» » রিচার্ডের নৌবহর

বর্ণাকার

রিচার্ডের নৌবহর

সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী শৈশব কালে তাঁর পিতা নাজমুদ্দিন আইয়ুবীর কাছ থেকে বায়তুল মোকাদ্দাসের অবমাননা ও সেখানকার মুসলমানদের ওপর জঘন্য বর্বরতার কাহিনী শুনেছিলেন। তাঁর পিতা এ কাহিনী শুনেছিলেন তাঁর দাদা শাদী আইয়ুবীর কাছ থেকে।

শৈশবের শোনা সেই নির্মমতার কাহিনী তাঁর ছোট্ট হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। বয়স বাড়লেও সেই কাহিনীর কথা তিনি কোন দিন ভুলতে পারেননি। বরং সুলতান আইয়ুবী অনুভব করছিলেন, যতই তাঁর বয়স বাড়ছে ততোই তাঁর রক্তে, তাঁর শিরায় শিরায় সেই বর্বরতার তিক্ত স্মৃতি প্রচণ্ড আলোড়ন ও ঝড় তুলছে।

শৈশবে যখন তিনি এ কাহিনী শুনেছিলেন তখনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, বায়তুল মোকাদ্দাস তিনি একদিন মুক্ত করবেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই শপথ তাঁর দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে। আজ বায়তুল মোকাদ্দাস মুক্ত করতে এসে তাঁর মনে পড়ে গেল, তিনিও তাঁর দুই সন্তানকে শৈশবেই এ কাহিনী শুনিয়েছেন। তাদের একজন এখনো কিশোর থাকলেও অন্যজন এরই মধ্যে যৌবনের সিংহ দরোজা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে জেহাদের ময়দানে। কিশোর আল মালেক আল জাহেরের অন্তরেও নিশ্চয়ই এমনি প্রতিজ্ঞা দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে। আর যুবক আল আফজাল তো এই সপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই যোগ দিয়েছে সেনাদলে।

তিনি ভাবছিলেন, আজ যদি আমি সফল হতে না পারি তবে কি এ সপ্ন মুছে যাবে? না, নিশ্চয়ই আল আফজাল ও মালেক আল জাহের এই সপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আবারো কোন বাহিনী নিয়ে ছুটে আসবে জেরুজালেম। মসজিদুল আকসা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই জিহাদ চলবে যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী। মুক্তির ময়দান কখনো নিরব হবে না, হতে পারে না।

‘উদ্দেশ্যহীন ভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভাল’। আল আফজাল যখন সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে যাচ্ছিল তখন তিনি তাঁকে বললেন, ‘এ কথা তোমার দাদা মরহুমের। তিনি এ কথা আমাকে ঠিক সেই সময় বলেছিলেন, যখন আমি চাচা শেরকাহ-এর সঙ্গে ক্রুসেডের বিরুদ্ধে প্রথম জিহাদে যাত্রা করি।

তিনি আরও বলেছিলেন, আমার মনে হচ্ছে, তুমি কোনদিন এ দেশের আমীর হবে। এমনও হতে পারে তুমি সুলতান হয়ে যাবে। তবে যাই হও না কেন, একটা কথা মনে রাখবে, আজ থেকে তুমি কেবল আমার বেটা নও, তুমি এক মহান জাতির সন্তান। কোরআনে বলা হয়েছে, সন্তান মা বাবার খেদমত করবে। এখন তোমার মা ও বাবা হচ্ছে তোমার দেশ ও জাতি। সন্তানের উচিত নয় মা বাবাকে দুঃখ দেয়া। আল্লাহ্‌ কঠোর ভাষায় এ ব্যাপারে সাবধান বাণী উচ্চারন করেছেন।

তোমাকে আল্লাহ্‌ তাঁর অনন্ত সৃষ্টি ধারায় একটি বিশেষ সময়ে বিশেষ প্রয়োজনে সৃষ্টি করেছেন। সময়ের সেই প্রয়োজনটি কি তা তোমাকে বুঝতে হবে। তোমাকে খেয়াল রাখতে হবে জাতির কোন খেদমতটি তুমি সবচে উত্তম ভাবে সম্পাদন করতে পারবে। নিজের আরাম আয়েশ ও সুখ ভোগের জন্য তোমাকে সৃষ্টি করা হয়নি। তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহ্‌র অনন্ত সৃষ্টিরাজির মধ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য। সভ্যতার অগ্রগতি সাধনের জন্য। মানবতার কল্যাণের জন্য। আপন জাতির দুঃখ মোচনের জন্য।

প্রিয় বেটা আমার! আপন জাতিকে দুঃখ দিও না। তাকে নিরাশ ও হতাশ করো না। জাতির পক্ষ থেকে তোমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয় তা সুষ্ঠু ভাবে পালন করো’।

সুলতান আইয়ুবী তাঁর ছেলেকে বললেন, ‘হে আমার নয়নের মনি! তোমার দাদা বলেছিলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য জিহাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়ে যায় তারচে সৌভাগ্য আর কার! এমন শহীদদের কখনও ভুলে যাবে না। যে জাতি তার শহীদ সন্তানদের ভুলে যায় আল্লাহ্‌ নিজেও সে জাতিকে ভুলে যান। আর যে জাতির উপর থেকে আল্লাহ্‌র দৃষ্টি উঠে যায়, সে জাতির জন্য দুনিয়াটা জাহান্নামে পরিণত হয়ে যায়।

তখন তাদের মসজিদ ও পবিত্র স্থানগুলো দুশমনের আস্তাবলে পরিণত হয়। তাদের কন্যাগুলো শত্রুদের বিলাসিতার সামগ্রী হয়ে যায়। দুনিয়ার কোথাও তারা একটু শান্তি ও স্বস্তির জায়গা খুঁজে পায় না’।

বাপ আমার! মনে রেখো, এমন জাতির কিসমত থেকে সৌভাগ্য বের হয়ে যায়। তারা তখন পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যখন তোমাকে শাসন ক্ষমতায় বসানো হবে, তখন জাতিকে প্রজা ভাববে না।

মনে রেখো, মানুষের ওপর শাসন করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্‌ পাকের। যদি জনগণকে শাসন করতে গিয়ে আল্লাহ্‌র ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নাও তাঁর পরিণতি তোমার জন্য কখনো মঙ্গলময় হবে না। নিজেকে রাজাধিরাজ ভাবলে সেই পাপের শাস্তি পাবে মিশরের ফেরাউনদের মতো।

ভেবে দেখো, কত শতাব্দী পার হয়ে গেছে, আজো মানুষ তাদের কথা মনে করলে ধিক্কার দেয়। আল্লাহ্‌র এমন অভিশাপ ও লানত তাদের কপালে জুটেছে যে, আল্লাহ্‌ তাদের মমি বানিয়ে রেখেছেন, যাতে তাদের কথা মানুষ কোন দিন ভুলতে না পারে। যাতে তাদের কথা মানুষ কোন দিন ভুলতে না পারে। যাতে যুগ যুগ ধরে তারা মানুষের অভিশাপ বয়ে বেড়ায়।

যদি কখনো ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাও, মনে করবে আল্লাহ্‌ তোমার কাঁধে কোন বিরাট বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে দেয়া এই বোঝা কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলা যেমন অন্যায়, এই দায়িত্বকে বোঝা না ভেবে একে নিজের দম্ভ প্রকাশের হাতিয়ার মনে করাও অপরাধ। মনে রেখো, ক্ষমতা দৃশ্যতঃ জাতির পক্ষ থেকে এলেও আসলে তা আসে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে।

সরকারের সম্পদকে কখনো নিজের সম্পদ ভেবো না। বরং এসবকে ভাববে জনগণের জন্য দেয়া আল্লাহ্‌র নেয়ামত। সরকারকে হতে হবে জাতির আশ্রয়স্থল। জাতিকে যদি অর্ধাহারে রাখতে হয় সরকারী লোকজনকে থাকতে হবে অনাহারে। তাহলেই জাতির ভালবাসায় সিক্ত হবে সরকার। মসজিদের মিনারের মত সরকার প্রধানের মাথা থাকবে সবার উপরে। যেন তিনি দেখতে পান কেউ কোথাও বঞ্চিত হচ্ছে কিনা তার প্রাপ্য অধিকার থেকে।

হে আমার প্রিয় বেটা! তোমার দাদা আরও বলেছেন, ‘সেই দিন তুমি মাথা উঁচু করে চলবে যেদিন তুমি মসজিদুল আকসা শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করতে পারবে। শান্তির ঘুম তুমি সেদিন ঘুমাবে, যেদিন তুমি মসজিদুল আকসায় বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করে নফল নামাজ পড়তে পারবে।

আমাদের প্রিয় নবী(সাঃ) মেরাজে যাওয়ার আগে এই মসজিদুল আকসায় নফল নামাজ পড়েছিলেন। সে মসজিদের বারান্দায় যেদিন তুমি তোমার অশ্রু ঝরাতে পারবে, সেদিন ভাববে তুমি আল্লাহ্‌র রহমত পাওয়ার যোগ্য হয়েছো’।

বাপ আমার! জেরুজালেমের অলিতে গলিতে কত যে নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করেছিল, পবিত্র মসজিদের আঙ্গিনায় জাতির কত যে আদরের কন্যা সমভ্রম হারিয়েছিল, সে কথা স্মরণ হলে আজো আমার রাতে ঘুম হয় না। যে মসজিদে আমার প্রিয় রাসুল(সাঃ)এঁর মুবারক পা পড়েছিল, যে মসজিদে আমার রাসুলের পেশানী মুবারক সিজদায় পড়েছিল, সে মসজিদের অপবিত্রতার কথা স্মরণ হলে ভয়ে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। মনে হয় আমি যেন নির্যাতিতের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছি। যেন মসজিদুল আকসার বারান্দায় মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শিশু ও নারীরা। যেন কেউ কম্পিত কণ্ঠে সেখানে আযান দিচ্ছে। সেই আযানের মধ্য দিয়ে সে যেন আমাকেই ডাকছে।

তোমার দাদা বৃদ্ধ বয়সে কম্পিত হাতে আমার হাত আঁকড়ে ধরে বলেছিলেন, ‘বেটা, আমার জীবন ও যৌবন শেষ হতে চললো। যে কাজ আমি সম্পন্ন করতে পারিনি সে কাজের ভার আমি তোমাকে দিয়ে যাচ্ছি। তুমি বায়তুল মোকাদ্দাসকে শত্রু মুক্ত করো। এইটিই হোক তোমার জীবনের লক্ষ্য। তুমি ক্ষমতায় গেলে শত্রুদের উপেক্ষা ও তুচ্ছ মনে করবে। তাতে তোমার সাহস ও মনোবল বৃদ্ধি পাবে। তুমি যদি আল্লাহ্‌র ওপর ভরসা করতে পারো তবে মনে রেখো, আল্লাহ্‌র চাইতে ক্ষমতাধর কেউ নেই দুনিয়ায়। তুমি আল্লাহ্‌র ওপর আস্থা রাখতে পারলে আল্লাহ্‌ তোমার নেগাহবান হয়ে যাবেন। তখন তুমি নিশ্চিন্তে জাতির উপর শান্তির শাসন চালাতে পারবে।

হয়তো তোমার শাসন ক্ষমতার বয়স দীর্ঘ হবে না। কুচক্রীদের চক্রান্তে উল্টে যাবে তোমার সুখের মসনদ। কিন্তু কুচক্রীদের সাথে মিলে গদী রক্ষা করতে যেয়ো না। জীবনে বেঁচে থাকার একটাই উদ্দেশ্য থাকবে, আর তা হচ্ছে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন। জীবনভর সেই পথে চলবে, যে পথ আল্লাহ্‌র প্রিয়, যে পথে চলার নির্দেশ দিয়েছে পবিত্র কোরআন’।

সুলতান আইয়ুবী তাঁর সন্তান কে লক্ষ্য করে সেদিন বলেছিলেন, ‘হে আমার প্রিয় সন্তান! আমি আমার পৈতৃক উত্তরাধিকার তোমার উপর ন্যস্ত করছি। আমি আমার পিতার মতই বলছি, আজ থেকে তোমরা আমার নও, মুসলিম জাতি ও মিল্লাতের সন্তান।

আমি তোমাদের মাকেও বলে দিয়েছি, তুমি ভুলে যাও তোমার গর্ভে কোন সন্তান জন্ম নিয়েছিল। যদি ভুলতে না পারো তবে সন্তানকে আল্লাহ্‌র পথে দান করে দাও। কারণ আমি জাতির জন্য তোমার দুটি সন্তানকেই কোরবানি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। তোমাদের মাকে আমি আরো বলেছি, মনে করে দেখো, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সন্তানকে আল্লাহ্‌র পথে কোরবানী দিতে গিয়ে নিজ হাতে ছুরি চালিয়েছিলেন আপন সন্তানের গলায়।

যদি তুমি কোন দোয়া করতে চাও তবে আল্লাহ্‌র কাছে এই দোয়া করো, তুমি যে সন্তানদের বুকের দুধ পান করিয়েছো সে দুধ যেন রক্ত হয়ে মসজিদুল আকসার পবিত্র বারান্দা ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। প্রতিজ্ঞা করো বেটা, আমি যদি বেঁচে না থাকি তবে বায়তুল মোকাদ্দাস তোমরা দুই ভাই মুক্ত করবে’।

সুলতান আইয়ুবীর মনে পড়ে গেল তিনি এবার বায়তুল মোকাদ্দাস উদ্ধার অভিযান শুরু করার আগে তাঁর দুই সন্তানকেই কাছে ডেকেছিলেন। তিনি ১০৯৯ সালের যুদ্ধের সেই রক্তাপ্লুত ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের বলেছিলেন, ‘যাও বেটা। আল্লাহ্‌র সিপাই হও গিয়ে। আমি দোয়া করি, ব্যর্থতা যেনো কখনো তোমাদের স্পর্শ না করে। ভয়-ভীতি, লোভ ও অজ্ঞতা থেকে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করবে’।

দুই ভাই রনাঙ্গনে যাওয়ার আগে সুলতান আইয়ুবীর সাথে দেখা করে তাকে সালাম করলো। তিনি তাদের সাথে মুসাফেহা ও কোলাকুলি করলেন। বললেন, ‘হৃদয়ে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে লড়াই করবে। আল্লাহ্‌ তোমাদের নেগাহবান হোন’। তারা বাপের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলো। বড় ছেলে আফজাল ঘোড়ায় উঠতে উঠতে বললো, ‘মহান সুলতান! শুধু শহীদ হওয়াতে কোন কৃতিত্ব নেই। আমি শহীদ হওয়ার আগে বায়তুল মুকাদ্দাসের গলিতে শত্রুদের এত রক্ত প্রবাহিত করবো যে, আপনার ঘোড়ার পা যেন পিছলে যায়। আমরা দেখতে চাই, আপনি মসজিদুল আকসার ক্রুশ ও মূর্তি নিজ হাতে তুলে রাস্তায় খৃষ্টানদের নাপাক রক্তের মাঝে ফেলে দিচ্ছেন’।

‘কিন্তু সে রক্ত যেন নিরস্ত্র শহরবাসীর না হয় বেটা’। সুলতান আইয়ুবী বললেন।

‘সে রক্ত ক্রুসেড বাহিনীর বর্ম পরা নাইটদের হবে’। আল আফজাল বললো, ‘সে রক্ত সেই সব লৌহ পোশাকের ফাঁক গলে বের হবে, যে পোশাক পরে ক্রুসেড বাহিনী আজো গর্বের হাসি হাসে। আপনি দেখে নেবেন, ঈমানদারের অস্ত্র বেঈমান কাফেরদের লোহার পোশাক ছিন্নভিন্ন করার শক্তি রাখে’।

‘আল্লাহ্‌ তোমাদের কথায় বরকত দান করুন’। সুলতান আইয়ুবী বললেন। সন্তানদ্বয় পিতাকে সামরিক কায়দায় স্যালুট দিয়ে ঘোড়া হাকিয়ে দিল। এক সময় সুলতান আইয়ুবীর দৃষ্টি থেকে হারিয়ে গেল তাঁর দুই সন্তান।

সুলতান আইয়ুবী বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে চল্লিশ মাইল দূরে ভূমধ্যসাগরের তীরে আসকালান শহরে সেই চিতা বাঘের মত বসে আছেন, যেন তিনি শিকার ধরার জন্য ওঁৎ পেতে আছেন। আবেগে তাঁর অবস্থা তখন টলোমলো। বিলম্ব না করে পারলে তিনি বায়তুল মোকাদ্দাস উড়ে যেতে চান। শিকারকে তাড়া করা বাঘের মতই জেরুজালেম ছুটে যেতে চাচ্ছিলেন তিনি। খৃষ্টানদের সাথে চূড়ান্ত বোঝাপড়া করার জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে ছটফট করছিল তাঁর মন। কিন্তু যুদ্ধের নিয়ম ও কৌশলের কথা চিন্তা করে তিনি তখনো আসকালানেই অবস্থান করছিলেন।

জেরুজালেম ওখান থেকে আর মাত্র চল্লিশ মাইল। কিন্তু এ দীর্ঘ চল্লিশ মাইল রাস্তা যেন খই ভাজা তপ্ত বালি ও পাথরে বোঝাই। এটা ছিল বায়তুল মোকাদ্দাসের প্রতিরক্ষার প্রকৃতি-প্রদত্ত সুবিধা। তাছাড়া এ শহরটি শুধু শহরের প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত ছিল না। শহরের আশেপাশে দূর দুরান্ত পর্যন্ত ছোট ছোট কেল্লা গড়ে তোলা হয়েছিল শহরটি রক্ষার জন্য। সেই কেল্লাগুলো খৃষ্টানদের সুরক্ষিত সেনা ফাঁড়ি হিসাবে কাজ করছিল। সুলতান জানেন, শহরের প্রতিরক্ষার কাজে নিয়োজিত আছে খৃষ্টানদের টহলদার বাহিনীও। এরা শহরের বাইরে অশ্বপৃষ্ঠে চড়ে পাহারা দেয় দূর দুরান্ত পর্যন্ত। এমন কড়া ও সতর্ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেড়াজাল ভেদ করে বায়তুল মোকাদ্দাস পৌঁছা যে কারো জন্যই এক দুঃসাধ্য ব্যাপার।

সুলতান আইয়ুবীর আগমনের খবরে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও কঠিন করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এমন সাহস ছিল না যে তারা অগ্রসর হয়ে সুলতান আইয়ুবীকে আসকালান শহরে বাঁধা দেয় অথবা আক্রমণ চালায়। কারণ ক্রুসেড বাহিনী হাতিন রণাঙ্গন থেকে আসকালান পর্যন্ত সুলতান আইয়ুবীর বাহিনীর হাতে যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে এবং যে পরিমান রক্ত ও জান মালের ক্ষতি কবুল করেছে তাতে তাদের এ রকম সাহস করার কোন সুযোগ ছিল না।

সুলতান আইয়ুবী বায়তুল মোকাদ্দাসের সব তৎপরতা ও খৃষ্টান জেনারেলদের গতিবিধি প্রতি মুহূর্তে অবগত হচ্ছিলেন। তিনি জানেন, বায়তুল মোকাদ্দাসের তখনকার শাসক সম্রাট গে অব লুজিয়ান হাতিনের রণক্ষেত্রে যুদ্ধবন্দী হয়ে এখন দামেশকের কারাগারে বন্দী। তারপরও খৃষ্টান নাইট ও বায়তুল মোকাদ্দাসের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনী ও তার জেনারেলরা সহজে এ শহরটি সুলতানের হাতে তুলে দেবে না।

হাতিনের রণাঙ্গনে গে অব লুজিয়ান যে সব সৈন্য নিয়ে গিয়েছিলেন তার কিছু মারা গিয়েছিল, কিছু যুদ্ধবন্দী হয়েছিল। কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পালাতে পেরেছিল, যাদের অধিকাংশই ফিরে গিয়েছিল জেরুজালেম। পলাতকদের মধ্যে সৈন্যদের চাইতে বেশী ছিল অফিসার এবং লৌহ পোশাকধারী নাইট। সুলতান জানেন, তারা অধিকাংশই আহত হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস এসে আশ্রয় নিলেও নাইটদের মধ্যে যে নৈতিক মনোবল (Moral courage) থাকে তা তাদেরকে আবার লড়াইয়ের ময়দানে টেনে আনবে। কারণ পদমর্যাদার সম্মান বজায় রাখতে না পারলে খৃষ্ট সমাজে তাদের বেঁচে থাকা হবে অর্থহীন।

কিন্তু সাধারন সৈন্যদের মধ্যে এ নৈতিক মনোবল অবশিষ্ট ছিল না। তারা পালিয়ে জেরুজালেম পৌঁছেই সেখানে ব্যাপক আতংক ছড়িয়ে দিল। সেই আতংক দূর করার জন্য খৃষ্টান জেনারেল ও নাইটরা অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সুলতানের গোয়েন্দা বাহিনী যে খবর দিল তাতে তিনি জানতে পারলেন, বায়তুল মোকাদ্দাস শহরের ভেতরে খৃষ্টানদের সৈন্য সংখ্যা তখনো ষাট হাজার। তিনি আরও জানতে পারলেন, সুলতান আইয়ুবী শহরের পর শহর জয় করে বায়তুল মোকাদ্দাসের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উৎসাহী খৃষ্টানরা সুলতানকে বাঁধা দেয়ার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলে হাজির হচ্ছে পবিত্র শহরে। এদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তারা এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে ক্রুশের জন্য জীবন দিতে চায়। ওরা যুদ্ধ বিদ্যায় পারদর্শী না হলেও ওদের আবেগই একটা বিরাট অস্ত্র। কোন জনপদের জনগণ এভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তাদের পরাজিত করা খুব কঠিন। এদের কারণে শহরের প্রতিরক্ষা শক্তি নিঃসন্দেহে আরও মজবুত হয়েছে।

জেরুজালেম শহরের প্রতিটি ফটকে তখন বিরাজ করছিল কড়া নিরাপত্তা প্রহরা। কিন্তু তারপরও দু’একটি ফটক খোলা রাখতে হচ্ছিল বিশেষ কারণে। কারণ যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা খৃষ্টান সৈন্যরা তখনো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বা একজন দু’জন করে ফিরে আসছিল জেরুজালেম। সুলতান আইয়ুবীর গোয়েন্দারা এসব খবরও সুলতানকে সরবরাহ করছিল। সুলতান আইয়ুবী এসব পলাতক সৈন্যদের সাথে মিশে আরো কিছু গোয়েন্দাকে শহরে ঢুকে পড়ার হুকুম দিলেন। কারণ তিনি আশংকা করলেন এমনও সময় আসতে পারে, যখন ভেতরের গোয়েন্দারা বেরোতে পারবে না। কিন্তু নির্যাতিত খৃষ্টান সৈন্য হিসাবে এই নতুন গোয়েন্দারা কিছুটা সুবিধা আদায় করতে পারবে।

সুলতানের হুকুম পেয়ে আরো কিছু গোয়েন্দা ছদ্মবেশে শহরে প্রবেশ করলো। তারা শহরের প্রতিটি আনাচে কানাচে ঘুরে দেখলো শহরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ধরন। শহরের প্রতিটি ফটক, প্রাচীরের অবস্থা, সৈন্যদের ব্যারাক সবকিছু তারা খুঁটিয়ে দেখলো এবং তাঁর একটি ম্যাপ হৃদয়ে গেঁথে নিয়ে বেরিয়ে এলো শহর থেকে।

সেখানকার মুসলমানদের অবস্থা তখন গৃহবন্দী পর্যায়ের। ঘর থেকে বেরোনোই তাদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠলো, শহর থেকে বেরোনোর তো প্রশ্নই আসে না। ফলে সুলতানের আশংকা সত্যে পরিণত হলো, মুসলিম গোয়েন্দাদের একটা অংশ আটকা পরে গেল ভেতরে।

সুলতান বুদ্ধি করে নতুন গোয়েন্দা না পাঠালে শহর থেকে তথ্য পাচার করা লোকের অভাব দেখা দিতে পারতো। কিন্তু সুলতানের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহনের ফলে একটি অবশ্যম্ভাবী সংকটের হাত থেকে বেঁচে গেল মুসলিম বাহিনী।

বায়তুল মোকাদ্দাস থেকে দশ বারো মাইল দূরে আসকালানের পথে খৃষ্টানদের এক ফাঁড়ি। এখানে একশোর মতো ক্রুসেড সৈন্য অবস্থান করছিল।

১১৮৭ খৃষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের এক রাত। খৃষ্টান সৈন্যরা সবাই ক্যাম্পে ঘুমাচ্ছিল। বেশ কিছু তাবু দিয়ে বানানো হয়েছে ক্যাম্প। হঠাৎ ফাঁড়ির কাছে একটি বিস্ফোরণ হলো। সচকিত হলো জাগ্রত সৈন্যরা। বিস্ফোরণের শব্দে কারো কারো ঘুম ভেঙ্গে গেল।সৈন্যরা কিছু বুঝএ উঠার আগেই পর পর আরও দু’তিনটি বিস্ফোরণ ঘটলো একই রকম। সৈন্যরা তাকিয়ে দেখলো তাদের কয়েকটি তাবুতে আগুন জ্বলে উঠছে। তিন চারটি তাবু তখন জ্বলছে। হতবিহবল সৈন্যরা ভয়ে তাবু ছেড়ে এদিক ওদিক পালাতে লাগলো। সৈন্যরা চিৎকার দিয়ে যখন ছুটাছুটি আরম্ভ করলো তখনই তাদের উপর চারদিক থেকে শুরু হলো তীর বর্ষণ। প্রজ্জলিত তাবুর আলোকে সৈন্যদের ছুটাছুটি দেখা যাচ্ছিল। পেট্রোল ভর্তি হাড়ি নিক্ষেপের ফলে জ্বলে উঠেছিল আরো তাবু।

সুলতান আইয়ুবীর এক কমাণ্ডো বাহিনী এ আক্রমণ পরিচালনা করছে। তারা মেঞ্জানিক নিক্ষিপ্ত পেট্রোল হাড়ির আলোয় তীর মেরে ধরাশায়ী করছিল ভীতসন্ত্রস্ত খৃষ্টান সৈন্যদের। খৃষ্টান সৈন্যরা তীর খেয়ে লুটিয়ে পড়ছিল। ভয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছিল। তারা বুঝতে পারলো, সুলতান আইয়ুবীর ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়ে গেছে তারা। এ যাত্রা বাঁচার আর কোন আশা নেই।

হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল তীর। কমাণ্ডো বাহিনীর কেউ একজন উচ্চস্বরে ঘোষণা করলো, ‘যদি বাঁচতে চাও তবে অস্ত্র সমর্পণ করে এক দিকে সরে দাড়াও’।

অগ্নিশিখার তাণ্ডবলীলা চলছিল তাবুগুলোর ওপর। খৃষ্টান সেনাদের বাঁচার কোন আশা ছিল না। কমাণ্ডো বাহিনীর ঘোষণা শুনে যারা তখনো বেঁচেছিল দু’হাত উপরে তুলে আত্মসমর্পণ করলো। কমাণ্ডার গুনে দেখলো, মাত্র জনাত্রিশেক সৈন্য লাইন করে দাঁড়িয়ে আছে।

কমাণ্ডোরা খৃষ্টান সৈন্যদের অস্ত্রসস্ত্র ও ঘোড়াগুলো এক জায়গায় জড়ো করলো। জড়ো করা জিনিশগুলো পাঠিয়ে দেয়া হলো পেছনে। যখন সকালের সূর্য উদয় হলো তখন সেই পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পের পাশে এসে দাঁড়ালো সুলতান আইয়ুবী অগ্রবাহিনীর প্রথম দলটি। তারা এখানে পৌঁছেই জানতে পারলো তাদের অগ্রাভিযানের পথ আরও বহুদূর পর্যন্ত নিরাপদ হয়ে আছে। গেরিলা বাহিনী ওখান থেকে আরো সামনে এগিয়ে গিয়েছিল। তারা পথের পাশে দু’জন বা চারজনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে ভাগ হয়ে ঝোপের মধ্যে বা টিলার ওপর কোন উঁচু পাথরের পিছনে বসে ওঁত পেতে থাকতো।

যখন কোন খৃষ্টান অশ্বারোহী বা পদাতিক বাহিনী কাছে আসতো তখন অতর্কিতে আক্রমণ করে বসতো তাদের ওপর। ওরা টের পাওয়ার আগেই বিষাক্ত তীরের আঘাতে পথের ওপর লুটিয়ে পড়তো আরোহী। কমাণ্ডোরা এগিয়ে গিয়ে সরিয়ে নিতো তার ঘোড়া।

খৃষ্টানদের দশ বারো জনের দলকে এগিয়ে আসতে দেখলে মাত্র দু’জন কমাণ্ডোই এভাবে তীর মেরে তাদের ঘায়েল করে ফেলতো। বিন্দুমাত্র দ্বিধা করতো না হামলা করতে। কারণ তারা জানে কোত্থেকে ছুটে এলো তীর তা বুঝে উঠার আগেই তাদের লাশগুলো লুটিয়ে পড়বে পথের ওপর।

কখনো কোন হুশিয়ার দলের ওপর আক্রমণ করতে গিয়ে দু’একজন কমাণ্ডো যে শহীদ বা আহত হতো না এমন নয়। কিন্তু এরকম ঘটনা খুব কমই ঘটতো।

এভাবেই খণ্ড যুদ্ধ চালাচ্ছিল কমাণ্ডোরা। তাদের কমাণ্ডার তাদের সাথে থাকতো না। কমাণ্ডোদের পথে পথে বসিয়ে দিয়ে তারা আরো সামনে এগিয়ে যেতো। কমাণ্ডোরা এদিক ওদিক লুকিয়ে থেকে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিত কখন আক্রমণ করতে হবে। এ ব্যাপারে কারো পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ ছিল না তাদের, কিন্তু তাদের ট্রেনিংই ছিল তাদের পরিচালক। তাদের বুদ্ধি ও বিবেকের সবগুলো দরোজা তারা খুলে রেখেছিল। তাদের তৎপরতা বলছিল, প্রতিটি কমাণ্ডোই যেন একেকজন দক্ষ সেনাপতি।

হাতিনের যুদ্ধের পর সুলতান আইয়ুবী যে বড় শহরটি জয় করেছিলেন, সেখানে মুসলমানদের অবস্থা তিনি সৈন্যদের দেখিয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ চিত্তে তারা দেখছিল ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদ, কোরআনের অবমাননা। শুনছিল যুবতী মেয়েদের করুণ কান্না, শিশু ও বুড়োদের রোদনধ্বনি।

এ সব জনপদের মুসলমানদের চোখের চাহনিই বলছিল, এ যুদ্ধ কোন রাজা বাদশার রাজ্য লাভের যুদ্ধ নয়, এটা হচ্ছে নির্যাতিত মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার যুদ্ধ। এ অনুভূতি প্রতিটি সৈনিকের ঈমানকে আরো সতেজ ও তরতাজা করে দিত।

আসকালান শহরে সুলতান আইয়ুবী রাতে তেমন ঘুমোনোর সময় পেতেন না। কারণ কমাণ্ডো বাহিনীর বিভিন্ন দলের সংবাদ নিয়ে একের পর এক কাসেদ আসতেই থাকতো। বায়তুল মোকাদ্দাস থেকেও মাঝে মাঝে আসতো সেখানকার হুশিয়ার গোয়েন্দাদের পাঠানো রিপোর্ট। এদের অধিকাংশই আসতো রাতে। সুলতান আইয়ুবীর আদেশ ছিল, যে কোন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই তা পৌঁছে দিতে হবে। তা সে গভীর রাত হোক বা তিনি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় হোক।

যেহেতু কমাণ্ডোরা রাতের বেলাতেই বিভিন্ন ফাঁড়িগুলোতে আক্রমণ চালিয়ে দখল করে নিতো সে জন্য রাতের বেলাতেই কাসেদরা ছুটতো খবর নিয়ে। তারা সুলতানকে বলতো, অমুক স্থানে খৃষ্টানদের এক সেনা ফাঁড়িতে আক্রমণ চালানো হয়েছে। সেখানে এতগুলো শত্রু সেনা নিহত ও এত জন বন্দী হয়েছে। জানাতো, এই অভিযানে এতজন কমাণ্ডো হতাহত হয়েছে। রিপোর্টের আলোকে তিনি বুঝে নিতেন কতটুকু রাস্তা পরিষ্কার ও বাঁধা মুক্ত হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী সুলতান আইয়ুবী তাঁর নকশায় রেখা টেনে অভিযানের পথ চিহ্নিত করতেন এবং নিজের সৈন্যদের অগ্রাভিযানের নির্দেশ দিতেন।

আসকালানে বসেই সুলতান আইয়ুবী সেনাপতি ও কমাণ্ডারদের এক সম্মেলন ডাকলেন। এই সম্মেলনে নৌবাহিনীর এডমিরাল আলফারেসকেও আহবান করা হলো। আল ফারেসের কাছে যখন কাসেদ গিয়ে পৌঁছলো তখন তাঁর জাহাজ আসকালান থেকে বিশ মাইল দূরে। ভূমধ্যসাগরের মাঝে অবস্থান নিয়ে তারা দৃষ্টি রাখছিল সমুদ্রের বিস্তীর্ণ এলাকায়।

নৌকায় করে সেখানে গিয়ে পৌঁছতে কাসেদের মধ্যরাত পার হয়ে গেল। খবর পেয়ে আল ফারেস কাসেদের নৌকাতে করে রাতেই আসকালান এসে পৌঁছলেন।

কাসেদ তাকে বললো, ‘সুলতান আইয়ুবী সমস্ত সেনাপতি ও কমাণ্ডারকেই এ সম্মেলনে ডেকেছেন’। আল ফারেস বুঝে নিলেন, বায়তুল মোকাদ্দাস আক্রমনের আগে এটাই হবে তাঁর সর্বশেষ যৌথ সভা। জাহাজ থেকে কাসেদের সাথে রওনা হওয়ার সময় তিনি মেয়ে দু’জনকে বললেন, ‘আমি একটু আসকালান যাচ্ছি’।

‘এত রাতে আসকালান কেন?’

‘সুলতান ডেকেছেন’।

‘কেন ডেকেছেন?’ এক মেয়ে জিজ্ঞেস করলো। ২১

‘আমার সরকারী দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করার তোমরা কে?’ আল ফারেস তাদের বললেন, তোমাদের কত বার বলেছি, আমার ব্যক্তিগত বিষয় ছাড়া কখনো কোন প্রশ্ন করবে না’।

মেয়ে দু’জন হেসে ফেললো। বললো, ‘আপনার ব্যক্তিগত বিষয় ছাড়া আর কিছুর প্রতিই আমাদের কোন আকর্ষণ নেই। আপনি জাহাজে থাকলে আমরা পরম নিরাপত্তা বোধ করি। কিন্তু জাহাজ ছেড়ে আপনি কোথাও গেলেই আমাদের অন্তরে ভয় ঢুকে যায়’।

‘আপনি বাইরে গেলে আমরা পেরেশান হয়ে পড়ি বলেই না আপনাকে এ প্রশ্ন করি’। অন্য মেয়েটি বললো, ‘কখনো জাহাজ আক্রান্ত হলে কে আমাদের রক্ষা করবে? তার কথার খেই ধরে ওপর মেয়েটি বললো, ‘আফসোস! আমরা আপনাকে কোন সাহায্যই করতে পারছি না। নইলে আমাদের তো উচিত ছিল, আপনার অনুপস্থিতিতে এ জাহাজের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ব্যস্ত থাকা। কখনো আক্রান্ত হলে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা। কিন্তু আমরা আপনার কোন কাজেই লাগতে পারলাম না’।

‘তোমরা যে কাজের যোগ্য আমি সে কাজই তোমাদের কাছ থেকে আদায় করে নেবো’। আল ফারেস বললেন, ‘লড়াই নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই তোমাদের। আমার অনুপস্থিতিতে অধিকাংশ সময় নিজেদের কামরাতেই থাকবে। উপরে গিয়ে মাল্লা বা সৈন্যদের বিরক্ত করবে না’।

‘আপনি কখন ফিরবেন?’

‘সম্ভবত আজ রাতে ফিরতে পারবো না’। আল ফারেস বললেন, ‘কাল সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে আসবো আশা করি’।

আল ফারেস মেয়ে দুটির সঙ্গে গভীর অন্তরঙ্গভাবে মিশে গিয়েছিলেন। তারা কৌশলে সুলতান আইয়ুবীর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রায়ই জানতে চাইতো। কথায় কথায় তারা জানতে চাইতো, ‘ভুমধ্যসাগরে মিশর ও সিরিয়ার নৌবহর কোথায় আছে? তারা কি বন্দরেই অবস্থান করছে নাকি সমুদ্রের গভীরে। ওদের জাহাজের সংখ্যা কত, নৌ সেনা কত?

তারা এসব জানতে চাইতো গল্পচ্ছলে এবং আল ফারেসও অসতর্ক অবস্থায় এ সব প্রশ্নের ঠিক ঠিক জবাব দিয়ে ফেলতেন। কখনো সতর্ক থাকলে বলতেন, ‘এমন প্রশ্ন কখনো করো না আমাকে’।

কিন্তু এই নিষেধ মানলে তাদের চলবে কেন? তারা তাদের রুপের মাধুর্য দিয়ে, প্রেমের অভিনয় দিয়ে প্রায়ই এমন সব গোপন কথা তার কাছ থেকে বের করে নিতো।এভাবে কখন যে আল ফারেস সেনাবাহিনীর অতি গোপনীয় বিষয়ও তাদের কাছে ফাঁস করে দিত টেরই পেতো না। কখনো এ ধরনের প্রশ্ন করার জন্য ওদের সামান্য ধমকও দিত।

নেশার ঘোরে মানুষ মনের সব গোপন কথা ফাঁস করে দেয়। নেশা, সেটা মদের হোক বা ঔষধের হোক। কিন্তু আল ফারেস মদ পান করেন না। জাহাজে কোন মদ বা মাদক দ্রব্য রাখা হয় না। আল ফারেস চরিত্রহীন ব্যক্তিও নন যে, তাকে কোনভাবে ফাসিয়ে দেয়া যাবে। তার জন্য একটাই বিপদের কারণ, তিনি নিজেই নিজেকে মেয়েদের মায়ার বন্ধনে বন্দী করে নিয়েছেন। এই বন্ধন তার অবসাদ কিছুটা দূর করলেও এরই ফাঁক দিয়ে তার কাছ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল গোপন সংবাদ।

মেয়ে দুটি ছিল এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তারা দেখলো, আল ফারেসের মাঝে মদের নেশা নেই, কোন পশুত্বের ভাবও নেই। যদিও যৌবন আছে, সেই যৌবন শুধুই হৃদয়ের প্রেম ভালবাসায় সীমাবদ্ধ। সেখানে দেহের ভুমিকা নেই।

তার ওপর আল ফারেস তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে এতই সচেতন ও দৃঢ় যে, দায়িত্বের তার সাথে কোন কথাই বলা যায় না। ফলে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠলো। তারা বুঝতে পারলো, নারীর নেশা জাগিয়েও তাকে কাবু করা সহজ হবে না।

যে রাতে আল ফারেস সুলতান আইয়ুবীর ডাকে আসকালান গিয়েছিলেন সে রাতের ঘটনা। মেয়ে দুটি তাদের কেবিন থেকে বেরিয়ে উপরে চলে গেল। উপরে জাহাজের কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ওরা সমুদ্রে চাঁদের আলোর প্রতিফলন দেখছিল। সমুদ্রে চাঁদের আলো পড়ে চিকচিক করছিল, তাদের মনে হচ্ছিল যেন মতি চমকাচ্ছে। এমন মনকাড়া দৃশ্যের দিকে তারা আপন মনে তাকিয়ে রইলো।

‘রোজী’! এক সময় এক মেয়ে অন্য জনকে বললো, ‘এখনতো আমাদের ভবিষ্যৎ একদম অন্ধকার। আল ফারেসকে আসলে মোমের মত নরম মনে হলেও দায়িত্বে সে পাথরের মত শক্ত। আমার মনে হয় আমরা এখানে কোন কাজ করতে পারবো না। এণ্ডু আসলে বরং তার সঙ্গে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু ভাবছি, এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া কি আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে? এণ্ডু হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে ছোট নৌকায় খাদ্য-পানীয়, ফলমূল ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয় করার নাম করে জাহাজের কাছে আসে এবং মেয়ে দুটির সাথে দেখা করে। এ লোক খৃষ্টান গোয়েন্দা কমাণ্ডার। ঘটনাক্রমে মেয়ে দুটির সাথে তার সাক্ষাৎ হয়ে যায়।

সে দরিদ্র ফেরিওয়ালার বেশে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে জাহাজে ফলমূল বিক্রি করতে এসে মেয়েদের দেখে চিনে ফেলে। ছদ্মবেশের কারণে মেয়েরা প্রথমে তাকে চিনতে না পারলেও সে ইশারায় তাদের সাথে মত বিনিময় করে এবং ফলমূল বিক্রির ছলে মেয়েদের সাথে দেখা করে।

সে মেয়েদের জানায়, এই জাহাজের পিছনে সে ছায়ার মত লেগে আছে। সুযোগ পেলেই জাহাজ ধ্বংস করে দেবে। মেয়ে দুটি তাকে জানায়, কিভাবে তারা আল ফারেসের হাতে পড়লো। খৃষ্টান গোয়েন্দা কমাণ্ডার গোয়েন্দাগিরির স্বার্থে তাদেরকে জাহাজে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রথম বার বিদায় নিয়েছিল।

প্রথম সাক্ষাতের পর সে আরো দু’বার ছদ্মবেশে জাহাজে এসেছে ও মেয়েদের সাথে কথা বলেছে। মেয়েরা তাকে জানিয়েছে, ‘আল ফারেস আমাদের জালে ধরা দিচ্ছে না আর কোন গোপন তথ্যও দিচ্ছে না’।

‘এই জাহাজগুলো আর কতদিন এখানে ডিউটিতে থাকবে? এ জাহাজ কি টায়ারের দিকে যাবে?’ জানতে চায় এণ্ডু।

মেয়েরা এ ব্যাপারে তাকে কোন তথ্য দিতে অপারগ হলে সে মেয়েদের বলে, ‘মনে হচ্ছে তোমরা হরমুনের শেখানো সব কৌশলই ভুলে গেছো? আরে, এ জাহাজে কেবল আল ফারেসই থাকে না, তার সহকারীরাও থাকে। আল ফারেসকে ফাসাতে না পারলে তার নিচের যে কোন একজন অফিসারকে ফাঁসিয়ে নাও। তাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করো। আল ফারেসের সহকারীদের যাদেরকে সম্ভব তার শত্রু বানিয়ে দাও। কাজের কি কোন অভাব আছে? বুদ্ধি খাটাও, কাজ করো’। সে ওদেরকে বললো, ‘তোমাদের রূপ আর যৌবনের যে অস্ত্র আছে তা ঠিক মত ব্যবহার করতে শেখো। নিশ্চয়ই যাদুর মোহে কাউকে না কাউকে অন্ধ করতে পারবেই। এত কৌশল শেখার পর এভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকার কি কোন মানে হয়?

সেই রাতেই এক মেয়ে ওপর মেয়েকে নিরাশ হয়ে বলছিল, ‘রোজী! এণ্ডু আসলে বরং তার সঙ্গে চলে যাওয়া উচিত। কিন্তু ভাবছি, এখান থেকে বের হয়ে যাওয়া কি আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে?’

‘শোন ফ্লোরী!’ রোজী তাকে বললো, ‘এণ্ডু এখান থেকে আমাদের বের করতে পারবে না। এটা যুদ্ধ জাহাজ! তুমি দেখতে পাচ্ছো রাতেও ছাদে, জাহাজের মাস্তুলে সর্বত্র নৌ সেনারা পাহারায় থাকে। এণ্ডুর সহযোগিতায় পালানোর চেষ্টা করলে এণ্ডুই বরং ধরা পড়ে যাবে। আমাদের এখুনি নিরাশ হওয়ার দরকার নেই। বরং পালাতে হলে আমাদের অন্য পথ বের করতে হবে’।

‘তবে অন্য পথই বেছে নাও’। ফ্লোরী বললো, ‘বলো, তাহলে এখন কি করবো?’

‘কি করবে? শোন তাহলে’। রোজী বললো, ‘আল ফারেসের সহকারী ক্যাপ্টেনকে দেখেছি সে প্রায়ই ক্ষুধার্ত দৃষ্টিতে আমাদের দিকে তাকায় ও হাসে’।

রোজী বললো, ‘এরা দীর্ঘদিন ধরে সাগরে পড়ে আছে। এদের মাথার উপর খেলা করছে মৃত্যু। খোদা পুরুষের মধ্যে নারী সঙ্গ লাভের যে দুর্বলতা সৃষ্টি করে দিয়েছেন সে দুর্বলতা সব পুরুষের আছে। কেউ খোদার ভয়ে নিজেকে সামলে রাখে, কেউ পায় না বলে খায় না।

সহকারী ক্যাপ্টেনের অবস্থা আমি যতটুকু বুঝতে পারছি, সে দ্বিতীয় দলের। আমার মনে হয়, শুধু ইঙ্গিতটুকু পেতে যা দেরী, সে নিজেকে আমাদের হাতে সঁপে দিতে মোটেও দ্বিধা করবে না। এখন বলো, কাজটা আমি করবো, না তুমি? তবে আমার চেয়ে এ কাজের ট্রেনিং ও দক্ষতা তোমার ভাল আছে’।

‘তুমি বললে কাজটা আমিই করতে পারবো’। ফ্লোরী বললো।

‘কিন্তু কাজের সময় এ কাজের নিয়মটা মনে রাখবে’। রোজী বললো, ‘তার কাছ থেকে গোপন তথ্য যা জানার সব জেনে নেবে কিন্তু মূল্যটা পরিশোধ করবে না। নাকের ওপর মুলা ঝুলিয়ে দিয়ে সরে আসবে, যাতে আগ্রহ ও উন্মাদনায় ভাটা না পড়ে। তুমি সে লোকের মধ্যে উষ্ণতা ও উন্মাদনা এমনভাবে জাগিয়ে তুলবে, যাতে সে তোমার ইশারায় আল ফারেসকে হত্যা করতেও পিছপা না হয়। তাকে বুঝাবে, আল ফারেস বেঁচে থাকলে এবং তোমাদের সম্পর্ক জানতে পারলে সে তোমাদের কাউকে রেহাই দেবে না।

অতএব আল ফারেস বেঁচে থাকলে তুমি তার হওয়ার দুঃসাহস করতে পারো না। যদি সে তোমাকে সত্যি চায় তবে তা সে কেবল তখনি পেতে পারে, যখন এ দুনিয়ায় আল ফারেস থাকবে না’।

আল ফারেসের এই সহকারীর নাম ছিল আবদূর রউফ কুর্দি। সে ছিল কুর্দিস্তানের সন্তান এবং বেশ চালাক চতুর যুবক। সে মেয়ে দুটিকে দেখলেই তাদের দিকে তাকিয়ে অন্তরঙ্গ হাসি দিত। সে জানতো, এরা আল ফারেসের স্ত্রী নয়, দাসীও নয়। এরা যাযাবর মেয়ে। আল ফারেস এদেরকে জাহাজে আশ্রয় দিয়েছেন।

রউফ কুর্দির মনে মেয়ে দুটির জন্য এক ধরনের আকর্ষণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উরধতন অফিসারের আশ্রিতা বলে সে ওদের দিকে হাত বাড়াতে সাহস পাচ্ছিল না।

সেই রাতে, যখন মেয়েরা জাহাজের ছাদে উঠে কার্নিশে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল, রউফ তখন পাহারাদারদের ডিউটি তদারক করার জন্য টহলে বেরিয়েছে। সে জানতো না, মেয়েরা ছাদে দাঁড়িয়ে রাত্রিকালীন সমুদ্রের নৈসর্গিক শোভা দেখছে।

রউফ কুর্দি ছাদে উঠলো। দেখলো চাঁদের আলোয় জাহাজের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুই অনিন্দ্য অপ্সরী।

আল ফারেস সুলতান আইয়ুবীর আহবানে চলে গেছেন আসকালন। জাহাজের দায়িত্ব এখন রউফ কুর্দির ওপর। রোজী রউফ কুর্দিকে দেখেই কামরার দিকে হাঁটা ধরলো। ফ্লোরী জাহাজের ছাদে কার্নিশ ধরে তেমনি দাঁড়িয়ে রইলো। রোজী হাঁটতে হাঁটতে রউফ কুর্দির পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল, রউফ কুর্দি তার দিকে তাকিয়ে সেই অন্তরঙ্গ হাসি দিয়ে বললো, ‘রাতের সমুদ্র দেখছিলেন?’

রোজী না থেমেই বললো, ‘হ্যাঁ’।

রউফ কুর্দি বললো, ‘একটু দাঁড়াবেন?’

থমকে দাঁড়ালো রোজী। রউফ কুর্দির দিকে তাকিয়ে বললো, না। আমি যদি আপনার পাশে দাঁড়াই তবে আরেকজন অসন্তুষ্ট হবে। আমি কাউকে অসন্তুষ্ট করতে চাই না’।

রউফ কুর্দি অবাক হয়ে বললো, ‘কে অসন্তুষ্ট হবে?’

রোজী আঙুল দিয়ে ফ্লোরীর দিকে ইঙ্গিত করে বললো, ‘ওই যে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে’।

রউফ কুর্দি আরো অবাক হয়ে বললো, ‘কেন, অসন্তুষ্ট হবে কেন?’

‘সে প্রত্যেকের নিজ নিজ মনের ব্যাপার’। রোজী বললো, ‘একদিন আল ফারেস নিচে ক্যাবিনে শুয়েছিল আর আমি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সে অবস্থায় ও আমাদের দেখেছিল। পরে যখন তার কাছে গেলাম তখন সে বললো, ‘তুমি তো আল ফারেসকে দখল করে নিয়েছো। তুমি থাকলে আল ফারেসের কাছে আমার কোন দাম নেই। আমি তোমার অধিকারে কোনদিন ভাগ বসাতে যাইনি। আমার নিঃসঙ্গ জীবন আমি একজনের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম, সেখানেও তুমি হাত বাড়াবে?’ আমি তো অবাক। বললাম, ‘কার দিকে?’ সে বললো, ‘রউফ কুর্দি’। রউফ আমার। খবরদার, আমার অধিকারে হস্তক্ষেপ করবে না। তারপর থেকে আমি আর আপনার কাছে যাইনি’।