়াতাড়ি সেরে নেবার জন্যে আমি বল্‌লাম— “ও-সব সে কালে চল্‌তো, পণ্ডিতজী; আজকালকার ছেলেরা অত সহজে ঘাড় নোয়ায় না।”

পণ্ডিতজী একটু হেঁসে বল্লেন— “ঐ ত তোমাদের রোগ, ভায়া; পুরাণো বন্ধু একটু বেশ বদ্‌লে এলে আর তোমরা চিন্‌তে পার না। মানুষের ধাত কি আর অত সহজে বদ্‌লায়? ছাপান্ন পুরুষ ধরে’ যারা খড়ম-পূজো কোরে এসেছে, তাদের ঘাড়গুলি কারো না কারো পায়ের তলায় লুটিলে পড়বার জন্যে ব্যস্ত হয়ে রয়েছে। যেমন-তেমন একটা হলেই হলো—হয় গুরুঠাকুর, নয় প্রভুপাদ, নয় মহাত্মা, নয় লিডার। ওসব এক জিনিসেরই কালভেদে ভিন্নরূপ। এঁরাই প্রমোশন পেয়ে ক্রমশঃ অবতার হ’য়ে দাঁড়ান। তখন তাদের হাতে ভেল্কি হয়, দাঁতে রোগ সারে, চটিজুতোর শুকতলা ভিজিয়ে খেলে একবারে পরমপদ প্রাপ্তি হয়।”

চটিজুতার কথা শুনে গোপাল দা’ও হেসে ফেল্লেন, কিন্তু পণ্ডিতজীর তখন বক্তৃতাটা মাথায় চড়ে গেছে। তিনি বল্লেন— “না, না, দাদা এটা হেসে ওড়াবার কথা নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, ধৰ্ম্মনীতি, এমনকি গার্হস্থ্যনীতিতে পর্যন্ত আমরা ঐ খড়ম পূজোকেই সার সত্য বলে স্থির করে’ ফেলেছি। আমরা ফুল বিল্বপত্র হাতে করে’ বসে আছি, যেই একটি ছোটখাট মহাপুরুষের আবির্ভাব, অমনি শ্রীচরণে অঞ্জলি দিয়ে, ঢাক ঢোল কাঁশি বাজিয়ে, চামর ঢুলিয়ে, হেঁসে কেঁদে, নেচে গেয়ে এমনি একটা বীভৎস ব্যাপার করে তুলি যে মহাপুরুষটি যদি সাক্ষাৎ ভগবানও হন, ত তাঁর ভূত হ’য়ে যেতে বড় বেশী বিলম্ব হয় না। তারপর তাঁর দাঁত, নখ, চুল নিয়ে দলাদলি আর মারামারি। তিনি ফুস কর্‌লেন কি ফাস্ কর্‌লেন, টুক করলেন কি টাক্‌ করলেন—এই নিয়ে গভীর আধ্যাত্মিক গবেষণা! এ সব কি ধর্ম্ম রে বাপ!—এ শুধু জড়ভরতের জটলা; বক্-ধার্ম্মিক শেয়াল-কোম্পানির আধ্যাত্মিক হুক্কা হুয়া।”

গোপাল দা এগুক্ষণ চুপ করে’ ভ্যাদা গঙ্গারামের মত বসে ছিলেন। এইবার পণ্ডিতজীকে থাম্‌তে দেখে একটু সাহস পেয়ে বল্লেন—“তা’ বলে ত আর বাপ পিতাম’র ক্রিয়াকাণ্ড ছাড়তে পারিনে।”

পণ্ডিতজী লাফিয়ে উঠে বল্লেন— “সে দোষ ত তোমার নয়, দাদা, দোষ তোমার ভগবানের। মনটা যার এখনও চার পায়ে হাঁটে, তাকে মানুষের আকার দিয়ে তার শরীরটাকে দু’পায়ে হাঁটান—একটা অত্যাচার বই ত নয়! মনটা আমাদের ক্রমাগত খুঁজ্‌ছে কোথায় কার পায়ের তলায় পড়ে’ নাক রগড়াবে; তাই আমরা সব কাজেই একজন-না-একজন মুরুব্বীর দোহাই দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই। পরকালের ব্যবস্থা করতে হবে—ত টেনে আন দু’চারটি মহত্মাকে না হয় অবতারকে; দেশের স্বাধীনতা চাই ত আওড়াও মিল-বেনথামের বুলি; সমাজ গড়তে হবে ত নিয়ে এস ধার করে’ বল্‌সেভিজম্ ঘরকন্না গড়তে হবে, ত ডাক রাঙ্গা ঠানদিদিকে, না হয় ত পদী পিসিকে। মোট কথা কারো-না-কারো আওতায় পড়লে তবে আমরা থাকি ভাল। আমাদের মনগুলি যে এক-একটি বোরখাঢাকা পর্দ্দানসিন বিবি। ভগবানের খোলা হাওয়া গায়ে লাগলেই তাদের ধর্ম্ম-কর্ম সব পণ্ড হ’য়ে যাবে। আমাদের মনে মনে বেশ একটা ভয় আছে যে পাঁচজন মুরুব্বী মিলে ভগবানের এই সৃষ্টিটাকে ঠেকনা দিয়ে না রাখলে সৃষ্টিটা একদিন হুড়মুড় করে’ পড়ে যাবে। তাই আমাদের কথায়-কথায় পরের দোহাই, বাপ-পিতাম’র নাম করে নিজেদের পঙ্গুত্ব লুকিয়ে রাখা। নমশূদ্রের জল চল্ কর্‌তে হবে, ত দেখ পরাশর, যাজ্ঞবল্ক্য কি বলে গেছেন; আর পরাশর, যাজ্ঞবল্ক্য যে এদিকে কবে মরে ভূত হ’য়ে গেছেন তার ঠিক-ঠিকানা নেই! যারা জাত মানেন, তাঁরা দোহাই দেন পুঁথির, আর যারা মানেন না তাঁরা দোহাই দেন ফ্রেঞ্চ রিভলিউসনের। দোহাই একটা দেওয়া চাই!! নিজের বলে ত আমাদের কিছু নেই। সমাজ আর ধর্ম্ম—বাপ ঠাকুরদাদার; দেশটা বিদেশীর; আর মনটা— যিনি দয়া করে দুটি পায়ের ধুলা দেন তাঁর। আমাদের ধর্ম্মের মধ্যে খড়ম-পূজো আর কর্ম্মের মধ্যে পাদোদক পান! সস্কৃত-পড়া পণ্ডিত, আর ইংরিজী পড়া গ্রাজুয়েট— সবাইকার ঐ এক গতি; তফাতের মধ্যে এই যে একজন গড়াগড়ি দেন পূর্ব্বমূখ হ’য়ে, আর একজন পশ্চিম মুখ হ’য়ে; একজন মন্ত্র আওড়ান সস্কৃতে আর একজন আওড়ান ইংরিজিতে। ধর্ম্মের বেলায় সত্যপীর আর রাজনীতির বেলায় মন্টেগু।”

বক্তৃতাটা বেশ জমে আসছে, এমন সময় বাড়ীর ভেতর থেকে পোঁ করে শাঁক বেজে উঠতেই পণ্ডিতজী থেমে গিয়ে আমার মুখের দিকে চাইলেন। ও! আজ যে পূর্ণিমা! আমরা বাহিরে বসে বক্তৃতা করছি আর ব্রাহ্মণী যে ঘরের মধ্যে সত্যপীরকে সিন্নি খাওয়াচ্ছেন! তার পরেই দরজার শিকলি নেড়ে ডাক পড়্‌ল—ঠুন্‌ ঠুন্ ঠুন্, ঠুন্ ঠুন্ ঠান। আমি একটু উসখুস করছি দেখে পণ্ডিতজী বল্লেন, “যাও, ভায়া, সত্যপীরের কথা শোন গে। আজ তা’হলে এই খানেই বেদব্যাসের বিশ্রাম।

পণ্ডিতজী বেরিয়ে পড়লেন; আর আমি গোপাল দাদাকে সঙ্গে নিয়ে সত্যপীরের কথা শুনতে চললুম। পুরুৎঠাকুর তখন গলা ছেড়ে পড়্‌ছেন—

“একথা শ্রবণ কালে                                যেবা অন্য কথা বলে

আর যেবা করে উপহাস,

লাঞ্ছিত সে সৰ্ব্ব ঠাঁই                               তাহার নিষ্কৃতি নাই

আকস্মাৎ হয় সর্ব্বনাশ!”

পণ্ডিত হৃষীকেশের যে হঠাৎ কি সৰ্ব্বনাশটাই ঘট্‌বে তাই ভেবে আমি শিউরে উঠতে লাগলাম।